জ্ঞানতাপস আব্দুর রাজ্জাক ফাউন্ডেশনের স্মরণসভা
আবুল মাল আবদুল মুহিত রেনেসাঁ মানব ছিলেন
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ছিলেন একজন কর্মপ্রাণ মানুষ। তাঁর কর্মজীবন ছিল ব্যাপক ও বহুধাবিস্তৃত। সুদীর্ঘকাল তিনি বাংলাদেশের রাজনীতিতে সরব ছিলেন। অর্থমন্ত্রী হিসেবে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বেশ প্রশংসিত হয়েছেন। সাংস্কৃতিক উৎকর্ষসাধনে তার পৃষ্ঠপোষকতা ও আন্তরিক সহযোগিতা ছিল অভাবনীয়। প্রায় পয়ত্রিশটির অধিক বই লিখেছেন। জ্ঞানতাপস আব্দুর রাজ্জাক ফাউন্ডেশন আয়োজিত অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত স্মরণসভায় আলোচকরা এসব কথা বলেন।
বেঙ্গল ফাউন্ডেশন ও জ্ঞানতাপস আব্দুর রাজ্জাক ফাউন্ডেশনের ট্রাস্টি লুভা নাহিদ চৌধুরীর সঞ্চালনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মুজাফফর আহমদ চৌধুরী মিলনায়তনে রবিবার (২২ মে) বিকেল ৫ টায় স্মরণসভাটি অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশের জাতীয় অধ্যাপক ও অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের ছোট বোন ডা. শাহলা খাতুন।
জ্ঞানতাপস আব্দুর রাজ্জাক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক ইমেরিটাস প্রফেসর ড. আহরার আহমদ স্বাগত বক্তৃতায় ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সঙ্গে প্রতিষ্ঠানের সম্পর্ক ও অন্যান্য বিষয় তুলে ধরেন। তিনি বলেন, মুহিত ভাই বিচিত্র ক্ষেত্রে একজন সফল মানুষ। দাপুটে সিএসপি, দেশে-বিদেশে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দিয়েছেন, যা আজকের আলোচকরা বিশ্লেষণ করবেন। তিনি ছিলেন একজন বুদ্ধিদীপ্ত ও সপ্রতিভ চৌকস লোক। তাঁর বিনয়, সততা ও সরলতা অত্যন্ত প্রশংসনীয়, যা আজকাল খুব দেখা যায় না। তাঁর বিশিষ্টতা হলো তিনি বিপরীত মত কিংবা সাংঘর্ষিক অবস্থানের লোকদেরও প্রশংসা করতেন। বাংলাদেশের মতো দ্বিধাবিভক্ত রাজনীতিতে তাঁর মতো ব্যক্তিত্ব একেবারেই বিরল।
বিআইডিএসের মহাপরিচালক ড. বিনায়ক সেন চারটি বিষয় বিবেচনায় রেখে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের কর্মজীবন বিশ্লেষণ করেন। এক. মুহিত ভাই চিত্রকলা, সংগীত, কথাসাহিত্য ও সৃজনশীল সাহিত্যের উৎকর্ষতায় উৎসাহ দিতেন। তিনি একজন রেনেসাঁ মানব ছিলেন। বিচিত্র বিষয়ে ছিল তাঁর বিপুল আগ্রহ ছিল। আজকার তরুণদের মধ্যে যা দেখা যায় না। তাঁরা একটি সংকীর্ণ পরিসরে নিজেকে আবদ্ধ রাখে। মুহিত ভাই তেমন মানুষ ছিলেন না। দুই. মুক্তিযুদ্ধকালীন তার ইস্তপাপত্রে তিনি দুর্ভিক্ষ নিয়ে বিস্তারিত যে পরিসংখ্যান দিয়েছেন তা আমাকে বিস্মিত করে। তিন. উন্নয়নের বিকেন্দ্রীকরণে তাঁর অবদান খুব গুরুত্বপূর্ণ। বঙ্গবন্ধুর কর্মসূচির মূল লক্ষ্য ছিল উন্নয়নের বিকেন্দ্রীকরণ করা, যা মুহিত ভাই ধরতে পেরেছিলেন। চার. মুহিত ভাই একটি কল্যাণমুখী রাষ্ট্র নির্মাণের জন্য কাজ করেছেন। এক্ষেত্রে তাঁকে সোশ্যাল ডেমোক্রেট বলে বিবেচনা করা যায়।
বেঙ্গল ফাউন্ডেশন ও জ্ঞানতাপস আব্দুর রাজ্জাক ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান আবুল খায়ের লিটু বলেন, আমার উদ্যোক্তা হওয়া উঠা এবং শিল্প-সংস্কৃতি নিয়ে কাজ করার ক্ষেত্রে মুহিত ভাই বেশ সহযোগিতা ও উৎসাহ দিয়েছেন। ঢাকা ও সিলেটে ক্লাসিক্যাল মিউজিকের আয়োজন করার ক্ষেত্রে তিনি আমাদেরকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন।
ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনাম বলেন, মুহিত ভাইকে একজন বড় ভাই হিসেবে ভালোবাসা যেত, শিক্ষক হিসেবে শ্রদ্ধা করা যেত। দেশকে সামনে নেওয়ার জন্য তার অদম্য সাহস ও চেষ্টা ছিল। উনি একজন অনুকরণীয় ব্যক্তিত্ব। অর্থমন্ত্রী হিসেবে উনার অনেক সমালোচনা করেছি। সামনা সামনি দেখা হলে কোনোদিন এর নেতিবাচক ছাপ পড়েনি। পাকিস্তান আমলে আঞ্চলিক বৈষম্য হ্রাসকরণে সিএসপি অফিসার হিসেবে চেষ্টা চালিয়েছিলেন। দেশের অর্থমন্ত্রী হিসেবে তিনি অর্থনৈতিক বৈষম্য কমাতে আপ্রাণ চেষ্টা করেছেন। বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গঠনে তিনি সোচ্চার ছিলেন। জেলাভিত্তিক বাজেট প্রণয়নে তাঁর ভূমিকা অত্যন্ত প্রশংসনীয়।
জ্ঞানতাপস আব্দুর রাজ্জাক ফাউন্ডেশনের ট্রাস্টি মফিদুল হক আলোচনাকালে সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের অবদানের কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, মানুষের প্রতি মুহিত ভাইয়ের ভালোবাসা ছিল অত্যন্ত প্রবল। মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর প্রতিষ্ঠায় তার সম্পৃক্ততা আমাদেরকে বিভিন্নভাবে সমৃদ্ধ করেছে। মুহিত ভাইয়ের মাধ্যমে আমরা আস্থা খুঁজে পেয়েছিলাম। তার ‘বাংলাদেশ: এমার্জেন্স অব ন্যাশনস’ বাংলাদের মুক্তিযুদ্ধের উপর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বই। কল্যাণমুখী রাষ্ট্রের জন্য সাংস্কৃতিক বিকাশের ক্ষেত্রে তাঁর ভূমিকা ও অবদান অত্যন্ত প্রশংসনীয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, মুহিত ভাই একজন উদার ও চমৎকার মানুষ ছিলেন। তার সঙ্গে কাজ করার সময় তিনি কখনো কাজে হস্তক্ষেপ করেননি। তবে, কাজে পরামর্শ দিয়েছেন। অন্যের মত গ্রহণে উদার ছিলেন। খুব সহনশীল মানুষ ছিলেন। তিনি একজন পরিপূর্ণ ও সফল মানুষ। এরপর জ্ঞানতাপস আব্দুর রাজ্জাক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক বাংলাদেশ সরকারের সাবেক সচিব এম. মোকাম্মেল হক ও জ্ঞানতাপস আব্দুর রাজ্জাক ফাউন্ডেশনের ট্রাস্টি রওনক জাহান লিখিত বক্তব্য পেশ করেন। এসময় তিনি অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের প্রতি ফাউন্ডেশনের ট্রাস্টি এম. সাইদুজ্জামানের শোকজ্ঞাপন করেন।
সভাপতির বক্তব্যে ডা. শাহলা খাতুন বলেন, দেশের মানুষের প্রতি মুহিত ভাইয়ের দরদ ছিল। তিনি বই পড়তে ও সংগ্রহ করতে বেশ পছন্দ করতেন । বেআইনি কোনো কাজ তিনি করেননি। নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করেছেন।
এপি/