‘কলকাতায় বঙ্গবন্ধু’ তথ্যচিত্র বানাচ্ছেন গৌতম ঘোষ, মুক্তি জুনে
‘কলকাতায় বঙ্গবন্ধু’ শীর্ষক তথ্যচিত্র নির্মাণ করছেন স্বনামধন্য চিত্র পরিচালক গৌতম ঘোষ। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং ফ্রেন্ডস অব বাংলাদেশের (ভারত চ্যাপ্টার) যৌথ প্রযোজনায় এই তথ্যচিত্র নির্মিত হচ্ছে। আগামী জুনে এটি মুক্তি পাবে।
এ বিষয়ে পরিচালক গৌতম ঘোষ শুক্রবার (১৩ মে) বিকালে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। এসময় পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমসহ বেশ কয়েকজন এমপি এবং ফ্রেন্ডস অব বাংলাদেশের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
গৌতম ঘোষ নিজের অভিজ্ঞতার কথা বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, কলকাতা ইসলামীয়া কলেজে পড়তেন বঙ্গবন্ধু। আমি যখন ইসলামীয়া কলেজের বারান্দায় ক্যামেরা চালাই তখন মনে হয় ক্যামেরা নয় বঙ্গবন্ধুই হেঁটে বেড়াচ্ছেন।
কলকাতার মওলানা আজাদ কলেজে পড়া, বেকার হোস্টেলে থাকা, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আন্দোলনে জড়িয়ে পড়া, আলিমুদ্দিন স্ট্রিটে রাত কাটানো, পার্ক সার্কাসে বঙ্গবন্ধুর ঘুরে বেড়ানো এসবই থাকছে ৩০ মিনিট দীর্ঘ এই তথ্যচিত্রটিতে।
এ ছাড়া ব্রিগেডের ময়দানে বঙ্গবন্ধুর আগুন ঝরানো ভাষণসহ কলকতায় বঙ্গবন্ধুকে দেখেছেন, তার সঙ্গে মিশেছেন এমন জীবিত কয়েকজনের সাক্ষাৎকারও থাকছে তথ্যচিত্রে। বঙ্গবন্ধুর প্রিয় কলকাতা শহরের অলিগলি থেকে তুলে এনে ক্যামেরাবন্দি করছেন গৌতম ঘোষ। বঙ্গবন্ধুর জীবনে কলকাতা শহরের বড় ভূমিকা রয়েছে বলে মন্তব্য করেন গৌতম ঘোষ।
ভারতের জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত চলচ্চিত্র পরিচালক গৌতম ঘোষ জানান, গত এপ্রিলের প্রথমদিকে শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতিবিজড়িত মওলানা আজাদ কলেজে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘কলকাতায় বঙ্গবন্ধু’ তথ্যচিত্রের শুটিং শুরু করেন তিনি।
দীর্ঘ গবেষণায় তৈরি চিত্রনাট্যটির আলোকে তথ্যচিত্র নির্মাণের বিষয়ে একটি ত্রিপাক্ষিক চুক্তি স্বাক্ষর করেছেন কলকাতায় বাংলাদেশের উপ-হাইকমিশনার তৌফিক হাসান, চলচ্চিত্র পরিচালক গৌতম ঘোষ এবং ফ্রেন্ডস অব বাংলাদেশের সহ-সভাপতি সত্যম রায়চৌধুরী।
তথ্যচিত্রটি নির্মাণ করতে কত বাজেট বরাদ্দ হয়েছে জানতে চাইলে গৌতম ঘোষ বলেন, বাজেটের বিষয়টি আমি বলতে চাইছি না। তখন পাশ থেকে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেন, বাজেট তেমন বেশি না। বলার মতো কিছু না।
প্রেসব্রিফিংয়ে লিখিত বক্তব্যে শাহরিয়ার আলম বলেন, গত ১৯ মার্চে এই তথ্যচিত্র নির্মাণ সংক্রান্ত একটি সমঝোতা স্মারক কলকাতায় বাংলাদেশ উপ হাইকমিশনে স্বাক্ষরিত হয়।
প্রায় ৩০ মিনিটের এই তথ্যচিত্রটি কলকাতা এবং বাংলাদেশে শুটিং শেষে আগামী জুন এর মধ্যে নির্মাণকাজ শেষ করার লক্ষ্যমাত্রা গ্রহণ করা হয়েছে।
গত ৪ এপ্রিল বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি বিজড়িত কলকাতার মওলানা আজাদ কলেজ (যেটি পূর্বে ইসলামিয়া কলেজ নামে পরিচিত ছিল) সেখানে এই তথ্যচিত্র নির্মাণের প্রাথমিক কাজ শুরু হয়।
বঙ্গবন্ধু ১৯৪৫-৪৬ শিক্ষাবর্ষে ইসলামিয়া কলেজে অধ্যয়ন করেছেন এবং সে সময় তিনি কলেজ ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। তিনি সেসময় সরকারি বেকার হোস্টেলের ২৪ নম্বর রুমে আবাসিক ছাত্র ছিলেন যেটি এখন বঙ্গবন্ধু স্মৃতি কক্ষ হিসেবে সংরক্ষিত আছে।
কলকাতার সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর অসংখ্য স্মৃতি জড়িত যার বেশ কিছু অংশ আমরা বঙ্গবন্ধুর নিজের লেখা অসমাপ্ত আত্মজীবনী পড়ে জানতে পারি। বঙ্গবন্ধু কখনো চিকিৎসার প্রয়োজনে, কখনো অধ্যয়নের জন্য, কখনও রাজনৈতিক নেতা হিসেবে বহুবার কলকাতায় আসা যাওয়া করেছেন, যে অভিজ্ঞতা তাকে একজন অসামান্য রাজনৈতিক নেতা হিসেবে গড়ে তুলতে বিশেষ ভূমিকা পালন করেছে।
কাজেই কলকাতাকেন্দ্রিক বঙ্গবন্ধুর এই অজানা বা কমজানা বিষয়গুলোকে জনসম্মুখে নিয়ে আসার জন্যই আমাদের এই প্রয়াস, কারণ কলকাতা পর্বকে বাদ দিলে বঙ্গবন্ধুকে পূর্ণাঙ্গরূপে বিশ্লেষণ করার ক্ষেত্রে অপূর্ণতা থেকে যাবে। কলকাতাস্থ বাংলাদেশ মিশন মুজিববর্ষে, বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে এরকম মহতী একটি উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমরা ধন্যবাদ জানাই ফ্রেন্ডস অব বাংলাদেশকে (ভারত চ্যাপ্টার), বিশেষত এর সহ-সভাপতি শ্রী সত্যম রায়চৌধুরীকে এই উদ্যোগের সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়ার জন্য। ধন্যবাদ জানাই এই তথ্যচিত্র নির্মাণে যিনি অগ্রণী ভূমিকা পালন করবেন— বিশিষ্ট চিত্র পরিচালক গৌতম ঘোষকে।
সেইসঙ্গে ধন্যবাদ জানাই ফ্রেন্ডস অব বাংলাদেশ (বাংলাদেশ চ্যাপ্টার) এর মুখ্য সমন্বয়ক মেজর (অব.) এ এস এম শামসুল আরেফিনকে যিনি শুরু থেকেই এই কাজে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা প্রদান করে আসছেন। ধন্যবাদ জানাই তিনজন স্ক্রিপ্ট রাইটারকে (ভারতের দীপঙ্কর চক্রবর্তী ও তাপশ্রী গুপ্ত এবং বাংলাদেশের সোহেল আহমেদ সিদ্দিকী) যারা প্রাথমিক স্ক্রিপ্ট তৈরিতে অবদান রেখেছেন। এছাড়া কলকাতার স্বপন চক্রবর্তীকেও ধন্যবাদ জানাই শুরু থেকেই এই কাজে প্রয়োজনীয় সাহায্য সহযোগিতা করার জন্য।
চিত্র পরিচালক গৌতম ঘোষ আগামী এক সপ্তাহ ঢাকা এবং টুঙ্গিপাড়ার বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে এই তথ্যচিত্র নির্মাণের জন্য প্রয়োজনীয় শুটিংয়ের কাজ সম্পাদন করবেন। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গেও তার একটি সাক্ষাৎকার রয়েছে।
আমরা আশা করছি, বাংলাদেশের শুটিংয়ের পর্ব শেষ করে এবং কলকাতার বাকি কাজ শেষে আগামী জুনের মধ্যেই আমরা ‘কলকাতায় বঙ্গবন্ধু’ তথ্যচিত্রটি রিলিজ করতে সক্ষম হব।
আরইউ/আরএ/