আলোর ইশকুল
![](https://admin.dhakaprokash24.com/logo/placeholder.jpg)
আমি বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র শুরু করেছিলাম একদম পরীক্ষামূলকভাবে। আমি দেখতে চেয়েছিলাম, বই কিংবা সাংস্কৃতিক পরিমন্ডল সম্পুর্ণ মানুষ বিকাশের ক্ষেত্রে সত্যিকার অর্থেই ভূমিকা রাখে কি না! শুরুটা ছিল পাঠচক্র দিয়ে। ৫ বছর আমরা পাঠচক্র চালিয়েছি। পাঠচক্র শেষে আমরা দেখলাম বিষ্ময়কর সাড়া ফেলেছে এবং যারা সক্রিয় ছিল তারা প্রত্যেকেই সুপ্রতিষ্ঠিত সমাজে। বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের বয়স ৪২বছর হয়ে গেল,বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র তার যাত্রা শুরু থেকে আজও অব্যাহত রয়েছে। এটি ভাবতে ভাল লাগে।
এই সুযোগটি দেশের প্রতিটি কিশোর, তরুণ, যুবকের কাছে পৌঁছাতেই আমার সপ্ন দেখা। আমার ভিতর যে বিষয়টি কাজ করছে তা হল, সারা জাতির কাছে আমরা পৌঁছাতে চাই। সারা বিশ্বজুড়ে বই ছড়িয়ে পড়বে। শিশু কিশোররা বই পড়বে। জ্ঞানে গুণে সমৃদ্ধ হবে। প্রতিদিন একটু একটু করে গতদিনের চেয়ে উন্নত মানসিকতার মানুষ হতে হবে। সেক্ষেত্রে বইয়ের বিকল্প কিছু নেই। সারাদেশে ৪৫ থেকে ৫০ লাখ বই আছে। নতুন করে আরও ৪০ থেকে ৫০ লাখ বই ক্রয় করা হচ্ছে। অনেকেই হয়তো জানে না, আমাদের বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে কিন্তু এত বই নেই। আমাদের একটি ছোট্ট লাইব্রেরি আছে। ঢাকা ইউনিভার্সিটির লাইব্রেরিও এর চেয়ে বড়। আমরা সারা দেশে বই বিতরণ করে থাকি বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের সিলেবাস অনুযায়ি। আমাদের ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরি যেটি আছে সেটির জন্য ৭৬টি গাড়ি আছে।
মানুষের বিশেষত্ব হল, মানুষ অন্যপ্রাণীর মত লেজে লেজে লেগে থাকে না। মানুষকে একবার জ্বালিয়ে দিতে পারলে সে সারা জীবন জ্বলতে থাকে। নিজের ভেতরকে জ্বালাতে হলে বইপাঠের অভ্যাস গড়তে হবে। দিনে কমপক্ষে ৭/৮ পৃষ্ঠা পড়ার অভ্যাস তৈরি করতে হবে। ১০/১২ পৃষ্ঠা করে পড়লে বছরে কতটি বই পড়া যায় হিসেব করে একে একে এভাবে সারা জীবনে কতটি বই পড়া যায়। ঘুম থেকে উঠে ১০টি পৃষ্ঠা পড়লে সপ্তাহে ৭০পৃষ্ঠা পড়া হয়ে যায়। ১২/১৩ পাতা করে পড়লে সপ্তাহে ১০০পাতার মত হয়। বছরে ৫০টি বই হয়। ১০ বছরে ৫০০টি বই পড়া হয়। মানুষ যে এভারেস্টে উঠে এক পা ফেলেইতো আর উঠে না। ধাপে ধাপে পা ফেলেই এভারেস্ট জয় করা । বইপাঠও ঠিক সেরকম।
আজকাল মাঝেমধ্যে আমার ভেতরে আত্মখেদ কাজ করে। জীবনের শেষপ্রান্তে এসে গিয়েছি। কিন্তু মনে হয় প্রচুর কাজ বাকি রয়ে গিয়েছে। অন্তত ২০০/২৫০ বই লেখা উচিত ছিল। আমি সেটিই লিখিনি। এটির কারণে আমার ভিতরে খুবই যন্ত্রণা কাজ করে। কিন্তু কেন জানি না মনের মত করে কাজ গুলি করতে পারছি না। একটি করতে গিয়ে আরেকটি করে ফেলেছি। বিশ্বসাহিত্য করতে গেলাম, তারপর আর লেখাই হয় নাই। মাত্র ৪০টি বই । মানুষকে লিখে যেতে হয় অনেক। তার মধ্য থেকে ১/২টি বই হয়তো ভাল বই হয়। একথা সত্যি জনপ্রিয়তার জন্য আমার কখনও লেখা হয় নাই। মনের আনন্দেই কাজ করি। নিজের দায়বোধ থেকে লিখি। এখন মনে হয়, অনেক কম লেখা হয়েছে। আরও লেখা দরকার ছিল। যারা বই পড়ে তাদের জন্য লাভ, যারা পড়ে না তাদের কোন লাভ নাই। বর্তমানে ২৫ লক্ষ ছেলেমেয়ে বই পড়ছে।
দেশে লক্ষ লক্ষ ইউনিভার্সিটি হলে আসলে যেটা হয়, পড়াশোনা হয় না। পরে যেটি হয়, এরা পাশ করে এখন লাঙ্গলও ধরতে পারছে না। কিছুই করতে পারছে না। এর কারণ হল, যা পড়া দরকার ছিল তা পড়েনি। যা দরকারি নাই, তাই পড়েছে। আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা স্বয়ংসম্পুর্ণ না। শিক্ষা ব্যবস্থায় ঘুণপোকা ধরেছে। সবকিছু ঢেলে সাজাতে হবে। সত্যিকারের শিক্ষকদের এগিয়ে আসতে হবে। তাদের সপ্ন দেখতে হবে এবং স্বপ্ন দেখাতে হবে। আমার মনে হয়, এছাড়া এগিয়ে যাওয়ার কোন পথ নেই।
লেখক: শিক্ষাবিদ ও বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা
![Header Ad](https://admin.dhakaprokash24.com/images/single-post-anniversary.jpeg)