কথাসাহিত্যিক আহমাদ মোস্তফা কামালের ৫৩তম জন্মদিনে আনন্দ-আয়োজন
এ-সময়ের একজন শক্তিমান ও সংবেদী কথাসাহিত্যিক আহমাদ মোস্তফা কামাল। নব্বইয়ের দশকের গোড়া থেকেই সাহিত্যর নানা শাখায় তার বিচরণ। এ পর্যন্ত তার গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ, মুক্তগদ্য, সম্পাদনা মিলিয়ে ৪২টি বই প্রকাশিত হয়েছে। তার মধ্যে মৌলিক বইয়ের সংখ্যা ৩১টি। গত ১৪ ডিসেম্বর ছিল তার ৫৩তম জন্মদিন। এ দিনটি শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবস, জাতির জন্য এক কালো অধ্যায়। তাই সেদিন জন্মদিন পালন করা থেকে বিরত থাকেন তিনি। পরের দিন তাকে ঘিরে আনন্দ-আয়োজন করেন তার শুভাকাঙ্ক্ষী, বন্ধু, সহকর্মী ও স্বজনরা।
জন্মদিন উপলক্ষে আয়োজিত আনন্দ-আয়োজনে অতিথিরা বলেন, বর্তমান বাংলা সাহিত্যের অন্যতম শক্তিমান কথাসাহিত্যিক আহমাদ মোস্তফা কামাল। তিনি তার লেখনীর মতোই সংবেদনশীল ও মার্জিত রুচির এক মানুষ। তিনি তার সংবেদী রচনার মধ্য দিয়ে দাহকালের কথা বলেছেন, গল্প-উপন্যাসে তুলে ধরেছেন বিপন্ন মানুষ ও জীবনের আলেখ্য।
গতকাল বুধবার (১৫ ডিসেম্বর) রাত ৮টায় রাজধানীর শাহবাগের পাঠক সমাবেশ কেন্দ্রে এই আয়োজন অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে লেখককে শুভেচ্ছা জানান কথাসাহিত্যিক জাকির তালুকদার, প্রাবন্ধিক ও গবেষক মাসুদুজ্জামান, কথাসাহিত্যিক মোহিত কামাল, গল্পকার রেজা ঘটক, কবি আলফ্রেড খোকন, প্রাবন্ধিক ও গবেষক মোকারম হোসেন, কবি ও গল্পকার অঞ্জন আচার্য, কথাসাহিত্যিক মোজাফফর হোসেন, কবি অরবিন্দ চক্রবর্তী, কবি শোয়েব সর্বনাম, পাঠক সমাবেশের প্রকাশক সাহিদুল ইসলাম বিজু প্রমুখ।
কথাশিল্পী স্বকৃত নোমানের সঞ্চালনায় বক্তরা শুভেচ্ছা জানানোর পাশাপাশি আহমাদ মোস্তফা কামালের লেখালেখি থেকে শুরু করে ব্যক্তিজীবনের নানা অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন। শুভেচ্ছাপর্বের পর নিজের অনুভূতি প্রকাশ করতে কথাসাহিত্যিক আহমাদ মোস্তফা কামাল বলেন, ‘ঘটনাচক্রে আমার জন্মদিন ১৪ ডিসেম্বর, বুদ্ধিজীবী দিবসের দিন। সেদিন জাতির জন্য এক কালো অধ্যায়। তাই ছেলেবেলা থেকেই এই দিনে আমি জন্মদিন পালন করা থেকে বিরত থেকেছি। আয়োজকেরা যখন বললেন, তারা আমার জন্মদিনে ঘরোয়া আড্ডার মতো কিছু একটা করতে চান, তখন সম্মতি দিইনি। তবে পরের দিন সেটি হলে আমার আপত্তি নেই।’
আহমাদ মোস্তফা কামাল আরো বলেন, ‘সুহৃদদের এত ভালোবাসা পেয়ে বড়ো আপ্লুত হলাম। অনেকের অভিজ্ঞতায় অজানা অনেক কিছু ব্যক্ত হয়েছে। সাধারণত এমন আয়োজনে এমনটিই ঘটে। তাই ভার্চুয়াল দুনিয়ার বাইরে এসে সাক্ষাতে পারস্পরিক আড্ডাটা খুব প্রয়োজন।’
আহমাদ মোস্তফা কামাল পড়াশোনা করেছেন পাটগ্রাম হাইস্কুল, মানিকগঞ্জ, নটরডেম কলেজ, ঢাকা; ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে। পদার্থবিজ্ঞানে অনার্সসহ বিএসসি, এমএসসি, এমফিল এবং পিএইচডি। পেশাগত জীবনের শুরু থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করছেন। বর্তমানে ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশ-এ কর্মরত। কিন্তু যাবতীয় বৈষয়িক সাফল্যের সম্ভাবনাকে নাকচ করে শুধুমাত্র লেখালেখিকেই তিনি জীবনের সকল স্বপ্নের কেন্দ্রবিন্দু করে তুলেছেন।
আহমাদ মোস্তফা কামালের গল্পগ্রন্থ ‘গল্পগ্রন্থ ঘরভরতি মানুষ অথবা নৈঃশব্দ্য’ লাভ করেছে মর্যাদাপূর্ণ প্রথম আলো বর্ষসেরা বই ১৪১৩ পুরস্কার। উপন্যাস ‘অন্ধ জাদুকর’ ভূষিত হয়েছে এইচএসবিসি-কালি ও কলম পুরস্কার ২০০৯-এ, এবং উপন্যাস ‘কান্নাপর্ব’ ২০১২ সালের শ্র্রেষ্ঠ গ্রন্থ হিসেবে লাভ করেছে জেমকন সাহিত্য পুরস্কার।