শুক্রবার, ১০ মে ২০২৪ | ২৭ বৈশাখ ১৪৩১
Dhaka Prokash

মানবিক এক রাত

অজয় ধর অটো থেকে নেমে ড্রাইভারকে কুড়ি টাকা দিয়ে সামনের দিকে হাঁটতে লাগলেন। তার এক পা’ও হাঁটার কথা নয় । অটোটা তার বাড়ি ফেলে এসেছে। গেটের সামনেই তিনি নামতে পারতেন। অজয়বাবু কিছু দূর হেঁটে এদিক ওদিক তাকিয়ে একটা দোকানে ঢুকে গেলেন। দুয়েকটা জিনিস দরদাম করে আবার বেরিয়ে এলেন। এমনই করেন আজকাল। সেদিন পত্রিকায় পড়েছিলেন এক অটো ড্রাইভার মালিকের বাড়ি চিনে গিয়েছিল। রাতে দল নিয়ে এসে ডাকাতি করেছে। তাই অটোর ড্রাইভারকে বাড়িতে চেনাতে চান না। পনেরো-কুড়ি মিনিট এদিক সেদিক ঘুরে উল্টো পথে হাঁটতে হাঁটতে এবার বাড়ির সামনে এসে পৌঁছালেন।

চারপাশটা একবার ভালোভাবে দেখে নিলেন। না, কেউ তাকে ফলো করছে না। পায়ে হাঁটা লোক প্রায় নেই এখন এখানে । শুধু বড় বড় গাড়ি যাচ্ছে। রাস্তাটা পেরিয়ে গেটের সামনে গিয়ে দেখলেন একটা অটো দাঁড়িয়ে আছে। এটা কি সেই অটোটা? কাছে গিয়ে ভালো করে পেছনটা দেখে একটা স্বস্তির শ্বাস নিলেন। নাহ, এটা সেই অটো নয় যেটাতে তিনি এসেছিলেন। সেই অটোর পেছনে একটা সাবান কোম্পানির বিজ্ঞাপন ছিল। ভালো করে এসব দেখে রাখেন আজকাল। নম্বরটাও টুকে রাখেন । দাঁড়িয়ে থাকা অটোর সামনে এগিয়ে গিয়ে দেখলেন, ড্রাইভার ছেলেটা মোবাইল টিপছে। গলায় মাফলার। লক্ষণ ভালো নয়। চোরেরা সাধারণত মাফলার গলায় দেয়। কাণ্ড ঘটিয়ে মাফলার দিয়ে নাক অবধি ঢেকে চম্পট দেওয়ার জন্য।

অজয়বাবু অটোওয়ালাকে জিজ্ঞেস করলেন, আচ্ছা ভাই এ গলিটার কী নাম?
অটোওয়ালা মোবাইল টেপা বন্ধ করে বলল, স্কয়ার রোড।
অজয়বাবু আবার অটোওয়ালাকে জিজ্ঞেস করলেন, এখানে অজয় ধর নামের কোনও বয়স্ক ব্যক্তিকে চেনো? অটোওয়ালা মোবাইল টিপতে টিপতে বলল, বলতে পারব না। আমি এখানে থাকি না।

যাক, ছেলেটা অজয় ধরের বাড়ি চেনে না । এ বাড়িতে ঢুকলে সে বুঝতে পারবে না।

বাড়ির দোতলা থেকে হঠাৎ একটা আওয়াজ এলো, বাবা কী করছ রাস্তায় দাঁড়িয়ে? ঘরে এস। অটোওয়ালা মুখ তুলে একবার অজয়বাবুর দিকে আরেকবার দুতলার দিকে দেখল। সর্বনাশ করে দিল মেয়েটা। আহ্লাদে আহ্লাদে রুমকিটা আজকাল মাথায় চড়েছে। দিল তো বারোটা বাজিয়ে ! এ বছর কলেজে ভর্তি হয়েছে। পড়ায় গড়পড়তা। কিন্তু কলেজ কামাইতে এক নম্বর। ঘরে ঢুকে মেয়েকে খুব জোরে একটা ধমক দেওয়ার ইচ্ছে ছিল। কিন্তু পারলেন না। মেয়েটা তার পরাণের ধন। ছোটবেলায় সে একবার বাবার মার্কশিটের উপর কীসব মুণ্ডু মাথা এঁকে ফেলেছিল। সে তখন নার্সারিতে পড়ত। রাগ করে মেয়েকে খুব জোরে একটা ধমক দিয়েছিলেন। মেয়ে সেদিন কেঁদে কেঁদে বাবার সামনে কান ধরে স্যরি বলেছিল। এই কথা মনে হলে এখনো অজয় বাবুর চোখে জল আসে।

ঘরে ঢুকতেই মেয়েটা অজয় বাবুর মাথার সাদা টুপিটা একটানে খুলে, বাবা টাকলু, বাবা টাকলু বলে হাসতে হাসতে শোবার ঘরে চলে গেল। এ কাণ্ডটা মেয়ে ছাড়া অন্য কেউ করলে হয়তো তিনি মার্ডার করতেন। গত দশ বছর ধরে এই টুপিটা দিয়েই তিনি মাথার টাক'টা ঢেকে রেখেছেন। শীত-গ্রীষ্ম সবসময় এটা তার সঙ্গী। কলিংবেল বাজলে কাপড় না পরে বেরুনো যায় কিন্তু টুপি ছাড়া যায় না। অফিসের সবাই এ জন্য তাকে অজয় ধরের জায়গায় টুপি ধর বলে ডাকে। তবু ভালো ভদ্রস্থ নাম।
বড় বাবুর চোখের নিচের মেজটা ইদানিং বড় হয়ে যাওয়ায় অফিসের দুটো অসভ্য নাম দিয়েছে মেজদা। ভাগ্যিস বছরের শুরুতে দুটো অসভ্যের মধ্যে একটা রিটায়ার করেছে। রাস্কেলটা রিটায়ার করে এখন হোমিওপ্যাথিক ডাক্তার হয়েছে। সে নাকি স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ। কোন দিন কোন মহিলার চড় থাপ্পড় খাবে তারপর ঠিক হবে।

অজয় বাবু ড্রয়িংরুম থেকেই গিন্নিকে ডাকলেন সবিতা, ও সবিতা।
ভেতর থেকে শুধু কোঁকানোর একটা শব্দ এল।
-তোর মা’র আজ আবার কী হয়েছে?
রুমকি বলল, বিকেল থেকে খুব মাথা ধরেছে।
-ওষুধপত্র কিছু দিয়েছিস?
-কী একটা ট্যাবলেট মা নিজে নিজেই খেয়েছে।

সবিতা চিররোগী। আজ মাথা ব্যথা হলে কাল পেটে ব্যথা। যেদিন কিছু থাকে না সেদিন পাতলা পায়খানা। কখনো অজয় বাবুর বিশ্বাস হয়, কখনো হয় না।

ঘড়িতে এগারোটা বাজে। বাড়ির তিনজনের মধ্যে দুজনের রাতের খাবার শেষ। সবিতা আজ কিছু খাইনি। রুমকি আজকাল মা’র পাশে ঘুমায়। সবিতার পাশে এখন অজয় বাবু ঘুমোতে পারেন না। বারবার উঠে জল খাবে। বাথরুম যাবে। কুঁকাবে।
অজয় বাবু উঠে সবিতার ঘরের দিকে গেলেন। ঘরটা ভীষণ অন্ধকার।
-আলো জ্বালাসনি কেন?
রুমকি বলল, ডিম লাইটটা ফিউজ।
-সে কথা দিনে বলবি তো।

অজয় বাবু অ্যাটাচ বাথরুমের লাইটটা জ্বালিয়ে দরজাটা একটু ফাঁক করে দিলেন। সামান্য এক চিলতে আলো এসে ঘরের ঘুটঘুটে অন্ধকার ভাবটা দূর করল। কিন্তু বিশ্রী একটা গন্ধ আসছে। কে যেন বাথরুম থেকে এসে জল ঢালেনি। অজয় বাবু দরজাটা আবার বন্ধ করে দিলেন। রুমকির দিকে তাকিয়ে বললেন, শুয়ে যা মা, কিছু হবে না।
ড্রইংরুমে এসে অজয় বাবু টিভির চ্যানেলটা বদলালেন। কিছুক্ষন নিউজ দেখলেন। সব একঘেয়ে খবর। ভাষণবাজি উদ্বোধন সরকারের জয়গান। দু’চারটা আক্সিডেন্ট ডাকাতি আর সুইসাইড। চ্যানেল বদলাতে বদলাতে একটা রোমহর্ষক ভূতের ছবি হাতে লেগেছে। অজয় বাবু চাদর টেনে মাথা মুড়ি দিয়ে বসলেন। এক বাড়ির বউকে রোজ রাত দু’টোয় ভূতে ভর করে। আজও করেছে। দরজা-জানালাগুলো ঠকঠক করে কাঁপছে। হঠাৎ ফট করে সদর দরজাটা খুলে গেল। বউটা বেরিয়ে অমাবস্যার রাতে অন্ধকার রাস্তা দিয়ে কবরের দিকে যাচ্ছে। কবরের পাশে শো শো বাতাস উঠেছে। একটা কবর ফুঁড়ে বিশাল লম্বা পচা গলা একটা হাত বেড়িয়ে আসছে। অজয় বাবু পুরো মুখটা ঢেকে শুধু চোখদুটো বের করে রেখেছেন।

কে যেন আস্তে করে তার পিঠে হাত দিল। ভয়ে অজয় বাবুর মুখ দিয়ে গোঙানির শব্দ বেরুচ্ছে।
রুমকি বলল কি হল বাবা এত কাঁপছো কেন?
-ও তুই? এখনো ঘুমোসনি!
-না।
-কেন?
-মা কেমন যেন করছে। ঘামে ভিজে গেছে শরীরটা।
অজয় বাবু এবার দ্রুত পায়ে সবিতার ঘরের দিকে গেলেন। সত্যিই সবিতা খুব ঘেমেছে। হার্ট অ্যাটাক নয়তো?

অজয় বাবু ঘড়ির দিকে দেখলেন। রাত প্রায় বারোটা। এ রোগীকে নিয়ে সকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করা যাবে না। কাউকে যে ডাকবেন তাও নেই। চারপাশে নতুন নতুন ফ্ল্যাট হয়েছে। বেশিরভাগ মানুষকেই তিনি চেনেন না। তিন দিকে ফ্ল্যাট দিয়ে ঘেরা তার বাড়িটা যেন উঁচু উঁচু নারকেল গাছের নিচে একটা গাঁদাফুলের গাছ। অজয় বাবু অ্যাম্বুলেন্স ফোন করলেন। ওদের আসতে সময় লাগবে। অজয় বাবু ঘরের নিচে এসে দাঁড়ালেন। ঝড়ের বেগে দুয়েকটা গাড়ি যাচ্ছে। এদের হাত দেখিয়ে লাভ নেই। কেনই বা দাঁড়াবে তারা। রুমকি উপর থেকে একবার ডাকল, বাবা তাড়াতাড়ি করো মা সাড়া দিচ্ছে না ।

অজয় বাবু সিঁড়ি দিয়ে দৌড়ে উপরে উঠলেন। একবার হোঁচট খেয়ে গড়িয়ে পড়তে যাচ্ছিলেন। কোনোক্রমে রেলিং ধরে টাল সামলেছেন। সবিতাকে দেখে আবার ছুটে নিচে নেমে এলেন। সবিতার শ্বাস নিতে খুব কষ্ট হচ্ছে। মুখটা আস্তে আস্তে বেঁকে যাচ্ছে। এক মুহূর্ত আর দেরি করা ঠিক নয়। এখন যে গাড়ি পাবেন সেটাকেই হাত দেখাতে হবে। অজয় বাবুর ট্রাক থেকে শুরু করে দামি গাড়ি, সবকটাকে হাত দেখাচ্ছেন । অজয় বাবুর মাথা ঘুরছে। মনে হয় সুগার বেড়েছে। আজকাল বেশি টেনশন নিতে পারেন না। আস্তে আস্তে রাস্তার পাশে বসে পড়লেন। কিছু একটা যেন তার সামনে এসে দাঁড়াল। একটা অটো। মাফলার পরা সেই অটো ড্রাইভারটা। ছেলেটা অটো থেকে নেমে আসছে। অজয় বাবু সাত পাঁচ ভাবছেন। ছেলেটা এগিয়ে এসে বলল, কী হয়েছে আপনার, কোথাও যাবেন?

অজয় বাবু প্রামাদ গুনলেন। বিপদ তাকে সবদিক দিয়ে ঘিরে ফেলেছে। ছেলেটার মতলব বোঝা যাচ্ছে না। এত রাতে সে রাস্তায় কী করছে? কিন্তু এভাবে ভেবে ভেবে সময় নষ্ট করলে সবিতাকে বাঁচানো যাবে না। তারচে' বরং ছেলেটাকে সব বললে যদি কিছু সাহায্য পাওয়া যায়। নিদেন পক্ষে হাসপাতাল অবধি যদি পৌঁছে দেয়। তারপর গলায় চাকু ধরলে না হয় সোনার চেনটা খুলে দিয়ে দেবেন। ছেলেটা একবার ব্যালকনির দিকে দেখল। সেখানে রুমকি নার্ভাস হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ছেলেটার চোখের দৃষ্টি অনুসরণ করে অজয়বাবুও ব্যালকনির দিকে দেখলেন। মেয়েটা একেবারে ভেঙে পড়েছে। অজয় বাবু আর সহ্য করতে পারলেন না। এক শ্বাসে সব কথা বলে ফেললেন। ঘরের ভেতর একটা শব্দ হলো। রুমকি এক দৌড়ে ঘরে ঢুকেছে।

-কি হল রে মা, বলে অজয় বাবু দৌড়ে সিঁড়ি বেয়ে উঠলেন।
ছেলেটা পেছনে পেছনে উঠতে লাগল।
রুমকি মার বুকের উপর মাথা দিয়ে পড়েছে।
অজয় বাবু অসহায়ের মতো ফ্যাল ফ্যাল করে দেখছেন।

ছেলেটা রোগীর ডানদিক ঘেঁষে সবিতার সামনে এগিয়ে গিয়ে বলল, চলুন তিনজনে মিলে ধরাধরি করে উনাকে নিচে নিয়ে যাই। চিন্তা করবেন না।
ছেলেটার কথায় কোনো ভরসা পেলেন না অজয় বাবু। চিন্তা করবেন না বললেই কী আর হয়? কোথাকার এক অটো ড্রাইভার তার কথার কী ভরসা? তবুও অজয় বাবুর এখন ভরসা করা ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই। ওই ডুবন্ত মানুষ যেমন খর কুটোর অবলম্বন করে অজয় বাবুর মনে হলো যেন তেমনটাই।

সবিতাকে অটোতে তোলা হয়েছে।
রুমকি ছুটে গিয়ে দরজায় তালা দিয়ে এলো।
অজয় বাবু ভয়ে, আতঙ্কে পাথরের মতো বসে আছেন। কোথায় যাচ্ছেন তিনি নিজেও জানেন না।

রুমকি একবার জিজ্ঞেস করল, বাবা কোন হাসপাতাল?
অজয় বাবু বললেন, জানি না মা।
ঝড়ের বেগে অটো চালিয়ে কিছুক্ষণের মধ্যেই অটোটা একটা হাসপাতালের ইমারজেন্সিতে নিয়ে ঢুকাল ছেলেটা। এত রাতে হাসপাতালও মনে হয় ঘুমিয়ে গেছে। ডাকাডাকি করেও ছেলেটা কাউকে পাচ্ছে না। অজয় বাবু বেশ কিছুক্ষণ থেকে সবিতার মুখের দিকে তাকানো বাদ দিয়েছেন। আর তাকাতে পারছেন না। শুধু রুমকির হাতটা জোরে ধরে রেখেছেন। ছেলেটা কাকে যেন ফোন করছে। দেখতে দেখতেই হাসপাতালের দুজন স্টাফ বেড়িয়ে এলো। দুটো ছেলেও এসেছে। ওরা অটোওয়ালার সঙ্গে কথা বলছে। সবাই ধরাধরি করে সবিতাকে ভেতরে নিয়ে যাচ্ছে। একটা ছেলে অজয় বাবুকে অটো থেকে নামিয়ে ভেতরে নিয়ে এক জায়গায় বসালো । সবিতাকে স্ট্রেচারে করে আইসিইউর দিকে নিয়ে যাচ্ছে ওরা ।

অজয় বাবু উঠে সেদিকে এগিয়ে যেতে চাইলেন। একটা ছেলে এগিয়ে এসে বলল, আপনি বসুন কাকু, আমরা তো আছি।
অজয় বাবু এবার তার অসহায় মেয়েটার মুখের দিকে তাকালেন। মেয়েটা তার হাতে হাত রাখল। কখন সকাল হয়েছে অজয় বাবু বলতে পারেন না। ঘুমিয়ে গেছিলেন না অজ্ঞান তাও বুঝতে পারছেন না।
একটা ছেলে তার হাতে এক কাপ চা ধরিয়ে বলছে, নিন কাকু চা খান।
রুমকি নাকি কিছুক্ষণ আগেই চা খেয়েছে। ওরাই এনে দিয়েছে।

অজয় বাবু বললেন, সবিতা মানে আমার মিসেস এখন কেমন আছে বাবা?
উনাকে ভোরে আইসিইউ থেকে কেবিনে শিফট করা হয়েছে। ডেঞ্জার কেটে গেছে। চা খেয়ে চলুন ২০২ নম্বর কেবিন। এই ফ্লোরেই।

অজয় বাবুর চোখ দিয়ে টপটপ করে জল পরছে। রুমকির চোখের কোণও ভিজে গেছে।
-তোমরা কারা বাবা?
- আমরা রঞ্জনের বন্ধু।
- রঞ্জন ! কে রঞ্জন?
- যে অটো করে আপনাকে এখানে নিয়ে এসেছে।
- ওর নাম রঞ্জন ?
- হ্যাঁ, এ পাড়াতেই তো তার ঘর। সেই তো আমাদের ফোন করে এখানে নিয়ে এলো। এই হাসপাতালের অনেক ডাক্তারবাবুকে ও চেনে। উনাদের ছেলেমেয়েকে ও টিউশনে নিয়ে যায়।
-সে এখন কোথায়?
-চলুন কেবিনে যাই আগে।
অজয় বাবু কেবিনে ঢুকে দেখেন সবিতা বিছানায় শুয়ে। চোখ খোলা। হাতে স্যালাইন। পায়ের পাশে রঞ্জন বসে আছে।
অজয় বাবুকে দেখে রঞ্জন উঠে দাঁড়াল। অজয় বাবুর চোখের জল কিছুতেই থামতে চাইছে না। সবিতার চোখ থেকেও আস্তে আস্তে গড়িয়ে এসে এক ফোটা জল বালিশে লাগল। রুমকি ডাকল, মা।
সবিতা সাড়া দিচ্ছে। তার হাতের আঙুলগুলো তির তির করে কাঁপছে।

লেখক পরিচিত: গল্পকার ও কলাম লেখক, শিলচর আসাম ভারত

 

Header Ad

দুপুরে নয়াপল্টনে বিএনপির সমাবেশ

ফাইল ছবি

দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসাসহ নিঃশর্ত মুক্তি ও কারাবন্দি নেতাদের মুক্তির দাবিতে রাজধানী ঢাকায় আজ সমাবেশ করবে বিএনপি। শুক্রবার (১০ মে) দুপুর ৩টায় নয়াপল্টনে দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এ সমাবেশের আয়োজন করেছে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপি।

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে ইতিবাচক সাড়া মিলেছে। কিছু শর্ত সাপেক্ষে সমাবেশের অনুমতি দেয়া হবে বলে ডিএমপির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। সমাবেশের অনুমতি নিতে গতকাল বেলা ১১টার দিকে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কার্যালয়ে ডিএমপি কমিশনারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন বিএনপির তিন নেতা।

সমাবেশের অনুমতি নিতে বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় ডিএমপি কার্যালয়ে ডিএমপি কমিশনারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন বিএনপির তিন নেতা। তিন সদস্যের ওই প্রতিনিধি দলে ছিলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আবদুস সালাম এবং সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনু।

আলোচনা শেষে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহবায়ক আবদুস সালাম সাংবাদিকদের বলেন, কর্মসূচির বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। শুক্রবার ট্রাফিক সংক্রান্ত সমস্যা থাকবে না। তাই সেদিন সমাবেশ ও মিছিল করবে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপি। ডিএমপি এ বিষয়ে ইতিবাচক এবং সমাবেশে তারা সার্বিক সহযোগিতা করবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।

দলের কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী অ্যানি বলেন, আন্দোলনের ধারাবাহিকতা অব্যাহত আছে। সমাবেশ থেকে নতুন কর্মসূচির ঘোষণা আসতে পারে।

প্রসঙ্গত, খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসাসহ নিঃশর্ত মুক্তি, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক নবী উল্লাহ নবীসহ নেতাকর্মীদের মুক্তির দাবিতে ঈদের পর গত এপ্রিলে এই সমাবেশ করার কথা ছিল। কিন্তু তাপপ্রবাহের কারণে সেটি পিছিয়ে যায়।

প্রেমিক যুগলকে মারধরের পর গলায় জুতার মালা, ইউপি চেয়ারম্যান বরখাস্ত

প্রেমিক যুগলকে মারধরের পর গলায় জুতার মালা, ইউপি চেয়ারম্যান বরখাস্ত। ছবি: সংগৃহীত

চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার তিওরবিলা গ্রামের প্রবাসীর স্ত্রীর সঙ্গে পরকীয়ার অভিযোগ তুলে প্রেমিক যুগলের গলায় জুতার মালা পরিয়ে মারধর ও চাঁদা দাবির ঘটনায় মামলায় খাসকররা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান তাফসির আহমেদ মল্লিক লালকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।

গত ৭ মে স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগ ইউপি শাখা-১ এ সংক্রান্ত আদেশ জারি করে। রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে সিনিয়র সহকারী সচিব আনিসুজ্জামান ওই আদেশে স্বাক্ষর করেন।

বৃহস্পতিবার (৯ মে) রাতে চেয়ারম্যান লালের বরখাস্তের বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে।

স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগ ইউপি শাখা ১ এ সংক্রান্ত আদেশে উল্লেখ করা হয়েছে, যেহেতু খাসকররা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান তাফসির আহমেদ মল্লিক লালের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত আলমডাঙ্গা থানার মামলা নম্বর ১ (জি. আর ১৫৫/২০২৩), তারিখ: ১২/১০/২০২৩-এর অভিযোগে বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, আমলী আদালত, চুয়াডাঙ্গা আমলে নেওয়ায় স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) আইন, ২০০৯- এর ৩৪(১) ধারা অনুযায়ী জেলা প্রশাসক, চুয়াডাঙ্গা ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সুপারিশ করেন। যেহেতু চুয়াডাঙ্গা জেলার আলমডাঙ্গা উপজেলাধীন খাসকররা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান তাফসির আহমেদ মল্লিক লালের বিরুদ্ধে উল্লেখিত অভিযোগে তার দ্বারা ইউনিয়ন পরিষদের ক্ষমতা প্রয়োগ প্রশাসনিক দৃষ্টিকোণে সমীচীন নয় মর্মে সরকার মনে করে।

সেহেতু, জেলার আলমডাঙ্গা উপজেলাধীন খাসকররা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান তাফসির আহমেদ মল্লিক লাল কর্তৃক সংঘটিত অপরাধমূলক কার্যক্রম ইউনিয়ন পরিষদসহ জনস্বার্থের পরিপন্থী বিবেচনায় স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) আইন, ২০০৯-এর ৩৪(১) ধারা অনুযায়ী উল্লিখিত ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানকে স্বীয় পদ হতে সাময়িক বরখাস্ত করা হলো।

সে দিনের ঘটনার বর্ণনা দিয়ে স্থানীয়রা জানান, ২০২৩ সালের ২৯ জুলাই উপজেলার খাসকররা ইউনিয়নের তিয়রবিলা গ্রামের এক প্রবাসীর স্ত্রীর সঙ্গে ব্যবসায়ী লালনের পরকীয়ার সম্পর্কের অভিযোগ তুলে সালিশ বৈঠক ডাকেন ইউপি চেয়ারম্যান লাল। অভিযুক্ত লালন সালিশে আসতে না চাইলেও জোরপূর্বক বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে আসা হয়। প্রায় ২ শতাধিক সাধারণ মানুষের উপস্থিতিতে বৈঠক হয়। পরে সালিশের সিদ্ধান্ত মোতাবেক অভিযুক্ত দুজনের কাছ থেকে দেড় লাখ টাকা জরিমানা আদায় এবং তাদেরকে শারীরিক নির্যাতনের পর জুতার মালা পরিয়ে এলাকায় ঘোরান ইউপি চেয়ারম্যান তাফসির আহম্মেদ।

এরপর গ্রামের মসজিদে নিয়ে তাদের তওবা পড়ান। এছাড়াও তাদের দুজনকে গ্রাম ছাড়তে নির্দেশ দেন খাসকররা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান তাফসির আহম্মেদ লাল। পরে ৩১ জুলাই রাতে ইউপি চেয়ারম্যানসহ পাঁচজনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও তিন-চারজনকে আসামি করে আলমডাঙ্গা থানায় একটি মামলা করেন ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী লালন হোসেন। রাতেই ওই মামলার ৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। ওই মামলার প্রেক্ষিতে চেয়ারম্যান তাফসির আহমেদ মল্লিক লালকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।

আলমডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী অফিসার স্নিগ্ধা দাস ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

বিদায় নিচ্ছেন পিটার হাস, নতুন রাষ্ট্রদূত হচ্ছেন ডেভিড মিল

পিটার হাস এবং ডেভিড মিল। ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশে পরবর্তী মার্কিন রাষ্ট্রদূত হিসেবে ডেভিড স্লেটন মিলকে মনোনীত করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তি‌নি বর্তমা‌নে বেইজিংয়ে মা‌র্কিন দূতাবা‌সে ডেপুটি চিফ অব মিশনের দায়িত্ব পালন কর‌ছেন। ২০২২ সালের ২৬ মার্চ থেকে এই পদে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। ডেভিড স্লেটন মিল এর আগে ঢাকায় ডেপুটি মিশন প্রধান ছিলেন।

ওয়াশিংটনের স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার (৯ মে) হোয়াইট হাউসের বিবৃতিতে বলা হয়েছে বাংলাদেশে পরবর্তী মার্কিন রাষ্ট্রদূত হিসেবে ডেভিড স্লেটন মিলের নাম ঘোষণা ক‌রেছেন প্রেসিডেন্ট বাইডেন।

বাংলাদেশে পরবর্তী মার্কিন রাষ্ট্রদূত হিসেবে জ্যৈষ্ঠ কূটনীতিক মিলের ম‌নোনয়ন ইতোমধ্যে দেশটির পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ সি‌নেটে পাঠা‌নো হয়েছে। শুনানির পর মিলকে যোগ্য ম‌নে হ‌লে ত‌বেই ম‌নোনয়ন চূড়ান্ত ক‌রে রাষ্ট্রদূত ক‌রে তা‌কে ঢাকায় পাঠা‌নো হ‌বে। মিল ঢাকায় রাষ্ট্রদূত হ‌লে বর্তমান রাষ্ট্রদূত পিটার হা‌সের স্থলা‌ভি‌ষিক্ত হ‌বেন।

জ্যৈষ্ঠ কূটনীতিক মিল বেইজিংয়ে দা‌য়ি‌ত্ব পাল‌নের আগে যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টের ইকোনমিক ব্যুরোর ট্রেড পলিসি অ্যান্ড নেগোসিয়েশন বিভাগের উপ-সহকারী সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা নীতি ও বাস্তবায়ন বিভাগের পরিচালক ছিলেন তিনি।

১৯৯২ সালে মিনিস্টার কাউন্সেলর হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের ফরেন সার্ভিসে যোগ দেন তিনি। এরপর ওয়াশিংটনের ফরেইন সার্ভিস ইনস্টিটিউটের লিডারশিপ অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট স্কুলের সহযোগী ডিন, ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের ডেপুটি চিফ অব মিশন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অর্থনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টাসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেছেন ডেভিড মিল। শিক্ষিকা লিসা ও'ডোনেলকে বিয়ে করেন মিল। থিও এবং বেনেট নামে কলেজপড়ুয়া দুই ছেলে রয়েছে এই দম্পতির।

সর্বশেষ সংবাদ

দুপুরে নয়াপল্টনে বিএনপির সমাবেশ
প্রেমিক যুগলকে মারধরের পর গলায় জুতার মালা, ইউপি চেয়ারম্যান বরখাস্ত
বিদায় নিচ্ছেন পিটার হাস, নতুন রাষ্ট্রদূত হচ্ছেন ডেভিড মিল
চুক্তি ছাড়াই শেষ যুদ্ধবিরতি আলোচনা, রাফায় চলছে ইসরায়েল-হামাস লড়াই
কর্ণফুলী নদীর তলদেশ থেকে বিধ্বস্ত যুদ্ধবিমান উদ্ধার
রাফায় বড় অভিযান হলে অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ: বাইডেন
বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রীর বাসভবন এলাকায় লোডশেডিংয়ের নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর
নবাবগঞ্জ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ১৩ প্রার্থীর মনোনয়ন দাখিল
ভবিষ্যতে শতভাগ কানেক্টিভিটি তার ভূগর্ভে স্থাপন করা হবে: পলক
নয়া সরকারের ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম বাজেট ঘোষণা ৬ জুন
প্রকল্প-স্থাপনায় ‘শেখ হাসিনা’ নাম না রাখার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর
প্রথম ধাপে ১৩৯ উপজেলায় ভোট পড়েছে ৩৬.১ শতাংশ
৪৬তম বিসিএসের প্রিলির ফল প্রকাশ, উত্তীর্ণ ১০৬৩৮
ইউরোপে ছড়িয়ে পড়েছে ইসরাইলবিরোধী বিক্ষোভ
নওগাঁয় বজ্রপাতে ধানকাটা শ্রমিকের মৃত্যু
ভারত-কানাডা দ্বন্দ্ব চরমে, পাল্টাপাল্টি হুঁশিয়ারি
জামিন পেলেন না মিল্টন সমাদ্দার
চীনের আগে ভারত সফর করবেন প্রধানমন্ত্রী : হাছান মাহমুদ
গাজায় আরো এক গণকবরের সন্ধান, ৪৯ মরদেহ উদ্ধার
মংডুতে তুমুল সংঘর্ষ, টেকনাফ সীমান্তে ফের আতঙ্ক