শুক্রবার, ১০ মে ২০২৪ | ২৭ বৈশাখ ১৪৩১
Dhaka Prokash

আমিনুল ইসলাম: শিকড় বৈভবের কবি

আমিনুল ইসলাম আমাদের কাব্যসাহিত্যে মননে ও প্রকরণে, চিত্রকল্প ও রূপকে, উপমা ও উৎপ্রেক্ষায় এবং বাণীবিন্যাস ও নান্দনিক অভিব্যক্তিতে অনেক সূর্যের বৈভবে একজন স্বতন্ত্র মেজাজের কবি। তাকে এক অর্থে মৌলিক কবিও বলা যায়। তিনি বক্তব্য ও বাণীবিন্যাসে নিজের ভুবনে একটি বলয় তৈরী করে আপনার আলোতে আপনিই দ্যুতিমান। এবং লিখতে গিয়ে অন্য কারও মডেল বা আদর্শকে সামনে না রেখে নিজের পথে বহমান।

আমরা সব সময়ই পাশ্চাত্যের কন্ঠস্বর ও প্রতিধ্বনির আনুগত্যের প্রাতিস্বিকতায় বশীভূত। এ ছাড়া, হাজার বছর ধরে আমাদের সাহিত্য রামায়ণ-মহাভারত-বেদ-উপনিষদ-কোরান-পুরাণ, বৌদ্ধজাতক, সুফী মরমীর বৃত্ত অতিক্রম করে মৌলিক কিছু বলেছে-- এ কথা পুরোপুরি সত্যি নয়। তবে রূপ ও রীতির পরিবর্তন হয়েছে। আমাদের উপর্যুক্ত কবি আমিনুল ইসলাম মিথ ও লোকজ উপাদান কাব্যে ব্যবহার করেছেন। তবে তা এসেছে আধুনিকতার অনুষঙ্গ হয়ে। তিনি মিথ নিয়েছেন ঐতিহ্যকে স্বকালের পাঠকদের কাছে উপস্থাপনের জন্য, দেশ-জাতি ও মানুষের জীবনকে নবতর চেতনায় উপলব্ধির জন্য।

সমগ্র রবীন্দ্রসাহিত্যে যা ঋদ্ধ তা এসেছে রামায়ণ মহাভারত, বেদ, উপনিষদ, পুরাণ, বৌদ্ধজাতক, সুফী মরমী ও লোক সাহিত্যের উদার উর্বর ভূমি হতে। তা ছাড়া, রবীন্দ্রনাথ এযুগেও যেভাবে স্বর্গ নরক ও পরলোক নিয়ে সাহিত্যের পশরা সাজিয়েছেন তা মোটেই আধুনিকতার অভিযোজনার অনুষঙ্গ হতে পারে না। নজরুলের উচ্চকন্ঠ শেষ পর্যন্ত প্রমাণিত হয়েছে অনংড়ষঁঃব-কে ছোঁয়ার জন্য আঙুল দিয়ে স্পর্শ করার জন্য। কিন্তু তা যেনো অধরাই রয়ে গেছে। তবে আমিনুল ইসলামের কবিতায় অধরা তৃষ্ণা থাকলেও সেখানে শারীরিক গন্ধ আর রক্তমাংসের দেহাবয়বই বেশি। তিনি যেমন সুদূরের পিয়াসী, তেমনি তার পিপাসা রক্তমাংসের মানবিক আবেদনে ভাস্বর।

ত্রিশের দশকের কবিরা রবীন্দ্র বলয় হতে বিমুক্তির প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে শেষ পর্যন্ত টিকে থাকলো পৌরাণিক আবরণ ও অনুবাদের অনুষঙ্গে। সুধীনদত্ত সবচেয়ে প্রতিভাবান ও পন্ডিত কবি। নতুন শব্দসৃষ্টি আর পৌরাণিক গন্ধ এবং অনুবাদের অনুশাসনের আনুগত্যেই বর্তমান তার অস্তিত্ব ঘোষণা করে। বিষ্ণুদের কাব্যে সবসময়ই পুরাণের গন্ধ উম উম করে। এমন যে বুদ্ধদেব বসু তিনিও এখন বেঁচে আছেন মৌলিক কাব্যসত্তার জন্য নয়। বরং অনুবাদের অস্তিত্বেই তিনি অস্তিত্ববান। মহাভারতের কথা তার মহৎ ও অমর গ্রন্থ। মনে হয় কালিদাস মেঘদূত লিখেছিলেন বুদ্ধদেব বসু অনুবাদ করবেন বলেই। তা ছাড়া, বোদলেয়ার ভর্লেন, মালার্মে ও র‌্যাঁবো অনুবাদেই আজ অস্তিত্বের পরীক্ষায় তিনি উত্তীর্ণ।

রুশ বিপ্লবের আবহ ও চেতনায় আমাদের সাহিত্যে একটি নতুন ধারা সৃষ্টি হয়েছিল। ঘুম ভেঙে গিয়েছিল কালিঝুলি মাখা মেহনতি মানুষগুলোর; ইতিহাসের পদচারণায় জেগে উঠল একটি নতুন যুগ। আমাদের সাহিত্যে একটি উজ্জ্বল আলোক ও মৌলিক ধারার অভিযোজন হলো। কিন্তু দুভার্গ্য সুকান্ত, সমর সেন, প্রেমেন্দ্র মিত্র, অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত--তাদের দেখাতে হলে ক্রেন দিয়ে স্তুপে চাপা পড়া থেকে উদ্ধার করতে হয়। মাঝে মাঝে মনে হয় আমিনুল ইসলামকে উদ্ধার করতে হয় না। সমস্ত রিক্ততা, শূন্যতা আর হতাশার আবর্জনা থেকে তিনি নিজেই উঠে আসেন স্বরূপে।

মহান ভাষা আন্দোলন ও মহান মুক্তিযুদ্ধ যেন আমাদের চিত্তজাগরণ ও আত্মজাগরণের রেনেসাঁ। এবং এই দুই ঘটনা যেন আমাদের জাত মহাকাব্য কিন্তু আমরা আমাদের কবি সাহিত্যিক ও শিল্পীদের কাছে চেয়েছিলাম, ভিক্টর হুগোর উপন্যাসে ফরাসি বিপ্লব, টলস্টয়ের উপন্যাসে রুশ বিপ্লব, এরিনবুর্গের উপন্যাসে দ্বিতীয় মহাযুদ্ধে মহাদেশব্যাপী বিশাল সমরাভিযান আর মহান শিল্পী গোর্কির মধ্যে জীবনসংগ্রাম ও মানব মহিমার যে বিজয় লক্ষ করি, তেমন ধরনের সৃষ্টি আমাদের কবি সাহিত্যিক শিল্পীদের মধ্যে তা পাইনি।

আমিনুল ইসলাম একজন মহৎ কবি বা যুগোত্তীর্ণ ও মানোত্তীর্ণ এবং কালোত্তীর্ণ কবি কি না এ কথা চূড়ান্তভাবে বলার সময় হয়তো এখনো আসেনি। তবে তিনি শব্দ সচেতন, সমাজসচেতন এবং পরিমিতিবোধের কবি। তার কবিতা কখনো উচ্চস্বরে আবার কখনো বিনম্র প্রপাতে আলোছায়ায় ভরা মেঘে-রোদের খেলায় আমাদের মুগ্ধতায় ভরে দেয়। মাঝে মাঝে তার কবিতার আকর্ষণ, ভাবের গভীরতা ও নান্দনিক অভিব্যক্তির দ্যুতনায় যেনো কোনো এক দূরায়ণ বাসনায় অধরাকে ধরতে এবং রহস্যের নেকাব উন্মোচন করতে উদ্বাহ। প্রেম প্রকৃতি ও নারী এবং দেশ সমাজ ও জনজীবন-ধারা তার কবিতার সহৃদয় সত্তায় একাত্ম হয়ে ঘনীভূত শিল্পরূপ লাভ করেছে।

আমিনুল ইসলামের কবিতা বিচিত্র অভিজ্ঞতার মনন-প্রসূন। তার কবিতার বিষয়বস্তু ও পরিমণ্ডল আকাশ থেকে বা কেবল স্বপন করিছে বপন পবনে এ আবহ থেকে আসেনি। এসেছে বাস্তবজীবন আর এই বাংলার মাঠ ঘাট প্রান্তর ও জীবনচর্যা থেকে। আমি এখানে একটু উদ্ধৃতি উপস্থাপন করছি।

তালপাতায় মুখরিত বেজেছে শৈশব
রাখালের বাঁশিতে লাউয়ের ডগার মতো নেচেছে কৈশোর।
আর মাঝির গানে স্বপ্নের তরঙ্গচূড়োয়
পালের নৌকার মতো যৌবনের নাচানাচি
কতদিন তীরে বসে দেখেছে জেলেরা!
কখনো বা বাউলের একতারার সুরে
ভোঁ-কাটা ঘুড্ডির মতো উড়ে গেছে মন।
(শৃঙ্খলিত কোকিলের গান/ মহানন্দা এক সোনালি নদীর নাম)

বিশ্বের বিস্ময় কবি জাঁ আর্তুর র‌্যাঁবো তার দু আঙুলের পরশে Absolute-কে অর্থাৎ অনন্তকে অধরা অনন্ত অসীমকে চিরায়ত চিরন্তনকে ধরতে চেয়েছেন, স্পর্শ করতে চেয়েছেন। আমিনুল ইসলাম ব্যাঁবো নন, কিন্তু তার কবিতায় রয়েছে মহাকাব্যিক বিস্তার, বিশাল ব্যাপক ক্যানভাস। তিনি বাংলার মাঠ-ঘাট, প্রান্তর, পাহাড়-পর্বত, নদীনালা এবং আমাদের সভ্যতা ও সংস্কৃতি ইতিহাস ও ঐতিহ্য এবং আমাদের মহান ভাষা আন্দোলন ও মহান মুক্তিযুদ্ধকে তুলে ধরেছেন। বিশেষ করে তার বিশেষ একটি আকর্ষণ আমাদের মহিমান্বিত অতীত, গৌরবোজ্জ্বল ঐতিহ্য। এই তিনি চলে যান চর্যাপদে, নাথ সাহিত্যে, পাহাড়পুর, মহাস্থানগড়, ময়নামতি শালবন বিহার ও ওয়ারি বটেশ্বেরে। আমাকে বিস্ময় ও মুগ্ধতায় ভরে দিয়েছে-- আবেগাপ্লুত করেছে কবি আমিনুল ইসলামের মহানন্দা এক সোনালি নদীর নাম কবিতাটি। এই কবিতা থেকে সামান্য উদ্ধৃতি উপস্থাপন করছি।

এই যে মহানন্দা--দেবরাজের বর ছিল কি না কে জানে!
এই জলের আরশীতে বিম্বিত মহাজীবনের জলছবি
ওই যে বারঘারিয়ার ঘাট--আজ মাঝিশূন্য, একদিন ওই ঘাটে
এসে থেমেছিল তুর্কীদের ঘোড়া সাম্যের সওয়ারী বয়ে কাঁধে.
নক্ষত্রের মতো হেসে উঠেছিল প্রাকৃত নারীর চোখ!
এই জলের মুখ দেখে আপন, তলোয়ার রেখে জমিনে
মাটি চুমেছিলেন সুলতানের সেনাপতি।
(মহানন্দা এক সোনালি নদীর নাম/ মহানন্দা এক সোনালি নদীর নাম)

আমিনুল ইসলামের কবিতায় আমাদের মহিমান্বিত অতীত ও গৌরবোজ্জ্বল ঐতিহ্য শাণিত ও প্রাণিত হয়ে ফিনিক্স আর ইকারোসের মতো জেগে ওঠে। তিনি যেন স্পন্দিত বুকে, গর্বে গর্বিত হয়ে বলতে চান যে আমরা পাশ্চাত্য বা অন্য কোন জাতির প্রতিধ্বনি বা কণ্ঠস্বর নই-- আমাদের পায়ের নিচে হিমালয়ের মতো শক্ত একটি ভিত্তি আছে--এ ভিত্তিতে একবার স্বকীয়তার স্পর্ধাভরে দাঁড়ালেই আমরা সমগ্র বিশ্বে গর্বিত জাতি হিসেবে পরিচিত হবো। আমরা চিনতে পারবো আমাদের সভ্যতা ও সংস্কৃতিকে, আমাদের ইতিহাস ও ঐতিহ্যকে। আমরা হিমালয়ের শীর্ষচূড়া দেখবো, আকাশভরা সূর্যতারা দেখবো, সাগরপ্রান্তর সবই দেখবো--বিশ্বের সাথে বিশ্বাত্ববোধে উদ্বুদ্ধ হবো-- তবে দেশের মাটিতে পা রেখে। এজন্যই দেখা যায় আমিনুল ইসলামের কবিতায় যেমন আছে ঐতিহ্যের টান, তেমনি আছে বর্তমানের অবস্থান ও ভবিষ্যতের সোনালি ফসলের আহ্বান। আমিনুল ইসলামের ‘পথবেঁধে দিল বন্ধনহীন গ্রন্থি’ নামক কাব্যগ্রন্থের নয় পর্বে রচিত নাম কবিতাটিতে প্রেম, ভ্রমণ এবং দেশপ্রেমের এক আশ্চর্য কাব্যিক সম্মিলন ঘটেছে। বর্তমানের প্রতি আমিনুল ইসলাম উদাসীন নন, বর্তমানের ভিত্তিতে দাঁড়িয়ে তিনি বিস্ময়-বিমুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকেন অতীতের মহিমায় এবং তিনি অতীতচারী হলেও অতীতকেই মূল আকর্ষণ মনে করেন না, অতীতের গর্ব, গৌরব ও মহিমার আলোকচ্ছটায় বর্তমানকে বিচার বিশ্লেষণ করেন তন্ন তন্ন করে। মহাকাব্যিক বিস্তারে অবসিত এই কবিতাটি আমিনুল ইসলামের একটি মহৎ কবিতা। জীবনানন্দ দাশের স্থিতি ভারত হলেও আমিনুল ইসলাম আমাদের বিশ্ব পর্যটনে নিয়ে যান।

আমিনুল ইসলাম রচিত নিখাদ প্রেমের কবিতাতেও শেকড়মুখিনতা এবং ঐতিহ্যলগ্নতার চমৎকার সন্নিবেশ ঘটেছে। তাতে করে তার প্রেমের কবিতা গভীর ব্যঞ্জনাধর্মী এবং প্রাতিস্বিকতায় অনন্য হয়ে উঠতে চেয়েছে। তার প্রেমের কবিতায় মানুষের শরীরই কেবল বিষয় থাকে না, আন্তর্জাতিক রাজনীতি, অর্থনীতি, সন্ত্রাসবাদ, বিশ্বপ্রেম--সবই একই সূত্রে স্পষ্ট হয়ে উঠতে চায়। অবশ্য এ চেষ্টায় তার আগে শামসুর রাহমানই প্রথম সাফল্য দেখিয়েছেন। প্রকৃত কবিমাত্রই কমবেশি ঐতিহ্যের উত্তরাধিকার। আমিনুল ইসলামের ‘তুমি হলে সন্ধ্যাবতী সকলি কবুল’ কবিতাটি বিষয়বৈভব ও শব্দচয়নে তার পূর্বসূরী শামসুর রাহমান-আল মাহমুদ-দের যোগ্য উত্তরসূরী হিসাবে তাকে তার স্বকীয় ঊজ্জ্বলতায় উপস্থাপন করে।

কবিতার যে কতো চিত্রময়তা ও দৃশ্যময়তা থাকতে পারে এবং কবিতা যে আমাদের কী এক মোহনীয় মুগ্ধতায় দৈনন্দিন জীবনের তুচ্ছতাকে অতিক্রম করে সমস্ত গ্লানি ও বিবমিষাকে অতিক্রান্ত করে অলৌকিক আনন্দভারে আমাদের একটি প্রশান্তির স্নিগ্ধতায় মানসিক মুক্তি দিতে পারে এবং রূপক প্রতীক ও উপমায় কবিতা যে কতো নান্দনিক বিভা ও ঐশ্বর্যে মানোত্তীর্ণ ও শিল্পোত্তীর্ণ কবিতা হতে পারে এরই দৃষ্টান্ত কবিতা আমিনুল ইসলামের ‘মহানন্দা’ কবিতাটি। যেমন

দেবরাজের বরে নাকি পুন্ড্র বরেন্দ্র
তুমি কি সেই আর্শীবাদ গাঢ় প্রাণরসে?
সর্পিলী যদিও শরীর, অমৃত আনন্দ
বাতাসে বাজালে বাঁশি তরঙ্গ নুপুর হয়ে অন্তর প্রকাশে!
(মহানন্দা/তন্ত্র থেকে দূরে)

জীবনানন্দ দাশের পর বাংলা কবিতায় এতো নদী, পাখি, হাট-ঘাট, মাঠ-প্রান্তর,পাখি, ফসলের মাঠ আর কারো কবিতায় আমি পাইনি। আমিনুল ইসলাম তার কবিতায় যে সমস্ত ছবি এঁকেছেন অতীতের ধূসর গোধূলির আবছা ছায়ায়--ম্রিয়মাণ নয়, এগুলো জীবন্ত ও প্রাণময়। এ সব জীবনের মহিমায় চলমান। তার নদীও গতিমান শীর্ণকায় বা শুকনো নয়।

আমিনুল ইসলাম এক কথায় জীবনের বহমান কবি। এর সঙ্গে রয়েছে গভীর জীবনবোধ--আত্মপ্রত্যয়ী ও ঐতিহ্যে অনুসন্ধিৎসু। তবে যুগ মানসের চেতনায় তিনি অতীত অভিধাকে নতুন করে উপস্থাপন করেন। এ জন্যই তার কবিতা বারবারই ফিনিক্স আর ইকারোসের মতো অতীতের জীর্ণজরা ও মালিন্যকে পরিহার করে নতুনের অভিধায় আলোকোজ্জ্বল হয়ে ওঠে। মাঝে মাঝে তার কবিতায় বিষণ্নতার অভিপাত ঘটলেও, উজিয়ে চলার অভিপ্রায়ের জন্য আর্তিটাই আমাদের আকর্ষণ করে। যেমন--

ও আমার পালকদিনের সাথি
তুমিও ভুলে গেছো
আমের ঘ্রাণে মাতোয়ারা ছায়া
জোছনায় ভাসা মহানন্দার আকাশ;

তোমার মুখখানি আর নতুন চরের উপমা নয়
তোমার নামটি এখন ঘুমহীন রাতের হাতে নিরাশার তসবিহদানা।
(স্বপ্নের হালখাতা/স্বপ্নের হালখাতা)

একজন বড়ো কবির কাব্যকর্মের উৎকর্ষ হচ্ছে ভাব বিষয় ও নান্দনিকতার উত্তরণ। এ না হলে কবি পাঠকের মনের অনুসন্ধিৎসাকে যেমন ধরে রাখতে পারে না, তেমনি কালোত্তীর্ণ হতে পারে না। এইতো মাত্র আমার হাতে এসেছে তার সদ্য প্রকাশিত কাব্য ‘স্বপ্নের হালখাতা।’ এই কাব্যটিতে কবি আমিনুল ইসলামের বিস্ময়কর উত্তরণে আমরা বিমুগ্ধ হই। বাণীবিন্যাস ও উপমা আর প্রতীকে কবির যেনো নতুন করে আবির্ভাব। যেমন-

প্রত্নহৃদয় নিয়ে
বিভ্রান্তির চৌরাস্তায়
উজ্জ্বল সূর্যের নিচে
আমরা দাঁড়িয়ে
হুররে বলে ধুলো উড়োয় হাওয়ায় উজানে থাকা হাত;
হে সময়! হে মহাকালের জীব্রাইল!
ধূসর দৃষ্টান্ত যোগে তুমি কেন দেখাও না সবুজ সিগন্যাল?
(সবুজ সিগন্যাল/স্বপ্নের হালখাতা)

আমিনুল ইসলাম মাঝে মাঝে প্রতীকিয়তার মধ্যে বক্তব্যকে তীক্ষ্ম ও ক্ষুরধার করে তুলেন এবং আমাদের জিজ্ঞাসা ও অনুসন্ধিৎসাকে সমাজ মানসের পটভূমিতে উপস্থাপন করে একটা প্রচন্ড নাড়া দেন এবং সাড়া জাগিয়ে তুলেন। এখানে আমি তার ‘বেদখল হয়ে যায় পরানের পার্ক’ কবিতাটির উদ্ধৃতি তুলে ধরছি:
হায়, আমাদের
হাছন রাজা কই? তিনি কি ঘুমিয়ে গেছেন ঝাড়েবংশে?
এদিকে কদমতলায় কৃষ্ণের
আসনে বসে জগতশেঠের নাতি; তাকে পীর মেনে
খোলাবুকে সারিবদ্ধ নীলক্ষেতের একঝাঁক রঙিন যুবতী।
ও ভাই যুবতী! তোমরা বুকভরে কি নেবে গো? এই বুঝি
যক্ষযুগ ভক্তিতে ভরে না প্রাণ আর; গণেশের মূর্তি গিলে
গোগ্রাসে শিশুর আহার।
(বেদখল হয়ে যায় পরানের পার্ক/স্বপ্নের হালখাতা)

আমিনুল ইসলাম আমাদের ইতিহাস ঐতিহ্যের কবি--আমাদের কাব্য সাহিত্যে চিত্রময়তা ও প্রতীকিয়তার কবি এবং একজন সমাজসচেতন কবি। এরপরও বলতে হয় তিনি শিকড় বৈভবের কবি। বাইরের বিষয়কে অন্তরের এবং অন্তরের বিষয়কে নান্দনিক প্রকর্ষণায় প্রকাশ করাই যদি শিল্পকর্ম হয়, তবে আমিনুল ইসলাম এমনই এক কবি যিনি বিষয়বস্তুকে আত্মস্থ ও কলামন্ডিত করে নিজের করে প্রকাশ করেন। এখানে আমিনুল ইসলাম মৌলিক কবি এবং এজন্যই তিনি আধুনিক বাংলা কাব্যে একটি স্বতন্ত্র ধারার কবি হিসেবে কালোত্তীর্ণ বৈভবে উজ্জ্বল ও সমুজ্জ্বল হয়ে থাকবেন।

লেখক: গবেষক-প্রাবন্ধিক, প্রাক্তন অধ্যাপক, সিলেট শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

 

Header Ad

চুক্তি ছাড়াই শেষ যুদ্ধবিরতি আলোচনা, রাফায় চলছে ইসরায়েল-হামাস লড়াই

ছবি: সংগৃহীত

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় সাত মাসেরও বেশি সময় ধরে চলা ইসরায়েলি আগ্রাসন বন্ধে যুদ্ধবিরতির আলোচনা কোনও ধরনের চুক্তি ছাড়াই শেষ হয়েছে। অন্যদিকে ইসরায়েলি বাহিনী রাফা অঞ্চলে নতুন করে বোমাবর্ষণ করেছে।

শুক্রবার (১০ মে) এ খবর জানিয়েছে কাতার ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।

এরইমধ্যে শত্রু-মিত্রদের সব চাপ উপেক্ষা করেই জনবহুল শহরটিতে ঢুকে হামলা চালাতে শুরু করেছে ইসরায়েলি পদাতিক বাহিনী। ট্যাঙ্ক থেকে ছুড়ছে গোলা। তবে হামাস যোদ্ধারাও ছেড়ে কথা বলছে না। রকেট-মর্টার ছুড়ে গড়ে তুলছে শক্ত প্রতিরোধ। এছাড়া, বিস্ফোরক ডিভাইসের মাধ্যমেও তেল আবিবের সেনাদের প্রতিরোধ করছে ফিলিস্তিনি গোষ্ঠীটি।

এদিকে, রাফায় বিমান হামলাও ব্যাপক জোরদার করেছে ইসরায়েল। এমন পরিস্থিতিতে যে যেভাবে পারছেন, অন্যত্র ছুটছেন। ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, এরইমধ্যে ৮০ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি রাফা ছেড়েছে।

প্রসঙ্গত, হামাসের সঙ্গে ইসরায়েলের যুদ্ধবিরতির চুক্তির বিষয়ে আলোচনার চেষ্টা চলছে দীর্ঘদিন ধরে। যদিও হামাসের সঙ্গে চুক্তি হোক বা না হোক, ইসরায়েল রাফাতে হামলা চালাবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু। এমন অবস্থায় রাফায় হামলা করলে ইসরায়েলে কিছু অস্ত্র সরবরাহ বন্ধের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।

কর্ণফুলী নদীর তলদেশ থেকে বিধ্বস্ত যুদ্ধবিমান উদ্ধার

কর্ণফুলী নদীর তলদেশ থেকে বিধ্বস্ত যুদ্ধবিমান উদ্ধার। ছবি: সংগৃহীত

চট্টগ্রাম নগরের পতেঙ্গা এলাকায় বিধ্বস্ত হওয়া বিমানবাহিনীর যুদ্ধবিমানটি উদ্ধার করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (৯ মে) দিবাগত রাত পৌনে ১০টার দিকে কর্ণফুলী নদীর তলদেশ থেকে বিমানটি উদ্ধার করে নৌবাহিনী।

চট্টগ্রাম নৌবাহিনীর একজন কর্মকর্তা বিমান উদ্ধারের বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন।

উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরের পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল এলাকায় কর্ণফুলী নদীতে বিমানবাহিনীর ইয়াক-১৩০ প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনা ঘটে। আকাশ থেকে বিমানটি কর্ণফুলী নদীতে ছিটকে পড়ে পানিতে তলিয়ে যায়। এরপর বেলা ১১টা থেকে বিমানটি উদ্ধারে তৎপরতা শুরু করে নৌবাহিনী।

মূলত যুদ্ধবিমানটি কী কারণে দুর্ঘটনায় পতিত হয়েছে, এটিতে কী ধরনের যান্ত্রিক ত্রুটি ছিল এবং বন্দর চ্যানেলে জাহাজ চলাচল স্বাভাবিক রাখতে নৌবাহিনী বিমানটি উদ্ধারে তৎপরতা চালায়। এক্ষেত্রে নৌবাহিনীর একাধিক ডুবুরি টিম এবং একাধিক অত্যাধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন জাহাজ দিয়ে উদ্ধার তৎপরতা চালানো হয়। একপর্যায়ে বাহিনীটি বিমান উদ্ধারে সফল হয়।

রাফায় বড় অভিযান হলে অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ: বাইডেন

ছবি: সংগৃহীত

গাজার শহর রাফায় ইসরাইল বড় ধরনের স্থল অভিযান চালালে যুক্তরাষ্ট্র দেশটিকে অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ করে দেবে বলে সতর্ক করেছেন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। মার্কিন গণমাধ্যম সিএনএনকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি ইসরাইলকে এমন হুঁশিয়ারি দেন।

গতকাল বুধবার প্রচারিত সাক্ষাৎকারে বাইডেন বলেছেন, ‘যদি তারা রাফায় হামলা চালায়, তাহলে সেখানে এখন পর্যন্ত যে ধরনের অস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে, এমন অস্ত্র আর আমরা সরবরাহ করবো না। আমরা অস্ত্র ও আর্টিলারি শেল সরবরাহ করবো না।’ খবর বিবিসি’র।

যদিও যুক্তরাষ্ট্র ইসরাইলের ‘পূর্ণ নিরাপত্তা নিশ্চিত’ করা চালিয়ে যাবে বলে জানিয়েছেন বাইডেন।

এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের সরব বিরোধিতা সত্ত্বেও ইসরাইল রাফাহতে একটি বড় আকারের আগ্রাসন চালাতে প্রস্তুত বলে মনে হচ্ছে।

দক্ষিণ গাজার ঘনবসতিপূর্ণ এ এলাকা হামাসের শেষ প্রধান শক্ত ঘাঁটি। যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা সতর্ক করেছেন যে, গাজার অন্যান্য শহর থেকে আসা উদ্বাস্তুদের কারণে পূর্ণ এ শহরে এখন অভিযান চালালে ব্যাপক পরিমাণ বেসামরিক মানুষ হতাহতের ঘটনা ঘটবে।

বাইডেন বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র রাফাহর বর্তমান পরিস্থিতিকে স্থল অভিযান হিসেবে সংজ্ঞায়িত করেনি। তারা জনবহুল এলাকাগুলোতে যায়নি। তারা যা করেছে, সেটা সীমান্তে।

বাইডেন জানান, তিনি ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও যুদ্ধকালীন মন্ত্রীসভাকে পরিষ্কার করে জানিয়েছেন যে তারা যদি জনবহুল এলাকায় যায়, তবে যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন পাবে না।

এ সাক্ষাৎকারে যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র ইসরাইল গাজার বেসামরিক মানুষ হত্যায় ব্যবহার করেছে বলে স্বীকার করেছেন বাইডেন। তবে, ইসরাইল ‘রেড লাইন’ অতিক্রম করেছে কি না- জানতে চাইলে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘এখনও নয়’।

রাফাহতে সম্ভাব্য স্থল অভিযানের বিষয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্টের এসব মন্তব্য এখন পর্যন্ত সবচেয়ে শক্তিশালী সতর্কবার্তা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। এবং প্রথমবারের মতো তিনি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র ইসরাইলে অস্ত্রের চালান বন্ধ করতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্র ইতোমধ্যেই ইসরাইলে হাজার হাজার বোমার চালান আটকে রেখেছে এবং ভবিষ্যতে সরবরাহের বিষয়টি তারা পর্যালোচনায় রাখছে।

বুধবার প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন সিনেটের সামনে সাক্ষ্য দেয়ার সময় পশ্চিমা সামরিক অস্ত্রাগারের সবচেয়ে ধ্বংসাত্মক কিছু অস্ত্র ও বোমার চালান সরবরাহ বিলম্বের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

তবে, যুক্তরাষ্ট্র যে অস্ত্র সরবরাহ আটকে রেখেছে, তা ভবিষ্যতে সরবরাহের জন্য। ফলে এই পদক্ষেপের কারণে তাৎক্ষণিক প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা কম। কিন্তু, ইসরাইল যে হারে এখন বোমা বর্ষণ করছে, তাতে নিকট ভবিষ্যতের হামলাগুলোতেই এর প্রভাব পড়বে বলে মনে করা হচ্ছে।

ইসরাইল সরকার যুক্তরাষ্ট্রের এই পদক্ষেপে হতাশা প্রকাশ করেছে। ইসরাইলি সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, দুই দেশ এসব মতবিরোধ ‘বন্ধ দরজার আড়ালে’ সমাধান করবে।

গাজায় অনবরত বেসামরিক লোকের মৃত্যু ও মানবিক পরিস্থিতি ক্রমাগত খারাপ হওয়ায় ইসরাইলি অভিযানে লাগাম টানতে ডেমোক্র্যাট ও যুক্তরাষ্ট্রের জনগণের একাংশের অভ্যন্তরীণ চাপের মুখে পড়েছেন প্রেসিডেন্ট বাইডেন।

সর্বশেষ সংবাদ

চুক্তি ছাড়াই শেষ যুদ্ধবিরতি আলোচনা, রাফায় চলছে ইসরায়েল-হামাস লড়াই
কর্ণফুলী নদীর তলদেশ থেকে বিধ্বস্ত যুদ্ধবিমান উদ্ধার
রাফায় বড় অভিযান হলে অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ: বাইডেন
বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রীর বাসভবন এলাকায় লোডশেডিংয়ের নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর
নবাবগঞ্জ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ১৩ প্রার্থীর মনোনয়ন দাখিল
ভবিষ্যতে শতভাগ কানেক্টিভিটি তার ভূগর্ভে স্থাপন করা হবে: পলক
নয়া সরকারের ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম বাজেট ঘোষণা ৬ জুন
প্রকল্প-স্থাপনায় ‘শেখ হাসিনা’ নাম না রাখার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর
প্রথম ধাপে ১৩৯ উপজেলায় ভোট পড়েছে ৩৬.১ শতাংশ
৪৬তম বিসিএসের প্রিলির ফল প্রকাশ, উত্তীর্ণ ১০৬৩৮
ইউরোপে ছড়িয়ে পড়েছে ইসরাইলবিরোধী বিক্ষোভ
নওগাঁয় বজ্রপাতে ধানকাটা শ্রমিকের মৃত্যু
ভারত-কানাডা দ্বন্দ্ব চরমে, পাল্টাপাল্টি হুঁশিয়ারি
জামিন পেলেন না মিল্টন সমাদ্দার
চীনের আগে ভারত সফর করবেন প্রধানমন্ত্রী : হাছান মাহমুদ
গাজায় আরো এক গণকবরের সন্ধান, ৪৯ মরদেহ উদ্ধার
মংডুতে তুমুল সংঘর্ষ, টেকনাফ সীমান্তে ফের আতঙ্ক
ভারতে বেড়েছে মুসলিম, কমছে হিন্দুদের সংখ্যা: রিপোর্ট
নির্বাচনে হেরে গেলেন সাবেক কৃষিমন্ত্রী রাজ্জাকের খালাতো ও মামাতো ভাই
শুক্রবার টুঙ্গিপাড়ায় যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী