শনিবার, ১৮ মে ২০২৪ | ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
Dhaka Prokash

গ্রামীণ সাংবাদিকতার প্রবাদপুরুষ কাঙ্গাল হরিনাথ মজুমদার

[উনিশ শতকে বাঙালি সমাজ যে আত্মপ্রতিষ্ঠা ও বিকাশের সুযোগ লাভ করে তার তাৎপর্য ছিল অপরিসীম। যদিও এই নতুন চেতনার পরিধি ছিল মূলত নাগরিক জীবনে সীমাবদ্ধ, তবু কিছু বিলম্বে হলেও ইংরেজি শিক্ষা ও প্রতীচ্য জ্ঞান-বিজ্ঞানচর্চা, স্বজাত্যবোধ ও স্বদেশচিন্তা, সমাজ-সংস্কার ও সমাজ-উন্নয়ন প্রচেষ্টা, সাহিত্য-সংস্কৃতির চর্চা এবং সংবাদ-সাময়িকপত্রের প্রকাশনা-নবচেতনার এসব চিন্তা ও কর্মের হাওয়া এসে লেগেছিল নিস্তরঙ্গ মফস্বলে, এমনকি গ্রামদেশেও। এই পটভূমিতেই ‘কালের যাত্রার ধ্বনি’ শুনতে পেয়ে আবির্ভূত হয়েছিলেন বহুমাত্রিক ব্যক্তিত্ব কাঙ্গাল হরিনাথ মজুমদার। বলা চলে, হরিনাথ ছিলেন ঊনিশ শতকের গ্রামীণ বুদ্ধিজীবীদের প্রধান প্রতিনিধি। অখন্ড ভারতর্ষের সংবাদপত্রের জনক ও গ্রামীণ সাংবাদিকতার প্রবাদ পুরুষ কাঙ্গাল হরিনাথ মজুমদার প্রকাশিত সংবাদপত্র ‘গ্রামবার্ত্তাপ্রকাশিকা’ প্রথম বাংলা সংবাদপত্র। চলমান সংবাদপত্র ও সাংবাদিকতায় তাঁর আদর্শ যেন আজ রূপকথার কাহিনির মতো। বাংলা সাহিত্যে কবি ঈশ্বরগুপ্তের যে ভূমিকা, সাংবাদিকতায় কাঙ্গাল হরিনাথেরও সেই একই ভূমিকা। কবি ঈশ্বরগুপ্ত কলকাতার গুণী সমাজে অবস্থান করেও প্রাচীন ও আধুনিক যুগের সন্ধিক্ষণে যে রক্ষণশীল মনোভাব পোষণ করেছেন, তেমনি কাঙ্গাল হরিনাথ কুমারখালীর মতো এক নিভৃত পল্লীতে বসে সংস্কৃতিচর্চা ও লোককল্যাণের যে আদর্শ প্রতিষ্ঠা করেন তা ব্যতিক্রমধর্মী ও বিস্ময়কর ঘটনা। এর সমতুল্য দৃষ্টান্ত নির্দেশ অসম্ভব বললেও অত্যুক্তি হয় না। এই বহুমাত্রিক লোকোত্তর ব্যক্তি একাধারে ছিলেন সাহিত্যশিল্পী, সংবাদ-সাময়িকপত্র পরিচালক, শিক্ষাব্রতী, সমাজ-সংস্কারক, নারীকল্যাণকামী, দেশহিতৈষী, রায়ত-কৃষকপ্রেমী, সাধক ও ধর্মবেত্তা এবং নব্য-সাহিত্যসেবীদের উদার পৃষ্ঠপোষক। মূলত: তাঁর জীবনের আদর্শ ও কর্ম বিভক্ত হয়ে গেছে সাহিত্য-সংস্কৃতিচর্চা, জনহিতৈষণা ও ধর্মসাধনা- এই তিন ধারায়। কাঙ্গাল হরিনাথ ‘গ্রামবার্ত্তাপ্রকাশিকা’ পত্রিকার মাধ্যমে ঐতিহাসিক অক্ষয়কুমার মৈত্রেয়, সাহিত্যিক মীর মশাররফ হোসেন, সুসাহিত্যিক রায় বাহাদুর জলধর সেন, দীনেন্দ্রনাথ কুমার রায়, শিবচন্দ্র বিদ্যার্ণব প্রমুখ বিখ্যাত কবি ও সাহিত্যিক সৃষ্টি করে গেছেন। তারা সকলেই ছিলেন তাঁর একান্ত আপন ও শিষ্য।]

কাঙ্গাল হরিনাথ মজুমদার ১২৪০ বঙ্গাব্দের ৫ শ্রাবণ (২০ জুলাই ১৮৩০) সালে কুষ্টিয়ার কুমারখালীর কুন্ডুপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। তবে অনেক গবেষকই ২২ জুলাই লিখে থাকেন। পিতা হরচন্দ্র মজুমদার ও মাতা কমলমণি দেবী-যাদের দু’জনকেই হারিয়েছেন ছোটবেলায়। বাল্যকালে কৃষ্ণনাথ মজুমদারের ইংরেজি স্কুলে কিছুদিন অধ্যায়ন করেন। কিন্তু অর্থাভাবে প্রাতিষ্ঠানিক বিদ্যাশিক্ষায় বেশিদুর অগ্রসর হতে পারেননি। তবে সারাজীবন অবহেলিত গ্রামবাংলায় শিক্ষা বিস্তারের জন্য ও শোষণের বিরুদ্ধে সংবাদপত্রের মাধ্যমে আন্দোলন করেছেন তিনি। অত:পর গোপাল কুন্ডু, যাদব কুন্ডু, গোলাপ স্যান্যাল প্রমুখ বন্ধুদের সাহায্যে ১৩ জানুয়ারি ১৮৫৫ সালে নিজ গ্রামে একটি ভার্নাকুলার বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন হরিনাথ মজুমদার। এরপর বেশ কিছুদিন ঐ বিদ্যালয়ে শিক্ষকতার মহান পেশায় নিয়োজিত ছিলেন। পরবর্তীকালে তাঁরই অপার ইচ্ছায় ও অনুরোধে ২৩ ডিসেম্বর ১৮৫৬ সালে কৃষ্ণনাথ মজুমদার কুমারখালীতে মেয়েদের শিক্ষাদানের জন্য একটি বালিকা বিদ্যালয় স্থাপন করেন। অত্যাচারিত, অসহায়, নিষ্পেষিত কৃষক-সম্প্রদায়কে রক্ষার হাতিয়ারস্বরূপ সাংবাদিকতাকেই পেশা ও নেশা হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন। অল্প শিক্ষা নিয়েই তিনি দারিদ্র ও সচেতনতা বিষয়ক লেখনী সংবাদপত্রে প্রকাশ করতেন। প্রথমে কবি ঈশ্বরগুপ্তের ‘সংবাদ প্রভাকর’ পত্রিকায় লিখতেন। ঐ সময় প্রাচীন সংবাদপত্র হিসেবে বিবেচিত ‘সংবাদ প্রভাকর’ পত্রিকাটি কাঙ্গালের কলাম লেখনী বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। পরবর্তীকালে ১৮৬৩ সালের এপ্রিল মাসে কলকাতার গিরীশ চন্দ্র বিদ্যারত্ন মুদ্রণযন্ত্র থেকে তিনি প্রথম মাসিক ‘গ্রামবার্ত্তাপ্রকাশিকা’ ছাপিয়ে প্রকাশ করেন। চার ফর্মার এই মাসিক পত্রিকার মূল্য ছিল পাঁচ আনা যা শেষে এক পয়সার সাপ্তাহিক পত্রিকায় রূপান্তরিত হয়! কিন্তু এরও পূর্বে কাঙ্গাল হরিনাথ ১৮৫৭ সাল থেকেই হাতে লেখা ‘গ্রামবার্ত্তা’ প্রকাশ করে আসছিলেন। ১৮৭৬ সালে কুমারখালীতে অক্ষয়কুমার মৈত্রেয় এর সহায়তায় তাঁর পিতা মথুরানাথ মৈত্রেয় এর নামে কাঙ্গাল নিজ কুটিরে কুমারখালীতে একটি মুদ্রণযন্ত্র (এম এন প্রেস) স্থাপন করেন। এই মুদ্রণযন্ত্র স্থাপনের পর থেকে ‘গ্রামবার্ত্তাপ্রকাশিকা’ মাসিক এ পত্রিকাটি কালক্রমে প্রথমে পাক্ষিক ও সবশেষে সাপ্তাহিকী পত্রিকায় রূপান্তরিত হয়। এতে সাহিত্য, দর্শন, বিজ্ঞান ইত্যাদি বিষয়ক প্রবন্ধ নিয়মিত মুদ্রিত হতো। এছাড়াও কুসীদজীবী ও অত্যাচারী নীলকদের শোষণের কেচ্ছা-কাহিনিও প্রকাশিত হতো। ব্রিটিশ ম্যাজিস্ট্রেট ও দেশি জমিদারদের অব্যাহত হুমকিও তাঁকে এ কাজ করা থেকে বিরত রাখতে পারেনি। রাজশাহীর রাণী স্বর্ণকুমারী দেবী’র অর্থানুকূল্য সত্ত্বেও দীর্ঘ ১৮ বছর পত্রিকা প্রকাশের পর আর্থিক অনটনের কারণে এবং সরকারের মুদ্রণ শাসনব্যবস্থার কারণে পত্রিকাটির প্রকাশনা বন্ধ করে দিতে তিনি বাধ্য হন। হরিনাথ তাঁর দিনলিপি (ডায়েরি) তে লিখেছেন: ‘আমি সম্পাদক, আমি পত্রিকা বিলিকারক, আদায়কারী, পত্র লেখক ও সংসারের কর্তা’। কাঙ্গাল হরিনাথ প্রেস করে নিরন্ন ১০/১২ জনের অন্ন-সংস্থানের ব্যবস্থা করেন। তাইতো আশৈশব জমিদার, মহাজন, কুঠিয়াল ও গোরা পল্টনের অত্যাচার ও উৎপীড়ন প্রত্যক্ষ করে হরিনাথের মনে যে প্রতিকারচিন্তা জাগে সেখান থেকেই তিনি সাময়িকপত্র প্রকাশের প্রেরণা লাভ করেছিলেন। হরিনাথ মজুমদার একনিষ্ঠভাবে সাহিত্য সাধনায় গদ্য ও পদ্য রচনায় যথেষ্ট পারদর্শিতা দেখিয়েছেন। বাউল কীর্তন পাঁচালী ছাড়াও গদ্য-পদ্য, গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ মিলিয়ে ৪২টি গ্রন্থ মুদ্রিত। আছে অপ্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যাও বেশকিছু। মুনতাসীর মামুনের উনিশ শতকে বাংলাদেশের সংবাদ সাময়িক পত্র ১ম খণ্ড থেকে জানা যায়: “অখন্ড ভারতবর্ষে সে সময় (১৮৬৬-৬৭ সাল) সর্বমোট ৩১টি প্রেস বা মুদ্রণযন্ত্র ছিল। এর মধ্যে কলকাতায় ১২টি, ঢাকায় ২টি, রংপুরে ২টি, মুর্শিদাবাদে ২টি, হাওড়ায় ২টি, ময়মনসিংহে ১টি, মেদিনীপুরে ১টি, বর্ধমানে ১টি, হুগলীতে ১টি, ভবানীপুরে ১টি ও শ্রীরামপুরে ৪টি। অন্য একটি তথ্যে (১৮৭২-৭৩) জানা যায় ঢাকায় ৩টি ও নদীয়া তথা কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে ১টি। ১৮৭৩ এর হিসাব মতে প্রকাশিত বাংলা সংবাদপত্রের সংখ্যা ছিল ৩৬টি। এর মধ্যে কলকাতা থেকে ১৭টি, বাকি ১৯টি বিভিন্ন জেলা সদর ও গ্রামাঞ্চল থেকে। চল্লিশ দশকে গ্রামভিত্তিক সংবাদপত্রের যে প্রকাশ শুরু হয়েছিল, পরবর্তী সত্তর দশকে এসে তার বেশকিছুতে সংখ্যাতাত্বিক বাড়বাড়ন্ত ঘটে। এ সময় গ্রামীণ সংবাদপত্রের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো এক. ‘হালিশহর পত্রিকা’, দুই. ‘কাঁচরাপাড়া পত্রিকা’, তিন. ‘মুর্শিদাবাদ পত্রিকা’, চার. ‘বরিশাল বার্তা’ এবং পাঁচ. সর্বোপরি হরিনাথ সম্পাদিত ‘গ্রামবার্ত্তাপ্রকাশিকা’ বিশেষভাবে দেখা যায়।” অতএব যে তরতাজা যুবক হরিনাথের তথ্যানুসন্ধানী প্রতিবাদী লেখা ১৮৬৩ থেকে কলকাতা ছেপেছে, হাতে লিখে পত্রিকা বানিয়ে ১৮৫৭-তে যিনি প্রকাশ করেছেন- বিলিয়েছেন, তার জন্য তিনি বিশেষায়িত নন তিনি অপ্রতিদ্বন্দ্বি আজকের সমগ্র বাংলার মধ্যে প্রথম সাংবাদিক, প্রকাশক, গ্রামীণ ও অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার পথিকৃৎ-প্রাণপুরুষ তিনিই যে কাঙ্গাল হরিনাথ মজুমদার এ বিষয় সন্দেহহীন- তর্কাতীত।



দীর্ঘ আঠারো বছর গ্রামবার্ত্তাপ্রকাশিকা সম্পাদনা করার পর সাংবাদিকতা পেশা পরিত্যাগপূর্বক ধর্ম সাধনায় মনোনিবেশ করেন তিনি। হরিনাথ মজুমদার আধ্যাত্মিক গুরু ও মহান সাধক ফকির লালনের গানের একান্ত অনুরাগী ছিলেন। মরমি গানের সঙ্গে কাঙ্গাল হরিনাথের সম্পর্ক অতি নিবিড়। কাঙ্গাল হরিনাথ তথা হরিনাথ মজুমদার সাংবাদিক পরিচয়ের পরে বাংলা লোক সংস্কৃতি ও বাউল সংগীতের অন্যতম ধারক, বাহক ও অন্যতম পথিকৃৎ হিসেবে জননন্দিত হয়েছিলেন। তিনি ফিকির চাঁদ বাউল নামেও অধিক পরিচিত। হরিনাথ মজুমদার একজন উদার হৃদয় সাধক পুরুষ হওয়ার কারণে তাকে অনেকে ‘ব্রাহ্ম ধর্মাবলম্বী’ও মনে করেছেন। প্রাথমিক পর্যায়ে ‘শখের বাউল’ হিসেবে তাঁর আবির্ভাব হলেও শেষ পর্যন্ত এই বাউলগানের সূত্রেই হরিনাথ তাঁর সাধন-অস্তিত্ব অনুভব করেছিলেন এবং তাঁর শিল্প-শক্তির যথার্থ পরিচয়ও এর মাধ্যমেই প্রকাশ পেয়েছে। তাঁর লোকপ্রিয়তা ও পরিচিতির মূলেও রয়েছে এই বাউলসংগীত। তাঁর জীবনদর্শন, আধ্যাত্মভাবনা ও মরমি-মানসের পরিচয় বিধৃত রয়েছে এসব গানে। কাঙ্গাল হরিনাথ শিষ্য ‘ভারতবর্ষ’ পত্রিকার সম্পাদক রায় বাহাদুর জলধর সেন লিখেছেন: ‘বাঙলা সাহিত্যের ইতিহাসে, বাঙলা সংবাদপত্রের ইতিহাসে কাঙ্গাল হরিনাথের নাম আলোচনায় কখনও কোনদিন তেমন করিয়া উল্লিখিত হয়নি। পল্লীবাসী, জীর্ণকুটীরবাসী, শতগ্রন্থি যুক্তমলিনবেশধারী কাঙ্গাল হরিনাথের জীবনব্যাপী সাধনার সংবাদ কেহই গ্রহণ করেন নাই।... কাঙ্গাল হরিনাথ, পূবর্ববঙ্গের আবাল-বৃদ্ধ-বনিতার নিকটে তাঁহার বাউল সংগীতের দ্বারাই অসামান্য লোক বলিয়া পরিচিত হইয়াছিলেন। এই বাউল সংগীতের সহজ সরল প্রাণস্পর্শী কথায় শিক্ষিত-অশিক্ষিত সর্বশ্রেণির লোকই মুগ্ধ হইতেন। অল্পদিনের মধ্যে বাউল সংগীতের মধুর উদাস সুর হাটে, ঘাটে, মাঠে, নৌকাপথে সর্বত্রই শোনা হইত।’

হরিনাথ বাউলগানের একটি ভিন্ন ‘ঘরানা’ সৃষ্টি করেছিলেন। তিনি ‘কাঙ্গাল’ ও ‘ফিকিরচাঁদ’ ভণিতায় পরমার্থসূচক যেসব বাউলাঙ্গের মরমিগান রচনা করেন তারই সংখ্যা প্রায় হাজারের কোঠায়! তাঁর এই বাউল সংগীতের স্বরূপ ও জনমনে তার প্রভাব সম্পর্কে জানা যায়: “অনেক সংগীতে সংসারের অনেক সুখ-দু:খের কথা ধ্বনিত হইয়াছে বটে, কিন্তু কাঙ্গাল হরিনাথের বাউল সংগীতে হৃদয়ের মধ্যে যেমন সংসারের অনিত্যতা, ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বাস, ভক্তি ও প্রেমভাব জাগাইয়া তুলে, এমন আর কিছুতেই নহে। রূপের গর্ব, ঐশ্বর্যের অভিমান, বাসনার আসক্তি হইতে মানুষ আপনাকে যদি নির্মুক্ত করিতে চাহে, তাহা হইলে তার পক্ষে হরিনাথের সংগীত এক অমোঘ ব্রহ্মাস্ত্র-স্বরূপ। কাঙ্গাল ফিকিরচাঁদ যখন যে স্থানে গমন করিয়াছেন তখনই সেই স্থান হরিনাথের বাউল সংগীতের পবিত্র স্রোতে প্লবিত হইয়া গিয়াছে। ১৮৮০ সালে (বাংলা ১২৮৭) ফিকিরচাঁদ ফকিরের বাউলগানের দল গঠিত হয়। এই দলকে লোকে রসিকতা করে ‘ভূতের দল’ও বলত।” কাঙ্গাল হরিনাথের এই দল-গঠন ও বাউলগান রচনার প্রেরণা এসেছিল বাউলসাধক লালন ফকিরের কাছ থেকে। উনিশ শতকের এই দুই ব্যক্তি লালন ও কাঙ্গালের মধ্যে যে সখ্য সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল, তা ছিল কীর্তিময় এবং সহমর্মিতা ও মৈত্রীর স্মারক। লালন-আবিষ্কারে হরিনাথের ভূমিকা যেমন পথিকৃতের, তেমনই হরিনাথের অর্ন্তজগতের পরিবর্তন, মরমি-ভাবনায় সমর্পণ ও সেই সূত্রে বাউলগান রচনার মূলে রয়েছে লালন সাঁইয়ের একান্ত প্রভাব। একদিকে লালন যেমন হরিনাথের মনে মরমিভাব ও আধ্যাত্মচেতনার বীজ বপন করেছিলেন, অপরদিকে কাঙ্গালের বিপন্ন সময়ে তাঁর পাশে দাঁড়িয়ে লালন আন্তরিক বন্ধুকৃত্য ও সামাজিক কর্তব্যও পালন করেছিলেন। পথ ও পন্থা ভিন্ন হলেও উভয়েই ছিলেন মানব-মিলনপ্রয়াসী লোকায়ত সাধনপথের মরমি-পথিক। এক্ষেত্রে দুজনেরই ‘অমোঘ অস্ত্র’ ছিল তাদের গান, যা কেবল দেহতত্ত্বের নয়, মানবতন্ত্রের ও জীবনসত্যের অনুষঙ্গে ভাবসাধনারও গান। লালনের সঙ্গে কাঙ্গালের ছিল ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। সেই অন্তরঙ্গতার সূত্রেই লালন মাঝে মধ্যে কুমারখালীতে কাঙ্গাল কুটিরে আসতেন। অপরদিকে কাঙ্গালও গিয়ে আসর জমাতেন ছেঁউড়িয়ায় লালনের আখড়ায়। কাঙ্গাল তাঁর ‘গ্রামবার্ত্তাপ্রকাশিকা’ পত্রিকায় জমিদারের প্রজা-পীড়নের সংবাদ প্রকাশ করে বিপন্ন হন। তাঁর সেই দু:সময়ে লালন ফকির শিষ্য-শাবকদের সঙ্গে নিয়ে আক্রান্ত কাঙ্গালের পাশে দাঁড়িয়ে ত্রাণকর্তার ভূমিকা পালন করেন। সেই লালন একদিন কাঙ্গাল কুটিরে এসে তাঁর মরমি বাউল সংগীত পরিবেশন করলে হরিনাথের শিষ্যদের মনে তা গভীর দাগ কাটে। সেই পরিপ্রেক্ষিতেই ইতিহাসবিদ অক্ষয়কুমার মৈত্রেয়’র প্রস্তাব মতো একটি বাউলের দল গঠনের চিন্তা সকলকে প্রাণিত করে। ফলে সঙ্গে সঙ্গেই ‘ফিকিরচাঁদ’ ভণিতা দিয়ে গান রচিত হয় ‘ভাব মন দিবানিশি, অবিনাশী সত্য পথের সেই ভাবনা’। গ্রামবার্ত্তার সহযোগী ও ছাপাখানার কর্মীদের এই অভিনব ‘ফিকির’ হরিনাথের সাগ্রহ অনুমোদনই শুধু লাভ করল না, কাঙ্গাল স্বয়ং তক্ষনি গান রচনায় উদ্যোগী হলেন:

‘আমি কোরব এ রাখালী কতকাল।
পালের ছটা গরু, ছুটে কোরছে আমায় হাল-বেহাল’...

এই হলো কাঙ্গাল রচিত প্রথম গান। এরপর হরিনাথের মনে গানের জোয়ার এলো, একের পর এক রচিত হতে লাগল মনোহর সব বাউলগান। ক্রমে এর সঙ্গে যুক্ত হলেন বিষাদ সিন্ধুর লেখক মীর মশাররফ হোসেন। ‘মশা’ ভণিতায় রচনা করলেন বাউলাঙ্গের অনেক গান। ব্রহ্মজ্ঞানী সাধক বিজয়কৃষ্ণ গোস্বামীকে গভীরভাবে স্পর্শ করল কাঙ্গালের গান। এই গান তাঁর অন্তজীবনে আনল এক বিরাট পরিবর্তন। ব্রাহ্মসমাজের প্রচারের কাজে এই গান হয়ে উঠল এক শক্তিশালী বাহন। এই বিস্ময়কর ভাববিপস্নবের কথা স্মরণ করে জলধর সেন বলেছেন: “কে জানিত যে, আমাদের অবসর সময়ের খেয়াল হইতে যে সামান্য গানটি বাহির হইয়াছিল, তাহার তেজ এত অধিক! কে জানিত যে, এই কাঙ্গাল ফিকিরচাঁদের সংগীতে সমস্ত পূবর্ববঙ্গ, মধ্যবঙ্গ, উত্তরবঙ্গ এবং আসাম প্রদেশ ভাসিয়া যাইবে। কে জানিত যে, সামান্য বীজ হইতে এমন প্রকাণ্ড-বৃক্ষ জন্মিবে! প্রিয়তম অক্ষয়কুমার সত্যসত্যই বলিয়াছেন যে, ‘এমন যে হইবে তাহা ভাবি নাই। এমন করিয়া যে দেশের জনসাধারণের হৃদয়তন্ত্রীতে আঘাত করা যায়, তাহা জানিতাম না।”

মীর মশাররফ হোসেন মূলত কাঙ্গালের প্রেরণাতেই সংগীত রচনায় হাত দেন এবং ফিকিরচাঁদের দলের একজন সৃষ্টিশীল সদস্য হিসেবে গণ্য হন। তাঁর রচিত বাউলগানের কিছু কিছু লহরী (১৮৮৭) গ্রন্থে অন্তর্ভূক্ত হয়েছে। কবি দাদ আলী কাঙ্গাল হরিনাথের প্রভাবে কিছু বাউলাঙ্গের গান রচনা করেন। তাঁর আশেকে রাসুল (প্রথম খণ্ড, ১৯৭০) গ্রন্থে ‘ফিকিরচাঁদের স্বরে রচিত গজল’ নামে কয়েকটি গান সংকলিত হয়েছে, যা হরিনাথের প্রেরণা ও প্রভাবের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। তন্ত্রাচার্য শিবচন্দ্র বিদ্যার্ণব রচিত গানেও কাঙ্গালের প্রভাব পরিলক্ষিত হয়। রজনীকান্ত সেনের ভক্তি-আশ্রিত সংগীত রচনার অন্যতম প্রেরণাও যে কাঙ্গাল হরিনাথ, সে সম্পর্কে ড. সুকুমার সেনের মন্তব্য: “রজনীকান্ত ভক্তিরসের গানের প্রেরণা পাইয়াছিলেন রবীন্দ্রনাথের গান এবং কাঙ্গাল হরিনাথের বাউলগান হইতে। রজনীকান্তের কোন কোন গানে ‘কান্ত’ ভণিতা দেখা যায়। এই ভণিতা দেওয়ার রীতি হরিনাথের রচনা সূত্রে পাওয়া। শুধু তাই নয়, কাঙ্গালের বাউলগান রবীন্দ্রনাথকেও স্পর্শ করেছিল বলে জানা যায়। হরিনাথের ফিকিরচাঁদের দলের অনুসরণে কুমারখালী ও আশপাশ অঞ্চলে বেশ কয়েকটি সংগীতদলের আবির্ভাব হয়। মীর মশাররফ হোসেন জানিয়েছেন, নদীয়া জেলার কুমারখালীতে ফিকিরচাঁদ ফকিরের আবির্ভাব হয়।” ‘ফিকিরচাঁদের দল’ ও বাউলগান রচনার ফলাফল সম্পর্কে হরিনাথ তাঁর দিনলিপিতে উল্লেখ করেছেন: “শ্রীমান অক্ষয় ও শ্রীমান প্রফুল্লের গানগুলির মধ্যে আমি যে মাধুর্য পাইলাম, তাহাতে স্পষ্টই বুঝিতে পারিলাম, এইভাবে সত্য, জ্ঞান ও প্রেম-সাধনতত্ত্ব প্রচার করিলে, পৃথিবীর কিঞ্চিৎ সেবা হইতে পারে। অতএব কতিপয় গান রচনার দ্বারা তাহার স্রোত সত্য, জ্ঞান ও প্রেম-সাধনের উপায়স্বরূপ পরমার্থপথে ফিরাইয়া আনিলাম এবং ফিকিরচাঁদের আগে ‘কাঙ্গাল’ নাম দিয়া দলের নাম ‘কাঙ্গাল-ফিকিরচাঁদ’ রাখিয়া তদনুসারেই গীতাবলীর নাম করিলাম। অল্পদিনের মধ্যেই কাঙ্গাল-ফিকিরচাঁদের গান নিম্নশ্রেণি হইতে উচ্চশ্রেণির লোকের আনন্দকর হইয়া উঠিল। মাঠের চাষা, ঘাটের নেয়ে, পথের মুটে, বাজারের দোকানদার এবং তাহার উপর শ্রেনির সকলেই প্রার্থনা সহকারে ডাকিয়া কাঙ্গাল ফিকিরচাঁদের গান শুনিতে লাগিলেন।”

সমকালীন-সাক্ষ্য মেলে কুমারখালীর প্রাণকৃষ্ণ অধিকারীর বর্ণনা মতে, “১৮৮৩ সালের সময় কাঙ্গাল হরিনাথ মজুমদার ফিকিরচাঁদ ফকিরের গানের বড়ই ধূম, গ্রামের আবালবৃদ্ধবনিতা সকলেই গান শুনিবার জন্য পাগল। প্রথমে যখন গান বাহির হইল তখন সকলের বাড়ি বাড়ি গান গাহিয়া যাইতে লাগিল, খেলকা, চুল দাড়ি, টুপী ব্যবহার করিত এবং কাহার কাহার পায়ে নুপুরও থাকিত, বাদ্যযন্ত্রের মধ্যে ডুগি, খোমক, খুঞ্জুরি, একতারা প্রভৃতি ফকিরের সাজে তাহারা বাহির হইত পরে নিয়ম করিল যাহার বাড়ি গান হইবে তিনি একখানা নিমন্ত্রণপত্র দিলেই তাহারা আসিয়া গান গাহিয়া যাইবে। ফিকিরচাঁদ ফকিরের দল দেখিয়া শেষে গ্রামে গ্রামে অনেক দল সৃষ্টি হইল। আমিও ঐ দেখাদেখি কতকগুলি বালক লইয়া বালকচাঁদের দল করিলাম।”



তাঁর তিরোধানের দিন ১৩০৩ বঙ্গাব্দের ৫ বৈশাখ (১৮ এপ্রিল ১৮৯৬) সালে। উনিশ শতকে কাঙ্গাল হরিনাথের মত এমন কৃতিপুরুষ আর ছিলেন না। তিনি ছিলেন ক্ষণজন্মা লেখক, শিক্ষানুরাগী ও সংগীত ব্যক্তিত্ব। তাঁর মৃত্যুতে ইন্ডিয়ান মিরর পত্রিকা মন্তব্য করেছিল যে: ‘নদীয়া জেলাবাসী একজন মহান ব্যক্তিত্বকে হারালো’। হরিনাথ কাঙ্গাল হয়েও ছিলেন লেখক সাহিত্যিকদের অভিভাবক, ছিলেন সাহিত্যগুরু। তাঁর শীতলছায়ায় উপবেশন করে কত যোগী, কত জ্ঞানী, কত ধ্যানী ধন্য হয়েছেন তা বলার অপেক্ষা রাখেনা। তাঁর ব্যক্তিত্বের কাছে সমকালীন শাসক ও তাদের তল্পিবাহকেরা কুৎসিত ষড়যন্ত্র করে তাঁকে তাঁর আদর্শ থেকে বিচ্যুত করতে পারেনি। কাঙ্গাল হরিনাথের মৃত্যুর পর তাঁর রচনাসমগ্র ‘হরিনাথ গ্রন্থাবলী’ নামে ১৯০১ সালে প্রকাশিত হয়। কাঙ্গাল হরিনাথ মজুমদারের ‘বিজয় বসন্ত’ উপন্যাস প্রসঙ্গে শিবনাথ শাস্ত্রী তাঁর ‘রামতনু লাহিড়ী ও তৎকালীন বঙ্গ সমাজ’ গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন, কুমারখালীর হরিনাথ মজুমদারের প্রণীত ‘বিজয় বসন্ত’ ও টেকচাঁদ ঠাকুরের ‘আলালের ঘরের দুলাল’ বাংলার প্রথম উপন্যাস। ১৯৭৮ সালে ম. মনিরউজ্জামান কর্তৃক সম্পাদিত অপ্রকাশিতব্য কাঙ্গালের ‘বিজয় বসন্ত’ উপন্যাসের ভাব, ভাষা ও চরিত্র নির্মাণে যে বলিষ্ঠতা তা উপন্যাসখানিকে বাংলা সাহিত্যের প্রথম সার্থক উপন্যাসের মর্যাদা দান করে। সময় এসেছে এই মহাত্মার মূল্যায়নের। সাংবাদিকতায় বর্তমান সময়ের নির্ভীক সাংবাদিকদের জাতীয় অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ রাষ্ট্রীয়ভাবে ‘কাঙ্গাল হরিনাথ পদক’ চালু করে সংবাদপত্রের জনক কাঙ্গাল হরিনাথ মজুমদারের স্মৃতির যথাযথ মূল্যায়ন করে তা প্রজন্মের পর প্রজন্ম পৌঁছে দেয়া।

 

 


লেখক: ইতিহাস গবেষক ও প্রাবন্ধিক

Header Ad

সৌদিতে চলতি বছরে প্রথম বাংলাদেশি হজযাত্রীর মৃত্যু

ছবি: সংগৃহীত

চলতি বছর সৌদি আরবে মো. আসাদুজ্জামান নামের এক বাংলাদেশি হজযাত্রী মারা গেছেন। এটিই এবারের হজে প্রথম কোন বাংলাদেশির মৃত্যু। বুধবার (১৫ মে) কিং সালমান হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। তার পাসপোর্ট নম্বর এ-১৩৫৬১০৩৪।

শনিবার (১৮ মে) ভোররাত ৩টার দিকে হজ পোর্টালের আইটি হেল্পডেস্কের প্রতিদিনের বুলেটিন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

হজ ফ্লাইট শুরু হওয়ার পর গত রাত ৩টা পর্যন্ত ২৭ হাজার ১১১ জন হজযাত্রী সৌদি আরব পৌঁছেছেন। অন্যদিকে এখনো ৪ হাজার ২৫৬ জন হজযাত্রীর ভিসা হয়নি।

সবশেষ হিসাবে যত হজযাত্রী সৌদি আরবে পৌঁছেছেন তাদের মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনার হজযাত্রী ৩ হাজার ৭৪৭ জন ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনার ২৩ হাজার ৩৬৪ জন। এখন পর্যন্ত সৌদি আরব যাওয়ার হজফ্লাইট পরিচালিত হয়েছে ৬৮টি।

এর মধ্যে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ২৫টি, সৌদি এয়ারলাইন্সের ২৩টি ও ফ্লাইনাস এয়ারলাইন্স পরিচালিত ফ্লাইট সংখ্যা ২০টি।

চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ১৬ জুন এবারের হজ অনুষ্ঠিত হবে। হজযাত্রীদের সৌদি আরবে যাওয়ার ফ্লাইট শুরু হয় গত ৯ মে। আগামী ১০ জুন পর্যন্ত যাওয়ার ফ্লাইট চলবে। হজ শেষে ২০ জুন ফিরতি ফ্লাইট শুরু হবে। দেশে ফেরার ফ্লাইট শেষ হবে আগামী ২২ জুলাই।

সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী এখন পর্যন্ত ৮১ হাজার একজন হজযাত্রীর ভিসা হয়েছে। এ বছর সরকারি ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনা মিলিয়ে মোট ৮৫ হাজার ২৫৭ জন হজ করতে যাবেন। সে হিসাবে এখনো ৪ হাজার ২৫৬ জন হজযাত্রীর ভিসা হয়নি।

এবার বাংলাদেশ থেকে সরকারি ব্যবস্থাপনায় ৪ হাজার ৫৬২ জন ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় এজেন্সির মাধ্যমে ৮০ হাজার ৬৯৫ জন হজ করতে যাবেন।

যমজ ২ বোনকে হাতুড়ি দিয়ে পেটালেন ছাত্রলীগ নেতা

হাতুড়িপেটায় আহত দুই বোন। ছবি: সংগৃহীত

পাবনার চাটমোহরে যমজ দুই বোনকে হাতুড়ি দিয়ে পেটানোর অভিযোগ উঠেছে এক ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে। আহতদের চাটমোহর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।

শুক্রবার (১৭ মে) দুপুরে চাটমোহর উপজেলার পৌর সদরে উথুলি খামারপাড়া মহল্লায় ওই ঘটনা ঘটে।

আহত দুই বোন মিম (২০) ও লাম (২০) চাটমোহর পৌরসভার আরাজি উথুলী খামারপাড়া মহল্লার রেজাউল করিম রিজুর যমজ মেয়ে। অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতা একই এলাকার রফিকুল ইসলামের ছেলে আলিফ ইয়ামান পায়েল (২২)। তিনি চাটমোহর পৌর ছাত্রলীগের সভাপতি।

এ ঘটনায় থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন আহত দুই বোনের বাবা রেজাউল করিম রিজু। লিখিত অভিযোগে জানা গেছে, বাড়ির পাশে কদম গাছের ডাল কাটছিলেন ছাত্রলীগ নেতা পায়েল। এ সময় প্রতিবেশী রেজাউল করিমের মেয়ে লাম তাকে গিয়ে বলেন গাছ কাটার সময় তাদের কলা গাছ যেন নষ্ট না হয়।

এ নিয়ে কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে ছাত্রলীগ নেতা পায়েল হাতুড়ি দিয়ে লামকে আঘাত করে গুরুতর আহত করে। এ সময় তার যমজ বোন মিম এগিয়ে এলে তাকেও হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে আহত করা হয়। পায়েল ও তার বাবা-মা মিলি যমজ দুই বোনকে বেধড়ক মারধর করে।

পরে চিৎকার চেঁচামেচি শুনে দুই বোনের পরিবারের লোকজন গিয়ে এলাকাবাসীর সহায়তায় তাদের উদ্ধার করে চাটমোহর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। এ বিষয়ে চাটমোহর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন আহত দুই বোনের বাবা।

অভিযুক্ত চাটমোর পৌর ছাত্রলীগের সভাপতি আলিফ ইয়ামান পায়েল বলেন, আমার মায়ের সঙ্গে ওরা দুই বোন মারামারি করছিল। আমি সেখানে ঠেকাতে গিয়েছিলাম, তাদেরকে মারিনি। আমাকে ফাঁসানোর জন্য আমার বিরুদ্ধে অহেতুক অভিযোগ করা হয়েছে।

চাটমোহর উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি হুমায়ুন কবির বলেন, বিষয়টি আমি শুনেছি। এটি অত্যন্ত নিন্দনীয় কাজ। সন্ত্রাসীমূলক কর্মকাণ্ডের জায়গা ছাত্রলীগে নেই। যদি সে দোষী সাব্যস্ত হয়, আমি তার বিরুদ্ধে শাস্তির দাবি জানাই। যেহেতু ছাত্রলীগের কমিটি জেলা ছাত্রলীগের নিয়ন্ত্রণে। সে কারণে জেলা ছাত্রলীগ এই বিষয়টি দেখবে।

চাটনোহর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সেলিম রেজা বলেন, অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত সাপেক্ষে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মিজানুর রহমান সবুজ বলেন, বিষয়টি এখনো আমি জানি না। যদি এমন ঘটনা ঘটে থাকে এবং আমরা তদন্ত করে সত্যতা পেলে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

যুক্তরাষ্ট্রে যাচ্ছেন ৩০ ব্যাংকের এমডি

বাংলাদেশ ব্যাংক। ছবি: সংগৃহীত

দেশের সরকারি-বেসরকারি প্রায় ৩০টি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) যুক্তরাষ্ট্র যাচ্ছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর কাজী ছাইদুর রহমানও তাদের সঙ্গে যাচ্ছেন। অফশোর ব্যাংকিং হিসাবের আওতায় প্রবাসীরা যাতে দেশের বিভিন্ন ব্যাংকে ডলার জমা রাখতে উদ্বুদ্ধ হন, সে জন্য আয়োজিত নানা প্রচারণায় অংশ নেবেন তারা। পাশাপাশি অর্থ পাচার প্রতিরোধসংক্রান্ত একটি অনুষ্ঠানেও তাদের যোগ দেওয়ার কথা রয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, আগামী ২৪ মে নিউইয়র্কে একটি হোটেলে অফশোর ব্যাংকিং বিষয়ে প্রচারণা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। অনুষ্ঠানের খরচ বহন করবে ব্যাংকগুলো। যেখানে প্রধান অতিথি থাকবেন যুক্তরাষ্ট্রে নিয়োজিত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ ইমরান।

অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন নিউইয়র্কে জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি মোহাম্মদ আব্দুল মুহিত, ডেপুটি গভর্নর কাজী ছাইদুর রহমান, নিউইয়র্কে বাংলাদেশ কনস্যুলেট জেনারেল মোহাম্মদ নাজমুল হুদা। বক্তব্য দেবেন- অগ্রণী ব্যাংকের এমডি মুরশেদুল কবীর, ব্র্যাক ব্যাংকের এমডি সেলিম আর এফ হোসেন, ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের এমডি আবুল কাশেম মো. শিরিন, ব্যাংক এশিয়ার এমডি সোহেল আর কে হুসেইন, সিটি ব্যাংকের এমডি মাসরুর আরেফিন।

পাশাপাশি একই সময়ে ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব জাস্টিসের আয়োজনে আন্তর্জাতিক ব্যাংক সম্মেলনে অনুষ্ঠিত হবে। এ অনুষ্ঠানে যোগ দিতে যুক্তরাষ্ট্রে যাচ্ছেন আরও ২৫ জন এমডি। জানা গেছে, বাংলাদেশ ব্যাংক ইতোমধ্যে এসব ব্যাংক এমডির বিদেশ যাওয়া–সংক্রান্ত নথি অনুমোদন করেছে।

এদিকে দেশের ডলার–সংকটের এ সময়ে ব্যাংক খাতে ডলারের জোগান বাড়াতে বিভিন্ন ব্যাংক অফশোর ব্যাংকিংকে বিশেষ জোর দিয়েছে। এ জন্য নানা ধরনের প্রচার–প্রচারণাও চালাচ্ছে ব্যাংকগুলো। তারই অংশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী বাংলাদেশিদের অফশোর ব্যাংকিংয়ের আওতায় ডলার জমায় উদ্বুব্ধ করতে দেশটিতে প্রচারণামূলক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।

সর্বশেষ সংবাদ

সৌদিতে চলতি বছরে প্রথম বাংলাদেশি হজযাত্রীর মৃত্যু
যমজ ২ বোনকে হাতুড়ি দিয়ে পেটালেন ছাত্রলীগ নেতা
যুক্তরাষ্ট্রে যাচ্ছেন ৩০ ব্যাংকের এমডি
গাজায় দীর্ঘমেয়াদে লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত হামাস
কেএনএফের নারী শাখার সমন্বয়ক আকিম বম গ্রেপ্তার
সবচেয়ে দক্ষ প্রশাসকের নাম শেখ হাসিনা : ওবায়দুল কাদের
দুধ দিয়ে গোসল করানো হলো মুক্ত নাবিক সাব্বিরকে, পরিবারে বইছে খুশির জোয়ার
ট্যুরিস্ট ভিসায় ৩ দিন ভারত ভ্রমণ করতে পারবেন না বাংলাদেশীরা
গোবিন্দগঞ্জে বিয়ের প্রলোভনে ধর্ষণের ঘটনায় যুবক গ্রেফতার
গাজীপুরের কালীগঞ্জে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় চালকসহ দুইজনের মৃত্যু
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বিরূপ প্রভাব ঠেকাতে আসছে আইন : তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী
টেনিসের জন্য এই মুহূর্তে এটাই সবচেয়ে ভালো অনুভূতি : নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী
গাজায় ইসরায়েলের হামলা হামাসের জন্যই: মাহমুদ আব্বাস
নুসরাত ফারিয়ার সঙ্গে প্রেম নিয়ে মুখ খুললেন জায়েদ খান
২০২৭ নারী ফুটবল বিশ্বকাপের আয়োজক ব্রাজিল
স্বর্ণ পাচারের ‘গোল্ডেন রুটে’ পরিণত হচ্ছে খুলনা
বিএনপির সময় ঋণখেলাপির তালিকা সবচেয়ে বড় ছিল : আইনমন্ত্রী
বাংলাদেশিরা মাত্র ১ দিনেই পাবেন ভারতের ভিসা!
গুগল অ্যাস্ট্রা : হারানো জিনিস খুঁজে পাবেন নিমিষেই
লাগামহীন নিত্যপণ্যের বাজার, দিশেহারা ক্রেতারা