মাছ, ফসলের দেশে
একদিন সকাল থেকে রাতে বেড়ালেন তারা বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে। সে গল্প লিখেছেন ও ছবি দিয়েছেন ঢাকা প্রকাশের গণ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি ইহসানুল কবির আনিন
অনেকেই জানেন না, গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের খুব ভালো একটি সাংবাদিক সমিতি আছে। তাদের জন্য আলাদা একটি রুমের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা ও গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের অন্যতম ট্রাষ্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। সেখানে আছে কম্পিউটার, ফ্যান, লাইট-সবই। এই সমিতির প্রতিষ্ঠাতা আসিফ আল আজাদ ভাই। অনেকেই তাকে চেনেন, যারা ক্যাম্পাস সাংবাদিকতা করেন। সমিতিটিকে ভাইয়ের মতো লালন করে চলেছেন আইন বিভাগের অনেক আগে সাবেক হয়ে যাওয়া ছাত্রটি। এই সমিতির যেকোনো কাজে তিনি সবার আগে। যখন পড়তেন, তখন থেকে ভাবতেন একদিন আমরা সবাই মিলে বেড়াতে যাব বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে।
যারা জানেন না, তাদের বলি-আজকের বাংলাদেশের যে কৃষি ও মৎস্যখাতে বিপ্লব সেটি বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে এই কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়েরই দান। একজন সাংবাদিক, যিনি পরম মমতায় খবরগুলো তুলে আনেন পত্রিকার পাতায় বছরের পর বছর, আরেকজন সাংবাদিক, যিনি ভিন্নধারার, কম গুরুত্বপূর্ণ সংবাদের নায়ক; তাদের বাদে এই দেশের অথনীতি ও মানুষের জীবন দাঁড়িয়ে আছে বাংলাদেশে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মেরুদন্ডে ভর দিয়ে।
কী নেই-সব আছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েন ১১শর বেশি গ্রাজুয়েট ছাত্র, ছাত্রী; আছে মৎস্য ও পরিবেশের বাকিসব গবেষণাগারও। প্রাতিষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় অত্যন্ত শক্তিশালী।
টাকা-পয়সার অভাবে যাওয়া হচ্ছিল না অনেক দিন ধরে। তবে আমাদের গণ বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি (গবিসাস)’র নবম কমিটি গড়ে তোলার পর তো নিয়মমাফিক বেড়াতে যেতে হয়। ফলে আর পেছনে ফেরার সুযোগ নেই। অনেক ভেবে, ফেইসবুক ম্যাসেঞ্জারে আলোচনার পর ঠিক হলো-এবার যাওয়া হবে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের জন্মস্থানে। বেড়াতে যাব আমরা বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির প্রতিষ্ঠাতা মনি সিংহের দেশে।
১২ ফেব্রুয়ারি সকালে সাভারের নবীনগর থেকে আমরা মোট ছয় জনে বাসে চড়ে বসলাম। কারা আছি পুরো দলে? গবিসাসের সভাপতি অনিক আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক তানভীর আহমেদ, নির্বাহি সদস্য নাজমল হাসান, সাধারণ সদস্য আখলাক রাসেল, ইউনিলিভারের আঞ্চলিক বৈজ্ঞানিক নিবাহি খালিদ হাসান, তার স্ত্রী ও একই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী হিমালয়া অদ্রি ও রকিবুল ইসলাম।
বাসে এর, তার খবর নিয়ে, সিনিয়র-জুনিয়রের আলাপে চলে এলাম গাজীপুরে। সেখানে অপেক্ষা করছিলেন আসিফ ভাই। আমরা নেমে এলাম। তিনি সবাইকে শুভেচ্ছা ও ভালোবাসা জানালেন। চায়ের দোকানের খানিক আড্ডা শেষে আমাদের ব্রক্ষ্মপুত্রের শহর ময়মনসিংহের জন্য বাসে চড়তে হলো। বাসে গল্প, আড্ডা আর সাংবাদিকতার হাল-হাকিকত ও গণবিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবাদিকতার নানা টিপস, বিভিন্ন বিষয় আলোচনায় এলো। আমাদের ক্যাম্পাসে সাংবাদিকতার মান অনেক বেড়েছে। অনেকে লেখে বিভিন্ন কাগজে। তারা, ক্যাম্পাসের বন্ধু, নানা সামাজিক ও রাজনৈতিক আলাপের ভীড়ে মতপ্রকাশ হলো। আমাদের ভাবনাগুলোতে অন্যরা খুব খুশি। গল্পও চলেছে দেদার। প্রকৃতি দর্শনও। তবে সামনে আমাদের জন্য অপেক্ষা করে আছে প্রকৃতির অন্যতম স্রষ্টা নিজেই। সে তো আর জানি না।
পৌঁছালাম যখন তার কোলে, তখন দুপুর গড়িয়ে চলেছে। মনমনসিংহ শহরের পাশে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়। ময়মনসিংহের প্রাণ। ক্যাম্পাসটিতে যখন গেলাম, চোখ ছানাবড়া হয়ে গেল। বিভিন্ন জায়গাতে, ভবনগুলোর পাশে, মাঠের, পুকুরের, গবেষণাগারের ভীড়ে জ্বল, জ্বল করে ফুটে থাকার ফুলের রাশি আমাদের বরণ করে নিলো আপন মমতায়। তাই মনে হলো-আরে, মাছের, গাছের, ফসলের এই বিশ্ববিদ্যালয় তো ফুলেরও ক্যাম্পাস। পুরো বিশ্ববিদ্যালয়ই তো ফুলের রাজ্য একটি।
আড্ডাবাজের দল সবার আগে ঢুকে পড়লাম টিএসসিতে। সেখান থেকে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছবি হিসেবে খ্যাতি পাওয়া রেললাইনের পাশে দাঁড়িয়ে ছবি তুলে ফেললাম। তারপর লো-ডাউন ব্রিজ। বেড়াতে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য আপনাদের এই ব্রিজ নিয়ে বললাম না। ফিরে আপনারা গল্প করবেন বলে আমাদের ফটোসেশনের সঙ্গী হোন। দেখলাম একটি প্রচণ্ড গতির রেলগাড়ি আমাদের অনেক দূর দিয়ে চলে গেল। এরপর বিখ্যাত জব্বারের মোড়। সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিরচেনা দোকানগুলো থেকে আমাদের দুপুরের খাবার সারা হলো।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সভাপতি কালের কন্ঠের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি, অনেকগুলো লেখা যার ছাপানো হয়েছে এখানে, সেখানে-সেই আবুল বাশার মিরাজ চলে এলেন। তাদের বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের নামকরা সাংবাদিক সমিতি। যাদের আলাদা রুম আছে, ভেতরটি খুব সুন্দর; তার ক্যাম্পাসের মতোই। তিনি আমাদের সঙ্গী হলেন, আমরাও দেখে নিলাম-কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বোটানিক্যাল গার্ডেন, সেন্টাল লাইব্রেরি, বঙ্গবন্ধু স্মৃতিচত্বর, ব্রক্ষ্মপুত্র নদের বাঁধানো পাড়।
বোটানিক্যাল গার্ডেন দেখে মনটি ভরে গেল-আছে গবেষণা ও শিক্ষকতার কাজের নানা জাতের অসংখ্য বিলুপ্ত প্রায় গাছগাছালির সারি। অনেক যত্নে অধ্যাপক ড. আবদুর রহিম ও অন্যরা এটি গড়ে তুলেছেন ভবিষ্যতের কৃষি ও মৎস্যবিদদের জন্য। গ্রামের ছেলেমেয়ে হয়েও আমাদের চোখে পড়েনি, চিনি না-এমন গাছেরও কমতি নেই। ফলে ছবি তুলতে দেরি হলো না।
বিকেলে চলে গেলাম সমিতির অফিসে। আমাদের খবর ছাপানো ও কষ্টের গল্পগুলো শেয়ার হলো। নানা বিষয়ে ঐক্যমতে পেঁছালাম দুটি সাংবাদিক সমিতির সদস্যরা। তারপর অধ্যাপকের বাড়িতে গেলাম। নামটি আমি ভুলে গিয়েছি। শেষে সন্ধ্যা নেমে গেল। চলে এলাম শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন পার্ক’-এ। সেখানে আমাদের সঙ্গী হলেন আমাদের গণ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করে যাওয়া ময়মনসিংহে বাস করা একজন বড় ভাই ও আপু। তারা এখানে সংসার পেতেছেন। তারা খাওয়ালেন।
চলে গেলাম ব্রক্ষ্মপুত্রের তীরে। ভারতবর্ষের অন্যতম প্রধান এই নদীর তীরে ঘন্টাখানেক কীভাবে কেটে গেল ক্লান্তি আর চায়ের কাপে জানতেই পারলাম না। আড্ড চলেছে তো।
আটটার বাস ধরতে হবে। ফলে আবার শহরের মোড়ে। বাসে রাত ১২টায় ফেরার আগ পর্যন্ত চা দোকান আর গল্পের ভীড়ে কাটলো গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র-জুনিয়র সাংবাদিকদের। খুব ভালো কেটেছে দিনটি। নতুন কজন মানুষের হৃদয়ের ভালোবাসা নিয়ে ফিরে এলাম আমরা চমকে দেওয়া ক্যাম্পাস থেকে। এভাবে প্রতিটি দিন আনন্দে বাঁচতে পারলে খারাপ হতো না।
ওএস।