ঘুরে আসুন ‘বাংলার ভূস্বর্গ’ সিলেটের সাদাপাথর
সবুজে মোড়ানো মেঘালয় পাহাড় ঘিরে রেখেছে মেঘ, পাদদেশ ছুঁয়ে বহমান স্বচ্ছ শীতল জলরাশি। উঁচু-নিচু ঢেউ এসে খেলছে ধলাই নদের বুকে। ওপারে ভারতের মেঘালয় রাজ্য, এপারে বাংলাদেশের সাদাপাথরের রাজ্য। পাঁচ একর জমিতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে এই সাদাপাথর। নাম ‘সাদাপাথর’ হলেও এখানে পাথর কেবল সাদা নয়, অন্য রঙের পাথরেরও দেখা মেলে।
প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপার লীলাভূমি সিলেটের সীমান্তবর্তী কোম্পানিগঞ্জ উপজেলার ভোলাগঞ্জে অবস্থিত সাদাপাথর। ধলাই নদের উৎসমুখ এ পয়েন্টটি।
ধলাই নদের বুক চিরে নৌকাযোগে সাদাপাথরের পথে যেতে যেতে দেখা মেলে প্রকৃতির নৈসর্গিক দৃশ্যগুলো। চোখ ধাঁধানো দৃশ্যে যে কেউ হারিয়ে যেতে চাইবে প্রকৃতির অবারিত মোহনীয় জাদুতে।
যা যা দেখবেন সাদাপাথরে
নদের বুকে পাহাড়ি ঝর্ণার স্নিগ্ধ জলরাশি পর্যটকদের বেশ আকর্ষণ করে। অক্সিজেন টিউব ব্যবহার করে অনেকেই ভাসেন ধলাইয়ের বুকে। জীবনকে খানিকটা চাঙা করতে অনেকেই ডুব দেন ধলাইয়ের শীতল জলরাশিতে।
পাথরের বাঁকে বাঁকে অক্সিজেন টিউব দিয়ে অনেকেই সাঁতরে পার হন ধলাইয়ের বুক। এ এক অসাধারণ রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা! কী ঠান্ডা পানি, কী স্বচ্ছ! দেখে মনে হবে, ফিল্টারিং করা!
নদের পানিতে নামতে হলে আপনার জিনিসপত্র রাখার জন্য এখানে সুব্যবস্থা রয়েছে। সামান্য খরচে জিনিসপত্র নিরাপদে রেখে নিতে পারেন এক রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা।
সাদাপাথরে মুগ্ধতা
সাদাপাথরে গেলেন; কিন্তু সাদাপাথর দেখলেন না, তা কী করে হয়? ধলাই নদের তীরে বিস্তীর্ণ ভূমিতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে সাদা পাথরের স্তুপ। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, প্রায় পাঁচ একর জমিতে সাদাপাথর বিছিয়ে আছে। এক অসাধারণ নিপুণতায় ছড়িয়ে আছে এ সৌন্দর্য। পাহাড়, পাথর আর নদের মিশেলে আপনি খুঁজে পাবেন এক অদ্ভুত শৈল্পিকতার অনন্য নিদর্শন।
সতর্কতা
সাধারণত সাদাপাথর যেহেতু বাংলাদেশ-ভারতের একটি সীমান্তবর্তী অঞ্চল। সুতরাং কোনোভাবেই ভারতীয় সীমানায় প্রবেশ করা যাবে না। অন্যদিকে, নদের জলে গোসল করতে নামলে অবশ্যই লাইফ বয়া বা অক্সিজেন টিউব ব্যবহার করতে হবে। না হলে কোনো অঘটনের আশঙ্কাও থেকে যাবে। তা ছাড়া পর্যটক হিসেবে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে, কোনোরকম চিপসের প্যাকেট বা আবজর্না সৃষ্ট কোনো বস্তু সেখানে ফেলছেন কি-না। কারণ এসব পরিবেশ দূষণ করবে এবং ওই এলাকার পরিবেশ নষ্ট হলে আমরা হারাব নয়নাভিরাম সৌন্দর্যের এক পর্যটন কেন্দ্র।
যাতায়াত
বাস, ট্রেন অথবা আকাশপথে সিলেটে যাওয়া যায়। নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বলছি। সিলেট শহরের উপশহর থেকে আমরা প্রথমে গিয়েছিলাম নগরীর আম্বরখানায়। সেখান থেকে সাদাপাথর নামের বাসে করে সরাসরি চলে যাবেন কোম্পানিগঞ্জ উপজেলার ভোলাগঞ্জ পয়েন্টে। সেখানে গেলেই ধলাই নদ। আর এখান থেকে নৌকা ভাড়া করে আপনি যেতে পারবেন সাদাপাথর পয়েন্টে বা ধলাই নদের উৎসমুখে।
আকাশপথে সিলেটের জনপ্রতি সর্বনিম্ন ভাড়া তিন হাজার টাকা, সর্বোচ্চ সাত হাজার টাকা, অন্যদিকে সড়ক বা রেলপথে সিলেট যেতে আপনার লাগবে সর্বোচ্চ জনপ্রতি ৫০০ টাকা করে। নগরীর টিলাগড় পয়েন্ট থেকে আম্বরখানায় যেতে ভাড়া ৩০ টাকা, সেখান থেকে সাদাপাথর বাসে ভোলাগঞ্জ জিরো পয়েন্টে যেতে ভাড়া ৭০ টাকা। জিরো পয়েন্টে নেমে ধলাই নদের তীরে গেলেই সাদাপাথর যাওয়ার নৌকা পাবেন। একটি নৌকা ৮০০ টাকা ভাড়ায় আসা-যাওয়া। দলবদ্ধ হয়ে গেলে তো ভালোই, তা না হলে অন্যদের সঙ্গে শেয়ার করে খরচটা কমিয়ে নিতেন পারেন।
এসএ/