‘সেন্টমার্টিনে থাকতে পারবে না পর্যটক, সরতে হবে স্থানীয়দেরও’
ছবি সংগৃহিত
সেন্টমার্টিন বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ। দক্ষিণাঞ্চলীয় নয়নাভিরাম এই দ্বীপের সৌন্দর্য অবলোকনে পর্যটকদের ভিড় লাগামহীনভাবে বাড়তে থাকায় সেখানকার পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছে। নষ্ট হয়ে যাচ্ছে দ্বীপের চারপাশের প্রবাল। এমন সময়ে এসে দ্বীপকে বাঁচাতে চাইলে সেন্টমার্টিনে কোনো পর্যটক রাত্রীযাপন করা যাবে না। হোটেল-মোটেলও থাকতে পারবে না। স্থানীয়দেরও সেন্টমার্টিন থেকে সরাতে হবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইন্সটিটিউটের মহাপরিচালক ড. তৌহিদা রশীদ।
গত রোববার (২৮ জানুয়ারি) দুপুরে কক্সবাজারস্থ বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউট (বোরি) আয়োজিত আন্তর্জাতিক সমুদ্র বিষয়ক গবেষণা সম্মেলনের শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, দ্বীপটিতে প্রতিদিন অনিয়ন্ত্রিত পর্যটকদের যাতায়াত, অপরিকল্পিত স্থাপনা নির্মাণ, পরিবেশ দূষণ, পর্যটকদের অসচেতনতা এবং দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণের কারণে সেখানকার ইকো-সিস্টেম অর্থাৎ প্রতিবেশ ও জীব-বৈচিত্র্য ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এসিডিটি এবং দূষণ প্রক্রিয়ার ফলে সেন্টমার্টিনের প্রবাল খসে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। পানি যখন স্বচ্ছ এবং পরিমাণ কম থাকে তখন সূর্যের আলো সরাসরি প্রবালে গিয়ে পড়ে। এর ফলে প্রবালের গঠনটা হয়। কিন্তু সেন্টমার্টিনে দেখা যাচ্ছে অতিরিক্ত দূষণ, এসিডিটির পরিমাণ এতো বেশি বেড়ে গেছে প্রবালের গঠন সম্ভব হচ্ছে না। এছাড়া প্রবাল দিন দিন ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। প্রবালের মূল উপাদান হচ্ছে ক্যালসিয়াম কার্বোনেট। পিএইচ কতটুকু হলে প্রবালের স্বাস্থ্য ভালো থাকে এমন একটা বিষয় আছে। যখন পিএইচ কমে যাচ্ছে তখন এসিডিফেকেশন প্রক্রিয়ার দিকে যাচ্ছে। ফলে প্রবালের স্বাস্থ্যটা নষ্ট হয়ে যায় এবং ভেঙে যায়। এটাই সেখানে হচ্ছে।
সেন্টমার্টিনকে বাঁচাতে হলে দুটি পরামর্শ দিয়ে সমুদ্র গবেষণা ইন্সটিটিউটের এই মহাপরিচালক বলেন, সেন্টমার্টিনকে রক্ষা করতে প্রথমত দূষণ একেবারেই বন্ধ করতে হবে। দ্বিতীয়ত দ্বীপটিতে পর্যটকরা যাবে কিন্তু রাত্রীযাপন করতে পারবে না। একদমই থাকা যাবে না। বিরক্ত একেবারেই করা যাবে না। পর্যটকরা যাবে এবং চলে আসবে। সেখানে কোনো হোটেল-মোটেল রাখা যাবে না। যেহেতু সেন্টমার্টিনকে মেরিন প্রটেক্টেড এরিয়া (সামুদ্রিক সংরক্ষিত এলাকা) ঘোষণা করেছে সরকার সেহেতু এখানে থাকা-খাওয়ার কোনো ব্যবস্থা করা যাবে না। এমনকি যারা ওখানে বসবাস করছে স্থানীয় মানুষ সরকারের উচিত তাদেরকেও অন্য জায়গায় স্থানান্তর করা। কারণ সেখানে কোনো মানব বসতির সুযোগ থাকবে না। যেহেতু বিরল একটি দ্বীপ শুধুমাত্র দেশি-বিদেশি পর্যটকরা ঘুরতে যাবে এবং ঘুরে চলে আসবে। এরকম যদি করা যায় তাহলে প্রবাল ধ্বংস বন্ধ হবে।
বিষয়টিকে স্বাগত জানিয়েছেন পরিবেশবাদীরা। সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালকের বক্তব্য বাস্তবায়ন করলেই সেন্টমার্টিনকে বাঁচানো যাবে বলে মনে করছেন তারা।
তবে বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। তিনি মোবাইল ফোনে বলেন, আজকে উনি যে কথাটি বলেছেন সেটি কাঙ্গালের কথা বাসি হলে ফলে এ রকম অবস্থা। আমরা বিগত ২০-২৫ বছর ধরে এ কথাগুলো বলে যাচ্ছি। কথাগুলো দেশের আইনেও আছে; আদালতেও বারবার একই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে কিন্তু পর্যটন মন্ত্রণালয়ের অনড় অবস্থানের কারণে পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি দিন দিন অবনতি হয়েছে। যদি আমরা সেন্টমার্টিনের পর্যটন শিল্পকে বাঁচাতে চাই তাহলে তো প্রথমে সেন্টমার্টিনকে বাঁচাতে হবে। আমরা স্বর্ণের ডিম পাড়া হাঁসের মতো প্রথমে হাঁসটাকে মেরে ফেলছি তারপর আশা করছি আরও বেশি ডিম পাব। সেটাতো হতে পারে না।
বেলার প্রধান নির্বাহী বলেন, আইন, আদালত এবং পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের যে অবস্থান আছে, পর্যটন মন্ত্রণালয়ের উচিত সেটাকেই মেনে নেওয়া। আইন, আদালত আর জনস্বার্থের বিরুদ্ধে গিয়ে পর্যটনকে টিকিয়ে রাখা যাবে না। পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের উচিত সেন্টমার্টিনে যেসব হোটেল-মোটেল আছে তার বেশিরভাগ ভেঙে দেওয়া। আগে সেন্টমার্টিনকে বাঁচাতে হবে পরে পর্যটনের কথা ভাবা যাবে। রাতযাপন তো একেবারেই নিষিদ্ধ করতে হবে। প্রয়োজনে স্থানীয় জনগোষ্ঠীকে ধীরে ধীরে পুনর্বাসন করতে হবে।