ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকে কাজ করছেন ছবি মেলার শহিদুল আলম
আজ ২৬ জানুয়ারি, ২০২২।
ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক সোসাইটি নিয়োগ করেছে মার্কিন শিল্পী-ডিজাইনার ও স্থপতি মায়া লিন ও বাংলাদেশের বিশ্বখ্যাত ফটোগ্রাফিক ইনিস্টিটিউট পাঠশালার প্রধান শহিদুল আলমকে ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক এক্সপ্লোরার অ্যাট লার্জ (তারা বিস্তৃতভাবে অভিযাত্রীর নিয়োগটি লাভ করলেন)। খেতাবটি সেই সুযোগগুলো নিয়ে এসেছে তাদের জন্য, যেগুলো ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক সোসাইটির দূতের সুবিধাদিতে আছে। পাশাপাশি তাদের সমাজ ও বিশ্বের জন্য প্রভাবশালী কাজে সাহায্য করার সুযোগ লাভ করলো সোসাইটি। সম্মানটি তাদের ওপর অর্পিত হয়েছে আরো কজন বৈশ্বিক পরিবর্তনকারী ও ভাবনাকে বদলে দেওয়া ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক কিংবদন্তী নেতা যেমন বব ব্যালাড, রডরিগো মেডেলিন, সিলভিয়া আরলে ও মৃত টমাস লাভজয়ের মতো।
‘১৩৪ বছর ধরে দি ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক সোসাইটি তাদের নানা ধরণের (বিজ্ঞান ও অভিযানের; মানুষের) গল্প বলার ক্ষমতাগুলোর জন্য স্বীকৃত হয়েছে। আমরা (ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক) এই নতুন সুপারহিরোদের বিশ্বজুড়ে প্রভাব বিস্তারে লাফিয়ে পড়তে ব্যবহার করতে চাই’-এরপর বলেছেন কেইটলিন ইয়ানো, প্রতিষ্ঠানটির চিফ স্টোরি টেলিং অফিসার। আরো জানিয়েছেন, ‘তাদের কর্মজীবনের পুরোটা ধরে মায়া ও শহিদুল পরিস্কারভাবে প্রদর্শন করেছেন নিজেদের উদ্যম, সক্ষমতা ও উদ্ভাবনকে গল্প বলিয়ে হিসেবে এবং আমরা তাদের সঙ্গে এগুলো উদযাপনের জন্য সামনের দিকে তাকিয়ে আছি।’
এই ভূমিকাতে প্রতিটি এক্সপ্লোরার অ্যাট লাজ বছরে একটি করে বৃত্তি লাভ করবেন। সোসাইটির সারিবদ্ধভাবে করতে হয় এমন কাজগুলোর লক্ষ্য পূরণেও তাদের সাহায্য করা হবে। আমাদের বিশ্বের বিস্ময়গুলোকে রক্ষা করার বিনিময়ে অতিরিক্ত অনুদান সুবিধা তারা লাভ করবেন।
হোয়াইট ইজ মিসিং
তিনি একজন শিল্পী, একজন নকশাবিদ ও একজন স্থাপত্যশিল্পী। আকিটেচারে সবচেয়ে স্বীকৃত নামগুলোর একজন হতে পারেন। তার প্রথম বিরাট সাফল্য আসে লেখাপড়ার সিনিয়র ইয়ারে, যখন মাকিন যুক্তরাষ্ট্রের কানেক্টিকাটের ইয়েল ইউনিভাসিটিতে পড়ার সময় জমা দিয়েছিলেন রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে ভিয়েতনাম যুদ্ধের ঝানু বীরদের স্মরণে দি ভিয়েতনাম ভেটারান্স মেমোরিয়াল তৈরির জন্য একটি জাতীয় প্রতিযোগিতাতে সেরা ডিজাইনটি। তারপর থেকে কয়েক ধরণের ক্যারিয়ারে মুড়ে গিয়েছেন মায়া লিন। লাভ করেছেন এরই মধ্যে অসাধারণ কটি স্বীকৃতি। তার মধ্যে আছে মাকিন যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় বেসামরিক সম্মাননাগুলোর একটি দি প্রেসিডেনশিয়াল মেডেল অব ফ্রিডম, জায়গা করে নিয়েছেন দি ন্যাশনাল উইমেন’স হল অব ফেম-এ। তার বাদেও মায়া লিনের প্রদর্শনী হয়েছে স্মিথসোনিয়ান ইন্সটিউট জাদুঘরের মতো মর্যাদাপূণ জাদুঘরগুলোতে।
২০১৯ সালে তাকে সোসাইটি ফান্ড বা অনুদান প্রদান করেছিল। সেটি হোয়াইট ইজ মিসিং নামের একটি অনেক দিনের প্রকল্প। একটি কাব্যিক, আকষণীয় স্মৃতিস্মারক, যেটি আলোকিত করে জায়গা ও প্রজাতিগুলোকে; যাদের আমরা হারিয়েছি এবং বিশেষভাবে তুলে ধরে যে আমরা নিরাপদ হতে পারি যদি যথেষ্ট সাহসের সঙ্গে ঠিক পরিবর্তনগুলো করতে পারি।
লিন তার বই বাউন্ডারিজে লিখেছেন, ‘আমি নিজেকে সীমানাগুলোর মধ্যে থাকতে দেখি, একটি জায়গা যেখানে বিপরীতরা মিলতে পারে-বিজ্ঞান ও শিল্পকলা; শিল্পকলা ও স্থাপত্যবিদ্যা; পূর্ব ও পশ্চিম। আমার কাজ জন্মলাভ করে একটি সাধারণ ইচ্ছে থেকে। সেটি হলো মানুষকে তাদের চারপাশ সম্পকে সচেতন করে তোলা।’
ছবিমেলার শহিদুল আলম
টানা ৪০ বছরের বেশি শহিদুল আলম কার্যকরের দিকে ঝাঁপিয়ে পড়ার গল্প বুনে চলেছেন। এখনো তিনি প্রথম হওয়া একজন আলোকচিত্রী হচ্ছেন, সেটি তার ও অন্য সবার জন্য একটি সুখের দু:সংবাদ। ১৯৮০’র দশকে তিনি উত্তর আমেরিকা জুড়ে ভ্রমণ করেছেন। একজন বন্ধু তখন তাকে একটি ক্যামেরা কিনতে বললেন, কিন্তু সেটির টাকা ফেরত দিয়ে নিতে পারেননি। ফলে বাধ্য হয়ে শহিদুল আলম সেই ক্যামেরাটি ব্যবহার করতে শুরু করলেন। তিনি একজন রসায়ন বিদ্যার একজন গবেষক হতে লেখাপড়া করেছিলেন। তবে ওই ক্যামেরা হাতে হয়ে গেলেন পথে, পথে ঘুরে বেড়ানো শিশুদের মুখচ্ছবি তুলতে শুরু করা একজন আলোকচিত্রী। পরিণামে বুঝতে পেরেছিলেন, সক্রিয় পরিবর্তনের কাজে জ্বালানি হিসেবে কাজ করে কার্যকর ছবি।
২০২০ সালে ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকের স্টোরিটেলারস সমিট বা গল্পবলিয়েদের সম্মেলনে গিয়েছিলেন। তখন বলেছেন, ‘ছবির মাধ্যমে আমি পরিসংখ্যানগুলোকে একটি ব্যক্তিতে রূপান্তরিত করতে পেরেছি।’
১৯৮৪ সালে পাকাপাকিভাবে দেশে চলে এলেন। বাংলাদেশে তিনি পরিবতিত পরিস্থিতিতে হলেন একজন নিবেদিতপ্রাণ আলোচিত্র সাংবাদিক। স্বৈরাচার শাসককে মুছে ফেলার জন্য আপন দেশের গণতন্ত্রের সংগ্রামগুলোকে বন্দী ও নথিবদ্ধ করতে লাগলেন। অনেক বছর ধরে তার কাজগুলো বাংলাদেশের জীবন, যেটির মধ্যে সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতিগুলো আছে, রয়েছে পরিবেশের দলিলাদি; নিজ দেশ ও সারা বিশ্বজুড়ে পরিচিত এবং স্বীকৃত হয়ে চলেছে।
তার কাজ বেশিরভাগ পশ্চিমা গণমাধ্যমে ফিচার আকারে প্রকাশিত হয়েছে। সেগুলোর মধ্যে আছে নিউ ইয়ক টাইমস, মযাদাপূণ জাদুঘর যেমন লন্ডনের টেইট মডান; ২০১৮ সালে শহিদুল আলম সম্মানিত হয়েছেন টাইম ম্যাগাজিনের ‘পারসন অব দি ইয়ার’।
নিজের ছবির জগতের মাধ্যমে তিনি যে অর্জনগুলো করেছেন, সেগুলোতে উদ্দীপ্ত হয়ে বাংলাদেশের এই প্রখ্যাত আলোকচিত্রী অন্যদেরও সেভাবে ক্ষমতায়িত করতে কাজ করেছেন। এভাবে প্রতিষ্ঠা করেছেন দি দৃক পিকচার লাইব্রেরি, আয়োজন করেন প্রতি বছর ছবিমেলা নামের বণাঢ্য আয়োজন, সেটি ছবির আন্তজাতিক মেলা, আরো আছে তার পাঠশালা সাউথ এশিয়ান মিডিয়া ইন্সটিটিউট। শেষটি ছবির বাংলাদেশে প্রথম ও একমাত্র পূণাঙ্গ অনার্স কোস। একে বিশ্বের সবচেয়ে ভালোমানের ছবির বিদ্যালয়গুলোর একটি হিসেবে মনে করা হয়। সৃজনশীল এই মানুষটি আউট অব ফোকাস উদ্যোগটি তৈরি করেছেন , সেটি সুবিধাবঞ্চিত ছেলেমেয়েদের ছবি শেখায়।
দি ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক
দি ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক সোসাইটি নামে বিশ্বজুড়ে বিখ্যাত এই প্রতিষ্ঠানটি একটি অলাভজনক বৈশ্বিক সংস্থা, যেটি বিজ্ঞান, অন্বেষণ, শিক্ষা ও গল্প বলার শক্তিকে ব্যবহার করে আলোকিত করে ও আমাদের বিশ্বের বিস্ময়গুলোকে বাঁচাতে ছুটে চলে। ১৯৮৮ সাল থেকে ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক দেশসহ নানা সীমানাগুলোকে ঢুকে যাচ্ছে কৌতুহল, পরিবেষ্টনে; সাহসী মানুষের মধ্যেও তারা আছেন। নানা ধরণের ভাবনা ও একে অন্যের মধ্যে রূপান্তরকারী কাজগুলো তুলে ধরছেন। শহিদুল আলমদের মতো বিশ্বজুড়ে অভিযাত্রীদের, এই ভুবনের মানুষদের জন্য ১৫ হাজার মাকিন ডলারের বেশি অনুদান প্রদান করছেন বছরওয়ারি। তাতে বিশ্বের সাতটি মহাদেশে কাজ হচ্ছে। এভাবে ও নানা কাজে তারা ছড়িয়ে যাচ্ছেন। প্রতি বছর গড়ে ৩০ লাখ ছাত্র, ছাত্রীর কাছে শিক্ষা প্রস্তাবগুলোর মাধ্যমে পৌঁছাচ্ছেন। তার বাদেও আলোকিত করছেন তাদের শ্রেতা, দর্শক ও পাঠকদের সারা বিশ্বজুড়ে নিজেদের চিহ্নবাহী অভিজ্ঞতার গল্পগুলোতে, নানা কাহিনীতে এবং অনেক বিষয় দিয়ে। আরো জানতে যেতে পারেন-www.nationalgeographic.org-এই সাইটে। অনুসরণ করতে পারেন বিশ্বখ্যাত এই শিক্ষা ও বিনোদন প্রতিষ্ঠানটিকে ফেইসবুকেও।
ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক থেকে অনুবাদ : ওমর শাহেদ/২৮-১-২০২২।