অবরোধে সুন্দরবন কেন্দ্রিক পর্যটন ব্যবসায় ধস
ছবি সংগৃহিত
কুয়াশার চাদর জড়িয়ে শীত নেমে এসেছে প্রকৃতিতে। ঘরে ঘরে শিশু শিক্ষার্থীদের বার্ষিক পরীক্ষা শেষ। বিশ্বের সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট সুন্দরবন ভ্রমণের প্রকৃষ্ট সময় তো এখনই। কিন্তু সে ইচ্ছায় বাধ সাধছে দেশের বিদ্যামান রাজনৈতিক অস্থিরতা।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে বিএনপিসহ সমমনা দলগুলোর ডাকা টানা অবরোধ-হরতালের কারণে কার্যত স্থবির হয়ে পড়েছে সুন্দরবনকেন্দ্রিক পর্যটন ব্যবসা। বড় ধরনের ধসের মুখে পড়েছেন এখানকার ট্যুর অপারেটররা।
এই ব্যবসায়ীদের ভাষ্য, চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে একের পর এক বুকিং বাতিল করছেন পর্যটকরা। নতুন কেউ আসছেনও না। ২০১৫ সালের পর এমন সংকটে আর পড়েননি তারা। এমনকি কোভিড মহামারির ভেতরেও এরকম মন্দা তৈরি হয়নি।
সুন্দরবনের পর্যটন খাত-সংশ্লিষ্টরা জানান, অক্টোবরের শেষ সপ্তাহ থেকে ফেব্রুয়ারির শেষ পর্যন্ত এখানকার পর্যটনের ভরা মৌসুম। কিন্তু এ বছর অক্টোবরের শেষে রাজনৈতিক অস্থিতিশীল পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে। বিভিন্ন কর্মসূচি, হরতাল-অবরোধের কারণে চার-পাঁচ দিন দূরপাল্লার বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে সুন্দরবনের পর্যটন খাতে। সহিংসতার আশঙ্কায় ভ্রমণে আগ্রহ হারিয়েছেন দেশি-বিদেশি পর্যটক।
সুন্দরবনের করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হাওলাদার আজাদ কবীর জানান, এই কেন্দ্রে প্রতিদিন ৩০০ থেকে ৫০০ পর্যটক আসেন। এখন আসছেন মাত্র ৩০ থেকে ৪০ জন। এর ফলে রাজস্ব আয়ও কম হচ্ছে।
ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন অব সুন্দরবনের (টোয়াস) সাধারণ সম্পাদক নাজমুল আযম ডেভিড জানান, তাদের অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য ১১২ এবং পর্যটকবাহী লঞ্চ বা জাহাজ রয়েছে ৬৫টি। এ ছাড়া মোংলায় ছোট-বড় আরও শতাধিক ট্যুর অপারেটর এবং ইঞ্জিনের শতাধিক ছোট নৌকা রয়েছে। পর্যটকরা মোংলা থেকে একদিনের এবং খুলনা থেকে তিন দিনের ট্যুরে যান।
তিনি আরও জানান, বাস চলাচল বন্ধ থাকায় অনেক পর্যটক তাদের ট্যুর বাতিল করেছেন। এ ছাড়া নভেম্বরে অনেক পর্যটক সুন্দরবন যাওয়ার জন্য বুকিং দিয়েছিলেন। কিন্তু তারা এখন বুকিংয়ের অগ্রিম টাকা দিতে চাচ্ছেন না। অনেকে জাতীয় নির্বাচন পর্যন্ত ট্যুরের বুকিং স্থগিত করছেন। মৌসুমের শুরুতে এমন পরিস্থিতি তাদের উদ্বেগে ফেলে দিয়েছে।
একাধিক ট্যুর অপারেটর জানায়, হরতাল-অবরোধের কারণে তাদের সব শিডিউল স্থগিত হয়ে গেছে। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা না আসা পর্যন্ত নতুন বুকিং পাওয়ার সম্ভাবনাও নেই। এতে তারা বড় অঙ্কের লোকসানের মুখে পড়তে যাচ্ছেন।
সুন্দরবন বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, সাম্প্রতিক বছরগুলোয় সুন্দরবনে পর্যটকের সংখ্যা ক্রমান্বয়ে বাড়ছিল। ২০২০-২১ অর্থবছরে সুন্দরবন ভ্রমণ করেছিলেন ১ লাখ ৪৬ হাজার পর্যটক। এ থেকে বন বিভাগের রাজস্ব আয় হয় ১ কোটি ৫৭ লাখ টাকা। ২০২১-২২ অর্থবছরে ১ লাখ ৫৫ হাজার পর্যটকের কাছ থেকে রাজস্ব আয় হয় ২ কোটি ২৫ লাখ টাকা। ২০২২-২৩ অর্থবছরে এই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ২ লাখ ১৬ হাজার জনে। এ থেকে রাজস্ব আয় হয় ৩ কোটি ৯৪ লাখ টাকা।
খুলনা সার্কেলের বন সংরক্ষক মিহির কুমার জানান, দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পর্যটকরা সুন্দরবনে আসেন। কিন্তু হরতাল-অবরোধের কারণে তারা আসতে পারছেন না। এতে পর্যটন খাত বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়বে।