পর্যটকদের টানছে কাঞ্চনজঙ্ঘার মোহনীয় সৌন্দর্য
ছবি সংগৃহিত
শীত মৌসুম শুরুর আগ মুহূর্তে উত্তরের মেঘমুক্ত আকাশে খালি চোখে দেখা মিলছে কাঞ্চনজঙ্ঘার মোহনীয় সৌন্দর্য। এই সৌন্দর্যে মুগ্ধ হতে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় ছুটছেন হাজারও পর্যটক। পর্যটকের সমাগমে মুখরিত হয়ে উঠেছে উত্তরের এ জেলার পর্যটন স্পটগুলো।
গত বৃহস্পতি, শুক্র ও শনিবার তেঁতুলিয়ার পর্যটনস্পট ডাকবাংলোয় গিয়ে দেখা গেছে, ভোরের আলো ফোটার আগে আগে সেখানে নেমেছে পর্যটকের ঢল। তারা মহানন্দা নদীর তীরে ডাকবাংলোয় দাঁড়িয়ে দেখছেন হেমন্তের ভোরে হিমালয়ের বরফে টুপি পরা অপরূপ কাঞ্চনজঙ্ঘা। কেউ কেউ কুয়াশার কারণে দেখতে না পাওয়ায় পরের দিন ভোরে আবার হাজির হচ্ছেন।
হিমালয় পর্বতমালায় অবস্থিত বিশ্বের তৃতীয় অবস্থানে থাকা সুউচ্চ পর্বত কাঞ্চনজঙ্ঘা। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে যার উচ্চতা ৮ হাজার ৫৮৬ মিটার বা ২৮ হাজার ১৬৯ ফুট। খুব কাছ থেকে এই পর্বত দেখতে যেতে হবে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিং জেলা শহর থেকে ১১ কিলোমিটার দূরে টাইগার হিলে। সেখান থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘার দূরত্ব মাত্র ৭৯.৮ কিলোমিটার। তবে অবাক ব্যাপার হলো কাঞ্চনজঙ্ঘা থেকে ১৬৫ কিলোমিটার দূরে বাংলাদেশের সর্ব উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলা থেকেই দেখতে পাবেন কাঞ্চনজঙ্ঘার প্রধান শৃঙ্গ।
প্রতিবছর কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে পর্যটকেরা পাড়ি জমান হিমালয়ের দেশ নেপালে। ভারতের পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিংয়ের টাইগার হিলে দাঁড়িয়ে অপরূপ কাঞ্চনজঙ্ঘায় মুগ্ধ হন পর্যটকেরা। কেউ একেবারে কাছ থেকে দেখতে নেপালেই ছুটে যান।
মোহনীয় রূপে আচ্ছাদিত এই কাঞ্চনজঙ্ঘা ক্ষণে ক্ষণে বদলায় রঙ। ভোরে সূর্যোদয়ের সময় মনে হয় যেন কাঞ্চনজঙ্ঘা সাদা বরফে ছেয়ে গেছে। বেলা বাড়লে আবার সেই রূপ বদলায়। দিনের মধ্যভাগে মনে হয় প্রকাণ্ড মেঘ উত্তরের আকাশ দখল করে দাঁড়িয়ে আছে। বিকেলের কাঞ্চনজঙ্ঘা যেন লজ্জারাঙা। আর গোধূলিবেলায় পুরো কাঞ্চনজঙ্ঘা আবির খেলায় মেতে ওঠে।
কাঞ্চনজঙ্ঘা ছাড়াও জেলার পর্যটন স্পটগুলো ঘুরে দেখছেন পর্যটকরা। বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর, ইমিগ্রেশন ও জিরো পয়েন্ট, বিজিবি-বিএসফের জয়েন্ট রিট্রিট সেরিমনি, ইংরেজ আমলে জেলা পরিষদ ডাকবাংলো, সমতল ভূমির চা বাগান, আনন্দধারা পার্ক, ভিতরগড় দূর্গনগরী, মহারাজা দিঘী, পাথরের জাদুঘর, মোগল স্থাপনা মির্জাপুর শাহী মসজিদ, বোদেশ্বরী পীঠ মন্দিরসব বিভিন্ন ঐতিহ্য ও দর্শনীয় স্থানগুলো মুগ্ধ করছে পর্যটকদের।
পর্যটকদের আগমনে ঘুরে দাঁড়িয়েছে স্থানীয় অর্থনীতি। পর্যটকদের নিরাপত্তাসহ যাবতীয় সেবা দিচ্ছে স্থানীয় প্রশাসন, থানা পুলিশ ও ট্যুরিস্ট পুলিশ। তেঁতুলিয়ায় স্থাপিত ট্যুরিস্ট পুলিশ পঞ্চগড় জোন পর্যটকদের নিরাপত্তাসহ তাদের সমস্যা নিরসনে কাজ করছে।
রাজশাহী থেকে পর্যটক সোহেল রানা জানান, কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে এসেছি রাজশাহী থেকে। টানা তিনদিন ধরে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখেও তৃপ্তি মিটছে না। এ অনুভূতি প্রকাশ করার মতো নয়। দেশের মাটি থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা সত্যিই ভাগ্যের ব্যাপার।
স্থানীয় আলোকচিত্রী ফিরোজ আল সাবাহ জানান, শ্বেত শুভ্র কাঞ্চনজঙ্ঘার সৌন্দর্য উপভোগ করার মোক্ষম সময় ভোর ও বিকেল বেলা। ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত নানান রঙ নিয়ে হাজির হয় বরফে আচ্ছাদিত এ পর্বতচূড়া। কখনো শুভ্র, কখনো গোলাপি, আবার কখনো লাল রঙ। ভোরের আলো ফুটতেই তা গিয়ে পড়ে ঠিক কাঞ্চনজঙ্ঘার চূড়ায়। চারপাশে আবছা অন্ধকার থাকলেও চকচক করে চূড়াটি। ভোরের আলোয় এবং বিকেল পর্বত চূড়াটি পোড়া মাটির রঙ নেয়। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কিছু ঝাপসা হয়ে আসে। তখন রং হয় সাদা। দূর থেকে মনে হয় এ যেন আকাশের গায়ে খন্ড বরফ।
দার্জিলিং থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখার অনুভূতি জানিয়ে কবির বুলবুল গণমাধ্যমকে বলেন, এক সপ্তাহ আগে ভারতের দার্জিলিংয়ের টাইগার হিলস থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখে এসেছি। ওখান থেকে অনেক কাছে। যারা পাসপোর্ট-ভিসা আছে তারা দার্জিলিং, নেপালে গিয়ে দেখতে পারছেন। আমার বাসা তেঁতুলিয়া উপজেলার সদরেই। বাড়ি থেকেই দেখা যায় এই মোহনীয় রূপের কাঞ্চনজঙ্ঘা।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফজলে রাব্বী বলেন, কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে হেমন্ত-শীতের সময়ে দূর দূরান্ত থেকে পর্যটকরা ছুটে আসেন পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায়। এই সময়ে কাঞ্চনজঙ্ঘা চমৎকার দেখা যায়। সেই সঙ্গে পঞ্চগড়ের সমতলের চা শিল্পসহ অনেক পর্যটন কেন্দ্র রয়েছে। পর্যটকরা যেন নির্বিঘ্নে ভ্রমণ উপভোগ করতে পারেন সে জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়া পর্যটকদের থাকার জন্য তেঁতুলিয়া ডাক বাংলোতে পুরনো দুটি ভবনের পাশাপাশি বেরং কমপ্লেক্স নামে নতুন আরেকটি বাংলো নির্মাণ করা হয়েছে। আশা করি পর্যটকরা পঞ্চগড়ে তাদের ভ্রমণ উপভোগ করতে পারবেন।