সাতক্ষীরার আকর্ষণ সড়ক পথে সুন্দরবন
একপাশে সড়ক পথ, অন্যপাশে গভীর সুন্দরবন। মাঝখানে প্রবাহমান নদীর তীরে সুন্দরবনের আদলে তৈরি ইকোটুরিজম আকাশলীনা। সাতক্ষীরা দিয়ে সড়কপথে সুন্দরবন ভ্রমণে আসতে পারেন আপনিও। এ সড়কপথে সুন্দরবন দেখার সুবিধার জন্যই হয়তো সাতক্ষীরার ব্র্যান্ড নেম ‘সাতক্ষীরার আকর্ষণ সড়ক পথে সুন্দরবন’।
সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর উপজেলার মুন্সিগঞ্জ কলবাড়িতে অবস্থিত আকাশলীন ইকো ট্যুরিজম সেন্টার। ২০১৬ সালে জেলা প্রশাসকের ব্যবস্থাপনায় সুন্দরবনের চুনা ও মালঞ্চ নদীর সংযোগস্থলে ১৯ একর জমি নিয়ে গড়ে উঠে আকাশলীনা ইকো ট্যুরিজম সেন্টার। বর্তমানে বাংলাদেশের মধ্যে আকাশলীনা ইকো ট্যুরিজম সেন্টার ভ্রমণকারীদের জন্যে দর্শনীয় স্থান নামে পরিচিতি লাভ করেছে।
স্থানীয়রা বলেন, দেশ-বিদেশের ভ্রমণ পিপাসুরা সুন্দরবনের প্রকৃতির অপরুপ হিমেল হাওয়া ও দৃশ্য সরাসরি দেখতে ছুটে আসেন আকাশলীনায়। প্রকৃতির সবুজ বনায়নের ভিতরে হারিয়ে যায় ভ্রমণকারীরা। এখান থেকে জেলে বাওয়ালীদের ছোট ছোট ডেঙ্গি নৌকা নিয়ে বনের ভিতরে জীবিকা নির্বাহের জন্যে মাছ ধরতে যাওয়া দৃশ্যও চোখে পড়ে।
এ ছাড়া ভ্রমণ করার জন্য ছোট-বড় ট্রলার, লঞ্চ, স্টিমারসহ অনেক প্রকার নৌ যান চলাচল করতে দেখা যায়। মাঝে মাঝে বিদেশি পর্যটকরা আকাশ দিয়ে উড়ে আসে সি প্লেনে। অবস্থান করে আকাশলীনার সম্মুখে মালঞ্চ নদীতে।
এ রকম দৃশ্য দেখতে কার না মন চায়। তাই এমন দৃশ্য দেখে স্থানীয় ও ভ্রমনকারীরা আনন্দে মুখরিত করে তোলেন আকাশলীনার ভিতরে ও বাইরে। এখান থেকে সুন্দরবনকে খুব কাছে উপভোগ করা যায়। পায়ে হেঁটেও সুন্দরবন দেখা যায়। আকাশলীনার ভিতরে ভ্রমনকারীদের সুবিধার্থে রয়েছে উন্নত মানের গেস্ট হাউজ। এখানে বনের পশু পাখির সাথে রয়েছে বঙ্গোপসাগরের জলজ প্রাণীর ফিশ মিউজিয়াম।
এদিকে ভ্রমণ পিপাসুর জন্যে সুন্দরবনকে আরও সুন্দর ভাবে উপভোগ করতে আকাশলীন ইকো ট্যুরিজম সেন্টারের মধ্যে তৈরি করা হয়েছে সাতক্ষীরা জেলা পরিষদের অর্থায়নে ওয়াচ টাওয়ার। প্রথমে ওয়াচ টাওয়ারে ওঠার সু-ব্যবস্থা থাকলেও কিছুদিন যেতে না যেতেই সেটি নদীগর্ভে চলে যায়।
সরজমিনে দেখা গেছে বর্তমানে ওয়াচ টাওয়ারে যাওয়ার কোনো উপায় নেই। পানি-কাদা ঠেলে ওয়াচ টাওয়ারে উঠে প্রকৃতিকে উপভোগ করতে রাজি ভ্রমণপিপসুরা। কিন্তু কী কারণে এখনও ওয়াচ টাওয়ারটি মেরামত করা হচ্ছে না সে প্রশ্ন শোনা যায় সাধারণ মানুষ ও পর্যটকদের কাছ থেকে ! সেটি নির্মাণের কাজটি তাড়াতাড়ি শেষ হলে হয়তো বা ভ্রমণকারীদের সংখ্যা বাড়বে। টাওয়ারের ওপর থেকে সুন্দরবনের ভিতর ভালোভাবে উপভোগ করতে পারবে। দেখতে পারবে সুন্দরবনের অপরূপ দৃশ্য এমনটি মন্তব্য করেছেন পর্যটকরা।
জেলা পরিষদের সদস্য ডালিম ঘোরামী বলেন, ‘ওয়াচ টাওয়ারের অর্থায়ন ছিল জেলা পরিষদের। সুন্দরবন উপভোগ করার জন্য টাওয়ারে ওঠানামার সুব্যবস্থাও ছিল। কিন্তু হঠাৎ ট্রেইলটি নদীগর্ভে চলে যায়। আমি বিষয়টি নিয়ে জেলা পরিষদের মাসিক মিটিংয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করব। ব্যাপারটির দ্রুত সমাধান হলে সুন্দরবনের ভিতরের দৃশ্য সুন্দরভাবে উপভোগ করা যাবে।’
শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, ‘ওয়াচ টাওয়ারে যাওয়ার ট্রেইলটির কাজ আগামী মাসে শুরু হবে। তবে এবার কংক্রিট দিয়ে তৈরি না করে বাঁশ ও কাঠদিয়ে তৈরি হবে এবং অন্য সকল বিষয়ে আমাদের পরিকল্পনা রয়েছে।’
যশোর থেকে ঘুরতে আসা একদল বন্ধুমহল জানান, সুন্দরবনের তিরে আকাশলীনা ইকো ট্রুরিজমে এসে তাদের মন ভরে গেছে এবং তারা মুগ্ধ। তবে তারা অভিযোগ করেন রাস্তার বেহাল দশার। তারা বলেন, ‘রাস্তার কারণে একবার এলে আরেকবার আসার ইচ্ছা হয় না। ছোট ছোট গর্তে ভরা ভাঙাচোরা রাস্তায় শরীরে ব্যথা বাড়িয়ে দেয়। ফলে বেড়ানোর আগ্রহ হারিয়ে যায়।
/এএন