ঈদে যেতে পারেন দেবহাটার রুপসী ম্যানগ্রোভ পর্যটন কেন্দ্রে
প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এক লীলাভূমি দেবহাটার রুপসী ম্যানগ্রোভ পর্যটন কেন্দ্র। এবারের কোরবানির ঈদকে ঘিরে দর্শনার্থীদের বিনোদন নিশ্চিত করতে নানা প্রস্তুতি শেষ করেছে এ পর্যটন কেন্দ্র। সাতক্ষীরার দেবহাটা উপজেলার ইছামতি নদীর তীরে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে গড়ে ওঠা নয়নাভিরাম এ পর্যটন কেন্দ্র নদীভাঙন রোধ করে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার সঙ্গে সঙ্গে বিনোদনের খোরাক জোগাচ্ছে সব বয়সের মানুষের।
সুন্দরবনের আদলে গড়ে তোলা দেবহাটার রুপসী ম্যানগ্রোভ পর্যটন কেন্দ্রটি দেড় শত বিঘা জমির উপরে বিস্তৃত। এ বনের বুক চিরে প্রায় ১০ একর জমিতে অনামিকা লেক, পিকনিক স্পট, শিশুপার্ক, কনফারেন্স রুম, বনের ভিতরে বাঁশের তৈরি ট্রেইল, সেলফি পয়েন্ট, প্যাডেল চালিত বোড, ইছামতির পাড়ে বসে বৈকালিনসহ পর্যটনকারীরা তিন নদীর মোহনা দেখার সুব্যবস্থা রয়েছে।
এ ছাড়াও নারী-পুরুষের জন্য আলাদা নামাজের স্থান, ওয়াশব্লক, সুপেয় পানির ব্যবস্থা ছাড়াও নতুন করে যোগ হচ্ছে রাত্রিযাপনের জন্য কটেজ। বর্তমানে নানামুখী বিনোদনের সুযোগ সৃষ্টি করা বনটিতে অনেক মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে।
সাতক্ষীরা জেলার সদর হতে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে ইছামতি নদীর তীরে শিবনগর মৌজায় অবস্থিত এ বনটি। এটি দেবহাটা উপজেলার 'রূপসী ম্যানগ্রোভ পর্যটন কেন্দ্র' নামে পরিচিত। ইছামতি নদীর তীরে কৃত্রিমভাবে সৃষ্টি এ ম্যানগ্রোভ পর্যটন কেন্দ্রটি উপজেলা পরিষদ ও উপজেলা প্রশাসনের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় টাউনশ্রীপুর এলাকায় ভারতের টাকী পৌরসভার বিপরীতে ইছামতি নদীর তীরে শিবনগর মৌজায় তৈরি করা হয়েছে।
এ পর্যটন কেন্দ্রের সার্বিক উন্নয়নের জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকেও বিভিন্ন সহযোগিতা দেওয়া হয়েছে। এ বনে বহু প্রজাতির ফলদ ও বনজ বৃক্ষ রয়েছে। সুন্দরবনের আদলে বিভিন্ন প্রজাতির বনজ বৃক্ষের চারা এনে রোপন করে ব্যাপক বনের সৃষ্টি করা হয়েছে। যার মধ্যে কেওড়া, বাইন, গোলপাতা, কাঁকড়া, নিম, সুন্দরী, হরকচাসহ বিভিন্ন প্রজাতির ফলজ ও বনজ উদ্ভিদ।
তা ছাড়া বিনোদনপ্রেমীদের জন্য রয়েছে বসার স্থান। শিশুদের আনন্দ দেওয়ার জন্য কৃত্রিম বিভিন্ন প্রজাতির পশুপাখি নির্মাণ করা হয়েছে।
এদিকে, সাতক্ষীরা জেলার ইছামতি সীমান্তের ইছামতির তীরে গড়ে ওঠা মনোমুগ্ধকর প্রাকৃতিক অপরূপ সৌন্দর্য ম্যানগ্রোভ মিনি সুন্দরবনটির পরিধি দিনদিন বাড়ছে। ২০০৯ সালে দেবহাটার সুঁশিলগাতী এলাকার নদীর বেড়িবাধ ভেঙে প্লাবিত হলে বাঁধ রক্ষায় ২০১০ সালে উপজেলার প্রশাসনের উদ্যোগে বাঁধ রক্ষায় ও প্রাকৃতিক ভারসম্য রক্ষার জন্য তৈরি করা হয় এ ম্যানগ্রোভ বন। এরপর বেশ কয়েক বছর যেতে যেতে বনের আকার বৃদ্ধি পেতে থাকে। এতে নদীভাঙনের হাত থেকে এ এলাকা।
প্রতি বছর উপজেলার ও জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষ উপভোগ করতে আসে প্রকৃতির এ সুন্দর দৃর্শ্য। তা ছাড়া বিভিন্ন উৎসবকে কেন্দ্র করে বনটিতে কানায় কানায় দর্শণার্থী পূর্ণ্য থাকে।
ঘুরতে আসা একাধিক দর্শনার্থীরা জানান, বনটি ইছামতি নদীর পাড়ে হওয়ায় সবচেয়ে বেশি ভালো লাগে। একপাশে বাংলাদেশ অপরপাশে ভারত। আর এর মাঝখানে নদী। জায়গাটি অত্যন্ত নিরিবিলি হওয়ায় সব বয়সী মানুষের কাছে প্রিয়। এ ছাড়া বিভিন্ন দিবস বা ছুটির দিনে বেশি দূরে না যেয়ে দেবহাটায় এসে সুন্দরবনের স্বাদ পায়। নারী ও শিশুদের জন্য স্থানটি খুবই নিরাপদ বলেও দাবি দর্শনার্থীদের।
এ স্থানে প্রতিদিন প্রায় এক হাজার মানুষের সমাগম ঘটে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। তা ছাড়া ছুটি ও বিভিন্ন উৎসব ঘিরে দিনে ৩/৪ হাজার দর্শানার্থীদের পদাচরণা থাকে এ বিনোদন কেন্দ্রে।
বর্তমানে পর্যটন কেন্দ্রে দায়িত্বে থাকা ম্যানেজার দিপঙ্কর ঘোষ বলেন, বিনোদন কেন্দ্রে এসে যাতে কেউ কোনো হয়রানির শিকার না হয় সে ব্যাপারে আমাদের স্টাফরা নিরাপত্তা দিয়ে যাচ্ছেন। আমরা দর্শনার্থীদের বিনোদনের জন্য নতুন নতুন সুযোগ সৃষ্টি করছি।
এদিকে নানা উদ্যোগ আর আশার কথা জানিয়ে দেবহাটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এবিএম খালিদ হোসেন সিদ্দিকী বলেন, যেহেতু আমরা সুন্দরবনের কাছাকাছি অবস্থান করি। সে কারণে রাজধানীসহ দেশি-বিদেশি পর্যটকরা সুন্দরবন ভ্রমণে আসেন। তাদের কথা বিবেচনা করে রূপসী ম্যানগ্রোভ পর্যটন কেন্দ্রটি দর্শনার্থীদের মতো করে সাজানো হয়েছে। এ ছাড়া আমাদের স্বপ্নের সেতু চালু হওয়ায় বর্তমানে ঢাকা থেকে এসে একদিনে ঘুরে আবার ঢাকায় ফিরতে পারবেন। আমাদের পক্ষ থেকে পর্যটন কেন্দ্রের উন্নয়ন কাজ চলমান রয়েছে। আমি অনুরোধ করব যারা ঈদে ছুটিতে বাড়িতে ফিরবেন অন্তত একবার হলেও দেবহাটা রূপসী ম্যানগ্রোভ পর্যটন কেন্দ্রটি ঘুরে যাবেন।
এসএন