সোমবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৫ | ১৫ বৈশাখ ১৪৩২
Dhaka Prokash

কুয়াকাটার আদ্যোপান্ত

বাংলাদেশ সহ পৃথিবীর সকল পর্যটকের কাছে অন্যন্য নাম সাগরকণ্যা কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত। দৈর্ঘ ১৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের সৈকত বিশিষ্ট কুয়াকাটা বাংলাদেশের অন্যতম নৈসর্গিক সমুদ্র সৈকত। এটি বাংলাদেশের একমাত্র সৈকত যেখান থেকে সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্ত দুটোই দেখা যায়। কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতটি কলাপাড়া উপজেলার লতাচাপলি ইউনিয়নের সর্বদক্ষিণে অবস্থিত। সমুদ্রের বুকে চর জেগে এ সৈকত হয়েছে।

ধারনা করা হয় সুলতানি বা মুঘল আমলে এ অঞ্চলে মানব বসতি শুরু হয়। কুয়াকাটা নামের পিছনেই এই ইতিহাসের ধারনা মেলে কুয়াকাটা নামের পেছনে রয়েছে আরকানদের এদেশে আগমনের সাথে জড়িত ইতিহাস।

ইতিহাস ঐতিহ্যে বাকেরগঞ্জ একটি ঐতিহ্যশালী স্থান। ত্রয়োদশ শতকে চন্দ্রদ্বীপ রাজবংশের প্রতিষ্ঠার তথ্য মেলে বাউফলের কচুয়ায়। ১৫৮২ সালে মুঘল সাম্রাজ্যের সময় বাকেরগঞ্জ ও পটুয়াখালীকে বাকলা সরকার বলা হয়। তবে ইতিহাসের পাতায় জানা কুয়াকাটা রাখাইনের প্রতিষ্টিত। স্থানীয় তথ্য সূত্র মতে ১৯০৩ সালে কুয়াকাটাতে প্রথম বাঙ্গালী ভাগ্যানুসন্ধানে আসেন।

কুয়াকাটা এখন পর্যটন নগরী হিসাবে সমস্ত বিশ্বে পরিচিত তারই পাশাপাশি হিন্দু ও বৌদ্ধ ধর্মালম্বীদের কাছে একটি তীর্থস্থান। নভেম্বরের রাস মেলায় হিন্দুসম্প্রদায়ের কৃষ্ণভক্তরা হাজির হয়। তেমনি মাঘী পূর্ণিমায় আয়োজন করা পবিত্র স্নান। এসময় দেশি বিদেশি লক্ষ লক্ষ পূণ্যার্থীরা আসেন।

কুয়াকাটায় বসবাসকারী রাখাইনরা বহু দিন ধরে উপজাতি হিসাবে পরিচিত হলেও রাখাইনরা কুয়াকাটার আদিবাসী। রাখাইনদের আদি নিবাস ছিল মায়ানমারের আরাকান প্রদেশে। ১৭৮২ সাল থেকেই রাখাইনদের পরে বিভিন্ন অত্যাচার করা হয়। ১৭৮৪ থেকে ১৮১৪ সাল পর্যন্ত মায়ানমারের শরনার্থীর সংখ্যা দাড়ায় প্রায় এক লক্ষ।

রাখাইনরা মায়ানমার ত্যাগ করে বাংলাদেশে বসবাস করলেও তারা তাদের ঐতিহ্যেকে ধরে রাখে। বিশেষ করে রাখাইনদের খাদ্য, পোশাক ও ভাষায় তারা বাঙ্গালীদের থেকে স্বতন্ত্রতা বজায়ে রাখে। বিয়ে অনুষ্ঠানে রাখাইনরা সংস্কার মেনে চলে। যেমন বর্ষাকালে রাখাইনদের মধ্যে কোন ধরনের বিয়ে হয় না।

নৈসর্গিক সৌন্দর্যের এক মোহময় লীলাভূমির নাম কুয়াকাটা। সরকার এই পর্যটন নগরীকে আধুনিক সুযোগ সুবিধা দেয়ার লক্ষ্যে কুয়াকাটাকে পৌরসভা হিসাবে ঘোষণা করা হয়। কুয়াকাটার খ্যাতনামা কুয়া যা ছিল এক সময়ের মিষ্টি পানির একমাত্র ব্যবস্থা তা এখন ঐতিহ্যের অংশ।

কুয়াকাটার দর্শনীয় স্থানসমূহ
কুয়াকাটার মূল আকর্ষণ সমুদ্র সৈকত। সমুদ্র সৈকতে দাড়ালে দক্ষিণে যতদূর চোখ যায় ততদূর নীল আকাশ। বেলাভূমিতে প্রতিমুহুর্তে আছড়ে পড়ছে ঢেউ। সমুদ্র সৈকতে হাজার হাজার পর্যটকদের জন্য বেসরকারিভাবে বসার জায়গা, ঘোড়া, গাড়ি, খাবার সহ বিভিন্ন ব্যবস্থা রয়েছে। পাশাপাশি কুয়াকাটা পর্যটন পুলিশের নিরাপত্তা ব্যবস্থা রয়েছে।

সমুদ্রসৈকতের ভাঙ্গন ঠেকানোর জন্য বনবিভাগের মনোলোভা ঝাউবন রয়েছে। যেখানে বাতাসের শব্দ শো শো করতে থাকে। আমাবশ্যার অন্ধকারে রাতে ফসফরাসের মিশ্রনে সাগরের ঢেউগুলো আলোর বিচ্ছুরণ ছড়ায়।

কুয়াকাটার কুয়া: কুয়াকাটা নামটি কুয়া থেকে এসেছে। সমুদ্রের লবণ পানির এলাকায় মিষ্টি পানির একমাত্র আধার এই কুয়া। ভূগর্ভস্থ পানি বা বর্ষার পানি থেকে এই কুয়ায় পানি থাকে। কুয়াকাটার বৌদ্ধ বিহারে প্রবেশের মুখে কুয়াটি। সরকারের আর্থিক সহায়তায় কুয়াটিকে সংরক্ষণ করা হচ্ছে।

শ্রীমঙ্গল বৌদ্ধ বিহার: কুয়ার পাশের রয়েছে বৌদ্ধমন্দির। যা শ্রীমঙ্গল বৌদ্ধ বিহার নামে পরিচিত। এখানে নয়টি ধাতুর সমন্বয়ে তৈরি বৌদ্ধ মূতি রয়েছে। শ্রীমঙ্গল বৌদ্ধ বিহার চুনদ্রী দেবী, শাক্য রাজা ও ছিওয়ালি আর্হাং বৌদ্ধ বিহারে প্রবেশের মুখে দাড়ান দুইটি মূর্তি রয়েছে। এগুলো চুনদ্রী দেবীর। রাখাইনদের ধর্মীয় বিশ্বাসে চুনদ্রী দেবী মন্দিরের রক্ষাকর্তা। উপরের দিকে সিড়ির শেষ প্রান্তে রয়েছে শাক্য রাজার মূর্তি। বিহারটি সাধারণ জনসাধারণের জন্য সকাল ৮ টা থেকে ১১ টা ও ২ টা থেকে ৬ টা পর্যন্ত খোলা থাকে। দর্শনার্থীদের জন্য জনপ্রতি ১০ টাকা ফি ধার্য রয়েছে।

নৌকা জাদুঘর: শ্রীমঙ্গল বৌদ্ধবিহার ও রাখাইন মার্কেটের সংলগ্ন ভেড়িবাধের ঢালে কুয়াকাটার নৌকা জাদুঘর অবস্থিত। এখানে একটি পাল তোলা জাহাজের ধ্বংসাবশেষ রাখা আছে। প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর নৌকাটিকে সংরক্ষণের ব্যবস্থা করেছে। নৌকাটি ৭২ ফুট দৈর্ঘ্য, ২২ ফুট প্রস্থ, ১১ ফুট উচ্চতা এবং ৯০ টন ওজনের। প্রাচীনকালে সমুদ্রপথে বিভিন্ন দেশের সাথে ব্যবসা বানিজ্য করার জন্য এসব পাল তোলা জাহাজ ব্যবহার করা হতো।

কেরানি পাড়া: কুয়াকাটার মূল কেন্দ্রবিন্দুতে অবস্থিত রাখাইন পল্লীর নাম কেরানি পাড়া। বৃটিশ আমলে নলাউ নামক একজন রাখাইন ব্যাংকের কেরানি পদে চাকরি করতেন। তার পদবীর থেকে এই পল্লীর নাম হয় কেরানি পাড়া।

কুয়াকাটা জাতীয় উদ্যান (ইকোপার্ক): কুয়াকাটা জিরোপার্ক থেকে দেড় কিলোমিটার পূর্ব দিকে ৭০০ একর জায়গা জুড়ে কুয়াকাটা ইকোপার্ক অবস্থিত। এখানে পরিকল্পিত ভাবে বিভিন্ন ধরনের বনজ ফলজ গাছ লাগানো হয়েছে।

গঙ্গামতির চর: কুয়াকাটার মূল পর্যটন স্পট থেকে ৬ কিলোমিটার পূর্ব দিকে গঙ্গামতি অবস্থিত। গঙ্গামতি খালের চরে গড়ে উঠায় চর গঙ্গামতি বা গঙ্গামতির চর বলা হয়। মূল স্পট থেকে এখান থেকে সূর্যোদয় ভালো দেখা যায়।

আব্দুল আলী গাড়ুলির স্মৃতি বিজড়িত স্থান: বিখ্যাত সাপুড়ে আব্দুল আলি গাড়ুলি যার সাপ ধরা নিয়ে বিভিন্ন লোক কাহিনী প্রচলিত আছে। মিশ্রিপাড়া থেকে ৭ কি.মি. উত্তরে বৌলতলী পাড়া এ স্থান।

মিশ্রিপাড়া সীমা বৌদ্ধ বিহার: কুয়াকাটা জিরো পয়েন্ট থেকে সাত কিলোমিটার পূর্ব দিকে মিশ্রিপাড়ায় রাখাইন পল্লী অবস্থিত। জানা যায় প্রভাবশালী মিশ্রি তালুকদারের নামে এ পল্লীটির নামকরণ করা হয়। এখানকার বৌদ্ধমন্দির যা সীমা বৌদ্ধ বিহার নামে পরিচিত। এখানে দুশো বছরের পুরাতন বৌদ্ধমূর্তি ও ভারত উপমহাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বৌদ্ধ মূর্তি রয়েছে।

গোড়া আমখোলাপাড়া রাখাইন পল্লী: কুয়াকাটার সবচেয়ে বড় রাখাইন সম্প্রদায়ের বসতি গোড়া আমখোলাপাড়া রাখাইন পল্লীতে। আলীপুর বন্দর থেকে তিন কিলোমিটার পূর্বে এ রাখাইন পল্লী। এখানে টিন ও কাঠ ব্যবহার করে মাচার উপর মন্দিরে ছোট ছোট অনেকগুলো বৌদ্ধ মূতি রয়েছে।

আলীপুর ও মহিপুর মৎস্য বন্দর: বাংলাদেশের অন্যতম মৎস্য বন্দর এটি। আলীপুর বন্দরের পাশে কালাচান পাড়া নামে রাখাইন পল্লী রয়েছে। এ রাখাইন পল্লীটি কুয়াকাটার দ্বিতীয় বৃহত্তম।

নয়াপাড়া বৌদ্ধবিহার: আলীপুর থেকে কুয়াকাটা যাবার দেড় কিলোমিটার দক্ষিণে রাখাইনদের ছোট একটি পল্লী রয়েছে যা নয়াপাড়া নামে পরিচিত। চারটি পরিবারের বাস এ পল্লীতে কিন্তু এখানে সুন্দর একটি বৌদ্ধ মন্দির রয়েছে। মন্দির দেয়ালে বৌদ্ধদেবের জীবচিত্র আকা আছে।

ইলিশ পার্ক এন্ড রিসোর্ট: কুয়াকাটা পৌরসভায় ইলিশ পার্ক অবস্থিত। জিরো পয়েন্ট থেকে পাঁচ মিনিট সময় লাগে। ৪০ শতাংশ জমির উপর এ পার্কটি অবস্থিত। পার্কের ভিতরে বিভিন্ন প্রাণির ভাস্কর্য রয়েছে।

শুটকি পল্লী: কুয়াকাটায় শুটকির চাহিদা না থাকলেও দেশের বিভিন্ন স্থানে শুটকির চাহিদা থাকায় কুয়াকাটায় শুটকি শিল্পের যাত্রা শুরু হয়। সমুদ্র সৈকতের পশ্চিম পাশে লেম্বুর চরে অস্থায়ীভাবে বাশ দিয়ে শুটকির মাচা তৈরি করা হয়।

স্বপ্নরাজ্য পার্ক ও রিসোর্ট: কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত থেকে তিন কিলোমিটার পশ্চিমে ভেড়ি বাধের সাথেই স্বপ্নরাজ্য পার্ক ও রিসোর্ট অবস্থিত। এখানে ছোট একটি পার্ক রয়েছে। পার্কে কয়েকটি জীবন্ত প্রাণি রয়েছে।

লেম্বুর বন: পর্যটকরা লেবু বন বা বাগান মনে করতে পারেন আসলে লেম্বু ছিল রাখাইন সম্প্রদায়ের একটি মেয়ে। তার বাড়ি ও বাগান এখানে ছিল। সমুদ্রে সে বাড়ি হারিয়ে গেছে। এখান থেকে পশ্চিমে ফাতরার বন দেখা যায়। লেম্বু বাগান থেকে সূর্যাস্ত সবথেকে ভাল দেখা যায়। এখানে সামুদ্রিক শামুক ঝিনুকের প্রচুর খোলস পাওয়া যায়। এখানে বেশ কিছু দোকান গড়ে উঠেছে। কাকড়া বা মাছ ফ্রাই করে খাওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে।

ফাতরার বন: আন্ধারমানিক নদীর মোহনা পার হয়ে বঙ্গোপসাগরের তীর ঘেষে এ ম্যানগ্রোভ বন গড়ে উঠেছে। এ বনের মধ্যে হরিণ, বানর, শুকর, বন মোরগ, শিয়াল, বাঘডাস, মেছোবাঘ, ভোদর, খরগোশ, অজগর দেখতে পাওয়া যায়। বনের দক্ষিণ পশ্চিম পাশে সরকারের অর্থায়নে ইকোপার্ক তৈরি হয়েছে।

লাল কাঁকড়ার চর: লালকুয়াকাটার বেশ কিছু স্থানেই লাল কাঁকড়া দেখতে পাওয়া যায়।

পানি জাদুঘর: মানুষকে পানি সম্পদ ব্যবহারে সচেতন করার জন্য এ জাদুঘর প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এশিয়ার প্রথম পানি জাদুঘর। কলাপাড়া উপজেলা থেকে ৬ কিলোমিটার দক্ষিণে পাখিমারা বাজারে পাশে অবস্থিত। একটি বেসরকারি সংস্থার উদ্যেগে এটি প্রতিষ্ঠিত। শুক্রবার ছাড়া প্রতিদিন সকাল নয়টা থেকে পাঁচটা পর্যন্ত খোলা থাকে।

সোনার চর: পটুয়াখালী জেলার রাঙ্গাবালী উপজেলায় সোনার চর অবস্থিত। বঙ্গোপসাগরের বুকের এ চরটি দক্ষিণ সীমার শেষ ভূখন্ড। এখানেও বিভিন্ন ধরনের পশু পাখি রয়েছে।

কুয়াকাটা ভ্রমণ
কুয়াকাটায় ভ্রমণ করতে গেলে পর্যটকদের হাতে সর্বনিম্ন দুই দিন রাখতে হবে। কুয়াকাটায় বিভিন্ন ধরনের প্যাকেজ ট্যুরের ব্যবস্থা রয়েছে। জল ও স্থল পথে এ ভ্রমণ গুলোর ব্যবস্থা রয়েছে। কুয়াকাটা জিরো পয়েন্টের ভেড়ি বাঁধ, কেরানি পাড়া সহ বিভিন্ন জায়গায় খাবার হোটেল রয়েছে। কম দামী ও বেশি দামী বিভিন্ন মানের খাবার পাওয়া যায়। কুয়াকাটার রাখাইনদের লোকসঙ্গীত, অভিনয়, নৃত্য আয়োজনের ব্যবস্থা রয়েছে। পর্যটকদের চাহিদা অনুসারে তারা আয়োজন করে থাকে। কুয়াকাটায় অনেকগুলি মার্কেট রয়েছে তার মধ্যে বিভিন্ন ধরনের পোশাক, শামুক, ঝিনুকের কাজ সহ বিভিন্ন দ্রব্যাদি পাওয়া যায়। পর্যটক সহ স্থানীয়দের স্বাস্থ্য সেবা দেয়ার জন্য তুলাতলীতে ২০ শয্যা বিশিষ্ট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স রয়েছে। কুয়াকাটায় পর্যটকদের আবাসনের ব্যবস্থা করার জন্য সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন ধরনের হোটেল ও মোটেল রয়েছে। এসব হোটেলে বিভিন্ন ধরনের বেড এসি, নন এসি থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। কুয়াকাটায় অন্তত: ৬০ টি হোটেল মোটেলে ১০,০০০ লোকের থাকার ব্যবস্থা রয়েছে।

পর্যটন কেন্দ্র কুয়াকাটায় বিভিন্ন ভাবে যাতায়াত ব্যবস্থা রয়েছে। ঢাকা কুয়াকাটা এসি, নন এসি বাস রয়েছে। এছাড়া ঢাকা পটুয়াখালী লঞ্চ সার্ভিস রয়েছে। আকাশপথে বরিশাল গিয়ে কুয়াকাটায় যাওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে।

/এএস

Header Ad
Header Ad

মে মাসে শেখ হাসিনার বিচার শুরু হচ্ছে: প্রধান উপদেষ্টা

ছবি: সংগৃহীত

জুলাই-আগস্ট গণঅভুত্থানে গণহত্যার মামলায় আগামী মাসের শুরুতেই সাবেক প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনার বিচার শুরু হচ্ছে-আল জাজিরাকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে এসব কথা জানিয়েছেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

কাতারভিত্তিক সম্প্রচারমাধ্যম আলজাজিরার বৈশ্বিক নেতাদের সাক্ষাৎকারমূলক অনুষ্ঠান ‘টক টু আল–জাজিরা’য় এ কথা বলেন তিনি।
আগামী ডিসেম্বর থেকে আগামী বছর জুনের মধ্যেই নির্বাচন হবে বলে ফের জানিয়েছেন তিনি

এ সময় তিনি আরও বলেন, শুধু মানবিক সহায়তা নয়, নিরাপদ প্রত্যাবাসনই রোহিঙ্গা সংকটের স্থায়ী সমাধান।

বাংলাদেশে একটি সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ এবং উদাহরণ সৃষ্টিকারী নির্বাচন উপহার দেয়ার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, নির্বাচনের আগে সংস্কারের তালিকা ছোট হলে ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন এবং তালিকা বড় হলে আগামী বছরের জুনের মধ্যে নির্বাচন হবে।

অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে জনপ্রত্যাশা এখনও তুঙ্গে রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, জনগণ মনে করে অন্তর্বর্তী সরকার এখনও তাদের জন্য ভালো সমাধান।

আলজাজিরার ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা দীর্ঘ সাক্ষাৎকারে জুলাই বিপ্লব, সাবেক স্বৈরাচার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারতে পালিয়ে যাওয়া, সাবেক সরকারের দুর্নীতিসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলেন তিনি।

আলজাজিরার উপস্থাপক ড. ইউনূসকে প্রশ্ন করেন, এটা কি বলা ঠিক যে, শেখ হাসিনার পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকারের ‘মধুচন্দ্রিমা’ এখন সম্ভবত শেষ হয়েছে? কিছু বেশ বড় চ্যালেঞ্জ রয়েছে, যেগুলোর সুনির্দিষ্ট জবাব আপনাকে দিতে হবে। কারণ, পুরোনো ক্ষমতাধরদের প্রভাব রয়েছে, অনেকে রাজনৈতিক শূন্যতাকে কাজে লাগাতে চাইতে পারে।

জবাবে ড. ইউনূস বলেন, মধুচন্দ্রিমা শেষ হোক বা না হোক, বাংলাদেশের মানুষ মনে করে অন্তর্বর্তী সরকার এখনও তাদের জন্য ভালো সমাধান। তারা অন্তর্বর্তী সরকারকে সরাসরি চলে যেতে এখনও বলছে না। বরং একটা ভালো নির্বাচন উপহার দিতে সরকারই নির্বাচন আয়োজনের দিকে যাচ্ছে। জনগণ তাড়াতাড়ি ক্ষমতা হস্তান্তরের কথা এখনও বলছে না।

লাখ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীর সমাধান কি বাংলাদেশ একা করতে পারবে?

জবাবে ড. ইউনূস বলেন, আমরা আন্তর্জাতিক সংস্থা ও জাতিসংঘের সঙ্গে রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে কাজ করছি। তারা যাতে নিরাপদে বাড়ি ফিরে যেতে পারে, তা নিশ্চিত করার চেষ্টা করছি। বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে কিছু বোঝাপড়া যাতে তৈরি হয়।

নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে অংশগ্রহণের অনুমতি দেয়া হবে কিনা– এমন প্রশ্নের জবাবে ড. ইউনূস বলেন,
এ প্রশ্নের জবাবের একটি অংশ আওয়ামী লীগকেই নির্ধারণ করতে হবে। দলটি আগে নিজেই সিদ্ধান্ত নেবে–তারা নির্বাচনে যোগ দেবে কিনা। তারা এখনও কিছু ঘোষণা করেনি। তা ছাড়া নির্বাচনের সময় নির্বাচন কমিশন কী প্রতিক্রিয়া দেয়, সেটাসহ নানা বিষয় সামনে আসতে পারে।

তাহলে আওয়ামী লীগের নির্বাচনে অংশ নেয়ার বিষয়টি নির্বাচন কমিশনের ওপর ছেড়ে দিচ্ছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিষয়টি তা নয়। অন্যান্য রাজনৈতিক দল আছে, যারা বলতে পারে যে, এ আইনের অধীনে আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না।

সাক্ষাৎকারে থাইল্যান্ডের ব্যাংককে ড. ইউনূসের সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বৈঠকের প্রসঙ্গ ওঠে। ড. ইউনূস জানান,
তিনি বিমসটেক সম্মেলনের ফাঁকে মোদির সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন। সেখানে শেখ হাসিনাকে ‘চুপ’ রাখতে বলেছিলেন তিনি। জবাবে মোদি বলেছিলেন, এটা তার জন্য সম্ভব নয়। শেখ হাসিনা সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করে কিছু বললে, সেটি তিনি নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন না।

যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, পাকিস্তান ও চীনের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে ড. ইউনূস বলেন, একসঙ্গে কাজ করার নীতি নিয়ে এগিয়ে যেতে চাই। আমরা একসঙ্গেই পারস্পরিক সহযোগিতামূলক পদক্ষেপ নিতে চাই।

Header Ad
Header Ad

ঢাকাসহ সারাদেশে বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে

ছবি: সংগৃহীত

রাজধানী ঢাকা ও এর পার্শ্ববর্তী এলাকায় অস্থায়ীভাবে বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। এর পাশাপাশি কমতে পারে দিনের তাপমাত্রা। এছাড়া আকাশ আংশিক মেঘলা থেকে মেঘলা থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। এ সময় দক্ষিণ অথবা দক্ষিণ-পূর্ব দিক থেকে ঘণ্টায় ১০-১৫ কিলোমিটার বেগে বাতাস বইতে পারে।

সোমবার (২৮ এপ্রিল) রাজধানীসহ পার্শ্ববর্তী এলাকার সকাল ৭টা থেকে পরবর্তী ৬ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে এ তথ্য জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।

সোমবার সকাল ৬টায় ঢাকার তাপমাত্রা ছিল ২৮ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৮২ শতাংশ।

সারাদেশের সকাল ৬ টা থেকে পরবর্তী ১২০ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ বিদ্যুৎ চমকানো অথবা বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। একই সঙ্গে সারাদেশে দিনের তাপামাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে এবং রাতের তাপমাত্রা সামান্য কমতে পারে।

আরও বলা হয়েছে, লঘুচাপের বর্ধিতাংশ বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল হয়ে পশ্চিমবঙ্গ থেকে উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে।

রোববার (২৭ এপ্রিল) সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৭ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় রংপুরের ডিমলাতে সর্বোচ্চ ৮৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়।

Header Ad
Header Ad

সবাই মিলে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করাই লক্ষ্য: আলী রীয়াজ

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ। ছবি: সংগৃহীত

ঐকমত্য কমিশনের লক্ষ্য হচ্ছে জাতীয় সনদ তৈরি করা। সবাই মিলে একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করার অংশ হিসেবে আলোচনা চলছে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ।

সোমবার (২৮ এপ্রিল) জাতীয় সংসদের এলডি হলে গণঅধিকার পরিষদের সঙ্গে সংলাপের সূচনা বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।

আলী রীয়াজ বলেন, চর্চা, ঐক্যে এবং সম্মিলিতভাবে জাতীয় সনদ তৈরি করতে সবার প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। ঐকমত্য কমিশনের লক্ষ্য হচ্ছে জাতীয় সনদ তৈরি করা। যাতে করে ক্ষমতার বিন্যাসে পরিবর্তন ঘটে। বাংলাদেশ যাতে সমস্ত সম্ভাবনা নিয়ে জাগ্রত হতে পারে। গত ৫৩ বছর মানুষ যে গণতান্ত্রিক আকাঙ্ক্ষাকে ধারণ করছে, সেই আকাঙ্ক্ষাকে বাস্তবায়ন করা যায়, পথ উন্মুক্ত করা যায়, যেন সবাই মিলে একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে পারি। তারাই অংশ হিসেবে এ আলোচনা।

তিনি আরও বলেন, শুধুমাত্র সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন, মতামত ও সুপারিশই যথেষ্ট নয়। সব রাজনৈতিক ও গণতান্ত্রিক শক্তিগুলোর জনমানুষের ঐক্যের মধ্য দিয়ে আমরা বাংলাদেশকে নতুন বাংলাদেশের দিকে অগ্রসর করতে পারব। কাজে কি লিখছি তা নয়, চর্চার মধ্য দিয়ে, অঙ্গীকারের মধ্য দিয়ে, প্রতিশ্রুতির মধ্য দিয়ে আমাদের এ কাজে অগ্রসর হতে হবে। আমরা সেই প্রচেষ্টায় আছি।

ঐকমত্য কমিশনের সহ সভাপতি বলেন, বাংলাদেশের মানুষ তরুণদের নেতৃত্বে প্রাণ দিয়ে যে সম্ভাবনা তৈরি করেছে, সবাই মিলে সে সম্ভাবনাকে বাস্তবায়নের পথে অগ্রসর হতে হবে। সেই পথ ও প্রচেষ্টায় সবাই একত্রিত আছি, থাকব। একত্রিত থাকার তাগিদ জারি রাখব।

রাষ্ট্র সংস্কারের বিষয়ে স্প্রেডশিট আকারে ৩৯টি দলের কাছে মতামত চেয়েছিল জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। এর মধ্যে ৩৫টি দল মতামত জমা দিয়েছে বলে জানান আলী রীয়াজ। রোববার পর্যন্ত কমিশন ১৯টি দলের সঙ্গে সংলাপ করেছে। ২০তম দল হিসেবে গণঅধিকার পরিষদের সঙ্গে কমিশন সংলাপ করছে বলে জানান আলী রীয়াজ।

২০১৮ সালে বর্তমান গণঅধিকার পরিষদের নেতাদের নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত কোটা সংস্কার আন্দোলনের কথা তুলে ধরে আলী রীয়াজ বলেন, তাদের অকুতোভয় সংগ্রামের মধ্য দিয়ে ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনের নতুন পর্যায় সূচনা হয়েছিল। যার ধারাবাহিকতায় ২০২৪ সালে কোটা সংস্কার আন্দোলন ও পরবর্তী পর্যায়ে একটি অভূতপূর্ব ও অভাবনীয় গণঅভ্যুত্থান হয়েছে।

প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দারের সঞ্চালনায় কমিশনের সদস্য সফর রাজ হোসেন, বিচারপতি এমদাদুল হক, ড. বদিউল আলম মজুমদার, ড. ইফতেখারুজ্জামান এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

Header Ad
Header Ad

সর্বশেষ সংবাদ

মে মাসে শেখ হাসিনার বিচার শুরু হচ্ছে: প্রধান উপদেষ্টা
ঢাকাসহ সারাদেশে বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে
সবাই মিলে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করাই লক্ষ্য: আলী রীয়াজ
ইশরাককে মেয়র ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ
কাশ্মীর সীমান্তে ভারত-পাকিস্তানের ফের গোলাগুলি
টস হেরে ফিল্ডিংয়ে বাংলাদেশ, একাদশে ৩ পরিবর্তন
দেশে ফিরেছেন প্রধান উপদেষ্টা
টটেনহামকে উড়িয়ে প্রিমিয়ার লিগের চ্যাম্পিয়ন লিভারপুল
শেখ হাসিনাকে ‘চুপ’ রাখতে পারবেন না মোদি
রেফারির কাছে ক্ষমা চাইলেন মাদ্রিদের ডিফেন্ডার আন্তনিও রুদিগার
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নবীন শিক্ষার্থীদের শুভেচ্ছা উপহার দিলেন ছাত্রদল নেতা
দুর্নীতির অভিযোগ তুলে দুই উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবি
নওগাঁয় গ্রাহকের আমানতের টাকা ফেরত না দেওয়ায় জাতীয় পার্টি’র নেতাকে গণধোলাই
পাকিস্তানের পাশাপাশি বাংলাদেশকেও পানি না দেওয়ার আহ্বান বিজেপি এমপির
এসআই নিয়োগের ফলাফল প্রকাশ, ৫৯৯ জনকে প্রাথমিক সুপারিশ
হাকিমপুরে গরীবের চাল ছাত্রলীগ নেতার গুদামে
চুরির অভিযোগে কুবির দুই শিক্ষার্থী বহিষ্কার
ভারত-পাকিস্তান ইস্যুতে আগবাড়িয়ে কিছু করার পক্ষে নয় ঢাকা
সাব-ইন্সপেক্টর পদে প্রাথমিক সুপারিশ পেল ৫৯৯ জন
দুই উপদেষ্টার এপিএস-পিও’র দুর্নীতির খোঁজে গোয়েন্দা কার্যক্রম শুরু