কাজী আসমা আজমেরীর হাম্পি ভ্রমণ
‘হাম্পি শহরটির সঙ্গে আমি পরিচিত হয়েছিলাম ২০০৯ সালে যখন প্রথম আমি ইন্ডিয়া ভ্রমণ করি। ব্যাঙ্গালোর ট্রেন স্টেশনে ওয়েটিং রুমে থাকাকালীন এক স্প্যানিশ দম্পতির সঙ্গে পরিচয় হয়, তখন আমরা বিদেশি কোটায় টিকিট কেনার জন্য অপেক্ষা করছিলাম, আমি চিন্তা করছিলাম মহীশূর যাব। তারা আমাকে হাম্পি সম্পর্কে জানায় এবং হাম্পি এমন একটি স্থান যেখানে অনেকে স্পেন থেকে আসে।’
বিশ্ব পর্যটক কাজী আসমা আজমেরী এভাবেই তার হাম্পি শহর ভ্রমণের কথা বলছিলেন।
তিনি বলেন, ‘তখন আমিও তাদের সঙ্গে হাম্পির টিকেট কিনলাম সাড়ে চারশ কিলোমিটার দূরের সেই হাম্পি শহরের জন্য। তারপর হঠাৎই চলে আসলাম এই শান্তিপূর্ণ সে রাজ্যে। তখনো ইন্ডিয়ান লোকেদের আনাগোনা এখানে খুবই কম ছিল।’
হনুমান টেম্পেল ও ভিরুপাকসে মন্দিরের জন্য হাম্পি ইন্ডিয়ানদের কাছে বিখ্যাত ছিল। যদিও হাম্পির ঐতিহ্য মুগ্ধ করার মতো ছিল।
আমারও সেই তরুণ ছোট্ট হৃদয় কে নাড়া দিয়েছিল। তার ঐতিহ্য আরও বাড়িয়ে দিয়েছে মনোমুগ্ধকর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও বিদেশিদের আনাগোনা। আমার হৃদয় ছুঁয়ে যায়, নতুন বন্ধুদের সঙ্গে পরিচয়ের এক বিশাল সুযোগ হয়। হাম্পি সম্পর্কে একটু জেনে নিতেও ভুল হয় না, যোগ করেন তিনি।
হাম্পি বিশ্বের প্রাচীন যুগের অন্যতম সেরা ঐতিহাসিক স্থান। এটি হোসিপেট সিটি থেকে প্রায় ১১ কিলোমিটার দূরে টুঙ্গভদ্র নদীর তীরে অবস্থিত বিখ্যাত বিজয়নগর সাম্রাজ্যের প্রাথমিক রাজধানী শহর ছিল। হাম্পি একটি ছোট জায়গা যা ২৫ বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে। এটি পুরোপুরি পর্বতমালার দ্বারা আবদ্ধ (অঞ্জনিয়া, মাল্যবন্ত এবং মতঙ্গা পাহাড়) তিনটি সাইট দ্বারা নির্মিত এবং বাকি একটি সাইটটি টুঙ্গভদ্র নদীর তীরবর্তী। হিন্দুরা বিশ্বাস করে যে হাম্পি পূর্ব-প্রাচীন যুগে (খ্রিস্টপূর্ব ১ম) পূর্বে বিজয়নগর সাম্রাজ্যের আগে বানর রাজ্যের রাজ্য ছিল (রামায়ণ অনুসারে) যখন শহরটি কিশকিন্ধা নামে পরিচিত ছিল।
হাম্পির ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতি ও স্থাপত্যের সাক্ষী হতে আপনার মনকে টেনে আনবে। হাম্পি ২০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে (১৩৩৬ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৫৬৫ খ্রিস্টাব্দ) বিজয়নগর সাম্রাজ্যের রাজধানী হিসেবে পরিচিত ছিল। বিজয়নগর শাসকরা এই শহরটিকে প্রচুর মনোরম মন্দির, প্রাসাদ, বাজারের রাস্তা ও স্মৃতিস্তম্ভগুলো দিয়ে সজ্জিত ও ডিজাইন করেছেন যা এই অবস্থানটি ভারতের বিখ্যাত প্রাচীন মহানগরীগুলোর মধ্যে একটি। এই অতি প্রাচীন আড়াআড়িটি ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্য হিসেবে নির্বাচিত হয়েছে।
এ জায়গাটিতে যাওয়া খুব সহজ। বাংলাদেশ থেকে খুব কম খরচেই অনেক সুন্দর একটি জায়গায় যাওয়া যায়। কলকাতা থেকে ট্রেনে কিংবা প্লেনে ব্যাঙ্গালোর, ব্যাঙ্গালোর থেকে হস্পেট নামে একটি শহরে নামতে হয় সেখান থেকে মাত্র দেড়শ রুপি ট্যাক্সি ভাড়া দিয়ে এ হাম্পি শহরে যাওয়া যায়। আর এখানে হোটেল ভাড়া খুবই কম মাত্র ৫০০ থেকে ১২০০ রুপির ভেতরে চমৎকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে হোটেল পাওয়া যায়। খাওয়ার জন্য অনেক কিছুই রয়েছেঅ যদিও জায়গাটি নিরামিষভোজীদের জন্য বিখ্যাত।
কাজী আসমা আজমেরী আরও বলেন, গতবছর ২০২১ সালের ২২ মার্চ আবারও গিয়েছিলাম সেই হাম্পি শহরে তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখতে, যদিও এখন আর সেই হাম্পি আইল্যান্ড ইন্ডিয়ানদের ধর্মীয় কারণে উঠে গিয়েছে, এখনো রয়েছে সুন্দর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য।
এমএমএ/