প্রাণ ফিরেছে সিলেটের পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে
ভোলাগঞ্জের সাদা পাথরে নেমেছেন বিল্লাল হোসেন। পেশায় একজন ব্যাংকার। ঈদের ছুটিতে হবিগঞ্জ থেকে সিলেটের পাথররাজ্য ভোলাগঞ্জে এসেছেন তিনি। সঙ্গে স্ত্রী ও তিন সন্তান। সাদাপাথরে নেমেই মনে যেন এক প্রশান্তির ছোঁয়া। তিনি জানালেন মনটা অনেকদিন ধরে কিছুদিনের জন্য পালাই পালাই করছিল। ঈদের ছুটিতে অবশেষে সেই সুযোগটা কাজে লাগালাম। আর বিশেষ করে পরিবারসহ সাদা পাথরে আসতে পেরে কি যে ভালো লাগছে-তা বলে শেষ করা যাবে না।
শুধু বিল্লাল হোসেন নয়, ঈদের ছুটিতে সিলেটের বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্রে এভাবেই বাঁধ ভাঙা উচ্ছ্বাস দর্শনার্থীদের। প্রকৃতির টানে ছুটে আসা এই মানুষগুলোর পদচারণায় সিলেটের পর্যটন স্পটগুলো এখন লোকে লোকারণ্য। ঈদের দ্বিতীয় দিনেও মুখরিত হয়ে উঠেছে সিলেটের পর্যটন স্পটসমূহ। ঈদের দিন বিকালে সিলেট নগরী ও শহরতলীর প্রতিটি পর্যটন স্পটে পর্যটকদের ভিড় ছিল দেখার মতো।
এদিকে বুধবার (৪ মে) ঈদের দ্বিতীয় দিনে জাফলং, লালাখাল, রাতারগুল, বিছনাকান্দি, পান্তুমাই, ভোলাগঞ্জ সাদাপাথর, দরগাহে হযরত শাহজালাল (র.) মাজারের পাশাপাশি সিলেট নগরীর বিভিন্ন পার্কগুলোতে দল বেঁধে গাড়ি নিয়ে ছুটে আসছেন পর্যটকরা। সিলেটের সবকটি হোটেল-মোটেলও বুকড।
ভারতের মেঘালয় পাহাড় ঘেঁষা প্রকৃতির অপরূপ লীলাভূমি প্রকৃতি কন্যা জাফলং, পান্তুমাই’র ঝর্ণা, বিছনাকান্দির স্বচ্ছ-সফেদ পানি আর সোয়াম্প ফরেস্ট খ্যাত রাতারগুল, ভোলাগঞ্জের জিরো লাইনে সাদা পাথরের অপরুপ দৃশ্য এক নজর দেখতে কার না মন চায়!
গত দুই বছরে করোনাভাইরাসের কারণে সরকারি বিধি-নিষেধ থাকায় ইচ্ছে থাকা স্বত্বেও দেশের অন্যস্থান থেকে সিলেট আসতে পারেননি ভ্রমণ পিপাসুরা। কিন্তু এবারের চিত্রটা একটু ভিন্ন। বিধিনিষেধ না থাকায় দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ ছোটে আসছেন প্রকৃতি কন্যা সিলেটে। দেশের অনেক জেলা থেকে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের পাশাপাশি উঠতি বয়সী যুবক-যুবতীরা ছুটে এসেছেন সিলেটে ঈদের ছুটি কাটাতে।
এদিকে, সিলেট অঞ্চলের ট্যুরিস্ট পুলিশ সুপার মো. আলতাফ হোসেন বলেন, ‘ঈদ–পরবর্তী সময়ে চার দিন সিলেটের পর্যটনকেন্দ্রগুলোয় স্থানীয় পর্যটকসহ গড়ে আট লাখ পর্যটক উপস্থিত থাকবেন বলে ধারণা করছি। এ জন্য ট্যুরিস্ট পুলিশের পক্ষ থেকে পর্যটকদের নিরাপত্তার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।’
তিনি নিজে পর্যটনকেন্দ্রগুলো পর্যবেক্ষণ করেছেন বলে জানিয়েছেন। তিনি বলেন, পর্যটনকেন্দ্রগুলো ঘুরে সেখানকার দায়িত্বরত কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপ করে পর্যটকদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া পর্যটকদের সতর্কতার জন্য পর্যটনকেন্দ্রগুলোয় নির্দেশনামূলক ফেস্টুন লাগানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ ছাড়া নিরাপত্তার জন্য পর্যটকদের পানিতে নামার ব্যাপারে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সূত্রে জানা গেছে, সিলেট জেলা পুলিশ এরই মধ্যে সিলেটের ১০টি পর্যটনকেন্দ্র ও জনসমাগমস্থল চিহ্নিত করেছে। এসব কেন্দ্রে ট্যুরিস্ট পুলিশের সঙ্গে সমন্বয় করে নিরাপত্তাবেষ্টনী তৈরি করা হবে। এ ছাড়া সাদাপোশাকেও গোয়েন্দা পুলিশ নিযুক্ত থাকবে।
এমএমএ/