মালদ্বীপ থেকে ফিরে : পর্ব-২
ক্লিন সিটি, গ্রিন সিটি মালে ও হুলহুমালে
দ্বীপ রাষ্ট্র মালদ্বীপের পাশাপাশি দুই শহরের নাম হুলহুমালে ও রাজধানী মালে। এই দুই শহরকে এক করেছে দৃষ্টিনন্দন মালদ্বীপ-চায়না ফ্রেন্ডশীপ সেতু। ভারত সাগরের উপর সাগরের উত্তাল নীলজল রাশিকে এক পাশে রেখে এই সেতু নির্মাণ করে দুই শহরের মধ্যে সেতুবন্ধন তৈরি করেছে মালদ্বীপ সরকার।
মালদ্বীপের রাজধানী মালে’র ভেলেনা আর্ন্তজাতিক বিমানবন্দরে ইমিগ্রেশন শেষ করে বের হওয়ার পরই শহরের তাক লাগানো সৌন্দর্য্য চোখে পড়ল। বিমানবন্দর ছেড়ে গাড়িতে করে যখন হুলহুমালে শহরে যাচ্ছিলাম সড়কে ধুলোবালির ছিটেফোটাও চোখে পড়েনি। ছিল না কোন যানজট। ইউরোপ, আমেরিকার দেশগুলোর মতই দক্ষিণ এশিয়ার দেশ মালদ্বীপের মালে এবং হুলোমালে শহরেও কানে বাজেনি গাড়ির হর্ণ। শুধু পাশ দিয়ে গাড়ির ছুটে চলার শব্দ ছাড়া আর কোন রকম শব্দ নেই। শহরের সড়কে নেই লক্কড়-ঝক্কড় কোন যানবাহন। এমনিতেই গাড়ির সংখ্যা কম, তার উপর পাবলিক পরিবহন নেই বললেই চলে। আর সড়কে যেসব গাড়ি আছে তার সবগুলোই নতুন ও ঝকঝকে। নেই পরিবেশ দুষণ করা কালো ধোঁয়া।
সবচেয়ে মজার বিষয় হচ্ছে মালে ও হুলোমালে শহরে কোন ট্রাফিক পুলিশ চোখে পড়েনি। রাস্তায় চলাচলকারি যানবাহন ও সাধারণ মানুষ নিজ দায়িত্বে রাস্তার শৃংখলা বজায় রাখছেন। শুধুমাত্র বিমানবন্দর থেকে বের হয়ে হুলহুমালে ও মালে শহরে যাবার জন্য যে মোড়টি রয়েছে অর্থাৎ সাগরের উপর দৃষ্টিনন্দন সেই মালদ্বীপ-চায়না ফ্রেন্ডশীপ সেতুর গোড়ায় একজন ট্রাফিককে দায়িত্ব পালন করতে দেখা গেছে। যেখান থেকে একদিকে চলে গেছে মালে ও অন্যদিকে হুলহুমালের সড়ক।
মালে শহরে দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে বসবাসকারি বাংলাদেশী যুবক সজীব হোসেন বলছিলেন, এখানে আইন অমান্য করলেই কঠোর সাজার মুখোমুখি হতে হয়। জরিমানা গুণতে হয় মোটা অংকের। সে কারণে কেউ আইন ভঙ্গ করে না। এটা খুবই ইতিবাচক একটা দিক। সারাক্ষণ পুলিশ মনিটরিং করে। শহর জুড়ে রয়েছে অসংখ্য সিসি ক্যামেরা।
পরিপাটি করে সাজানো দক্ষিণ এশিয়ার দ্বীপ রাষ্ট্র মালদ্বীপের এমন সৌন্দর্য্য, সড়কের শৃংখলা, রাস্তাঘাট আর ফুটপাতের ময়লা আবর্জনাহীন পরিচ্ছন্ন পরিবেশ নি:সন্দেহে অনুসরণীয়। এখান থেকে শেখার আছে অনেক কিছু।
সূর্যের তাপ আর গরম সহ্য করা ব্যতীত মালে বা হুলহুমালে শহরে আর কোন সমস্যা নেই। নিরাপত্তার দিক থেকে কোন রকম শংকা নেই। পর্যটকদের জন্য এক কথায় নিরাপদ এক শহর। পর্যটকরা নির্বিঘ্নে, নিশ্চিন্তে এই শহর দুটিতে রাত বিরাতে একা ঘুরে বেড়াতে পারেন। কিংবা শহরের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া সাগর সৈকতে বসে আড্ডায় মশগুল থাকতে পারেন। কেউ কোন বাধা দেবে না কিংবা কিছু জিজ্ঞেসও করবে না। ছিনতাইকারী, সন্ত্রাসী বা অন্যকোন অপরাধী নেই।
পর্যটকদের জন্য ভয়-ভীতিহীন অনিন্দ্য সুন্দর এই দুই শহর মালে ও হুলহুমালে। শুধু এই দুই শহর নয়, ১২ শতেরও বেশি দ্বীপের দেশ মালদ্বীপ রাষ্ট্রের প্রত্যেকটা দ্বীপই পর্যটকদের জন্য হীরার খনি। দ্বীপগুলোতে ঘুরে বেড়ানোর যে শান্তি, মালে ও হুলহুমালে না গেলে সেটা টের পাওয়া যাবে না। লিখে বা গল্প বলে দিলেও আসল সুখ হচ্ছে নিজের চোখে দেখা।
বিমানবন্দর থেকে বের হয়ে মিনিট দশেকের মধ্যে হুলহুমালে শহরে পৌঁছে তো আরও তাজ্জব। শহরের প্রধান সড়কের পাশে যেখানে আমাদের আবাসস্থল সেখানে নামতেই দেখা গেল পরিস্কার পরিছন্ন সবুজ এক শহর। খুবই শান্ত স্নিগ্ধ পরিবেশ। ভারত সাগরের ঢেউ হুলহুমালে শহরের তীরে আছড়ে পড়লেও শহরের পরিবেশ খুবই শান্ত। এখানে গাড়িতে তো বটে, ফুটপাত ধরে হাঁটলে দেখা মিলবে শুধু ভিন দেশি বিভিন্ন বয়সি পর্যটকদের।
পরিবেশ বান্ধব শান্তশিষ্ট শহর হুলোমালে ও মালে শুধু ক্লিন শহরই নয়, একেবারে গ্রিন শহর। সবকটি সড়কের দুই পাশ দিয়ে শুধু সবুজের সমারোহ। নানারকম বৃক্ষরাজি। মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে নানান প্রজাতির গাছ আর গাছ। শহরের সড়কগুলোর দুই পাশ দিয়ে গড়ে উঠা বাসা-বাড়ি, হোটেল-রেস্তোরার সামন-পিছন পুরোটাই সবুজে আচ্ছাদিত।
ছোট শহর হলেও হুলহুমালে এবং মালে’তে আছে আমাদের রমনা পার্কের মতই একাধিক পার্ক। রমনা পার্কের তুলনায় ছোট হলেও সেসব পার্কের সৌন্দর্য্য ও পরিবেশ আপনাকে মুগ্ধ করবে।
এনএইচবি/