প্রথম রোজায় দেশের আকাশে চাঁদ ও শুক্র গ্রহের বিরল দৃশ্য
ঢাকাপ্রকাশ এর কার্যালয় থেকে ছবিটি তুলেছেন সহ-সম্পাদক সালমান গালিব
রমজানের প্রথম সন্ধ্যায় এক বিরল দৃশ্যের সাক্ষী হয়ে থাকল বাংলাদেশ। শুক্রবার (২৪ মার্চ) সন্ধ্যা থেকেই পশ্চিমের আকাশে এক ফালি চাঁদের ঠিক নিচেই জ্বলজ্বল করছে শুক্র গ্রহ। এমন দৃশ্য সচরাচর দেখা যায়না বললেই চলে।
শুক্রবার সন্ধ্যায় প্রথম রোজার ইফতারের পরই আকাশে সবার চোখ আটকে যায় বিরল এই দৃশ্য দেখে। বাঁকা চাঁদের নিচে দেখা গেছে এক আলোকবিন্দুর। চাঁদ ও ওই আলোকবিন্দুর ছবি তুলে তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করেছে নেটিজেনরা। অনেকেই ক্যাপশনে লিখেছেন, ‘এটি দেখতে ঠিক আরবি হরফ ‘বা’ এর মতো।
বাংলাদেশ-ভারতসহ কয়েকটি দেশের আকাশে এ দৃশ্য দেখা যায়। আজ চাঁদ ও শুক্র গ্রহের ব্যবধান ছিল ৬ দশমিক ৫ ডিগ্রি। অনেকেই অজান্তে এদিন সন্ধ্যায় চাঁদের দিকে তাকিয়ে এই দৃশ্য দেখে অবাক হয়ে যান। সোশ্যাল মিডিয়ায় বয়ে যায় ফটো পোস্ট এর বন্যা। সেই ছবি দেখে আরও বেশি মানুষ এই দৃশ্য দেখতে বাড়ির ছাদে ভিড় করেন।
মহাকাশ গবেষকরা জানিয়েছেন, চাঁদের উপর দিয়ে শুক্র পার করে গেছে। চাঁদের উপর দিয়ে শুক্র পেরিয়ে যাওয়ার পর বাংলাদেশের আকাশ থেকে সেই দৃশ্য দেখা গেছে। শুক্র অবস্থান করছে চাঁদের উত্তর দিকে।
রাজধানীর কারওয়ান বাজার এলাকা থেকে ছবিটি তুলেছেন সহ-সম্পাদক আহমদ সিফাত
মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা, মহাজাগতিক এ বিষয়টির ব্যাখ্যা দিয়েছে। তারা বলছে, গত ১ মার্চ থেকেই খুব কাছাকাছি অবস্থান করছে বৃহস্পতি ও শুক্র গ্রহ। বিভিন্ন দেশে রাতের আকাশেই দেখা মিলছে এ বিরল দৃশ্যের। সূর্যাস্তের পর পশ্চিম আকাশের দিকে তাকালেই দেখা যাচ্ছে বৃহস্পতি ও শুক্র। আকাশে মেঘ না থাকলে কাছাকাছি আসার দৃশ্য খালি চোখেই দেখতে পারছেন যে কেউ।
বিজ্ঞান বিষয়ক ওয়েবসাইট অ্যাকিউ ওয়েদার বলছে, পৃথিবীর দুই প্রতিবেশী গ্রহ শুক্র ও মঙ্গল একে অপরের সবচেয়ে নিকটে আসতে চলেছে। একই সঙ্গে এক সারিতে দেখা যাবে শুক্র-মঙ্গল ও চাঁদকে। এমন ঘটনাকে ‘প্ল্যানেটরি কনজাংশন’ বলে আখ্যা করেছেন বিজ্ঞানীরা।
পরিষ্কার আকাশে খালি চোখেই দেখা যাবে এমন মহাজাগতিক রোমাঞ্চকর দৃশ্য। পৃথিবী থেকে দুটি গ্রহকে তারার মতো দেখা গেলেও বোঝা যাবে দুটি গ্রহ কাছাকাছি চলে এসেছে। আগামী ২৬ মার্চ, মঙ্গল ও শুক্র গ্রহ নিজেদের কক্ষপথ থেকে সবচেয়ে কম দূরত্বে ও একই সারিতে অবস্থান করবে। ওই দিন সূর্যাস্তের পর পশ্চিম আকাশে দুটি গ্রহ দৃশ্যমান হবে।
এর আগে, ২৫ মার্চ রাতে চাঁদের কাছাকাছি আসবে এই দুই প্রতিবেশী গ্রহ, যা মহাকাশ বিজ্ঞানে বেশ বিরল ঘটনা।
জ্যোতির্বিজ্ঞানের ব্যাখ্যায়, বছরের শীতল ও উষ্ণতম মাসগুলোর মাঝামাঝি সময়কে বলা হয়ে থাকে ‘মিটিওরলজিক্যাল বসন্ত’ বা ‘নাক্ষত্রিক বসন্ত’। মিটিওরলজিক্যাল বসন্ত বলতে সাধারণত ১ মার্চ থেকে ৩১ মে পর্যন্ত সময়কে ধরা হয়।
আরও পড়ুন: ২০৪৬ সালের ভালোবাসা দিবসে পৃথিবীতে আঘাত হানতে পারে ‘গ্রহাণু’!
মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা বলছে, সৌরজগতের গ্রহগুলো সূর্যের চারদিকে একই সমতলে বিভিন্ন কক্ষপথে ক্রমাগত ঘুরতে থাকার কারণে কখনও কখনও একই সরলরেখায় একাধিক গ্রহকে দেখা যায়। তখন মনে হয় গ্রহগুলো পরস্পরের কাছাকাছি চলে এসেছে, অথবা পরস্পরকে ছুঁয়ে ফেলছে। কিন্তু বাস্তবে গ্রহগুলো একে অপর থেকে অনেকটাই দূরেই অবস্থান করবে।
কয়েক সপ্তাহ ধরেই বৃহস্পতি ও শুক্রের পরস্পরের কাছাকাছি আসার বিষয়টি নজরে এসেছে। তবে যতই কাছাকাছি তাদের দেখা যাক না কেন, মহাকাশে পরস্পর থেকে চারশো মিলিয়ন মাইল দূরত্বে অবস্থান করছে এই গ্রহ দুইটি।
/এএস