লাখ টাকার ফোল্ডিং ফোনের যুগে টেকনো!
অনেক তো হল গেমিং আর ক্যামেরা ফোনের গল্প। এখন বাজারে নতুন ট্রেন্ড চলছে। হ্যাঁ ফোল্ডিং ফোনের কথাই বলছি। কোম্পানিগুলো একের পর এক পাল্লা দিয়ে ফোল্ডিং ফোন বাজারে ছেড়েই চলছে। ২০১৮ সালে চীনা স্মার্টফোন কোম্পানি রয়লে এর ফ্লেক্সপাই দিয়ে ফোল্ডিং স্মার্টফোনের যাত্রা শুরু হলেও ২০১৯ সালের শেষে বাজারে এই ট্রেন্ডকে জনপ্রিয় করে তুলে স্যামসাং। যদিও এর আগেই চীনের অপর টেক জায়ান্ট শাওমি তাদের মিক্স আলফা বাজারে ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছিল কিন্তু কোনো এক বিশেষ কারণে ফোনটি ডিজাইন করা হলেও আর বাজারে ছাড়া হয়নি। ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে বাজারে আসে স্যামসাং এর গ্যালাক্সি ফোল্ড তারপর একে একে হুয়াওয়ে, মটোরলা, শাওমি, অপ্পো, ভিভো সবাই ফল্ডিং ফোন বাজারে ছাড়ে। তবে দেরিতে হলেও এবার সে তালিকায় নাম লেখালো চীন ভিত্তিক স্মার্টফোন কোম্পানি টেকনো মোবাইল।
কম বাজেটের স্মার্টফোনের ব্র্যান্ড হিসেবে উপমহাদেশের বাজার বেশ ভালোই দাপিয়ে বেড়াচ্ছে টেকনো। মঙ্গলবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) নিজেদের প্রথম ফোল্ডিং স্মার্টফোন বাজারে ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছে টেকনো। তাদের নতুন এই স্মার্টফোনের মডেল ফ্যান্টম ভি ফোল্ড। টেকনোর ওয়েবসাইট সূত্রে জানা গেছে স্মার্টফোনোটির ডিসপ্লে ও আকৃতি অন্যসব ফোল্ডিং স্মার্টফোন থেকে বড় বলা যায় সবচেয়ে বড় আকৃতির কাছাকাছি তবে শাওমি ও ভিভোর কারণে সে খেতাবটি নেওয়া হল না টেকনোর। আশা করা যাচ্ছে আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই ফোনটি বাজারে পাওয়া যাবে।
স্মার্টফোনটিতে প্রসেসর হিসাবে ব্যবহার করা হবে মিডিয়াটেকের সর্বাধুনিক চার মিলিমিটার প্ল্যাটফরমের 'ডাইমেনসিটি ৯০০০ প্লাস' চিপসেট। আট কোরের এই প্রসেসরটির কার্যক্ষমতা ৩.২ গিগাহার্জ। গ্রাফিক্স কার্ড হিসাবে ব্যবহার করা হবে মালি জি ৭১০ এমসি টেন (G710 MC10)। স্টোরেজে ব্যবহার করা হবে ইউএফএস ৩.১ টেকনলজি। যা বেশ পুরাতন প্রযুক্তি। হয়তো খরচ কমাতেই পুরাতন প্রযুক্তির ব্যবহার করছে টেকনো। সহায়ক হিসাবে থাকবে ১২ গিগাবাইট র্যাম আর স্টোরেজ সুবিধা থাকবে ২৫৬ গিগাবাইট থেকে ৫১২ গিগাবাইট পর্যন্ত। স্মার্টফোনটি পাওয়া যাবে ১২/২৫৬ ও ১২/৫১২ দুটি ভ্যারিয়েন্টে। ফোনটি চলবে অ্যান্ড্রোয়েড থারটিন অপারেটিং সিস্টেমে আর ইউজার ইন্টারফেস বা ইউআই থাকবে এইচআইওএস থারটিন (HiOS 13)।
ফোনটিতে মূল ডিসপ্লে হিসাবে দেওয়া হবে ১ বিলিয়ন কালার সাপোর্টেড ৭.৮৫ ইঞ্চির এলটিপিও অ্যামোলেড মনিটর। ডিসপ্লের রেজুলেশন ২০০০বাই২২৯৬ (টু কে)। ডিসপ্লে অপারেট করা যাবে ১২০ হার্জ রিফ্রেশ রেটে। মূল ডিসপ্লের সুরক্ষায় স্ক্রিন হিসাবে কি গ্লাস ব্যবহার করা হবে তা জানা যায়নি। আর কাভার ডিসপ্লে হিসাবে দেওয়া হবে ১ বিলিয়ন কালার সাপোর্টেড ৬.৪২ ইঞ্চির এলটিপিও অ্যামোলেড মনিটর। ডিসপ্লের রেজুলেশন ১০৮০বাই২৫৫০ (আল্ট্রা এইচডি প্লাস)। এই ডিসপ্লেটিও ১২০ হার্জ রিফ্রেশ রেটে অপারেট করা যাবে। এই ডিসপ্লেটির সুরক্ষায় ব্যবহার করা হবে কর্নিং গরিলা গ্লাসের সর্বশেষ ও সর্বাধুনিক সংস্করণ গরিলা গ্লাস ভিক্টাস।
ফোনটির পিছনের ক্যামেরা প্যানেলে থাকবে ৩টি ক্যামেরা। প্রাইমারি ক্যামেরা হিসাবে ব্যবহার করা হবে ১.৯ অ্যাপারচারের ৫০ মেগাপিক্সেল ইমেজ সেন্সর যার লেন্স ওয়াইড। সেকেন্ডারি ক্যামেরা হিসাবে ব্যবহার করা হবে ৫০ মেগাপিক্সেল ইমেজ সেন্সর যার লেন্স টেলিফটো। তৃতীয় ক্যামেরা হিসাবে ব্যবহার করা হবে ১৩ মেগাপিক্সেল ইমেজ সেন্সর যার লেন্স ১২০ ডিগ্রি আল্ট্রাওইয়াইড। মূল ডিসপ্লেতে সেলফি ক্যামেরা হিসাবে থাকবে ১৬ মেগাপিক্সেল ইমেজ সেন্সর আর কাভার ডিসপ্লেতে সেলফি ক্যামেরা হিসাবে থাকবে ৩২ মেগাপিক্সেল ইমেজ সেন্সর।
সাউন্ড সিস্টেম হিসাবে থাকবে স্টেরিও স্পিকার তবে থাকছেনা ৩.৫ মিলিমিটার হেডফোন জ্যাক ও আলাদা মেমোরি কার্ড স্লট।
ফ্যান্টম ভি ফোল্ড এর দৈর্ঘ্য ৬.২৭ ইঞ্চি। ভাঁজ করা অবস্থায় এর প্রস্থ ২.৮৩ ইঞ্চি ও পুরুত্ব প্রায় আধা ইঞ্চি এবং ভাঁজ খোলা অবস্থায় এর প্রস্থ ৫.৫২ ইঞ্চি ও পুরুত্ব ৬.৯ মিলিমিটার। স্মার্টফোনটির ওজন ৩০০ গ্রাম। ফোনের নিরাপত্তায় ব্যবহার করা হবে সাইড মাউন্টেড ফিঙ্গার প্রিন্ট সেন্সর ইনভার্টেড অন পাওয়ার বাটন টেকনলজি। ফোনটি পাওয়া যাবে সাদা ও কালো দুটো রঙে।
ফোনটি সচল রাখতে ব্যবহার করা হয়েছে ৫০০০ মিলি অ্যাম্পিয়ারের লিথিয়াম পলি ব্যাটারি যা ৪৫ ওয়াট ফাস্ট চার্জিং সাপোর্টেড। ক্যাবল-টাইপ সি। টেকনো জানিয়েছে ফোনটি সম্পূর্ণ চার্জ হতে সময় লাগবে মাত্র ১ ঘন্টা।
টেকনো ইন্ডিয়া সূত্রে জানা গেছে অচিরেই ফোনোটি বাজারে পাওয়া যাবে যার মূল্য হবে ১ লাখ রুপি। তবে অফার মূল্য হতে পারে ৮০ হাজার রুপি অর্থাৎ বাংলাদেশি অর্থে প্রায় ১ লাখ ২ হাজার টাকা।
বাংলাদেশে টেকনো মোবাইলের অফিসিয়াল পরিবেশক থাকায় এই স্মার্টফোনটি বাংলাদেশের বাজারেও পাওয়া যাবে। তবে দাম জানতে হলে আনুষ্ঠানিক ঘোষোনার জন্য অপেক্ষা করতে হবে বলে জানিয়েছে টেকনো বাংলাদেশ।
/এএস