পুঁজি বড় করতে পারেনি বাংলাদেশ
সিরিজে দ্বিতীয়বারের মতো টস জিতে ব্যাটিং নেয়ার সিদ্ধান্তকে এবার আর মনের মতো করে সাজাতে পারেননি বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা। যদিও শুরুতে সে রকমই ইঙ্গিত ছিল। কিন্তু ইনিংসের মাঝপথে আফগান বাহিনী তাদের স্পিন ক্ষেপনাস্ত্র নিয়ে আক্রমণ চালিয়ে বাংলাদেশকে লক্ষ্যচ্যুত করে দেয়। খেলতে দেয়নি পুরো ৫০ ওভার। ৪৬.৫ ওভারে জমা করতে দেয় ১৯২ রান।
একইভাবে টানা দ্বিতীয় ম্যাচে সেঞ্চুরি করা হয়নি ওপেনার লিটন দাসের। তিনি ৮৬ রান করে আউট হন।এখন আরও ১০ পয়েন্ট পেতে হলে বাংলাদেশকে এই রান নিয়েই লড়াই করতে হবে। এখানে লক্ষ্য পূরণ হলে একই সঙ্গে আফগানিস্তানকে প্রথমবারের মতো হোয়াইটওয়াশ করার পাশাপাশি ওয়ানেড র্যাঙ্কিংয়ে ছয়ে উঠে যাবে।
২০ ওভার শেষে বাংলাদেশের রান ছিল ১ উইকেটে ৯১। ২২ ওভার পর্যন্ত বাংলাদেশষ সঠিক পথেই ছিল। এ সময় রান ছিল ২ উইকেটে ১০৪। কিন্তু এরপরই তারা স্পিন ক্ষিপনাস্ত্র নিয়ে আক্রমণে শামিল হয়। উভয় প্রান্ত থেকে স্পিন আক্রমণ শুরু করে। রশিদ-নবী-মুজিব মিলে এ সময় ২২ ওভার বোলিং করে রান দেন মাত্র ৭৫। উইকেট পড়ে ছয়টি। রশিদ নেন তিনটি, নবী দুইটি। একটি ছিল রান আউট। শেষ চার উইকেট পড়ে আরো দ্রুত মাত্র ১৭ রানে। শেষ দুইটি ছিল রানআউটও। ইনিংসে মোট তিনটি রান আউটও বাংলাদেশকে ব্যাকফুটে ঠেলে দেয়। ৪৬.৫ ওভারে ১৯২ রানে অলআউট হজওয়া বাংলাদেশ সব মিলিয়ে ৮৮ রানে হারায় ৯ উইকেট। আফগানিস্তানের বিপক্ষে এটি বাংলাদেশের দলগত সর্বনিম্ন রান।
আগের ২ ওভারে ১২ রান দেওয়া রশিদ খান আবির্ভূত হন স্বরূপে। দ্বিতীয় স্পেলে ৬ ওভারে ২০ রান দিয়ে তুলে নেন ২ উইকেট। ৭ ওভার পর তৃতীয় স্পেল করতে এসে ২ ওভারে ৫ রান দিয়ে নেন এক উইকটে। তার বোলিং ফিগার দাঁড়ায় ১০ ওভারে ৩৭ রানে ৩ উইকেট। মোহাম্মদ নবী প্রথমবারের মতো বল তুলে নিয়ে টানা ১০ ওভার বোলিং করে ২৯ রান দিয়ে নেন ২ উইকেট। একটি রান আউট ছিল তারই ওভারে। এ সময় মুজিব ৩ ওভার বোলিং করে কোনো উইকেট না পেলেও রান দেন ১৬। প্রথম ৪ ওভারে তিনি রান দিয়েছিলেন ১৮। এই স্পিন ত্রয়ীর আক্রমণেই বাংলাদেশ ম্যাচে নিজেদের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে। একই সঙ্গে ৫০ ম্যাচ ওয়ানডে ম্যাচ খেলতে নেমে সেঞ্চুরির পিঠে সেঞ্চুরিও করা হয়নি লিটনের।
অথচ বাংলাদেশের শুরুটা মন্দ ছিল না। তামিম-লিটনের উদ্বোধনী জুটি ১০ ওভারে ৪৩ রান এনে দেওয়ার পরের ওভারেই তামিম ইকবাল (১১) আউট হয়ে যান ফজলহক ফারুকীর বলে বোল্ড হয়ে। সিরিজে এ নিয়ে তিনি তিনটি ম্যাচেই তার শিকার হলেন। তামিম ফিরে যাওয়ার পর লিটন ও সাকিব মিলে দলের রানের চাকা সচল রাখার কাজ এগিয়ে নিয়ে যেতে থাকেন।
জুটিতে ৬১ রান আসার পর সাকিব আজমতউল্লাহ ওমরজাইয়ের বলে বোল্ড হয়ে ফিরে যান সিরিজে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ ৩০ রান করে। তখন ওভার ছিল ২১.৪। এরপরই শুরু হয় উভয়প্রান্ত থেকে স্পিন ক্ষেপনাস্ত্র। যা আর সামাল দেওয়া সম্ভব হয়নি বাংলাদেশের পরবর্তী ব্যাটসম্যানদের। ৬৩ বলে ফিফটি তুলে নেওয়া লিটন দাস নিজের ৫০তম ওয়ানডেতে ছুটছিলেন আরেকটি সেঞ্চুরির দিকে। কিন্তু সেঞ্চুরি থেকে ১৪ রান দূরে থাকতে তাকে থামিয়ে দেন মোহাম্মদ নবী। আসলে হবে গুলবাদিন নাইব। স্লগ করতে গিয়ে সঠিকভাবে হয়নি।
বাউন্ডারি লাইন থেকেব দৌড়ে এসে ঝাঁপিয়ে পড়ে বলকে তালুবন্দি করে ফেলেন নাইব। শেষ হয় লিটনের ১১৩ বলে ৭ চারে সাজানো ৮৬ রানের ইনিংসের। এদিকে তিনি আউট হওয়ার আগেই দ্রুত ফিরে গিয়েছিলেন মুশফিকুর রহিম (৭) ও ইয়াসির আলী (১)। একটু মৃদু ধাক্কা। কিন্তু এরচেয়েও বড় ধাক্কা বাংলাদেশ সামাল দিয়ে প্রথম ম্যাচ জিতেছিল। সেই ম্যাচের দুই নায়ক আফিফ ও মিরাজ তখনো বাকি ছিলেন। কিন্তু এদিন আর দুইজন প্রথম ম্যাচের মতো ধৈর্য্যের পরিচয় দিতে পারেননি। আফিফ অহেতুক মোহাম্মদ নবীর বলে শট খেলতে গিয়ে মিড অনে মুজিবের সহজ ক্যাচ পরিণত হন। মিরাজ বিনা কারণে ঝুঁকিপূর্ণ এক রান নিতে গিয়ে রান আউট হন নজিবুল্লাহ জাদরানের সরাসরি থ্রোতে। তাকে অনুসরণ করে শেষ দুই ব্যাটসম্যান শরিফুল ও মোস্তাফিজও রান আউট হলে ছয়ে নামা মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ আর রান বাড়ানোর চেষ্টাই করতে পারেননি। মোট ৫৩ বলে বাউন্ডারিবিহীন ২৯ রানে অপরাজিত থেকে ফিরে আসেন। সিরিজে বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো অলরাউট হয়।
এমপি/এমএমএ/