কোনো পরীক্ষা-নিরীক্ষা নয়, ১০ পয়েন্টেই চাই বাংলাদেশের
একটা সময় ছিল যখন সিরিজ জয় নিশ্চিত হলে পরের ম্যাচগুলোতে বিজয়ীরা সেরা একাদশ নিয়ে অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করত। সুযোগ না পাওয়াদের সুযোগ দিত। আফগানিস্তানের বিপক্ষে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচ জিতে বাংলোদেশ সিরিজ নিজেদের করে নিয়েছে। কিন্তু তাই বলে আগামীকাল অনুষ্ঠিত তৃতীয় ম্যাচে বাংলাদেশের সামনে সে রকম কোনো সুযোগ নেই। কারণ সিরিজ জয় হলেও বাংলাদেশের জন্য মহাগুরুত্বপূর্ণ ১০ পয়েন্ট। এই ১০ পয়েন্ট পেলে ওয়ানডে বিশ্বকাপ সুপার লিগে বাংলাদেশের অবস্থান আরও মজবুত হবে। ১৫ ম্যাচে পয়েন্ট হবে ১১০। দ্বিতীয় ম্যাচ জেতার পর ইংল্যান্ডকে পেছনে ফেলে আগেই বাংলাদেশ নিজেদের শীর্ষস্থান নিশ্চিত করেছে। কালকের ম্যাচে পূর্ণ ১০ পয়েন্ট পাওয়ার পাশাপাশি হোয়াইটহোয়াশও করা হবে আফগানদের। তাই পূর্ণ শক্তির দল নিয়েই বাংলাদেশকে নামবে।
দলের প্রতিনিধি হয়ে কথা বলতে আসা মেহেদি হাসান মিরাজও বলেছেন সেই রকম কথা। তিনি বলেন, ‘সিরিজ জেতার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে ১০ পয়েন্ট। বিশ্বকাপে কিন্তু পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষ আট দলই কোয়ালিফাই হবে। সিরিজ জিতেছি খুব ভালো কথা। আমাদের পরবর্তী টার্গেট, একটা ম্যাচ জিতে ১০ পয়েন্ট নিতে পারলে অনেক ভালো হবে। সামনে হয়ত অনেক বড় চ্যালেঞ্জ আসবে। এই ১০ পয়েন্ট যদি নিতে পারি তখন আমাদের জন্য সামনের চ্যালেঞ্জগুলো সহজ হয়ে যাবে।’
গত বছর ঘরের মাঠে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে একইভাবে প্রথম দুই ম্যাচ জিতে তৃতীয় ম্যাচ হেরে গিয়েছিল। হারিয়েছিল ১০ পয়েন্ট। তাই সেই শঙ্কা এবারও আফগানিস্তানের বিপক্ষে হওয়া বিচিত্র নয়। কিন্তু মিরাজ সে রকম কোনো নেতিবাচক ভাবনায় যেতে রাজিই না। তিনি বলেন, ‘যেটা বললেন, সেটা নেতিবাচক ভাবনা। নেতিবাচক চিন্তা করছি না। ইতিবাচক চিন্তা করছি। কালকের ম্যাচটা আছে। আমরা চেষ্টা করব শতভাগ দিয়ে খেলার জন্য। আমাদের জন্য ১০ পয়েন্ট খুব গুরুত্বপূর্ণ।’
ভাণ্ডারে আরও ১০ পয়েন্ট ভরার জন্য বাংলাদেশ দল যে লোভাতুর হয়ে আছে তা বুঝা যায় তাদের অনুশীলন দেখেই। সাকিব, মুস্তাফিজ, লিটন দাস, আফিফ হোসেন, তাসকিন আহমেদ, শরিফুল ইসলাম অনুশীলনে না এলেও তামিম ইকবালের নেতৃত্বে বাকিরা অনুশীলনে ছিলেন ভীষণ সিরিয়াস। উইকেটেও আসছে না কোনো পরিবর্তন। একাদশেও তাই।
বাংলাদেশ দুই ম্যাচ জিতেছে দুই রকম প্রেক্ষপটে। প্রথম ম্যাচ নিশ্চিত হারের মুখ থেকে আফগানিস্তানের মুখের খাবার কেড়ে নেয়। ২১৫ রান তাড়া করতে নেমে ৪৫ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে পরের ম্যাচ জিতেছিল ৪ উইকেটে। দ্বিতীয় ম্যাচ জিতে যায় প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশ ৪ উইকেটে ৩০৬ রান করার পরই। এই দুইটি ম্যাচেই বাংলাদেশের হয়ে রান করেছেন মাত্র চারজন ব্যাটসম্যান। তারা হলেন প্রথম ম্যাচে আফিফ হোসেন (অপরাজিত ৯৩) ও মেহেদি হাসান মিরাজ (অপরাজিত ৮১) এবং দ্বিতীয় ম্যাচে লিটন দাস (১৩৬) ও মুশফিকুর রহিম (৮৬)। প্রথম ম্যাচে হারিয়েছিল ৬ উইকেট, দ্বিতীয় ম্যাচে ৪ উইকেট। প্রথম ম্যাচে রান না পাওয়া লিটন দাস ও মুশফিকুর রহিম দ্বিতীয় ম্যাচেই ফিরেন দারুণভাবে। দুইটি ম্যাচেই অবশ্য রানের দেখা পাননি দলের সবচেয়ে অভিজ্ঞ ক্রিকেটার দলনেতা তামিম ইকবাল (৮ ও ১২), সাকিব আল হাসান (১০ ও ২০)। ইয়াসির আলী অভিষেকে কোনো রান করতে পারেননি। দ্বিতীয় ম্যাচে ব্যাট করার সুযোগ পাননি। মাহমুদউল্লাহ প্রথম ম্যাচে ৮ রান করার পর দ্বিতীয় ম্যাচে করেন অপরাজিত ৬ রান। আফিফ হোসেন প্রথম ম্যাচে ম্যাচ জেতানো অপরাজিত ৯৩ রান করার পর দ্বিতীয় ম্যাচেও ১৩ রান করে অপরাজিত থাকেন।
বোলিংয়ে সবাই যেন ছিলেন মিলে-মিশে একাকার। দুইটি ম্যাচেই আফগানদের গোটা ওভার খেলতে দেননি। প্রথম ম্যাচে ৪৯.১ ওভার আর দ্বিতীয় ম্যাচে ৪৫. ১ ওভার। প্রথম ম্যাচে ২১৫ রান আর দ্বিতীয় ম্যাচে ২১৮ রান। প্রথম ম্যাচে হাত ঘুরিয়েছিলেন ৬ জন বোলার। একমাত্র মিরাজ ছাড়া সবাই উইকেট ভাগাভাগি করে নেন। দ্বিতীয় ম্যাচে ৭ জন বোলার হাত ঘুরিয়ে সবাই উইকেট পেয়েছিলেন। প্রথম ম্যাচে শুধুমাত্র তাসকিন ও সাকিবের ওভার প্রতি রান ছিল পাঁচের উপরে। দ্বিতীয় ম্যাচে এই দুই জন আবার ইকোনমি ছিলেন। এই ম্যাচে পাঁচের উপরে রান দিয়েছিলেন মোস্তাফিজ, শরিফু, মিরাজ। এভাবেই সবাই মিলে-মিলে দায়িত্ব ভাগাভাগি করে নেওয়াতে সিরিজ জিতে এখনো পূর্ণ পয়েন্টের দিকে নজর।
এমপি/আরএ/