আড়াই দিনের টেস্টও বাঁচাতে পারল না বাংলাদেশ!
পাঁচদিনের টেস্টের প্রায় আড়াই দিনই খেলা হয়নি। প্রথম দিন ৫৭ ওভার, দ্বিতীয় দিন ৬.২ ওভার, তৃতীয় দিন বৃষ্টিতে পরিত্যক্ত, চতুর্থ দিন ৬১.১ এবং শেষ দিন ৮২.২ ওভার। তারপরও সেই টেস্ট বাঁচাতে পারেনি বাংলাদেশ। হেরেছে ইনিংস ও ৮ রানে। পাকিস্তানের ৪ উইকেট ৩০০ রান করে ইনিংস ঘোষণার পর বাংলাদেশ প্রথম ইনিংসে মাত্র ৮৭ রানে অলআউট হওয়ার পর দ্বিতীয় ইনিংসে করে ২০৫ রান। আইসিসির টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ম্যাচে প্রথম টেস্ট চট্টগ্রাম হেরেছিল ৮ উইকেটে।
হারের আগে ম্যাচ ড্র করার জন্য প্রাণপন লড়াই করেছে বাংলাদেশ। সেই লড়াইয়ে বাংলাদেশ দল অনেকটা সফলই হতে চলেছিল। কিন্তু দিনের খেলা ৫.২ ওভার ২৪ মিনিট বাকি থাকতে অলআউট হয়ে যায়। এই ২৪ মিনিটের মাঝে যদি বাংলাদেশ দল আরো ১৪ মিনিট টিকে থেকে ইনিংস হার এড়াতে পারতো, তা তা’হলে ম্যাচ বাঁচাতে পারতো। কারণ তখন পাকিস্তান দল আর ব্যাটিং করার সময় পেতো না । কারণ একটি দল ব্যাটিংয়ে নামার জন্য ১০ মিনিট সময় দেয়া হয়। সেই ১০ মিনিট পার হয়ে যেতো আর পাকিস্তানও ব্যাট করতে নামতে পারতো না।
টেস্ট ক্রিকেটের ২১ বছর পর বাংলাদেশ দল যে এই জায়গায় মোটেই উন্নতি করতে পারেনি পাকিস্তানের বিপক্ষে ঢাকা টেস্ট তার সর্বশেষ উদাহরণ। চট্টগ্রাম টেস্ট পাঁচ দিন নিয়ে যেতে পার্রা মাঝে তৃপ্তি খোঁজা হয়। ঢাকা টেস্ট আড়াই দিন খেলা হওয়ার পরও ড্র করার জন্য সংগ্রাম করতে হয়েছে। যদিও শেষ রক্ষা হয়নি। যেভাবে বাংলাদেশ এগুচ্ছে তাতে মনে হবে যেন শুধু খেলার জন্য খেলা। উন্নতি বা জয় পাওয়াটা মূখ্য নয়। টেস্ট খেলে লিমিটেড ওভারের ম্যাচের মতো আর লিমিটেড ওভারের ম্যাচ খেলে টেস্টের মতো!নিদারুণ এই অর্জন নিয়ে বাংলাদেশ দল আগামীকাল ২ টেস্টের সিরিজ খেলতে রওয়ানা হবে নিউ জিল্যান্ডে।যেখানে বাংলাদেশ কোনো ফরম্যাটেই নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে জয় পায়নি।
শেষ দিন মাত্র ১১ রানে প্রথম ইনিংসের ৩ উইকেট হারানোর পর দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে ২৫ রানে ৪ হারিয়ে বাংলাদেশ হারের প্রহর গুনছিল। অনেকেরই শঙ্কা ছিল লাঞ্চের আগে বাংলাদেশ আরো একাধিক উইকেট হারাবে! কোনো রকম প্রথম সেশন পার করতে পারলেও দ্বিতীয় সেশনে খুব বেশি সময় টিকতে পারবে না। কিন্তু সবার সে ধারনাকে ভুল প্রমাণিত করে প্রতিরোধের দেয়াল গড়ে তুলে বাংলাদেশ। এই দেয়াল নির্মাণে ভুমিকা রাখেন যথাক্রমে লিটন (৪৫), মুশফিক, (৪৮) সাকিব (৬৩), মিরাজ (১৪)। মূলত এই চারজনের কারণেই বাংলাদেশ দল টেস্ট ম্যাচকে শেষ সেশনের শেষ সময় পর্যন্ত নিয়ে গিয়েছিল। একটা সময় মনে হয়েছিল বাংলাদেশ টেস্ট বাঁচিয়ে দিবে। কিন্তু শেষ প্রতিরোধের জুটি মিরাজ ও সাকিব মাত্র ২ রানের ব্যবধানে ফিরে গেলে বাংলাদেশকে শেষ পর্যন্ত হার মেনে নিতে হয়।
পাকিস্তানের পেস ও স্পিনের যৌথ আক্রমণে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা সাজ ঘরে ফিরে যেতে থাকেন। শুরুটা করেন দুই পেসার শাহীন শাহ আফ্রিদী ও হাসান আলী। এরা প্রথম ৪ উইকেট ২টি করে ভাগাভাগি করে নেন। তারা ফিরিয়ে দেন সাদমান (২), মাহমুদুল (৬). নাজমুল (৬) ও মুমিনুলকে (৭)।আর শেষটা করেন প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যাসনদের জন্য ‘খলনায়ক’ হয়ে উঠা স্পিনার সাজিদ খান। তিনি ফিরিয়ে দেন লিটন (৪৫), সাকিব (৬৩), খালেদ (০) ও তাইজুলকে (৫)। বাবর আজমও বল হাতে তুলে মিরাজের (১৪) উইকেট পকেটে ভরে নেন। টেস্ট ক্যারিয়ারে তিনি এই টেস্টেই প্রথম ইনিংসে প্রথম বল হাতে তুলে নিয়েছিলেন।আগের দিন করেছিলেন ১ ওভার। সেই ওভারেই বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের বেশ ভুগিয়েছিলেন। দ্বিতীয় ইনিংসে প্রথম ওভারের দ্বিতীয় বলেই তিনি উইকেট পেয়ে যান।
বাংলাদেশের প্রতিরোধের দেয়াল তৈরি হয় ২৫ রানে ৪ উইকেট হারানোর পর। লিটন-মুশফিক জুটি বেঁধে দলকে উপহার দেন ৭৩ রান। এই রান আরো বাড়তে পারতো যদি না লিটন দাস আত্মাহুতি না দিতেন। সাজিদের বল পুল খেলতে গিয়ে স্কয়ার লেগে ফাওয়াদ আলমকে ক্যাচ অনুশীলন করান। প্রথমবার হাত ফসকে বের হয়ে গেলেও দ্বিতীয় প্রচেষ্টায় ঠিকই তালুবন্দি করেন ফাওয়াদ। লিটন যেভাবে খেলছিলেন,তাতে সময়ের দাবী বিবেচনা করে এর্ কম শট খেলা মোটেই উচিত হয়নি। এই জুটি ভেঙ্গে যাওয়ার পর ষষ্ট উইকেট জুটিতে মুশফিক ও সাকিব মিলে আরেকটি প্রতিরোধ গড়ে তুলেন। ৪৯ রানে ভাঙ্গে এই জুটি। এই জুটিও অনেক দুর যেতে পারতো। কিন্তু ঝুঁকিপূর্ণ রান নিতে গিয়ে মুশফিক রান আউটের কবলে পড়েন। বাঁচার জন্য ঝাঁপিয়ে পেড়েছিলেন। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। ক্রিজে পৌছে গেলেও ব্যাট ছিল উপরে।
মুশফিক ফিরে যাওয়ার পর সাকিব ও মিরাজ মিলে দলকে প্রায় বাঁচিয়েই দিয়েছিলেন। জুটিতে ৫১ রান যোগ হওয়ার পর মিরাজ আউট হন বাবর আজমের বলে সুইপ করতে গেলে তার প্যাডে লাগে। পাকিস্তানের ফিল্ডারদের আবেদনে আম্পায়ার সাড়া না দিলেও রিভিউ নিয়ে সিদ্ধান্ত নিজেদের পক্ষে নিয়ে বাবর আজম পেয়ে যান প্রথম টেস্ট উইকেট। জুটি ভাঙ্গার আগে সাকিব পেয়ে যান ক্যারিয়ারের ২৬তম ফিফটি। মিরাজ আউট হওয়ার ২ রান পরেই সাজিদের বল একটু বাঁক খেয়ে ভেতরে ঢুকার সময় সাকিব পেছনে সরে গিয়ে রক্ষাণাত্বক খেলতে চেয়েছিলেন। কিন্তু বল গিয়ে তার স্ট্যাম্পে আঘাত হানে। তখন দলের রান ২০০। দিনের খেলা শেষ হতে বাকি তখনো ১৩.১ ওভার। লেজের দিকের ৩ ব্যাটসম্যান তাইজুল, খালেদ আর এবাদতের পক্ষে ঠিকে থাকা ছিল কঠিন। তারপরও তারা রান সংগ্রহে না গিয়ে টিকে থাকার দিকে মনযো দেন। এক পর্যায়ে ৩৬ বলে কোনো রানই তারা সংগ্রহ করেননি। এর মাঝে খালেদকে ফিরিয়ে দেন সাজিদ। ব্যাটের কানায় লেগে বল জমা হয় উইকেটের পেছনে রিজওয়ানের গøাভসে। শেষ জুটিতে তাইজুল-এবাদতও টিকে থাকার শেষ চেষ্টা করেছিলেন। টানা ৪ ওভার মেডেন দেন। পঞ্চম ওভারে ১ রান নেন। কিন্তু এরপরই সাজিদের ওভারের চতুর্থ বলে তাইজুল এলবিডবিøউর শিকার হলে বাংলাদেশের সব প্রতিরোধ শেষ হয়ে যায়। তখনো বাকি ছিল ৫.২ ওভার। লড়াই চালিয়ে যাওয়ার জন্য রিভিউ নিয়েও শেষ রক্ষা হয়নি বাংলাদেশের।
ক্যারিয়ারের চতুর্থ টেস্টে এসেই সাজিদ খান প্রথম ইনিংসে ৮ উইকেট নিয়ে সেরা বোলিং করার পর দ্বিতীয় ইনিংসে নেন আরো ৪ উইকেট। ম্যাচে ১২ উইকেট শিকার করে হয়েছেন ম্যাচ সেরা। আর সিরিজের সেরা হয়েছেন আবিদ আলী।
এমপি