যুক্তরাষ্ট্র, দক্ষিণ কোরিয়ার পর মরক্কোই প্রথম
বিশ্বকাপ ফুটবলে অলিখিত নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে শিরোপা হয় দক্ষিণ আমেরিকা, না হয় ইউরোপের কোনো দেশ নেবে। ১৯৩০ সালে শুরু হওয়া আসরে এখন পর্যন্ত এখানে কোনো ব্যত্যয় ঘটেনি। ২০০৬ সাল পর্যন্ত ১৮টি শিরোপা দুই মহাদেশের দেশগুলো সমান ভাগে ভাগ করে নিয়েছে। ২০০৬ সালের পর অবশ্য দক্ষিণ আমেরিকার কোনো দেশ আর শিরোপা জিততে পারেনি। প্রতিবারই শিরোপা জিতেছে ইউরোপের কোনো না কোনো দেশ।
বিশ্বকাপ ফুটবলে শিরোপা জেতার ক্ষেত্রে শুধু দুই মহাদেশেরই প্রাধান্যে নয়, সেমিফাইনালেও থাকে দুই মহাদেশের দেশগুলোর দাপট। এই দুই মহাদেশের দেশগুলোর দাপটের প্রভাবে অন্য মহাদেশের দেশগুলোর সেমিফাইনালে খেলার নজির খুবই কম। রাশিয়া বিশ্বকাপ পর্যন্ত একুশটি আসরে মাত্র দুবার দক্ষিণ আমেরিকা ও ইউরোপের বাইরে অন্য মহাদেশের দুটি দেশ সেমিফাইনালে খেলার সুযোগ করে নিতে পেরেছিল ১৯৩০ সালে যুক্তরাষ্ট্র ও ২০০২ সালে দক্ষিণ কোরিযয়া। এবার সেখানে জায়গা করে নিয়েছে আফ্রিকার প্রথম প্রতিনিধি হিসেবে মরক্কো।
যুক্তরাষ্ট্র সেমিফাইনাল খেলেছিল ১৯৩০ সালের প্রথম আসরেই। দল ছিল ১৩টি। ১ নম্বর গ্রুপ ছাড়া বাকি ৩ গ্রুপে ছিল তিনটি করে দল। ১ নম্বর গ্রুপে ছিল চার দল— যুক্তরাষ্ট্র ছিল ৪ নম্বর গ্রুপে তাদের প্রতিপক্ষ ছিল প্যারাগুয়ে ও বেলজিয়াম। দুটি দলকেই ৩-০ গোলের ব্যবধানে হারিয়ে যুক্তরাষ্ট্র হয়েছিল গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন। ৪ গ্রুপের ৪ চ্যাম্পিয়ন দলকে নিয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছিল সেমিফাইনাল। দ্বিতীয় সেমিফাইনালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিপক্ষ ছিল আর্জেন্টিনা। কিন্তু সেমিফাইনালে যুক্তরাষ্ট্র দাঁড়াতেইতে পারেনি আর্জেন্টিনার সামনে । ৬-১ গোলের বড় ব্যবধানে হার মেনে ছিল। উরুগুয়ে ও যুগোস্লাভিয়ার অপর সেমিফাইনালের ফলাফলও ছিল একই রকম। জয়ী হয়েছিল উরুগুয়ে। বিশ্বকাপে তৃতীয় ও চতুর্থ স্থান নির্ধারণী খেলা হলেও প্রথম আসরে সেরকম কোনো নিয়ম ছিল না।
এরপর একটি করে বিশ্বকাপ আসে আবার চলে যায়। বাড়তে থাকে দক্ষিণ আমেরিকা ও ইউরোপের দেশগুলোর দাপট। তাদের দাপটে সামনে অন্য মহাদেশের দেশগুলো এক কথায় অসহায় হয়েই পড়ে। সর্বোচ্চ কোয়ার্টার ফাইনাল পর্যন্ত তারা আসতে পারে। এভাবে এক একটি আসর পার হওয়ার পর ২০০২ সালে সে বলয় ভেঙে সেমিফাইনালের নাম লেখায় দক্ষিণ কোরিয়া। সেবার এশিয়ায় বসেছিল প্রথম আসর জাপানের সঙ্গে যৌথ আয়োজক ছিল দক্ষিণ কোরিয়া। জাপান সে ষোল থেকে বিদায় নিয়েছিল। দুই দলই নিজ নিজ গ্রুপে সাত পয়েন্ট করে পেয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। কোরিয়া ছিল 'ডি' গ্রুপে জাপান 'এইচ' গ্রুপে।
'ডি' গ্রুপে কোরিয়ার সঙ্গী ছিল যুক্তরাষ্ট্র, পর্তুগাল ও পোল্যান্ড। পোল্যান্ডকে ২-০ ও পর্তুগালকে ১-০ গোলে পরাজিত করে এবং যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ১-১ গোলে ড্র করে শেষ ষোলর টিকেট পেয়েছিল কোরিয়া। নকআউট পর্বে তাদের প্রথম প্রতিপক্ষ ছিল ইতালি। সাবেক বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের তারা হারিয়েছিল ২-১ গোলে। কোয়ার্টার ফাইনালে তাদের প্রতিপক্ষ ছিল স্পেন। স্পেন তখনো বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপের মুকুট জিততে পারেনি। নির্ধারিত সময় খেলা গোলশূন্য ড্র থাকার পর টাইব্রেকারে কোরিয়া ৫-৩ গোলে ম্যাচ জিতে পৌঁছে যায় সেমিফাইনালে। যেখানে তারা প্রতিপক্ষ হিসেবে পেয়েছিল জার্মানিকে। পেরে ওঠেনি কোরিয়া। থেমে যায় তাদের এগিয়ে চলার চাকা। ১-০ গোলে হেরে বিদায় নেয়। পরে খেলে তৃতীয় স্থান নির্ধারণী ম্যাচ। এখানেও হেরে যায় কোরিয়া। তুরস্কের কাছে হেরে যায় ৩-২ গোলে।
কোরিয়া সেমি খেলেছিল যুক্তরাষ্ট্র খেলার ৭২ বছর পর। এবার মরক্কো খেলবে কোরিয়া খেলার ২০ বছর পর। দক্ষিণ আফ্রিকার প্রতিনিধি হিসেবে তারাই প্রথম। সেমিফাইনালে তাদের প্রতিপক্ষ বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্স। যুক্তরাষ্ট্র ও দক্ষিণ কোরিয়ার দৌড় থেমে গিয়েছিল সেমিফাইনালে। মরক্কোর যাত্রা কি সেমিফাইনাল পর্যন্ত থাকবে, না কি ফাইনালে উঠবে, নাকি শেষ ধাপে পৌঁছে যাবে, তার জন্য অপেক্ষায়ই করতে হবে।
এমপি/আরএ/