উচ্ছ্বাসে প্রবেশ, হতাশায় বাহির
মাঠের ক্রিকেটে লড়তে হয় সাধারণত দুটি পক্ষকে। কিন্তু এবার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ টুর্নামেন্টকে লড়তে হচ্ছে বৃষ্টির সঙ্গে। ইতোমধ্যে দুটো ম্যাচ সম্পূর্ণ পরিত্যক্ত হয়ে গেছে। এমনি পরিত্যক্ত হওয়ার হুমকির মুখে পড়েছিল বাংলাদেশ ও দক্ষিণ আফ্রিকার ম্যাচও। খেলা শুর হওয়ার প্রায় ঘণ্টা দুয়েক আগে থেকেই বৃষ্টি শুরু হয়। কখনো ঝিরি ঝিরি, কখনো হালকা মুষলধারে। এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের দর্শকরা লাল-সবুজ জার্সি পরে পরিবারসহ মাঠে প্রবেশ করেন। কিন্তু তারা শেষ পযর্ন্ত খেলা দেখার তৃপ্তি নিয়ে মাঠ ছাড়তে পারবেন কিনা সেটা নিয়ে শঙ্কা ছিলই।
বৃষ্টির কবলে বাংলাদেশের ম্যাচ পড়ায় অস্ট্রেলিয়াতে বসবাসরত বাংলাদেশের সাতক্ষীরার সৌম সরকারের এলাকার বাসিন্দা বিশ্বজিৎ অনেকটাই হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। এই ম্যাচ দেখার জন্য তিনি অনেক আগে থেকেই প্রিপারেশন নিয়ে রেখেছেন। একটি সুন্দর দিন অতিবাহিত করবেন। প্রিয় বাংলাদেশ জিতুক বা হারুক, একটি ভালো ম্যাচ দেখবেন। গ্যালারিতে বসে বাংলাদেশ, বাংলাদেশ আওয়াজ তুলে গলা ফাটিয়ে দেবেন। হৃদয়ে ভাসবে আবেগের ঢেউ। তার মতো অবস্তা ছিল সিডনি প্রবাসী অগণিত বাংলাদেশিদের। সবার অন্তরে তখন আনন্দের পরিবর্তে বিষাদের ছায়া। কারণ ক্রিকেটের আজন্ম শক্র বৃষ্টি তাদের সেই চাওয়ার পথে পানি ঢেলে দিয়েছিল। শেষ পর্যন্ত তাদের এই কালো মাখা মুখ বেশি সময় স্থায়ী হয়নি। কিছুক্ষণ পরই বৃষ্টি থেমে যায়। রোদ ভেসে উঠে সিডনির আকাশে। মাত্র ৪ মিনিট বিলম্বে টস হয়। যেখানে হেরে ফিল্ডিং করতে নামে বাংলাদেশ।
প্রবাসী সিডনিবাসীদের জন্য আজকের দিনটি ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আজকে দুটি ম্যাচ। প্রথম ম্যাচ বাংলাদেশ দক্ষিণ আফ্রিকার, দ্বিতীয় ম্যাচ ভারত-নেদারল্যন্ডসের। ক্রিকেট বিশ্বে সবচেয়ে জনপ্রিয় দুটি দেশের খেলা যখন একই দিন, একই মাঠে অনুষ্ঠিত হয়, তখন সেই ম্যাচের চাহিদা হয়ে উঠে আকাশচুম্বী। অনেক আগেই এই ম্যাচ দুটির টিকেট সোল্ড আউটের কথা জানিয়ে দিয়েছিল। এখন সবার সেই আকাঙ্ক্ষার বৃষ্টি এসে পানি ঢেলে দেওয়ার পথে ছিল। শঙ্কায় ছিল বাংলাদেশ-দক্ষিণ আফ্রিকা ম্যাচ। নিরাপদে ছিল ভারত-নেদারল্যান্ডস ম্যাচ। টস ৪ মিনিটি বিলম্বে হলেও শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ-দক্ষিণ আফ্রিকা ম্যাচ যথাসময়েই শুরু হয়।
বৃষ্টির দোলাচলে বাংলাদেশ-দক্ষিণ আফ্রিকা ম্যাচ পড়লেও সাবেক ফুটবলার পিরোজপুরের নবিনের মনে কখনো সে রকম কোনো শঙ্কা ছিল না। কারণ তিনি সিডনি ক্রিকেট স্টেডিয়াম থেকে একটু দূরেই থাকেন। তার ওদিকে বৃষ্টি হয়নি। বৃষ্টি নিয়ে এ দিকে যে শঙ্কার বিরাট দোলাচল দেখা দিয়েছিল তা তিনি শুনার পর বেশ অবাকই হয়েছেন। এসেছেন পরিবার-পরিজন বন্ধুদের নিয়ে। জয়-পরাজয় যাই হোক লাল-সবুজের কাছে তার চাওয়া ছিল একটা লড়াকু ম্যাচ।
নবিনকে বৃষ্টির শঙ্কায় না ফেললেও রাবিদ হাসান খান প্রাপ্যকে আবার ঠিকই বৃষ্টির শঙ্কায় পেয়ে বসেছিল। যার পিতা-মাতা দুজনেই দেশে ক্রীড়া সাংবাতিকতা করেন। রানা হাসান ও নীলা হাসান দুই জনেই ক্রীড়া সাংবাদিক। রানা হাসান দৈনিক কালবেলার স্পোর্টস ইনচার্জ, নীলা হাসান বাসসের সিনিয়র রিপোর্টার। ফেব্রয়ারি মাসেই টিকেট কেটে রেখেছিলেন সিডনিতে পড়ালেখা করা প্রাপ্য। মাঠে এসেছেন আত্মীয়-স্বজনসহ প্রায় ১৫ জনের মতো। বৃষ্টিকে জয় করে পুরো ২০ ওভারে ম্যাচ হওয়াতে খুশি ছিল প্রাপ্য। ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হবে এ জন্য তিনি অনেক আনন্দিত ছিলেন।
শেষ পর্যন্ত হয়েছে। কিন্তু প্রবাসী দর্শকদের জন্য আনন্দের রেনু ছড়াতে পারেনি। হারবে তারা জানতেন। কিন্তু এভাবে ১০৪ রানে। যা আবার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশের বড় হারও। আগের সর্বোচ্চ হার ছিল ২০১৬ সালের আসরে ইডেন গার্ডেনে নিউজিল্যান্ডের কাছে ৭৫ রানে।
ঢাকার হাসিব দলের এমন হারে খুবই হতাশ। তিনি জানান, দল হারবে জানতাম। কিন্তু এভাবে একশ রানের ব্যবধানে হারটাকে তিনি মেনে নিতে পারছেন না। চট্টগ্রামের রাহেলা এসেছিলেন সপরিবারে। বাংলাদেশের ম্যাচ দেখার পাশাপাশি ভারতের ম্যাচও দেখবেন। কিন্তু দলের এমন হারে পরের ম্যাচ না দেখেই তারা চলে গেছেন।
এমপি/আরএ/