আক্রমণাত্মক খেলতে চান শান্ত
বাংলাদেশের ক্রিকেটের আকাশে কালো মেঘের ঘনঘটা। সবে শেষ হওয়া টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ থেকে এই কালো মেঘ ভর করেছে। সেমি ফাইনালে খেলার প্রত্যয় নিয়ে খেলতে গিয়ে তার ছিটেফোটাও ছিল না। এক-একটি ম্যাচে হারের অতল গহ্বরে নিমজ্জিত হয়ছিল। সময় যত গড়িয়েছে, তত হারের করুণ দশা ভয়ংকরভাবে ফুটে উঠেছিল! একটা সময় এমন হয়েছিল যেন, আসর শেষ করতে পারলে বাঁচে দল। কোনোরকমে চূড়ান্ত পর্বের পাঁচটি খেলা শেষ করে দেশে ফিরে নত মস্তকে।
চূড়ান্ত পর্বে খেলার আগে প্রাথমিক রাউন্ডের বাছাই পর্ব উতরাতেও বেঙ্গল টাইগারদের দিতে হয়েছিল উত্তাল সাগর পাড়ি। প্রথম ম্যাচে অপেক্ষাকৃত দুর্বল স্কটল্যান্ডের কাছে হেরে চূড়ান্ত পর্বে যাওয়াই কঠিন করে তুলেছিল। ওমানের বিপক্ষে কঠিন প্রতিরোধে পড়ে উতরে যাওয়ার পর শেষ ম্যাচে পাপুয়া নিউগিনির বিপক্ষে সহজে জিতে টিকিট কনফার্ম করেছিল। এটি ছিল বাংলাদেশের আর্ন্তজাতিক ক্রিকেটে পথচলা শুরু করার পর বাজে আসরগুলোর অন্যতম একটি। কিন্তু অতীতের সঙ্গে এবারের আসরের ব্যর্থতার পর্থক্য ছিল ব্যপক।
আগে বাজে খেললেও বাংলাদেশ সেভাবে কখনও দেশবাসীকে নিরাশ করেনি। তাই তো এ রকম ভয়াবহ ব্যর্থতার পর নড়েচড়ে বসেন নির্বাচকরা। পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজে দলে আনা হয়েছে ছয়টি পরিবর্তন। যেখানে বাদ পড়ার তালিকায় আছেন মুশফিকুর রহিম থেকে শুরু করে লিটন দাস, সৌম্য সরকারের মতো ক্রিকেটাররাও। পুরান চাল ভাতে বাড়ে- থিউরি থেকে রের হয়ে নির্বাচকরা তরুণদের উপর ভরসা রেখেছেন।
ঘা শুকানোর জন্য মলম হিসেবে যাদের দলে নেওয়া হয়েছে তাদের একজন হলেন টপ-অর্ডার ব্যাটসম্যান নাজমুল হোসেন শান্ত। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তিনি নতুন মুখ নন। তিন ফরম্যাটের ক্রিকেটে তার অভিষেক হয়েছে আগেই। তবে সেখানে নিজেকে ভালোভাবে প্রতিষ্ঠা করতে পারেননি। আছেন আসা-যাওয়ার মাঝেই। তিন ফরম্যাটের মাঝে সবার শেষে তার সখ্যতা হয় টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের সঙ্গে। সেখানে আবার তিনি বেশি বিবর্ণ। ২০১৯ সালে আফগানিস্তানের বিপক্ষে অভিষেকের পর এখন পর্যন্ত খেলেছেন মাত্র তিনটি ম্যাচে। নামের পাশে যোগ হয়েছে মাত্র ২৪ রান, সর্বোচ্চ ১১। প্রতিপক্ষ ছিল জিম্বাবুয়ে। বাকি ২ ম্যাচে রান ছিল ৫ ( আফগানিস্তান) ও ৮ ( নিউজিল্যান্ডে)। সেই নাজমুল হোসেন শান্ত নতুন করে পাওয়া সুযোগকে কাজে লাগিয়ে নিজের ও দলের অবস্থানের পরিবর্তন করতে চান। সবাইকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে দায়িত্ব নিয়ে খেলার পরামর্শ দিয়েছেন। দল ঘোষণার পর বুধবার সাংবাদিকদের সামনে তিনিই আসেন প্রথম। যেখানে তিনি বলেন, ‘ আমরা এখানে যারা আছি প্রত্যেকে সামর্থ্যবান। প্রত্যেকটি ব্যাটসম্যান দায়িত্ব নিয়ে খেলার মতো। আমাদের দায়িত্ব নিতে হবে। এখানে সিনিয়র বা জুনিয়র বলে কিছু নাই। যার যে দায়িত্ব সবার সেটা সমানভাবে পালন করতে হবে। সবার সেই সামর্থ্য আছে।’
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি ভুগেছে রান খরায়। যেমন কাজে লাগাতে পারেনি পাওয়ার প্লে, তেমনি স্লগ ওভারও। ফুটে উঠেছিল ব্যাটিংয়ের রুগ্ন দশা। সেই অবস্থার পরিবর্তন আনতে বদ্ধপরিকর এই ব্যাটসম্যান। খেলতে চান আক্রমণাত্মক। বলেন, ‘ টি-টোয়েন্টি অবশ্যই রানেরই খেলা। আমি যখন খেলি আমার লক্ষ্য থাকে আক্রমণাত্মক ক্রিকেটই খেলব। চিন্তা থাকে প্রথম বল থেকে আগ্রাসী মেজাজে থাকবো। তার মানে এই না যে প্রতি বলে মারতে থাকবো। অবশ্যই বল বিচার করে খেলবো।’
কিন্তু বাংলাদেশের সামনে অপ্রতিরোধ্য পাকিস্তান। অতীতের যে কোন সময়ের তুলনায় তারা এখন দুর্ধষ ক্রিকেট খেলছে। ‘আনপ্রেডিক্টেবল’ শব্দটি এখন আর তাদের নামের পাশে যায় না। তারা টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্বে অপ্রতিরোধ্য থেকে শতভাগ জয় নিয়ে সেমিতে গিয়েছিল। সেমিতে অস্ট্রেলিয়ার কাছে হারলেও শেষ পর্যন্ত লড়াই করেছিল। সেই পাকিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশ নিজেদের অগ্নিপরীক্ষায় কতটা সফল হতে পারবে, তা এখন কোটি টাকার প্রশ্ন।
নাজমুল হোসেন অতোসব ভাবতে নারাজ। তিনি নিজেদের খেলাটাই খেলতে চান। বলেন, ‘বিশ্বক্রিকেটে চিন্তা করলে পাকিস্তান সেরা দলগুলোর একটি। বিপিএলে ওদের বেশ কয়েকজনের সঙ্গে খেলার সুযোগ হয়েছে। সেদিক থেকে আমরা একটু আত্মবিশ্বাসী। বিশ্বক্রিকেটে প্রত্যেকটি দল ভালো। আমরা কেবল বল দেখবো, খেলবো।’
বিশ্বকাপে বাংলাদেশের ব্যর্থতার আরেক নাম ছিল ফিল্ডিং। অসংখ্য ক্যাচ হাত ফসকে বের হয়ে গেছে। এ নিয়ে নাজমুলের ভাবনা, ‘আমরা খুব ভালো একটি ফিল্ডিং দল। আশা করি আমরা আগে যা করে এসেছি সেটাই এখানে করবো এবং ফিল্ডিংটা সবাই উপভোগ করবে। আশা করছি ভালো হবে।’
এমপি/এএস