জুয়ায় জড়িয়ে পুরস্কৃত সাকিব!
২০১৯ সাল। সাকিব বাংলাদেশের টেস্ট ও টি-টোয়েন্টি দলের অধিনায়ক। সেই সময় ওয়ানডে অধিনায়ক ছিলেন মাশরাফি বিন মর্তুজা। কোটি কোটি বাঙালি স্তব্ধ হয়ে যান ম্যাচ ফিক্সিংয়ে সাকিবের জড়িত থাকার ঘটনায়। জুয়াড়িদের কাছ থেকে ম্যাচ ফিক্সিংয়ের প্রস্তাব পেয়ে তিনি সেটি বিসিবিকে না জানিয়ে গোপন রাখেন।
আইসিসি তা জানতে পেরে তদন্ত করে বিষয়টির সততা খুঁজে পায়। শুরুর দিকে বিসিবিও বিষয়টিও জানত না। পরে আইসিসি সাকিবকে দুই বছরের জন্য নিষিদ্ধ করে। এক বছর ছিল স্থগিত নিষেধাজ্ঞা। প্রথম এক বছর সাকিব যদি আইসিসির সব দিক নির্দেশনা মেনে শাস্তি ভোগ করেন, তাহলে পরের এক বছর তাকে সাজা ভোগ করতে হবে না। সুবোধ বালকের মতো সাকিব আইসিসির নির্দেশনা মানার কারণে তাকে আর দ্বিতীয় বছরের সাজা ভোগ করতে হয়নি। এই নিষেধাজ্ঞার কারণে সাকিব বাংলাদেশ দলের হয়ে কোনো ম্যাচ খেলতে পারেননি। এমনকি কোনো ধরনের ক্রিকেট ম্যাচও। ফলে তার নেতৃত্বও চলে যায়।
তিন বছর পর সাকিব সেই জুয়াতে জড়িয়েই আবার ফিরে পেলেন নেতৃত্! আইসিসি সাকিবকে তিরস্কৃত করলেও বিসিবি পুরস্কৃত করেছে!
সাকিব নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে আবার আর্ন্তজাতিক ক্রিকেটে ফিরে আসেন। কিন্তু নেতৃত্ব আর ফিরে পাননি। দলের একজন সাধারণ ক্রিকেটার হিসেবে তিনি খেলে যেতে থাকেন। কিছুদিন আগে তিনি টেস্ট অধিনায়ক মুমিনুল হকের ব্যর্থতায় ফিরে পান টেস্ট নেতৃত্ব। তার টেস্ট নেতৃত্ব ফিরে পাওয়া নিয়ে কোনো প্রশ্ন না উঠলেও টি-টোয়েন্টি দলের নেতৃত্ব পাওয়া নিয়ে আছে হাজারো প্রশ্ন। আছে বিতর্ক। কারণ টি-টোয়েন্টি দলের নেতৃত্ব ফিরে পাওয়ার আগে তিনি জড়িয়ে পড়েছিলেন বিশ্বব্যাপি জুয়া খেলার প্রতিষ্ঠান বেটউইনারের সঙ্গে। তাদের বেটউইনার নিউজের সঙ্গে তিনি চুক্তিবদ্ধ হন।
বাংলাদেশের আইনে এ জাতীয় প্রতিষ্ঠান বা তাদের সম্পৃক্ত থাকা কোন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জড়িত হওয়া আইনত দণ্ডনীয়। সাকিব সেই কাজটিই করেন। তার এমন বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে বেটউইনার নামে যে একটি জুয়া খেলার অনলাইন প্লাটফর্ম আছে তা জেনেছেন গোটা দেশবাসীই। চাপে পড়ে সাকিব বেটউইনার নিউজের সঙ্গে চুক্তি বাতিল করে সরে এসেছেন। কিন্তু বাংলাদেশের কিশোর-বালক আর যুব সমাজ যে জেনেছেন, তারা কী সরে আসবেন? এমনিতেই ক্রিকেট খেলা নিয়ে দেশের আনাচে-কানাচে ব্যাপক জুয়া খেলা হয়। এবার বেটউইনারের সন্ধান পেয়ে তারা যে অনলাইনে খেলতে উদ্বুদ্ধ হবেন না তার নিশ্চয়তা কি সাকিব দিতে পারবেন?
বৃহস্পতিবার এই ইস্যুতে। বিসিবি সভাপতি যেভাবে হুংকার দিয়েছিলেন, জরুরি তলব করে সাকিবকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফিরিয়ে আনেন। বসেন ওয়ান টু ওয়ান বৈঠকে। সবাই ধারণা করেছিলেন সকিব টি-টোয়েন্টি দলে ফিরলেও অন্তত নেতৃত্ব দেওয়া হবে না তাকে। কিন্তু বিসিবি তার অন্যায় কাজকে সমর্থন করে নেতৃত্ব ফিরিয়ে দিয়ে পুরস্কৃত করেছে।
অতীতে সাকিবের যে কোনো বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার ভক্ত অনুসারিরা ছিলেন সোচ্চার। এমনকি আইসিসি থেকে নিষিদ্ধ হওয়ার পরও তারা সাকিবের পক্ষেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন। কিন্তু এবার তারা ছিলেন ব্যতিক্রম। সোচ্চার ছিলেন না। নীরব ছিলেন। কিন্তু বিসিবিই নিজেদের বদলাতে পারেনি।
এমপি/এমএমএ/