বাংলাদেশের সামনে রানের পাহাড়
নতুন বাংলাদেশের সামনে বিপর্দে ঘনঘটা। প্রতিপক্ষ জিম্বাবুয়েকে দুর্বল মনে করে সিনিয়র ক্রিকেটারদের বাদ দিয়ে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে নুরুল হাসান সোহানকে অধিনায়কের দায়িত্ব দিয়ে এক ঝাঁক তরুণকে সঙ্গী হিসেবে দেয়া হয়েছিল। সেই দল এখন ভয়ংকর চ্যালেঞ্জের মুখে। টস জিতে ব্যাট করার সিন্ধান্ত নিয়ে জিম্বাবুয়ে বাংলাদেশের সামনে তিন উইকেটে ২০৫ রান করে বিশাল চ্যালঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে। বাংলাদেশের বিপক্ষে জিম্বাবুয়ে এটি দলগত সর্বোচ্চ রান। আগের সর্বোচ্চ ছিল পাঁচ উইকেটে ১৯৩ রান। ২০২১ সালে এই হারারেতে করেছিল জিম্বাবুয়ে। কিন্তু তারপরও তারা সেই ম্যাচটা জিততে পারেনি। চার বল হাতে রেখে বাংলাদেশ জিতেছিল পাঁচ উইকেটে। এখন দেখার বিষয় এবার রানের এই পাহাড় টপকাতে গিয়ে নুরুল হাসান সোহান অ্যান্ড কোম্পানি কী করেন? নুরুল হাসান সোহানরা অনুপ্রেরণা পেতে পারেন শ্রীলঙ্কার করা ছয় উইকেটে ২১৪ রান বাংলাদেশ টপকাতে পেরেছিল। ২০১৮ সালে শ্রীলঙ্কায় তিন জাতির নিদহাস ট্রফিতে ম্যাচটিতে বাংলাদেশ জিতেছিল পাঁচ উইকেটে। সেই ম্যাচে ম্যাচ সেরা হয়েছিলেন মুশফিকুর রহিম ৩৫ বলে চার ছক্কা ও পাঁচ চারে অফরাজিত ৭২ রানের ইনিংস খেলে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান ছিল তামিম ইকবালের ৪৪।
নতুন বাংলাদেশ হলো বোলিং আক্রমণকে কিন্তু নতুন বলা যাবে না। সবাই ছিলেন মাহমুদল্লাহর নেতৃত্বাধীন দলের সদস্য। মোস্তাফিজ-শরিফুল-তাসকিন-মোসাদ্দেক-আফিফ। ১২০ বলের মাঝে ৩০টি ডট বল ছিল। বাকি ৯০ বলে জিম্বাবুয়ের ব্যাটাররা সংগ্রহ করেন ২০৫ রান। কোনো বোলারই জিম্বাবুয়ের ব্যাটারদের সামনে বাধার পাহাড় হয়ে দাঁড়াতে পারেননি। কমপক্ষে তিন ওভার করে বোলিং করা বোলারদের মাঝে ওভার প্রতি ১০ রানের নিচে রান দিয়েছিলেন মাত্র দুই জন বোলার। মোসাদ্দেক হোসেন তিন ওভারে ৩১ রান দিয়ে এক উইকেট নিয়ে ওভার প্রতি রান দিয়েছিলেন সাত করে। নাসুম আহমেদ চার ওভারে ৩৮ রান দেন। তার ওভার প্রতি রান ছিল ৯.৫০। তিন পেসারের ওভার প্রতি রান ছিল দশের উপরে। তিন জনেই চার ওভারের কোটা পূরন করেন। তাসকিন ৪২, শরিফুল ৪৫ ও মোস্তাফিজ ৫২ রান দেন। তাদের ওভার প্রতি রান ছিল যথাক্রমে ১০.৫০, ১১.২৫ ও ১২.৫০। এ ছাড়া আফিফ হোসেন ধ্রুব এক ওভার হাত ঘুরিয়ে রান দেন ছয়।
বোলাররা রানের চাকা আটকাতে না পারার কারণে জিম্বাবুয়ে টি-টোয়ন্টি ক্রিকেটে তৃতীয়বারের মতো দুইশ রানের উপর সংগ্রহ করে। তাদের অপর দুইটি ইনিংস ছিল ২০০ ও ২৩৬। ২০০ রান করেছিল নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে হ্যামিলটনে ২০১২ সালে। আর ২৩৫ রান করেছিল এ মাসেই বুলাওয়েতে দূর্বল সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে। এই হিসেবে টেস্ট খেলুদে দেশের বিপক্ষে বাংলাদেশের বিপক্ষেই তাদের দলগত সংগ্রহ সর্বোচ্চ। অপরদিকে বাংলাদেশের বিপক্ষে পঞ্চমবারের মতো কোনো দল দুইশ বা ততোধিক রানের ইনিংস এটি। অপর ইনিংসগুলো ছিল ২২৪/৪ (নিউজিল্যান্ড), ২১৪/৬ (শ্রীলঙ্কা), ২১০/৪( শ্রীলঙ্কা এবং ২১০/৩ ( নিউজিল্যান্ড)।
ইনিংসের তৃতীয় ওভারেই ওপেনার রেজিস চাকাভাকে মোস্তাফিজ আউট করার পর মনে হয়েছিল উইন্ডিজের সাফল্য বাংলাদেশ জিম্বাবুয়েতেও টেনে এনেছে! নতুন বাংলাদেশের শুরুটা ভালোই হবে। কিন্তু ঐ শেষ। এরপর আর জিম্বাবুয়ের ব্যাটসম্যানদের উপর কোনো প্রভাবই বিস্তার করতে পারেননি বোলাররা। পাওয়ার প্লেতে তাদের রান আসে এক উইকেটে ৪৩। পাওয়ার প্লের পর প্রথম ওভারে প্রথম বলেই মোসাদ্দেক ক্রেইগ আরভিনকে (২১) আউট করে বাংলাদেশকে ম্যাচে রাখার ইংগিত দিয়েছিলেন। কিন্তু এই আউট তাদের জন্য কল্যাণ থেকে অকল্যাণ বহে আনে। ওয়েসলি মাধেবার ও সিকান্দার রাজার আক্রমণাত্বক ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশের বোলিং আক্রমণ ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যায়। এই দুই জন জুটি বাধার আগে শন উইলিয়ামস ১৯ বলে ৩৩ রানের একটি কার্যকরি ইনিংস খেলে যান। তখন দলের রানি ছল ১২.২ ওভারে ৯৯। এরপর দুই জন জুটি বেধে বাকি ৭.১ ওভারে ৯১ রান যোগ করেন। তিন বল বাকি থাকতে মাধেভেরে রিটায়ার্ড করেন। রায়ান বার্ল আসলেও কোনো বল খেলতে পারেননি। শেষ পাঁচ ওভারে রান আসে ৭৭। আসল সর্বনাশ করেন বাংলাদেশের ঘরোয়া ক্রিকেটের নিয়মিত মুখ সিকান্দর রাজা। তিনি মাত্র ২৬ বলে চার ছক্কা ও সাত চারে ৬৫ করে অপরাজিত থাকেন। হাফ সেঞ্চুরি করেন মাত্র ২৩ বলে। মাধেভেরে ৪৬ বলে ৯ চারে ৬৭ রান করেন।
এমপি