রিভিউর বাধা পেরিয়ে নাসুমের উইকেট প্রাপ্তি
ফুটবল যেমন গোলের খেলা। যতই ভালো খেলা হোক না কেন, গোল না পেলে তাতে পূর্ণতা আসে না। একজন বোলার যতই ভালো বোলিং করুক না কেন, উইকেট প্রাপ্তিতেই আসে পূর্ণতা। একজন বোলারের চির আরাধ্য হলো উইকেট প্রাপ্তি। অভিষেকে ইচ্ছে থাকে প্রথম বলেই উইকেট পাওয়ার। সেখানে ইচ্ছে পূরণ না হলে প্রথম ওভারে। তাও না হলে অন্তত ম্যাচে। অভিষেকে খালি হাতে ফিরতে চান না কেউ। কিন্তু অনেককেই ফিরতে হয়। যেমনটি ফিরতে হয়েছিল উইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথম একদিনের ম্যাচে বাঁহাতি স্পিনার নাসুম আহমেদকে। কিন্তু দ্বিতীয় ম্যাচেই তিনি ১০ ওভারে ৪ মেডেন নিয়ে ১৯ রান দিয়ে ৩ উইকেট নিয়ে হয়েছেন ম্যাচ সেরা। এটি যদি নাসুমের অভিষেক ম্যাচে হতো, তাহলে অভিষক ম্যাচটা বর্ণিল হয়ে উঠত। কিন্তু তা না হয়ে উঠার কারণ ছিল ‘রিভিউ’।
অভিষেক ম্যাচে নাসুমকে কিন্তু খালি হাতে ফিরতে হতো না। কিন্তু রিভিউর বাধার মুখে পড়ে তাকে দুই দুইবার উইকেট বঞ্চিত হতে হয়েছে। নাসুম প্রথমে ব্রান্ডন কিং ও পরে অধিনায়ক নিকোলাস পুরানকে আউট করেছিলেন। কিন্তু দুইবারই রিভিউ নিয়ে সফল হয়ে তারা নাসুমকে উইকেট বঞ্চিত করেন। ফলে অভিষেকে নাসুম চমৎকার বোলিং করে সবার নজর কেড়ে প্রশংসার বাণীতে ভিজলেও উইকেটশূন্য থাকেন। তার বোলিং বিশ্লেষণ ছিল ৮-৩-১৬-০।
দ্বিতীয় ম্যাচে এসে নাসুম ১৯ রানে ৩ উইকেট নিয়ে ম্যাচ সেরা হয়ে অভিষেকের শূন্যতা বা অপূর্ণতা দূর করে দেন। কিন্তু এই ম্যাচেও উইকেট প্রাপ্তির উল্লাসে মাতোয়ার হওয়ার আগে একইভাবে রিভিউর বাধার মুখে পড়তে হয়েছিল। প্রথম ম্যাচে তাকে দিয়ে বোলিং সূচনা করিয়েছিলেন অধিনায়ক তামিম ইকবাল। দ্বিতীয় ম্যাচে তাকে আক্রমণে নিয়ে আসেন চতুর্থ বোলার হিসেবে। নাসুম হাতে বল পান ইনিংসের অষ্টম ওভারে। প্রথম ওভারের শেষ বলে তিনি উইন্ডিজের ওপেনার শাই হোপকে আউট করেছিলেন কট বিহাইন্ড করে। এরপর যথারীতি উইকেট প্রাপ্তিতে আনন্দ উল্লাস। কিন্তু শাই হোপ রিভিউ নিয়ে বেঁচে গেলে আবারও হতাশায় পুড়তে হয় নাসুমকে। তবে এবার আর প্রথম ম্যাচের মতো তাকে উইকেটশূন্য থাকতে হয়নি। চতুর্থ ওভারেই তিনি উইকেট পেয়ে যান শামারা ব্রুকসকে বোল্ড করে। এবার অবশ্য নাসুমকে আর হতাশায় পুড়তে হয়নি। কারণ বোল্ড হওয়াতে ব্রুকসের রিভিউ নেওয়ার সুযোগ ছিল না। আবার নো বলও ছিল না। এরপর তিনি একই ওভারে জোড়া আঘাত হানেন শাই হোপ ও নিকোলাস পুরানকে আউট করে।
প্রথম ম্যাচের তুলনায় দ্বিতীয় ম্যাচে নাসুমের বোলিং ছিল আরও বেশি ধারালো। প্রথম ম্যাচে তিনি ৮ ওভারে ১৬ রান দিয়েছিলেন। এই ম্যাচে ১০ ওভারে রান দেন ১৯। উইকেট ছিল তিনটি। হয়েছেন ম্যাচ সেরা। টি-টোয়েন্টিতে ২২ ম্যাচে ২৮ উইকেট পাওয়া নাসুম একদিনের ম্যাচেও নিজের এমন সাফল্য নিয়ে বলেন, ‘আমার প্রথম লক্ষ্য থাকে ডট বল করা। পাওয়ারপ্লেতে বোলিং করতে হয়। ফলে পরিকল্পনা থাকে যাতে রানটা আটকাতে পারি। ওই পরিকল্পনাতেই সফল হয়েছি। উইকেট পেয়েছি, আলহামদুলিল্লাহ। প্রথম ম্যাচে উইকেট না পাওয়ায় যে আক্ষেপ ছিল, সেটি চলে গেছে।’
এমন সাফল্যে খুবই খুশি নাসুম বলেন, ‘খুব ভালো লাগছে। অপেক্ষা করছিলাম, সুযোগ আসবে, সুযোগ আসবে। সুযোগ এসেছে, ভালো করেছি, ভালো লাগছে। আর সবাই পছন্দ করে। আমাকে নিয়ে সবাই মজা করে, হাসাহাসি করে। সবার সঙ্গেই ভালো সম্পর্ক। তামিম ভাই ব্যক্তিগতভাবে আমাকে অনেক সমর্থন করে।’
এই যে নাসুমের একদিনের ম্যাচে কীর্তি তা কিন্তু তিনি দেখানোর সুযোগই পেতেন না যদি সাকিব ব্যক্তিগত কারণে ছুটিতে না যেতেন। অথচ সাকিবের জায়গায় দলে নেওয়া হয়েছিল তাইজুল ইসলামকে। এ নিয়ে নাসুমের কোনো ভাবনা নেই। নেই কারো সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতাও। তিনি বলেন, ‘তাইজুল ভাই তার জায়গায় খেলবে, আমি আমার জায়গায়। আমি তাইজুল ভাইয়ের সঙ্গে কোনো প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চাই না। সাকিব ভাইয়ের সঙ্গেও না।’
দ্বিতীয় ম্যাচে এসেই ম্যাচ সেরা হলেও নাসুম মনে করেন দলে তার জায়গা স্থায়ী হয়ে যায়নি। যখনই খেলার সুযোগ পাবেন, সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করবেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘যে কটা ম্যাচই খেলি, ভালো খেলার চেষ্টা থাকে। স্থায়ী হয়ে গেছি, এটি মনে করি না। আমাকে খেলতে হলে পারফর্ম করেই খেলতে হবে।’
এমপি/এসজি/