উইন্ডিজকে ৯ উইকেটে হারিয়ে সিরিজ বাংলাদেশের
দ্বিতীয় একদিনের ম্যাচে উইন্ডিজকে ৯ উইকেটে হারিয়ে তিন ম্যাচের সিরিজ ২-০ ব্যবধানে জিতে নিয়েছে বাংলাদেশ। টস জিতে ফিল্ডিং করতে নেমে বাংলাদেশ মাত্র ১০৮ রানে উইন্ডিজকে আটকে রেখে সেই রান অতিক্রম করে ২০.৪ ওভারে এক উইকেট হারিয়ে ১১২ রান করে। এটি ছিল বাংলাদেশের ৩১তম সিরিজ জয়।
টেস্ট হারের দগদগে ক্ষত, টি-টোয়েন্টিতে বেসামাল অবস্থা। এ সবের জবাব দেওয়ার জায়গা ছিল একদিনের সিরিজে। অবশেষে তাই হয়েছে। একদিনের ম্যাচে বিক্রমশালী বাংলাদেশ উইন্ডিজকে পাত্তাই দেয়নি। প্রথম ম্যাচের পর দ্বিতীয় ম্যাচেও উড়িয়ে দিয়েছে। বাংলাদেশ ম্যাচ জিতেছে ৯ উইকেটে। এর আগে প্রথম ম্যাচ জিতেছিল ৬ উইকেটে। এক ম্যাচ হাতে রেখেই বাংলাদেশ সিরিজ নিজেদের করে নিয়েছে। এটি ছিল বাংলাদেশের একত্রিশতম সিরিজ জয়। আবার টানা পঞ্চম সিরিজ জয়। এর আগে তারা এক সিরিজ জিতেছে শ্রীলঙ্কা, জিম্বাবুয়ে, আফগানিস্তান ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে। অপরদিকে উইন্ডিজের বিপক্ষে বাংলাদেশের এটি ছিল টানা দশম ম্যাচ জয়। শেষ ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে ১৬ জুলাই গায়ানাতেই। এই ম্যাচ জিতলে বাংলাদেশ হোয়াউটওয়াশ করবে উইন্ডিজকে।
ওয়ানডে ক্রিকেটে বাংলাদেশে যে কতোটা শক্তিশালী তা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে উইন্ডিজ। দুইটি ম্যাচেই চিত্র ছিল একই রকম। ব্যাটে-বলে বাংলাদেশের দাপুটে লড়াই। উইন্ডিজের নতজানু হার। দুইটি ম্যাচেই বাংলাদেশে টস জিতে। দুইবারই ফিল্ডিং বেছে নেয়। দুইবারই উইন্ডিজের ব্যাটসম্যানদের উইকেটে আটকে রাখে। প্রথম ম্যাচে উইন্ডিকে অলআউট করা না গেলেও ৪১ ওভারের ম্যাচে ৯ উইকেটে ১৪৯ রানে আটকে রেখেছিল। এবার পুরো ৫০ ওভারের ম্যাচই ছিল। স্বাগতিকদের অবস্থা আগের ম্যাচের চেয়ে বেহাল। ১০০ ওভারের ম্যাচ শেষ ৫৫.৪ ওভারে। উইন্ডিজ ৩৫ ওভারে মাত্র ১০৮ রানে অলআউট হয়ভ সেই রান পাড়ি দিতে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের কোনো প্রতিরোধের মুখেই পড়তে হয়নি। স্বাচ্ছন্দ্যে ব্যাটিং করে ম্যাচ জিতে নেয় মাত্র ২০.৪ ওভারে ১ উইকেট হারিয়ে। ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় একদিনের ম্যাচ খেলতে নেমে ১০ ওভারে মাত্র ১৯ রান দিয়ে ৩ উইকেট নিয়ে ম্যাচ সেরা হয়েছেন বাঁহাতি স্পিনার নাসুম আহমেদ।
এ জয়লাভের জন্য বাংলাদেশ ক্রিকেট দলকে অভিনন্দন জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তামিম ইকবালের ব্যাট থেকে বাউন্ডরির মাধ্যমে বাংলাদেশের জয়সূচক রান আসলেও জয়ের আসল কাজ আগেই সম্পন্ন হয়ে গিয়েছিল। ব্যাটসম্যানরা শুধু আনুষ্ঠানিকতা সেরেছেন মাত্র। গায়ানার ধীর গতির উইকেটে টস জেতা মানে ম্যাচ জেতার অর্ধেক কাজ করে রাখা। তামিম ইকবাল টস জিতে সেই কাজটি করে রাখেন। এরপর তিনি বোলারদের হাতে বল তুলে দেন। বোলাররা উইন্ডিজকে মাত্র ১০৮ রানে আটকে রেখে ম্যাচকে নিজেদের পকেটেই ডুকিয়ে ফেলেন। ফলে ব্যাটসম্যানরা সারেন আনুষ্ঠানিকতা।
যে উইকেটে উইন্ডিজের ব্যাটসম্যানরা রান করতে সংগ্রাম করেছেন, সেই উইকেটে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা ছিলেন সাবলিল। ওভার প্রতি ৫.৪১ করে রান সংগ্রহই প্রমাণ করে ব্যাটসম্যানদের সাবলিলতা। টার্গেট কম থাকলেও এ দিন তামিম ইকবাল ওপেনিংয়ে তার পার্টনার পরিবর্তন করেন। লিটনকে ওয়ান ডাউনে ঠেলে দিয়ে আরেক বাঁহাতি নাজমুল হোসেন শান্তকে নিয়ে জুটি গড়েন। জুটিতে রানও আসে ৪৮। নাজমুল ২০ রান করে গুডাকেশ মোতির বল মিড উইকেট দিয়ে উড়িয়ে মারতে গিয়ে আকিল হোসেনের হাতে ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেন। নাজমুল ফিরে যাওয়ার পর লিটন দাস এসে মারমুখি ব্যাটিং করতে থাকেন। যে কারণে জুটিতে অবিচ্ছিন্ন ৬৪ রান আসে আসে ৮.৩ ওভারে। লিটন ২৭ বলে ৬ চারে ৩২ রান করে অপরাজিত থাকেন। তামিম ইকবাল ক্যারিয়ারের ৫৩তম অর্ধশতক তুলে নেন জয়সূচক রানের মাধ্যমে বাউন্ডারি মেরে। তার রান যখন ৪৬, তখন দুই দলের রান সমান ১০৮। বোলার মোতিকে মিড অফ দিয়ে বাউন্ডারি মেরে ব্যক্তিগত ও দলীয় দুইটি লক্ষ্যই পূরণ করেন তামিম।
এর আগে মেহেদি হাসান (৪/২৯), নাসুম (৩/১৯) মোসাদ্দেক (১/৩৭) তিন স্পিনারের সঙ্গে শরিফুল (১/৯) মিলে উইন্ডিজের ব্যাটিং লাইন গুড়িয়ে দেন ৩৫ ওভারে ১০৮ রানে। দলের হয়ে সর্বোচ্চ অপরাজিত ২৫ রান করেন কেমো পল। এ ছাড়া শাই হোপ ১৮, কাইল মায়ার্স ১৭, রভম্যান পাওয়েল ১৩, ব্রান্ডন কিং ১১ রান করেন। ৮৬ রানে নবম উইকেটের পতনের পর দশম উইকেট জুটিতে কেমো পল ও গুদাকেশ মোতি ২২ রান যোগ না করলে উইন্ডিজের রান একশও পার হতো না।
এমপি/এসএন/এএস