দেশবাসীকে তামিমদের ঈদ উপহার
রবিবার (১০ জুলাই) ছিল বাংলাদেশে কোরবানির ঈদ। কোরবানি নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করে সবাই ছিলেন ক্লান্ত। এদিকে বৃষ্টির কারণে মাঠ ভেজা থাকায় উইন্ডিজের বিপক্ষে বাংলাদেশের একদিনের সিরিজের প্রথম ম্যাচ শুরু হতেও বিলম্বে। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার খেলা শুরু হয়েছে রান পৌনে ১১টায়। আবার এবারের উইন্ডিজ সফরে বাংলাদেশ দল এতোই বাজে খেলছে যে অনেকে আগ্রহও হারিয়ে ফেলেছেন। সব মিলিয়ে খেলা যখন শুরু হয়, একনিষ্ঠ ক্রিকেট প্রেমিক ছাড়া অধিকাংশই হয়তো ঘুমের সঙ্গে মিতালি গড়েছেন। আর এমনই একটি অবস্থায় ভোরের আলো ফুটে উঠার ঘণ্টা দেড়েক আগে তামিম ইকবালরা ঘুমন্ত দেশবাসীকে দিয়েছেন ঈদ উপহার। এসেছে কাঙ্খিত জয়। স্বস্তির ফরম্যাটে স্বস্তির বৃষ্টি। গায়ানায় জয়ের আনন্দ উৎসব। টেস্ট ও টি-টোয়েন্টি সিরিজে দাপট দেখানো উইন্ডিজ পাত্তাই পায়নি। উড়িয়ে দিয়ে ম্যাচ জিতেছে ৬ উইকেটে। বৃষ্টি বিঘ্নিত ৪১ ওভারের ম্যাচে উইন্ডিজের করা ৯ উইকেটে ১৪৯ রান বাংলাদেশ অতিক্রম করে ৩১.৫ ওভারে ৪ উইকেট হারিয়ে ১৫১ রান করে। উইন্ডিজের বিপক্ষে বাংলাদেশের এটি ছিল টানা নবম জয়। সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে ১৩ জুলাই গায়ানাতেই।
স্বস্তির ফরম্যাটে বাংলাদেশকে স্বস্তির জয় এনে দেওয়ার ভীত গড়ে দেন মূলত বোলাররা। তার আগে টস জয়টাও অনেকটা এগিয়ে রেখেছিল বাংলাদেশকে। বৃষ্টির কারণে ৪১ ওভারে নেমে আসা ম্যাচে টস জয়টা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। টস জয় মানেই স্বাচ্ছন্দ্যে বোলারদের হাতে বল তুলে দেওয়া। তামিম ইকবালও তাই করেন টস জেতার পর। তারপর বোলাররা যা করলেন তা এক কথায় চমৎকার।
বাংলাদেশের বোলিং লাইন ছিল টেস্ট ও টি-টোয়েন্টির সংমিশ্রণ। মোস্তাফিজ-তাসতিন-শরিফুল-মেহেদি মিরাজ-নাসুম। তাদেরকে টেস্ট ও টি-টোয়েন্টি সিরিজে অবলীলায় খেলেছেন উইন্ডিজের ব্যাটসম্যানরা একদিনের ম্যাচে তারাই কপোকাত। পুরো ৪১ ওভার খেলেও পূঁজি মাত্র ১৪৯ রান। এই সংগ্রহ আরো কম হতে পারত যদি দশম উইকেট জুটিতে ফিলিপ ও সিলস ৭.২ ওভার খেলে ৩৯ রান যোগ না করতেন।
শুরুটা করেন মোস্তাফিজ প্রথম বলেই উইকেট নিয়ে। তার উইকেট প্রাপ্তির সঙ্গে যোগ হয় অভিষিক্ত নাসুমের নিয়ন্ত্রিত বোলিং। তার বল খেলতেই পারেননি ব্যাটাররা। ৫ ওভারের প্রথম স্পেলে নাসুমের ৩টি মেডেন নিয়ে মাত্র ৩ রান দেওয়াতেই তা পরিস্কার হয়ে উঠে। এই দুইজনের সঙ্গে বাকি তিনজন মিলে কি পরিমাণ আটোসাঁটো বোলিং করেছেন তা বুঝা যায় মারমুখি কাইল মায়ার্স, সামারা ব্রুকস কিংবা ব্রান্ডন কিংয়ের ব্যাটিংয়ের দিকে দৃষ্টি ফেরালে। মায়ার্স ১০ রান করেন ২৭ বল খেলে। ইনিংসের সর্বোচ্চ ৩৩ রান করা সামারা ব্রুকস বল খেলেন ৬৬টি। ব্রান্ডন কিংয়ের অবস্থা ছিল আরো শোচনীয়। ৮ রান করেন ৩১ বল খেলে। এই
দুইজনে তৃতীয় উইকেটে জুটি বেঁধেছিলেন। ৯.২ ওভারে তারা যোগ করতে পেরেছিলেন মাত্র ২৩ রান। এ সময় বারবার তারা পরাস্ত হয়েছেন। রান করতে সংগ্রহ করতে হয়েছে। পরে দুইজনেই বিদায় নেন শরিফুলের পরপর দুই বলে। এই শরিফুল পরে আবার একই ওভারে জোড়া আঘাত হেনেছিলেন শেফার্ড ও অভিষিক্ত মোটিকে আউট করে। ম্যাচ সেরা মিরাজের শিকার ছিল বেশ বড় বড়। মায়ার্স, নিকোলাস পুরান আর রভম্যান পাওয়েল।
বাংলাদেশের বোলারদের দাপট কিংবা উইন্ডিজের ব্যাটারদের নাজুক অবস্থা বুঝাতে ডট বলের দিকেও নজর দেওয়া যায়। ২৪৬ বলের মাঝে ১৬১ বলে তারা কোনো রান নিতে পারেননি। সবচেয়ে বেশি ডট বল দেন নাসুম ৪০টি। এরপর ৩৭টি ছিল মেহেদি হাসান মিরাজের। তিন পেসারের মাঝে শরিফুলের ডট বল ছিল সবচেয়ে বেশি ৩৪টি। এরপর তাসকিনের ৩২টি। সবার কম ডট বল দেন মোস্তাফিজ ২৭টি। ব্যাটিং পাওয়ার প্লে’র ৮ ওভারে রান আসে এক উইকেটে ২৬। শতরান আসে ৩১.২ ওভারে। গোটা ইনিংসে ছক্কা মাত্র একটি আর বাউন্ডারি ১০টি।
ছোট সংগ্রহ। কিন্তু সফরে বাংলাদেশের ব্যটিং ব্যর্থতা ছিল মহামারির মতো। যে কারণে শঙ্কাতো কিছুটা ছিলই। কারণ যে উইকেটে বাংলাদেশের বোলাররা আনন্দ নৃত্য করতে পারেন, সেই উইকেটে উইন্ডিজের বোলাররাও একই কাজ করার কথা। শুরুতে লিটন দাস ফিরে গিয়ে সেই শঙ্কাকে বেশ ঘনিভূতও করে দিয়েছিলেন। কিন্তু অধিনায় তামিম ইকবাল কিংবা নাজমুল হোসেন শান্ত অথবা মাহমুদউল্লাহ-নুরুল হাসানরা সব শঙ্কা দূর করে দেন।
তামিম ইকবালের স্ট্রাইক রেট ছিল ১০০’র উপরে। মাত্র ২৫ বলে এক ছক্কা আর তিন চারে ৩৩ রান করে তিনি ফিরে যান। নাজমুলের সঙ্গে দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে যোগ করেন ৪০ রান। এরপর তৃতীয় উইকেট জুটিতে নাজমুল ও মাহমুদউল্লাহ ৪৯ রান যোগ করেন ১১.৫ ওভারে। নাজমুল ৪৬ বলে ৫ চারে ৩৭ রান করে ফিরে গেলেও মাহমুদউল্লাহ ৪১ রানে অপরাজিত থাকেন। নুরুল হাসানের সঙ্গে জুটি বাঁধার আগে আফিফ ৯ রান করে ফিরে যান। পরে তিনি ও নুরুল মিলে ৮.৫ ওভারে অবিচ্ছিন্ন ৪০ রান যোগ করেন।
এমপি/এসআইএইচ
এসআইএইচ