গায়ানাতেই আছে বাংলাদেশের সুখস্মৃতি
উইন্ডিজ সফরে সুখ নেই বাংলাদেশে দলের। কিন্তু সুখ কেমন তা ভীষণ জানতে ইচ্ছে করে। সেই সুখের সন্ধানে তারা এক দ্বীপ থেকে আরেক দীপে যাচ্ছে। কিন্তু সুখ থেকে যাচ্ছে অধরাই। বসত গড়েছে দুঃখের সঙ্গে। দুঃখ দূর করে সুখের সন্ধান পেতে বাংলাদেশ দল এখন অবস্থান করছে গায়ানাতে।
এই গায়ানা কিন্তু আবার দ্বীপ রাষ্ট্র নয়। তিন দিকে স্থল আর এক দিকে পানি। এখানেই বাংলাদেশ অবস্থান করবে সফরের সবচেয়ে বেশি ১২ দিন। খেলবে সিরিজের শেষ টি-টোয়েন্টি ও তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজের সব কটি। কিন্তু এখানে কী পাবে বাংলাদেশ অধরা সুখ? আসবে কী আকাশের চাঁদ হয়ে উঠা জয়? আসবে কি, আসবে না তা সময়ই বলে দেবে। কিন্তু স্মৃতির সাগরে সাঁতার কেটে দেখা যায় এখানে আছে বাংলাদেশের সুখের ঠিকানা। সুখের রাজ্যে সাঁতার কেটে বাংলাদেশ দল এখানে তিন ম্যাচ খেলে পেয়েছে দুইটিতে জয়। এই দুইটি জয় ছিল তিন ফরম্যাটের ক্রিকেটে বাংলাদেশের সেরা বিচরন ক্ষেত্র ওয়ানডে ক্রিকেটে। একটি দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ২০০৭ সালের বিশ্বকাপ ক্রিকেটের সুপার এইটে, অপরটি ২০১৮ সালে দ্বি-পাক্ষিক সিরিজে।
গায়ানার প্রভিডেন্স স্টেডিয়াম নির্মান হয়েছে ২০০৬ সালে। কিন্তু এই মাঠে সাদা পোষাকের ক্রিকেটের পরিবর্তে রঙিণ পোষাকের হাতছানি বেশি। টেস্ট হয়েছে মাত্র দুইটি। টি-টোয়েন্টি ১০টি। সবচেয়ে বেশি হয়েছে ওয়ানডে ম্যাচ ২২টি।
বাংলাদেশের প্রথম জয়টি ছিল স্মরণীয়। ২০০৭ সালে উইন্ডিজ বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সাফল্য ছিল ২০১৫ সালের বিশ্বকাপের আগ পর্যন্ত সেরা। গ্রুপ পর্বে প্রথম ম্যাচেই ভারতে হারিয়ে চমক সৃষ্টি করে বাংলাদেশ পরে সুপার এইটে জায়গা করে নেয়। বিদায় হয় ভারতের। সুপার এইটে বাংলাদেশ প্রথম দুই ম্যাচে বাজেভাবে হেরেছিল অস্ট্রেলিয়া ও নিউ জিল্যান্ডের কাছে। দুইটি ম্যাচই হয়েছিল অ্যান্টিগাতে। এরপরই তারা খেলতে এসেছিল গায়ানাতে। আর সেখানেই রচনা করে নিজেদের ইতিহাসের অন্যতম সেরা সাফল্য।
মোহাম্মদ আশরাফুলের দৃষ্টিন্দন এবং হৃদয়ে গেঁথে রাখার মতো ৮৩ বলে ৮৭ রানের ইনিংসে বাংলাদেশ ৮ উইকেটে ২৫১ রান সংগ্রহ করেছিল। আশরাফুলের ইনিংসে ছিল ১২টি চারের মার। ম্যাচে তার প্যাডেল স্কুপ শটগুলো ধারাভাষ্যকারদের বিমোহিত করে তুলেছিল। তাদের বর্ণনায় হয়ে উঠেছিল অনন্য। জনপ্রিয় ক্রিকেট ওয়েবসাইট ‘ক্রিকইনফো’ তাদের কমেন্ট্রিতে আশরাফুলের ব্যাটিংয়ে মুগ্ধ হয়ে এক পর্যায়ে লিখেছিল ‘Ashraful you little beauty. What a gem of a knock from Ashraful. Delightful and Yummy’
আশরাফুল হাফ সেঞ্চুরি করেছিলেন ৬৪ বলে। পরে ৩৭ রান করতে বল খেলেছিলেন মাত্র ১৯টি। ১২ চারের ছয়টি আসে এ সময়। আশরাফুল ছাড়া বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান ছিল তামিম ইকবালের ৩৮। এ ছাড়া আফতাব আহমেদ ৩৫ ও মাশরাফি ১৬ বলে ২৫ রান করেছিলেন। সে সময় ২৫০ এর উপরে রান অনেক নির্ভরতা ছিল। বাংলাদেশের বোলাররাও সেই নির্ভরতা পেয়েছিলেন। রাজ্জাক-সাকিব-রফিকের ঘূর্ণিতে তাইতো প্রেটিয়াদের ৪৮.৪ ওভারে ১৮৪ রানে অলআউট করে ৬৭ রানের জয়ের উৎসবে মেতে উঠে। রাজ্জাক ২৫ রানে ৩টি, সাকিব ৪৯ রানে ২টি ও মোহাম্মদ রফিক ২২ রানে নেন ১টি উইকেট। এ ছাড়া পেসার সৈয়দ রাসেল ২ উইকেট পেয়েছিলেন ৪১ রানে। আশরাফুল হয়েছিলেন ম্যাচ সেরা।
গায়ানাতে বাংলাদেশ দ্বিতীয় ম্যাচ খেলেছিল ২০১৮ সালে দ্বি-পাক্ষিক সিরিজে। তিন ম্যাচের সিরিজের প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশ ৪৮ রানে জয় পেয়েছিল তামিম-সাকিবের ব্যাটিং দ্যুতিতে। তামিম ইকবাল অপরাজিত ১৩০ ও সাকিব ৩ রানের জন্য সেঞ্চুরি বঞ্চিত হন ৯৭ রানে আউট হয়ে। দলীয় এক রানে প্রথম উইকেটের পতন হওয়ার পর দুই জনে দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে ২০৭ রান যোগ করেন। পরে মুশফিকুর রহিম খেলেন ১১ বলে ৩০ রানের ইনিংস। মাশরাফির দুর্দান্ত বোলিংয় উইন্ডিজ ৫০ ওভার খেলেও ৯ উইকেটে ২৩১ রানে আটকা পড়ে। মাশরাফি ৩৭ রানে নেন ৪ উইকেট। ২টি উইকেট নেন মোস্তাফিজুর রহমান।
এই সিরিজেরই দ্বিতীয় ম্যাচ বাংলাদেশ খেলেছিল গায়ানাতে। এবার তারা হেরে যায়। তবে হারের আগে করেছিল লড়াই। হার মানে ৩ রানে। উইন্ডিজকে ৩ বল বাকি থাকতে ২৭১ রানে অলআউট করে বাংলাদেশ। হেটমায়ার ১২৫ রান করে রান আউট হয়েছিলেন। রুবেল ৩টি এবং মোস্তাফিজ ও সাকিব নেন ২টি করে উইকেট। জবাব দিতে নেমে বাংলাদেশ ৫০ ওভার খেলে ৬ উইকেটে করে ২৬৮ রান। শেষ ওভারে বাংলাদেশের প্রয়োজন ছিল ১০ রানের। হোল্ডারের করা ওভারের প্রথম বলেই মুশফিকুর রহিম (৬৮) আউট হয়ে গেলে পরে মোসাদ্দেক ও মাশরাফি মিলে বাকি রান আর করতে পারেননি। নিজের প্রথম দুই বলে মোসাদ্দেক কোন রান নিতে পারেননি। পরের দুই বলে ৩ রান নেওয়ার পর শেষ বলে প্রয়োজন ছিল ‘অত্যাবশাকীয়’ ছক্কা। কিন্তু স্ট্রাইকে থাকা মাশরাফির পক্ষে তা আর করা সম্ভব হয়নি। তিনি নেন ১ রান। বাংলাদেশের হয়ে মুশফিক ৬৮, সাকিব ৫৬, তামিম ইকবাল ৫৪ রান করেন।
এখন দেখার বিষয় বাংলাদেশের ‘লাকি’ গ্রাউন্ডে আঁধার কেটে সূর্যের দেখা মিলে কি না? যদি টি-টোয়েন্টিতে নাও হয়,পরে আছে নিজেদের সেরা ফরম্যাট ওয়ানডে সিরিজের সব কটি ম্যাচ?
এমপি/এমএমএ/