ইংল্যান্ডের রেকর্ড গড়া জয়
বাংলাদেশ দল যখন টেস্ট খেলে তখন তা অনেকের কাছে হয়ে উঠে বিরক্তিকর। মাঠে দর্শকের অভাবে খাঁ খাঁ করতে থাকে। কিন্তু ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়াতে টেস্ট ক্রিকেটের চিত্র ভিন্ন। মাঠে দর্শকদের অভাব হয় না। কেন হয় না, সেটা আরেকবার ইংল্যান্ড করে দেখাল বার্মিংহামের এজবাস্টনে ভারতকে অবিশ্বাস্যভাবে ৭ উইকেটে হারিয়ে রেকর্ড গড়া জয়ে।
ভারতের ছুড়ে দেওয়া ৩৭৭ রানের টার্গেট ইংল্যান্ড আগের দিনের দুই অপরাজিত সময়ের সেরা ব্যাটার জো রুট ও জনি বেয়ারস্টোর জোড়া সেঞ্চুরিতে আর কোনো উইকেট পড়তে না দিয়েই অতিক্রম করে। সময় লাগে দেড় ঘন্টার মতো। টেস্ট ক্রিকেটে ইংল্যান্ডের এটি সবচেয়ে বেশি রান তাড়া করে জয়। এর আগে তাদের সর্বোচ্চ রান তাড়া করে জয়ের রেকর্ড ছিল ৩৫৯।
ভারত এই ম্যাচ হেরেছে প্রথম ইনিংসে ৪১৬ রান করার পরও। যেখানে তাদের লিড ছিল ১৩০ রানের। দ্বিতীয় ইনিংসে ভারত ২৪৫ রানে অলআউট হলে এগিয়ে থাকে ৩৭৭ রানে। টেস্ট ক্রিকেটে এর চেয়ে বেশি রান তাড়া করে জয়ের রেকর্ড আছে আটটি। কিন্তু সেখানে ইংল্যান্ডের ছিল না একটিও। এ হিসাবে ইংল্যান্ডের জন্য ছিল টার্গেট কঠিন। আবার প্রথম ইনিংসে ২৮৪ রানে অলআউট হওয়ার কথা চিন্তা করলে আরও বেশি কঠিন হয়ে পড়ে জয়। আবার পজিটিভ দিকও ছিল। মাত্রই ইংল্যান্ড ধুন্ধুমার ব্যাটিং করে নিউ জিল্যান্ডকে তিন টেস্টের সিরিজে করেছিল হোয়াইটওয়াশ। ফর্মের তুঙ্গে আছে দল। বিশেষ করে জো রুট ও বেয়ারস্টো। শেষ পর্যন্ত এই জো রুট আর বেয়ারস্টো মিলেই ইংল্যান্ডকে রেকর্ড গড়া জয় এনে দেন। শুধু নিজেদের টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে সর্বোচ্চ রান তাড়া করেই জয়ের রেকর্ড গড়েনি ইংল্যান্ড, টানা চতুর্থ টেস্টে ২৫০ বা তার বেশি রান তাড়া করে জয়ের রেকর্ডও গড়েছে।
৩৭৭ রান অতিক্রম করতে যেমন শুরুর প্রয়োজন ছিল, ইংল্যান্ডের দুই ওপেনার জ্যাক ক্রলিক ও অ্যালেক্স লিস তেমনই শুরু করেছিলেন। দুজন বেশ আক্রমণাত্মক ঢংয়ে ব্যাটিং করে ওভার প্রতি ৫ রান করে সংগ্রহ করেন। জুটিতে রান আসে ১০৭। বেশ ভালোই সূচনা। কিন্তু নিমিষেই সেখানে অন্ধকার নেমে আসে ১০৯ রানে ৩ উইকেট হারালে। তখন ইংল্যান্ড বেশ চাপে পড়ে যায়। ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ ছুটে যায়। অবস্থা সামাল দিতে মাঠে তখন জো রুট ও বেয়ারস্টো। যারা নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে ৩ টেস্টে সিরিজে হোয়াইটওয়াশ করতে দুটি করে সেঞ্চুরি করেছিলেন। তারা দুজন দিনের বাকি সময় পার করে দেন আর কোনো উইকেট পড়তে না দিয়ে। ওভার প্রতি ৪.৬১ করে সংগ্রহ করে জুটিতে তারা ১৫০ রান যোগ করেন। রুট ৭৬ ও বেয়ারস্টো ৭২ রানে অপরাজিত থাকেন। ইংল্যান্ডের জয়ের জন্য প্রয়োজন পড়ে ১১৯ রানের। খেলাটা অনেকটাই তাদের নিয়ন্ত্রণে।
পঞ্চম দিন ভারতকে ম্যাচ জিততে হলে অবিশ্বাস্য রকমের ভালো বোলিং করতে হবে। কিন্তু দুর্দান্ত ফর্মে থাকা রুট আর বেয়ারস্টোকেই আউট করা সম্ভব হয়নি ভারতীয় বোলারদের। ওয়ানডে নয়, টি-টোয়েন্টি মেজাজে ব্যাটিং করে ওভার প্রতি ছয়ের উপরে সংগ্রহ করে রুট ও বেয়ারস্টো ১৯.৪ ওভারে ১১৯ রান এনে দিলে লাঞ্চের আগেই খেলা শেষ হয়ে যায়। রুট ১৩৬ ও বেয়ারস্টো ১৩৮ বলে সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন। রুটের ২৮তম ও বেয়ারস্টোর ১২তম সেঞ্চুরি ছিল। বেয়ারস্টো প্রথম ইনিংসেও করেছিলেন ১০৬ রান।
দুই ব্যাটার জুটি বাধার পর থেকে সমান গতিতেই এগুচ্ছিলেন। রুট যখন সেঞ্চুরি করেন, বেয়ারস্টোর রান তখন ৯২। কিন্তু সেঞ্চুরি করার পর রুট খুব বেশি আক্রমণাত্মক হয়ে উঠেন। দুজনের রানের ব্যবধান বাড়তে থাকে। বেয়ারস্টো যখন সেঞ্চুরি করেন, তখন রুটের রান ১৩৫। রুট সেঞ্চুরির পর ৪২ রান করেন ৩৭ বলে। তিনি ১৪২ ও বেয়ারস্টো ১১৪ রানে অপরাজিত থাকেন। বেয়ারস্টো ম্যাচ সেরা ও জো রুট সিরিজ সেরা হন।
এমপি/এসজি/