মুন্সিগঞ্জে সাইফে বিধ্বস্ত আবাহনী
আগের দিন হ্যাটট্রিক শিরোপার পথে ধাববান থাকা বসুন্ধরা কিংসকে ১-১ গোলে রুখে দিয়ে মোহামেডান অনেক বড় উপকার করেছিল আবাহনীর। বসুন্ধরা কিংসের পেছনে পেছনে থাকা আবাহনীর সঙ্গে পয়েন্টের ব্যবধান কমে এসেছিল ছয় থেকে চারে। আবাহনী অবশ্য এক ম্যাচ কম খেলেছিল। এই ব্যবধান ধরে রাখতে হলে আবাহনীর প্রয়োজন ছিল নিজেদের ১৮তম ম্যাচ জয় পাওয়া। কিন্তু মোহামেডান আবাহনীর যে উপকার করেছিল, আবাহনী হেরে গিয়ে তার চেয়ে বেশি উপকার করেছে বসুন্ধরা কিংসের।
রবিবার (৩ জুলাই) মুন্সিগঞ্জের বীরশ্রেষ্ঠ ফ্লাইট লেফটেন্ট মতিউর রহমান স্টেডিয়ামে সাইফ স্পোর্টিংয়ের কাছে ৪-২ গোলে হেরে আবাহনী তার চেয়ে বেশি উপকার করেছে বসুন্ধরা কিংসের।
সতেরতম রাউন্ডে শেষে দুই দলের পয়েন্ট ব্যবধান ছিল যেখানে ছয়, আটারতম রাউন্ডে শেষে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে সাতে। বসুন্ধরার পয়েন্ট ৪৫, আবাহনীর ৩৮। সাইফ স্পোটিং ৩৩ পয়েন্ট নিয়ে আছে তৃতীয় স্থানে। লিগের খেলা অবশিষ্ট আছে চারটি। এই চার ম্যাচের দুইটিতে জয় পেলেই বসুন্ধরার হ্যাটট্রিক শিরোপা নিশ্চিত হবে।
ছয় গোলের ম্যাচে প্রথমার্ধে সাইফ স্পোর্টিং ২-১ গোলে এগিয়ে ছিল। সাইফের পক্ষে এমফোন উদোহ, রহিম, এমেরি বাইসেঙ্গে গোল করেন। অপর গোলটি ছিল মুনিরের আত্মঘাতি। আবাহনীর পক্ষে দোরিয়েলতন ও কলিন্দ্রেস গোল করেন। লিগে প্রথম পর্বে আবাহনী জয়ী হয়েছিল ২-১ গোলে। এবারের লিগে আবাহনীর এটি দ্বিতীয় পরাজয়। লিগের প্রথম পর্বে চট্টগ্রাম আবাহনীর কাছে তারা হেরেছিল ৩-২ গোলে। এবার আবাহনী হারলো টানা ১১ ম্যাচ পর।
আগের ম্যাচে পয়েন্ট টেবিলের তলানিতে থাকা স্বাধীনতা সংঘের কাছে হেরেছিল সাইফ স্পোর্টিং। সেই সাইফ স্পোর্টিং আজ ছিল সম্পৃর্ণ বিপরীত। জয়-পরাজয়ের মাঝে গোলের ব্যবধান অনেকটা অবিশ্বাস্যই মনে হবে। কিন্তু সাইফ স্পোর্টিং অধিক ব্যবধানে জিতেছে নিজেদের সেরাটা ঢেলে দিয়ে। এই ব্যবধান আরও বেশি হতে পারতো যদি আবাহনীর গোলরক্ষক সোহেল একাধিক সুযোগ নিজ দক্ষতায় প্রতিহত না করতেন। এখানে তিনি ব্যর্থ হলে আবাহনীকে আরও বড় হারের কলঙ্ক নিয়ে মাঠ ছাড়তে হতো।
খেলায় যে আবাহনী এত বড় ব্যবধানে হারবে তার কিন্তু নমুনা ছিল না খেলার শুরুতে। সেখানে ছিল আবাহনীর দাপট। প্রথম গোল হজম করার আগে আবাহনীর দুই দুইটি সুযোগ তৈরি করে গোলের মুখ দেখতে পারেনি। শুরুতে কলিন্দ্রেসের শট বার কাঁপিয়ে বাইরে দিয়ে চলে যায়। ৯ মিনিটে কলিন্দ্রেসেরই শট বারে লেগে ফেরত আসার পর ফিরতি শটে দোরিয়েলতন কাজে লাগাতে পারেননি।
আবাহনীর আক্রমণের ঝাজ সামলে সাইফ নিজেদের গুছিয়ে নিতে থাকে। ১৪ মিনিটেই তারা সফল হয় প্রথম আক্রমণ থেকেই। গফুরভের ক্রস থেকে গোলরক্ষক শহীদুল আলম সোহেল ক্লিয়ার করতে ব্যর্থ হলে বল পেয়ে যান এমেকা। তিনি বাড়িয়ে দেন এমফোন উদোহকে। উদোহ প্লেসিং শটে নিশানা ভেদ করেন। গোলের পর সাইফের খেলোয়াড়দের আরও গোল করার নেশায় পেয়ে বসে। একের পর এক আক্রমণ করে ব্যতিব্যস্ত করে তুলে আবাহনীর রক্ষণ। কিন্তু গোলের মুখ আর দেখতে পারেনি। সাইফের আক্রমণ সামলে আবাহনী নিজেদের ফিরে পায় ৩৪ মিনিটে। কলিন্দ্রেসের কর্নার থেকে দোরিয়েলতন চমৎকার গোল করে খেলায় সমতা নিয়ে আসেন। কিন্তু এই সমতা খুব বেশি সময় ছিল না। ৫ মিনিট পরই সাইফ স্পোর্টিং গোল করে আবার এগিয়ে যায়। কর্নার থেকে সোহেল এগিয়ে এসে প্রতিহত করতে না পারলে ফাঁকা পোস্টে গোল করতে এগিয়ে যান সবুজ। কিন্তু তাকে বাঁদা দিতে গিয়ে মুনির নিজেই বল জালে ঠেলে দেন।
দ্বিতীয়ার্ধে সবাই প্রত্যাশা করেছিলেন আবাহনী জেগে উঠবে। কিন্তু সাইফের খেলোয়াড়দের উজ্জীবিত নৈপুন্যের কাছে ম্লান হয়ে যেতে থাকেন আবাহনীর দেশি-বিদেশি তারকা ফুটবলাররা। দাপট অব্যাহত রেখ সাইফ আরো দুই গোল করে সবাইকে তাক লাগিয়ে দেয়। ৬৫ মিনিটে উদোহর কর্নার থেকে রহিম হেড করে গোল করেন। ৭১ মিনিটে আবাহনীর জালে শেষ পেরেক ডুকিয়ে দেন এমেরি বাইসেঙ্গে পেনাল্টি থেকে গোল করে। দ্বিতীয়ার্ধের যোগ করা অতিরিক্ত সময়ে পেনাল্টি থেকে আবাহনীর হয়ে স্বান্তনার গোল করে ব্যবধান কমিয়ে আনেন কলিন্দ্রেসে।
এমপি/এমএমএ/