টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের দুরাবস্থা কাটানোর মিশন
এ যেন মরার উপর খাঁড়ার ঘা। এমনিতেই দুই টেস্টে বাজে ভাবে হেরে হোয়াইট ওয়াশ হয়েছে বাংলাদেশ। প্রত্যয় আছে টি-টোয়েন্টি আর ওয়ানেড সিরিজে ঘুরে দাঁড়ানোর। দুই ফরম্যাটেই তিনটি করে ম্যাচ। আজ থেকে শুরু হচ্ছে টি-টোয়েন্টি সিরিজ। যেখানে টেস্টের মতোই নাজুক অবস্থা বাংলাদেশের। কিন্তু উইন্ডিজের বিপক্ষে আবার অবস্থা নাজুক না। সেখানে ১৩ ম্যাচের মোকাবিলাতে জয় পাঁচটিতে হার সাতটিতে। অপর ম্যাচটি পরিত্যক্ত হয়েছিল।
সর্বশেষ ২০১৮ সালে উইন্ডিজ সফরে বাংলাদেশ ২-১ ব্যবধানে সিরিজ জিতেছিল। যেখানে সিরিজের শেষ দুটি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়েছিল আবার যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডাতে। আবার নিজেদের মাঠে বাংলাদেশ একই ব্যবধানে সিরিজ হেরেছিল। হেরেছিল টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে নিজেদের সর্বশেষ মোকাবিলাতেও। কাজেই এখানে বাংলাদেশ টেস্টের মতো সহজেই নতস্বীকার করবে না। কিন্তু মাঠের লড়াইয়ে নামার আগে বাংলাদেশ দলকে মাঠের বাইরের লড়াই করতে হচ্ছে। এ লড়াই সেন্ট লুসিয়া থেকে আটলান্টিক পাড়ি দিয়ে আজকের ম্যাচের ভেন্যু ডোমিনিকায় পৌঁছাতে গিয়ে একাধিক ক্রিকেটারদের ত্রাহী ত্রাহী অবস্থা। বমি করেছেন একাধিক ক্রিকেটার। কয়েকজন বমি না করলেও অবস্থা খুবই কাহিল হয়ে পড়েছিল। বাকিরা ভয়ে ছিলেন আড়ষ্ট। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছেছিল যে যাত্রা পথে মার্টিনেকে ৪০ মিনিটের বিরতিতে অসুস্থ ক্রিকেটাররা নেমে যেতে চেয়েছিলেন।
খেলার মাঠে খুবই বাজে অবস্থার মুখোমুখি হওয়ার অভিজ্ঞতা আছে ক্রিকেটারদের। কিন্তু জীবন যুদ্ধে এ রকম অভিজ্ঞতা আগে তাদের কখনই ছিল না। এ রকম একটি বাজে পরিস্থিতি ক্রিকেটারদের মোকাবিলা করতে হয়েছে খেলা শুরুর ৪৮ ঘণ্টা আগে। ভয় কতোটুকু কেটেছে, মানসিকভাবে কতোটা চাঙ্গা হতে পেরেছেন তা বুঝা যাবে সিরিজের প্রথম ম্যাচে। দলের পক্ষ থেকে জানা গেছে ক্রিকেটাররা সবাই সুস্থ এবং স্বাভাবিক আছেন। খেলা শুরু হবে বাংলাদেশ সময় রাত সাড়ে ১১টায়।
কিন্তু বাংলাদেশ ক্রিকেটারদের অবস্থা হয়তো নাও জানা যেতে পারে। কারণ হলো বৃষ্টি। যে সাইক্লোনের প্রভাবে সাগর উত্তাল হয়েছিল। উঁচু উঁচু ঢেউ এসে ফেরিতে আচড়ে পড়ে ক্রিকেটারদের অবস্থা বেহাল করেছিল, সেই আবহাওয়া এখনো কেটে যায়নি। তার প্রভাবে সেন্ট লুসিয়া থেকে ডোমিনিকায় চারদিন পরও চোখ রাঙানি দিচ্ছে। বৃষ্টি হচ্ছে টানা দুই দিন ধরে। আবাহাওয়ার পূর্বাভাস অনুযায়ী আজও বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা প্রচুর। তাই আবহাওয়ার পূর্বাভাস অনুযায়ী ম্যাচ ভেসে যেতে পারে বৃষ্টির পেটে। অথচ এই ভেন্যুতে আন্তর্জাতিক ম্যাচ হতে যাচ্ছে ২০১৭ সালের পর প্রথম। কারণ সেসময় প্রলয়ংকরী হারিকেনে ডোমিনিকার উইন্ডসর পার্ক স্টেডিয়াম লণ্ডভণ্ড করে দিয়েছিল।
সংস্কারের পর আবার এই ম্যাচ দিয়ে আর্ন্তজাতিক ক্রিকেট ফেরার কথা। যে কারণে ম্যাচটি নিয়ে স্থানীয়দের ব্যাপক আগ্রহ তৈরি হয়েছে। কিন্তু বৃষ্টি সেই উচ্ছ্বাসে বাধা হয়ে উঠতে পারে। আবহাওয়া অনুকূলে না থাকায় বাংলাদেশ দল ম্যাচ ভেন্যুতে কোনো অনুশীলনও করতে পারেনি। এ ভেন্যুতেই বাংলাদেশ সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচ খেলবে আগামীকাল রবিবার (৩ জুলাই)।
ডোমিনিকায় বাংলাদেশ প্রথম টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলতে নামবে। তবে এই মাঠে দুইটি ওয়ানডে ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতা আছে দলের। ২০০৯ সালে দুইটি ম্যাচ খেলে দুইটিতেই জিতেছিল বাংলাদেশ। সেন্ট লুসিয়া থেকে বাংলাদেশ দল ডোমিনিকায় যেতে সাগরের উত্তাল ঢেউয়ে যেমন লণ্ডভণ্ড হয়ে গিয়েছিল, তেমনি ২২ গজের ময়দানেও হোল অবস্থা। সাগরের উত্তাল ঢেউ শেষ পর্যন্ত পাড়ি দিতে পারলেও মাঠে প্রতিপক্ষের বোলারদের আক্রমণের ঢেউ বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা সামাল দিতে পারছেন না। যে কারণে সর্বশেষ ১০ ম্যাচে জয় মাত্র একটিতে। তারচেয়েও বড় কথা এই ১০ ম্যাচে বাংলাদেশ একটি মাত্র ম্যাচে দেড়শ রানের উপরে করতে পেরেছিল। গত বছর সংযুক্ত আরব আমিরাতে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ১৭১ রান করেও ম্যাচ হেরেছিল ৫ উইকেটে। সেই আসরে বাংলাদেশের অপর ইনিংসগুলো ছিল অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৭৩, দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ৮৪, উইন্ডিজকে ১৪২ রানে আটকে রেখেও ম্যাচ জিততে পারেনি। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে করেছিল ১২৪ রান।
ব্যর্থতার এ ধারাবাহিকতা ঘরের মাঠে পাকিস্তানের বিপক্ষে তিন ম্যাচের সিরিজেও অব্যাহত ছিল। হেরেছিল তিন ম্যাচেই। ব্যাট হাতে দলের সংগ্রহ ছিল ১২৭, ১০৮ ও ১২৪। এরপর ঘরের মাঠে আফগানিস্তানের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশ ১৫৫ রান করে ৬১ রান ম্যাচ জিতেছিল পরের ম্যাচে মাত্র ১১৫ রান করে হেরেছিল আট উইকেটে। অবশ্য অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ অতীত ভুলে এই ম্যাচ জিতে আগামী নভেম্বরে অস্ট্রেলিয়া অনুষ্ঠিতব্য টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রস্তুতি শুরু করতে চান।
এমপি/এসএন