ভয়ংকর সমুদ্রযাত্রায় অসুস্থ বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা
টেস্টে সিরিজ হেরে বিধস্ত বাংলাদেশ দল। তার চেয়ে বেশি বিধস্ত হয়েছে টি-টোয়েন্টি সিরিজে মাঠে নামার আগেই। তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজে প্রথম দুই ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে ডোমিনিকায়। তাই শেষ টেস্টের ভেন্যু সেন্ট লুসিয়া থেকে মার্টিনেক হয়ে ডোমিনিকায় পৌঁছাতে সমুদ্রযাত্রার মুখোমুখি হতে হয় বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের। ফেরিতে করে ৫ ঘণ্টার এই সমুদ্রযাত্রা করতে গিয়ে নুরুল হাসান সোহান, শরিফুল ইসলামসহ দলের বেশ কয়েকজন ক্রিকটোর গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। অবশেষে এক বিভীষিকাময় যাত্রা শেষে ডোমিনিকায় গিয়ে পৌঁছায় টাইগাররা।
আগামীকাল শনিবার (২ জুলাই) প্রথম টি-টোয়েন্টি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে। তবে তার আগে অসুস্থ ক্রিকেটারদের পাশাপাশি ভয়ে কাতর থাকা কয়েকজন ক্রিকেটার কতোটা সুস্থ হয়ে উঠতে পারবেন তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ আছে। !
ক্যাস্ট্রিস ফেরি টার্মিনাল থেকে ‘পার্লে একপ্রেস’ নামক ফেরিতে করে বাংলাদেশ দলের যাত্রা পথে আরো ছিলেন উইন্ডিজ দলের ক্রিকেটার এবং সিরিজ সংশ্লিষ্ট অনেকেই। দিতে হয়েছে আটলান্টিক সমুদ্র পাড়ি। এমনিতেই আটলান্টিকে থাকে উত্তাল। এক একটি ঢেউয়ের উচ্চতা থাকে কয়েক ফুট উঁচু। সেখানে আবার ছিল সাইক্লোন। যে কারণে বাংলাদেশ দলের যাত্রা পূর্বনির্ধারিত একদিন পিছিয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার (৩০ জুন) নিয়ে যাওয়া হয়। এই সাইক্লোনের কারণে সমুদ্র উত্তাল ছিল আরো বেশি।
বাংলাদেশ দলের কোনো ক্রিকেটারের এ রকম সমুদ্র যাত্রার পূর্ব অভিজ্ঞতা ছিল না। তবে ধারণা ছিল সমুদ্রযাত্রার ভয়াবহতা নিয়ে। সাগর বেশি উত্তাল হলে ঢেউয়ের উচ্চতা বেড়ে যায়। ফেরিতে বারবার আচড়ে পড়ে। হেলে-ধুলে উঠে ফেরি। এটি অনেকের পক্ষেই সহ্য করা সম্ভব হয় না। সহ্য করতে না পেরে অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়েন। বমি করতে থাকেন। এমনই অবস্থা হয়েছিল শরিফুল ও নুরুল হাসান সোহানের বেলায়। দলের লজিস্টিক ম্যানেজার নাফিস ইকবাল ও স্টাফ সোহেলও বেশ অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন।
ফেরি যাত্রার শুরুতে সবাই বেশ উৎফুল্ল ছিলেন বলে জানা গেছে। এ সময় সবাই সমুদ্রের নিল জলরাশি আর ছবি তুলে সময় সময় উপভোগ করছিলেন। কিন্তু ঘন্টাখানিক সময় পার না হতেই সেখানে ভাটা পড়ে। অনেকেই অস্বস্তি বোধ করতে থাকেন। ডেক থেকে ভেতরে এসে চেয়ারে বসে পড়েন। এই তালিকায় ছিলেন নুরুল হাসান সোহান, শরিফুল ইসলাম। তারা উচ্চস্বরে শব্দ করে একটি নীল রঙের পলিথিন ব্যাগ হাতে নিয়ে বমি করছেন। ছটফট করছিলেন শরিফুল। অসহায়ের মতো চেয়ারে বসে হাত পা ছেড়ে দিয়েছিলেন। এক পর্যায়ে অস্থিরতা কাটাতে গায়ে থাকা বাংলাদেশ দলের অনুশীলনের জার্সিও খুলে ফেলেন। এ সময় মেহেদি হাসান মিরাজ তার মাথায় হাত ভুলিয়ে দিচ্ছিলেন। মাহমুদউল্লাহ নিজে ছিলেন দুর্বল। আবার সতীর্থদের খোঁজ নেয়ারও চেষ্টা করছিলেন।
সেন্ট লুসিয়া থেকে মার্টিনেকে দেড় ঘণ্টার যাত্রায়ই ক্রিকেটারদের বেহাল অবস্থা হয়ে যায়। এখানে ছিল ৪০ মিনিটের যাত্রা বিরতি। মার্টিনেক থেকে ডোমিনিকা আরো সাড়ে তিন ঘণ্টার যাত্রা। এ কথা ভাবতেই অনেকে আরো আতঙ্কিত হয়ে পড়েন।
জানা গেছে, অনেক ক্রিকেটারই মার্টিনেক নেমে বাকি পথ বিমানে যাওয়ার কথা বলেন। দলের লজিস্টিক ম্যানেজার নাফিস ইকবাল বাংলাদেশে যোগাযোগ করে ব্যর্থ হন। কারণ তাৎক্ষণিক এতটি বিমানের টিকিট ম্যানেজ করা সম্ভব হবে না জানিয়ে দেওয়া হয়। এ ছাড়াও মার্টিনেক ফ্রেঞ্চ কলোনি হওয়াতে ভিসারও প্রয়োজন পড়ে।
এরপর অগত্যা আতঙ্ক আর ভয়কে সঙ্গী করে আবারও বিভীষিকার সমুদ্রযাত্রা শুরু করেন মাঠের টাইগাররা। এই যাত্রায় ডেকে শুয়ে ঘুমিয়ে পড়েন অধিকাংশ ক্রিকেটাররাও। কেউ কেউ চেয়ারে বসে ঘুম দেন। এক পর্যায়ে শেষ হয় তাদের ভয়াল যাত্রা। স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার দুপুরে বাংলাদেশ দল ডোমিনাকা বন্দরে গিয়ে মাটি স্পর্শ করে।
এমপি/এসআইএইচ