সাদা বলের পারফর্মারকে লাল বলে খেলানোর পক্ষে নন মাশরাফি
এনামুল হক বিজয় বিশ্বের প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে হাজার রানের মাইলফলক স্পর্শ করার পর জাতীয় দলে তার ফেরা নিয়ে সর্বত্র আলোচান শুরু হয়। পরে তাকে উইন্ডিজ সফরে রঙিন ক্রিকেটের দুনিয়ায় দুই ফরম্যাটে দলে রেখে সব আলোচনাকে মাটি চাপা দেওয়া হয়। কিন্তু ইয়াসির আলীর ইনজুরিতে তাকে হুট করে টেস্ট ক্রিকেটেও দলভুক্ত করা হয়।
এতে অনেকেই অবাক হয়েছিলেন। কারণ, লঙ্গার ভার্সন ক্রিকেটে এনামুল হক বিজয় আবারে ততটা আলোকিত নন। তাকে দলে নেওয়ার পর আবার দ্বিতীয় টেস্টের সেরা একাদশে খেলানোর বিষয়টি জোড়ালোভাবে সামনে চলে আসে। এই আসার কারণ ছিল টপঅর্ডারে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতা।
পরে তিনি সেন্ট লুসিয়া টেস্টে সেরা একাদশে সুযোগ পান। কিন্তু তার প্রতিদান দিতে পারেননি। প্রথম ইনিংসে ২৩ ও দ্বিতীয় ইনিংসে ৪ রান করেছিলেন। কিন্তু এনামুল হক বিজয়কে এভাবে খেলানো মোটেই পছন্দ হয়নি মাশরাফির।
মঙ্গলবার (২৮ জুন) মিরপুরে নিজের বাসভবনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সাদা বলের ক্রিকেটে যে পারফর্ম করছে তাকে লাল বলে না খেলানো বা লাল বলে যে পারফর্ম করছে তাকে সাদা বলে না খেলানো (উচিৎ)। আমরা মঝখানে এরকম অনেক কিছু দেখেছি। সাম্প্রতিক সময়ে আমরা যে আলোচনা করেছি বিজয় কিন্তু সাদা বলে দারুণ ফর্মে। ও গিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজে টেস্ট ক্রিকেট খেলছে। ও লাল বলেও রান করেছে কিন্তু বেশ কিছু দিন আগে। ও যে টেস্ট ক্রিকেট খেলেছে ওর জন্য কিন্তু কঠিন। সাথে ডিউক বল, কোকাবুরাও না। আমি আশা করব যেহেতু সাকিব আছে সমস্যা হবে না। শুরুটা ভালো করেছে, ২৩ রান করে আউট হয়েছে। কিন্তু ওকে আরেকটু সুযোগ দেওয়া (লাল বলে)। আর সাদা বলে সে পারফর্ম করছে। আমি আশা করছি সাদা বলে সে ভালো করবে।’
বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ে যে সমস্যা সেটা এক/দুই দিনের নয় বলে জানান মাশরাফি। তিনি বলেন, ‘ব্যাটিংটা এক-দুইদিনের ব্যাপার না। এক-দুই বছর ধরে কাজ করতে হবে। টেস্ট ক্রিকেটে স্কিল অনেক গুরুত্বপূর্ণ। সাথে মানসিক দক্ষতা। এই দুইটার কম্বিনেশন হওয়াটা জরুরি। বিশ্বে অনেক ব্যাটাসম্যান আছে টেকনিক্যালি সাউন্ড নাহয়েও অনেক অনেক রান করে গেছে। কারণ তারা মানসিকভাবে শক্ত ছিল। আমাদের সাকিবই দেখেন। হয়তো টেকনিক্যালি সাউন্ড না, কিন্তু সবসময় রান করে আসছে ।’
বাংলাদেশে প্রথম শ্রেণির দুইটি আসর হয়ে থাকে এনসিএল ও বিসিএল। কিন্তু এই দুইটি আসর নিয়ে ক্রিকেটার খুব বেশি সিরিয়াস থাকেন না। অনেকটা পিকনিক আমেজ থাকে। মাশরাফি এখানে গুরুত্ বাড়াতে প্রতি দলে একজন করে বিদেশি ক্রিকেটার খেলানোর পক্ষে।
তিনি বলেন, ‘আমাদের তো শেফিল্ড সিল্ড, কাউন্টি বা রঞ্জি ট্রফির মতো ঘরোয়া ক্রিকেট শক্ত হয়নি। সে ক্ষেত্রে শক্ত করার জন্য একজন বিদেশি এলাউ করলে খারাপ না।’ এই সব আসর থেকে মাশরাফি ২/৩ সিজন পর একজন সলিড ক্রিকেটার যদি বের হয়ে আসে, তাতে দেশের ক্রিকেট অনেক উপকৃত হবে বলে মনে করেন তিনি।
মাশরাফি বলেন, ‘২-৩ সিজন পরে ৮-১০ জন প্লেয়ার বের করার চিন্তা করলে হবে না। ২-৩ সিজন পরে যদি একজন সলিড প্লেয়ার পান, যে কি না আপনাকে ১৫ বছর সার্ভিস দেবে। আপনার ফোকাস থাকবে এরকম। এগুলো ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া আরও ১০০ বছর আগে করেছে। ভারত ৩০ বছর আগে করেছে এখন ফল পাচ্ছে। এখন আমরা শুরু করলে আমরাও পাব। আমাদের ভালো সম্ভাবনা আছে ।’
ইদানিং জাতীয়ে দলে নতুন ক্রিকেটার অনেক সুযোগ পাচ্ছেন। শুরুতে ভালোও করছেন। কিন্তু থিতু হতে পারছেন না। অনেকটা ওয়ান টাইম গ্লাসের মতো হারিয়ে যাচ্ছেন। এদের থিতু করতে মাশরাফি পরামর্শ দিয়ে বলেন, ‘নতুনদের জন্য তো এমনিতেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কঠিন হওয়ার কথা। আমাদের দেশে বরং নতুন যারা এসেছে রান করে ফেলেছে। আমরাও তাদেরকে নিয়ে অনেক লাফালাফি করেছি। দিন শেষে অন্যান্য দল যখন তাকে পরিকল্পনায় এনেছে তখন আর তারা পারফর্ম করেনি। নতুন যখন আসে অন্য দল তাকে নিয়ে এত হিসাব করে না। তার জন্য কাজটা তখন কিছুটা সহজ হয়ে যায়। আবার দলকে যখন প্রতিপক্ষ হিসাবে ধরে তখন পুরো টপ অর্ডারসহ ৭ জন ব্যাটাসম্যানকে নিয়েই চিন্তা করে। নতুন যারা এসে খারাপ করছে তাদের পেছনে ক্রিকেট বোর্ডের অনেক বিনিয়োগ তাই ছুঁড়ে ফেলে না দিয়ে এদের আরও তৈরি করার সুযোগ দিতে হবে। কারণ আবার যদি নতুন কাউকে আনেন তাকে ১০ ম্যাচ ১৫ ম্যাচ দুই বছর সময় দিতে হচ্ছে। সুতরাং বেটার হচ্ছে যে সোর্স আছে আমাদের সেগুলোকে ব্যবহার করা।
মাশরাফি মনে করেন ঘরোয়া ক্রিকেটে এক মৌসুম ভালো করে জাতীয় দলে খেলার সুযোগ করে দিলে আর্ন্তজাতিক ক্রিকেটে টিকে থাকা কঠিন।
এমপি/এমএমএ/