সাকিবের অধিনায়কত্ব আর্শিবাদ মনে করেন মাশরাফি
লাল বলের সাদা পোষাকে বাংলাদেশের অবস্থা খুবই নাজুক। টেস্ট মর্যাদা পাওয়ার ২২ বছর হয়ে গেছে। এই সময়ে যতোটুক উন্নতি করার কথা, সেখানে আরো পিছিয়ে গেছে। এখনো টেস্টে ক্রিকেটের শুরুতে বাংলাদেশ যেমন খেলতে নামলেই তিন দিনে ইনিংসে ব্যবধানে। ২২ বছর সেই একই চিত্র। সর্বশেষ উইন্ডিজ টেস্টও একই পরিণত বরন করতে হয়েছে বাংলাদেশ দলকে। কোনো রকমে দুই টেস্টে ইনিংস হার এড়াতে পেরেছে ৮৩ ও ১২ রানের লিড নিয়ে। টেস্ট চতুর্থ দিন গিয়েছিল নামে মাত্র। প্রথম টেস্টে চতুর্থ দিন ৭ ওভার খেলা হয়েছিল। দ্বিতীয় টেস্টে বৃষ্টির কারণে তৃতীয় দিন ৫৬.৩ ওভার খেলা হয়েছিল। চতুর্থ দিন খেলা শুরু হওয়ার পর এক ঘন্টার কিছু বেশি সময়ে খেলা শেষ। বৃষ্টি না হলে তৃতীয় দিনই খেইল খতম হয়ে যেতো।
টেস্ট ক্রিকেটের এ রকম বাজে অবস্থা উত্তোরনের জন্য উইন্ডিজ সফরে মুমিনুলের পরিবর্তে সাকিব হাসানেকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল। কিন্তু তাতে অবস্থার কোনো হেরফের হয়নি। ওয়ানডে ক্রিকেটে বাংলাদেশের সবচেয়ে সফল অধিনায়ক মাশরাফি মনে করেন সাকিবকে নেতৃত্ব দিলেও রাতারাতি জেতা সম্ভব নয়। তাকে সময় দেতে হবে। আজ তিনি মিরপুরে তার বাসভবনে সাংবাদিকদের বলেন, 'সাকিব যে অধিনায়ক হয়েছে এটা আমি মনে করি আমাদের জন্য আশীর্বাদ।
এ কারণে মনে করি টেস্ট ক্রিকেটে সবচেয়ে অভিজ্ঞ ক্রিকেটার ও পারফর্মারের হাতে অধিনায়কত্ব থাকা উচিত এবং সেটা আছে। আমি যেটা বললাম রাতারাতি কোনো কিছু চিন্তা করলে হবে না। সাকিবের হাতে গিয়েছে মানে জিতে যাবো, এটা না। ১০জনকেও পারফর্ম করতে হবে। সুতরাং সাকিবকে একটু সময় দিতে হবে। সে জিনিসটাকে গুছিয়ে নিয়ে যখন সামনে অগ্রসর হবে তখন দেখবেন জিনিসটা আস্তে আস্তে হয়েছে। সার সাকিব যেটা কালকে বলেছে হোমে জিততে হবে, এটা কিন্তু অবশ্যই সত্যি কথা।'
টেস্টে ক্রিকেটে বাংলাদেশ কখনো ভালো দল ছিল না বলেও মন্তব্য করেন মাশরাফি। তিনি বলেন, 'প্রথমত টেস্ট কখনোই ভালো ছিল না। আমরা মাঝে হোমে কিছু ম্যাচ জিতেছিলাম। কিন্তু হঠাৎ করে আবার নিচের দিকে। টেস্টে আমরা কখনোই ধারাবাহিক ছিলাম না। যে ফরম্যাটে ধারাবাহিক সেই ফরম্যাট হল ওয়ানডে। ২০১৫ সাল থেকেই আমরা ধারাবাহিকভাবে কম বেশি ভালো খেলে এসেছি। টেস্ট ক্রিকেটে ইতিবাচক ব্যাপার হল সাকিব বেশ অভিজ্ঞ ক্রিকেটার। সাকিব এখন অধিনায়ক কিন্তু রাতারাতি কিছু হওয়া সম্ভব না। সাকিব কিছু কথা বলেছে যেগুলোর গভীরতা আছে।'
নিজে একজন অভিজ্ঞ ক্রিকেটার হওয়ার পরও মাশরাফি মনে করেন সাকিবকে পরামর্শ দেয়ার কিছু নেই । সে জানে কিভাবে এগুতে হবে। তিনি বলেন, 'আমি আগেও বললাম সবচেয়ে অভিজ্ঞ মাথা যাকে আমরা পেয়েছি। সুতরাং সাকিবকে বার্তা দেওয়ার কিছু নাই। সাকিব জানে কীভাবে দল পরিবর্তন করতে হবে। এর আগেও দুইবার সে অধিনায়কত্ব করেছে। আমি মনে করি সাকিব সব জানে কীভাবে সামলাতে হয়। মানে কীভাবে পরিবর্তন করতে হবে দলটাকে।
টেস্টে ক্রিকেটে বাংলাদেশের সংস্কৃতি নেই- রাসেল ডমিঙ্গোর পর সাকিবও একই কথা বলছেন। মাশরাফিও সমর্থন করেন এই কথা। তিনি বলেন, 'টেস্ট কালচার নিয়ে বারবার বলার কিছু নেই। টেস্ট কালচার আমাদের কখনো ছিল না, গড়েও ওঠেনি। টেস্ট কালচার তৈরি করা চাট্টিখানি কথা না। টেস্ট কালচার প্লেয়ারদের থেকে ম্যানেজম্যান্টের কাছ থেকে আগে আসা উচিত। বুঝতে হবে যে টেস্ট কালচারটা কী। এখানে আপনার তাকাতে হবে দীরঘমেয়াদী পরিকল্পনায় করা। দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা করলে তো রাতারাতি ফল আসবে না, সমালোচনা তাই হয়েই যাবে। কিন্তু একটা স্টেজে এসে আপনি রেজাল্ট পাবেন। টেস্ট ক্রিকেটে কালচার কখনোই ছিল না, তৈরি করতে হবে।'
আর্ন্তজাতিক ক্রিকেটে বাংলাদেশ একমাত্র ওয়ানডে ক্রিকেটে ধারাবাহিক। এটা শুরু হয়েঠে ২০১৫ সাল থেকে। এ পর্যায়ে আসতে আগে ঘরের মাঠে বাংলাদেশ জেতা শুরু করেছিল। মাশরাফি মনে করেন টেস্ট ক্রিকেটে উন্নতি করতে হলে একইভাবে ঘরের মাঠে জেতা শুরু করত হবে। তিনি বলেন, 'টেস্ট ক্রিকেটেও আমাদের শুরু হয়েছিল। অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ডকে হারিয়েছিলাম। ঐ জায়গা থেকে একটু পিছিয়ে সমস্যা হয়ে গেছে। হোমে ম্যাক্সিমাম ম্যাচ এখন আমাদের জিততে হবে। হোমে খেললে কিন্তু ড্র করার সুযোগ কমে যাবে। কারণ স্পিনিং উইকেট বানালে ড্র হওয়ার সম্ভাবনা কমে। আমাদের ম্যাচ জিততে হবে ঐ পরিকল্পনা করে। আমি মনে করি সাকিব আক্রমণাত্মক চিন্তাভাবনা করছে যা ইতিবাচক।'
এমপি/এএজেড