বাংলাদেশে টেস্ট দেখে কয়জন, প্রশ্ন সাকিবের
এক. ২৬ জুন বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে বিশেষ দিন। বলা যায় বিশ্ব ক্রিকেটে এই দিন বাংলাদেশ মুক্ত বিহঙ্গের মতো ডানা মেলে উড়ার সুযোগ পেয়েছিল। ২০০০ সালের এই দিনে বাংলাদেশ টেস্ট ক্রিকেট খেলার ছাড়পত্র পেয়েছিল। প্রবেশ করেছিল ক্রিকেটের বনেধি পরিবারে। এরপর আর বাংলাদেশের ক্রিকেটকে পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। শুধুই এগিয়ে যাওয়ার পালা। যদিও সেখানে আশানুরুপ এগুনো যায়নি। কিন্তু বিসিবিরি বর্তমান পর্ষদের কাছে এই দিনের আলাদা কোনো গুরুত্ব নেই। দিনটিকে আলাদাভাবে স্মরণ করতে তাদের বেজায় আপত্তি। স্বয়ং বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন বলেছিলেন, টেস্ট ক্রিকেটে এই দিন পালন করতে হলে ওয়ানেড ও টি-টোয়েন্টি পালন করতে হবে। কিন্তু তিনি ভুলে গেছেন টেস্ট ক্রিকেট খেলার মযার্দা পাওয়ার কারণেই বাংলাদেশ দ্বি-পাক্ষিক সিরিজ খেলার সুযোগ পাচ্ছে। যেখানে অটোমেটিক ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি ম্যাচ থাকে।
দুই. সেন্ট লুসিয়া টেস্ট চলছে। ২৬ জুন ছিল টেস্টের তৃতীয় দিন। সেদিনই বিসিবির স্ট্যান্ডিং কমিটি সিসিডিএম আয়োজন করেছিল বেশ কয়েক বছরের লিগের পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠান। রাতের বেলা এই আয়োজন হওয়াতে অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়া কারো পক্ষেই টেস্ট ম্যাচ দেখা হয়নি। কয়েক বছর পুরস্কার দেওয়ার ক্ষেত্রে চাইলেই সেন্ট লুসিয়া টেস্টের আগে-পরে একটি দিন বাছাই করা যেতো। কিন্তু তা না করার মাধ্যমে ফুটে উঠেছে বিসিবির কর্তাদের টেস্টের প্রতি উদাসীনতা। বিসিবি সভাপতি উপরের কথাগুলো বলেছিলেন সেই অনুষ্ঠানেই।
তিন, সেন্ট লুসিয়া টেস্টের দ্বিতীয় দিন প্রধান কোচ রাসেল ডমিঙ্গো কোনো রকম রাখ-ঢাক না করেই বলেছিলেন বাংলাদেশে টেস্ট ক্রিকেটের সংস্কৃতি নেই। উইন্ডিজের মতো টেস্ট ক্রিকেটের সংস্কৃতি থাকতে হবে টেস্টে উন্নতি করতে হলে।
সেন্ট লুসিয়া টেস্ট বৃষ্টির কবলে পড়ার পরও বাংলাদেশ চারদিনও টিকতে পারেনি। হেরেছে ১০ উইকেটে। খেলা শেষে সংবাদ সম্মেলনে অধিনায়ক সাকিব আল হাসানও প্রশ্ন তুলেছেন টেস্ট সংস্কৃতি নিয়ে। তিনি পাল্টা প্রশ্ন করে জানতে চেয়েছেন বাংলাদেশে টেস্ট ম্যাচ দেখে কয়জনে? তিনি কথাগুলো বলেন বাংলাদেশের দর্শকদের উদ্দেশ্য করে।
সাকিবের কথা সত্য। বাংলাদেশে যখন টেস্ট ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয় তখন স্টেডিয়াম দর্শকদের অভাবে মরুভূমিতে পরিণত হয়। স্কুলছাত্রদের জন্য বিনা টিকিটে খেলা দেখার ব্যবস্থা রাখার পরও অধিকাংশই ফাঁকা থাকে। এই ব্যবস্থা না রাখা হলে দর্শক উপস্থিতি হাতে গুনা যেতো না! টেস্ট মর্যাদা পাওয়ার ২২ বছর হওয়ার পরও বাংলাদেশ এখানে খুব বেশি এগুতে পারেনি। টেস্টে উন্নতি করতে হলে সবার সহযোগিতা প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন সাকিব। শুধু খেলোয়াড়দের দোষারূপ করা ঠিক হবে না বলে জানান তিনি। সাকিব বলেন, ‘খেলোয়াড়দের এখানে খুব বেশি দোষ দেওয়াটা ঠিক হবে না। আমাদের দেশের সিস্টেমটাই কিন্তু এমন। আপনি কবে দেখছেন বাংলাদেশে ৩০ হাজার দর্শক টেস্ট ম্যাচ দেখছে বা ২৫ হাজার দর্শক মাঠে এসেছে টেস্ট দেখতে? ইংল্যান্ডে তো প্রতি ম্যাচে (টেস্ট) এ রকম দর্শক থাকে। টেস্টের সংস্কৃতিটাই আমাদের দেশে ছিল না কখনও। এখনও নেই।’ তবে টেস্ট সংস্কৃতি নেই বলে যে হবে না তাও মনে করেন সাকিব।
তিনি বলেন, ‘টেস্ট সংস্কৃতি নেই বলে যে হবেও না সেটাও কিন্তু নয়। এই জিনিসটা পরিবর্তন করাই আমাদের বড় দায়িত্ব। সবাই মিলে যদি একসঙ্গে পরিকল্পনা করে এগুনো যায়, তাহলেই হয়তো কিছু সম্ভব হবে। নইলে আসলে খুব বেশি দূর এগুনো সম্ভব হবে না। কারণ আমাদের টেস্টের সংস্কৃতিই নেই।’
বাংলাদেশ পরবর্তী টেস্ট খেলবে নভেম্বরে ভারতের বিপক্ষে দেশের মাটিতে। সাকিব বলেন, ‘এই বিরতির মধ্যে যারা টেস্ট খেলতে আগ্রহী তারা হয়তো যার যার জায়গা থেকে উন্নতি করার চেষ্টা করবে। উন্নতি ছাড়া আর কোনো পথ নেই। আমাদের এমন কোনো সেটআপও নেই যাদের আনলে আমরা টেস্টে ভালো করে ফেলব। যারা আছি বা বাইরে আর যে দুই-চারজন আছে, সবাই মিলে যদি একসঙ্গে পরিকল্পনা করে এগুতে পারি তাহলেই ভালো কিছু সম্ভব হবে। তা না হলে এতদিন ধরে যা হয়ে আসছে তা থেকে খুব বেশি একটা পরিবর্তন হওয়ার সম্ভাবনা নেই।’
বিদ্যমান পরিস্থিতিতে নতুন করে টেস্ট নেতত্ব ফিরে পাওয়া সাকিব নতুন করে টেস্ট ক্রিকেটের উন্নয়নে পরিকল্পনা করে এগুতে চান। তিনি বলেন, ‘আমাদের নিজেদের চিন্তায় পরিবর্তনটা জরুরি। এই জায়গায় কাজ করার আছে। সবাই মিলে পরিকল্পনা করতে হবে। একজনকে ছাড়া আরেকজনকে নিয়ে পরিকল্পনা করে আসলে সফল হওয়া সম্ভব নয়। সবাই মিলে বসে যদি আমরা একটা পরিকল্পনা ধরে আগাই তাহলে অন্তত এক–দেড় বছর পর ধারাবাহিক পারফর্ম করা সম্ভব হবে।’
টেস্ট ক্রিকেটে উন্নতি করতে হলে সাকিব মনে করেন তা করতে হবে নিজ মাটি থেকে। তিনি বলেন, ‘আমি বলব না টেস্ট জিততেই হবে। বিদেশে সব দলই আন্ডারডগ থাকে। নিউজিল্যান্ড টেস্ট চ্যাম্পিয়ন দল। ওরাও যখন বাইরে খেলতে যায়, হেরে যায়। অন্য দেশে গেলে নিউজিল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, ভারত সব দলই হারে। আমাদের নিশ্চিত করতে হবে আমরা যেন ঘরের মাঠে না হারি। হয় ড্র করব, অথবা জিতব।’
এমপি/এসআইএইচ