বাংলাদেশের ইনিংস হার এড়ানোর শান্তনা
সেন্ট লুসিয়া টেস্টে যে বাংলাদেশ হারতে যাচ্ছে তা তৃতীয় দিনই নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল। দেখার বিষয় ছিল বাংলাদেশ কি ইনিংস ব্যবধানে হারছে, না উইন্ডিজকে আবার ব্যাট করতে নামাতে পারবে?
মাত্র ১২ রানের লিড নেওয়াতে উইন্ডিজকে আবার ব্যাট করতে নামাতে পেরেছে। হারের মাঝে বাংলাদেশের শান্তনা এটিই। উইন্ডিজ সেই রান অতিক্রম করে ২.৫ ওভারে কোনো উইকেট না হারিয়ে। জয়সূচক রান আসে এবাদতের বলে ক্যাম্পবেলের ব্যাট থেকে বাউন্ডারির মাধ্যমে। বাংলাদেশকে অলআউট করে জয়সূচক রান পেতে তারা সময় নেয় এক ঘণ্টা ১০ মিনিট। ক্যাম্পবেল ৯ ও ব্রেথওয়েট ৪ রানে অপরাজিত থাকেন। ম্যাচ সেরা হয়েছেন কাইল মায়ার্স।
বাংলাদেশ প্রথম ইনিংসে ২৩৪ ও উইন্ডিজ প্রথম ইনিংসে ৪০৮ রান করেছিল। অ্যান্টিগা টেস্টে উইন্ডিজ জিতেছিল ৭ উইকেটে। আইসিসি বিশ্ব টেস্টে চ্যাম্পিয়নশিপে বাংলাদেশকে হোয়াইটওয়াশ করে ২-০ ব্যবধানে তারা জিতল সিরিজ। ৯ ম্যাচে ৫৪ পয়েন্ট নিয়ে উইন্ডিজ ছয়ে এবং বাংলাদেশ ১০ ম্যাচে ১৬ পয়েন্ট নিয়ে ৯ দলের মাঝে সবার নিচে আছে।
সেন্ট লুসিয়ায় টেস্ট হেরে বাংলাদেশ নিজেদের মনের অজান্তেই একটি লবনাক্ত রেকর্ডের সাক্ষী হয়েছে। এটি ছিল ১৩৪ টেস্টে তাদের শততম হার। জয় মাত্র ১৬টি। ড্র ১৮টি।
এই টেস্ট বাঁচাতে বৃষ্টি এসে বাংলাদেশের পাশে দাঁড়িয়েছিল। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। প্রথম দুই সেশন বৃষ্টির পেটে চলে যাওয়ার পর শেষ সেশনে খেলা শুরু হয়। বাড়ানো হয় সময় আধঘণ্টা। ওভার খেলতে হবে ৩৮টি। পঞ্চম দিনও বৃষ্টির পূর্বাভাস থাকায় তার সহায়তা পেতে টেস্টকে পঞ্চম দিন নিয়ে যেতে হবে বাংলাদেশকে। তারজন্য টিকতে হবে এই ৩৮ ওভার। তখন লিডও নিতে পারবে। কিন্তু এ সবই কল্পনায় আঁকা ছবি। বাংলাদেশ স্বপ্নের ধারে-কাছেও যেতে পারেনি। মাত্র ৯ ওভারে ৫৪ রান যোগ করে অলআউট হয়ে যায় ১৮৬ রানে। অলআউট হওয়ার মাঝে আফসোস হয়ে থাকে নুরুল হাসান সোহানের দৃষ্টিনন্দন মারমুখি অপরাজিত ৬০ রানের ইনিংস। তার এই ইনিংসের কারণেই বাংলাদেশ ১২ রানের লিড পায়। চতুর্থ দিন বাংলাদেশ যে ৫৪ রান সংগ্রহ করে তার ৪৪ রানই আসে নুরুল হাসান সোহানের ব্যাট থেকে। তিনি ৪০ বলে তুলে নেন ক্যারিয়ারের তৃতীয় হাফ সেঞ্চুরি। তার ইনিংসে ছিল ছয়টি চার ও একটি ছক্কা। প্রথম টেস্টে তিনি করেছিলেন ৬৪ রান।
বৃষ্টির সঙ্গে লড়াই করে খেলা মাঠে গড়ানোর অপেক্ষায় ছিলেন উইন্ডিজের পেসাররা। খেলা শুরু হলেও যখন-তখন বৃষ্টি আসতে পারে। তাই বিলস্ব করা যাবে না। যা করার তাড়াতাড়িই করতে হবে। সেই কাজটিই তারা দ্রুততম সময়ে করে নেন। এতো দ্রুত যে করতে পারবেন, তা হয়তো ব্রেথওয়েটের বোলাররা নিজেরাও ভাবেননি। কারণ উইকেটে ছিলেন নুরুল হাসান সোহান ও মেহেদি হাসান মিরাজ। দুই জনেরই ব্যাটের হাত বেশ পাকা। নুরুল হাসান অ্যান্টিগা টেস্টে দলের এ রকম বিপর্যয়ে সাকিবের সঙ্গে তিনি ১২৩ রানের জুটি গড়েছিলেন সপ্তম উইকেট জুটিতে। মিরাজের আছে একটি সেঞ্চুরি। কাজেই এই জুটির কাছে রান আশা করাই যায়। আবার আউট করাটাও সহজ হবে না। কিন্তু ওতো সব ভাবার সময় ছিল না স্বাগতিক দলের বোলারদের। চতুর্থ ওভারেই জোসেফের বাউন্সারে পরাস্ত হয়ে উইকেটের পেছনে ডি সিলভার হাতে ক্যাচ দিয়ে মিরাজের বিদায় নেওয়ার মাধ্যমে শুরু হয় বাংলাদেশের পতনের দৃশ্য। জুটিতে রান আসে ১৬। আগের দিন শূন্য রানে অপরাজিত থাকা মিরাজ করেন ৪ রান। দিনের সপ্তম ওভারে সিলস এবাদত ও শরিফুলকে ফিরিয়ে দিয়ে কাজটি দ্রুত শেষ করার সব রাস্তা তৈরি করে ফেলেন। দুই জনেই কোনো রান করতে পারেননি। এবাদত ৭ ও শরিফুল ২ বল টিকে ছিলেন। এর মাঝে নুরুল হাসান সোহান এবাদতের সঙ্গে ২১ ও শরিফুরের সঙ্গে ৫ রান যোগ করেন। শেষ ব্যাটসম্যান খালেদ চলে আসাতে নুরুল হাসান স্ট্রাইক ধরে রেখে রান বাড়ানোর চেষ্টা করতে থাকেন। খালেদ যখন আসেন তখন বাংলাদেশ ইনিংস হার এড়াতে পেরেছে। দলের রান ১৭৪। নুরুল হাসান হাফ সেঞ্চুরি থেকে এক রান দূরে। পরে নিজে স্ট্রাইক ধরে রেখে নিজের হাফ সেঞ্চুরিও পূর্ণ করেন। আর দলের লিড বাড়িয়ে নিয়ে যান ১২ রানে। নুরুল হাসান হাফ সেঞ্চুরি করেন জোসেফকে বাউন্ডারি মেরে। পরের বলে হাঁকান ছক্কা। সিলসের পরের ওভারের শেষ বলে স্ট্রাইক ধরে রাখার চেস্টায় ঝুঁকিপূর্ণ রান নিতে চেয়েছিলেন তিনি। পরে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করলেও খালেদ আর ফিরে যেতে পারেননি। পয়েন্ট থেকে ক্যাম্পেবেলের সরাসরি থ্রোতে স্ট্যাম্প ভেঙে যায়। সিলস ২১, রোচ ৫৪ ও জোসেফ ৫৭ রানে নেন তিনটি করে উইকেট।
এমপি/আরএ/