দ্বিতীয় টেস্ট খেলছেন এনামুল-শরিফুল!
দূরদেশ থেকে যখন ফোন করে কাউকে চাওয়া হয়, তখন বুঝে নিতে হবে এ চাওয়ার গুরুত্ব কত গভীর। বলা হচ্ছিল, এনামুল হক বিজয় ও শরিফুল ইসলামের কথা। উইন্ডিজ সফরে দুইজনেই ছিলেন রঙিন পোশাকের ক্রিকেটে। সাদা পোশাকের ক্রিকেটে কেউ ছিলেন না দলে। এনামুল হক বিজয় ২০১৪ সালে সর্বশেষ খেলেছিলেন টেস্ট ক্রিকেট।
রঙিন পোশাকে তিনি সর্বশেষ ম্যাচ খেলেছিলেন ২০১৯ সালে। এবার উইন্ডিজ সফরে তার রঙিন পোশাকে আবার ডাক পাওয়ার কারণ ঢাকা প্রিমিয়ার বিভাগে ক্রিকেট লিগ তথা লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে বিশ্বের প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে হাজার রানের মাইল ফলক অতিক্রম করা। ৩ সেঞ্চুরি আর ৯ হাফ সেঞ্চুরিতে তিনি রান করেছিলেন ১১৩৮। যা তাকে আবার জাতীয় দলে দরজা খুলে দিতে বাধ্য করে। কিন্তু টেস্ট ক্রিকেটে তিনি সুযোগ পান ইয়াসির আলী চৌধুরী রাব্বি ইনজুরিতে পড়ার কারণে।
এদিকে শরিফুলের ডাক না পাওয়ার পেছনে এনামুল হক বিজয়ের মতো অত লম্বা গল্প নেই। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে চট্টগ্রাম টেস্টে ব্যাটিং করার সময় ব্যথা পেয়ে মাঠ ছেড়েছিলেন। যা তাকে আবার শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দ্বিতীয় টেস্টের পাশাপাশি উইন্ডিজ সফরেও টেস্ট দল থেকে বাদ পড়েন। কিন্তু তাকে রঙিন পোশাকের দুই ফরম্যাটেই রাখা হয়। ছিলেন রিহ্যাবে। কিন্তু তাকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে টিম ম্যানেজমেন্টের ‘চাহিদা পত্র’ পেয়ে। নতুন করে নেতৃত্ব ফিরে পাওয়া কাপ্তান সাকিব নিজে ফোন করে শরিফুলকে চলে আসার জন্য বলেন। সাকিবের চাওয়া ছিল তাসকিনকেও। কিন্তু তাসকিন পুরোপুরি সুস্থ না হওয়াতে রাজি হননি। শরিফুল এক বাক্যে হ্যাঁ বলে দেন। এখন প্রশ্ন হচ্ছে এই দুইজনকে যেহেতু নিয়ে যাওয়া হয়েছে, তাহলে দুইজনেই তো সেন্ট লুসিয়াতে ২৪ জুন শুক্রবার শুরু হতে যাওয়া দ্বিতীয় টেস্ট খেলবেন। কিন্তু কার পরিবর্তে?
এনামুলকে নিয়ে যাওয়া হলেও তার খেলার সম্ভাবনা ছিল কমই। মূলত ব্যাকআপ হিসেবেই নিয়ে যাওয়া। কিন্তু অ্যান্টিগাতে বাংলাদেশের ৭ উইকেটে হারের সঙ্গে টপ অর্ডারের ভরাডুবি এনামুল হক বিজয়ের আবার ৮ বছর পর টেস্ট ক্রিকেটে ফেরার দরজা খুলে যায়। এমনিতেই বাংলাদেশের টপ অর্ডার ভুগছে। ইনিংস শুরু হতে, না হতেই একে একে টপ অর্ডারের ব্যাটসম্যানরা সাজঘরে ফেরা শুরু করেন। এ ফেরাটা এমনই মহামারি আকার ধারণ করে যে প্রতিরোধ করা কঠিন হয়ে পড়ে। যে কারণে সর্বশেষ ৪ টেস্টেই ৫৩, ৮০, ১৬৯, ১০৩ রানে অলআউট হওয়ার মতো ঘটনা বারবার ঘটেছে। এখানে দুটি নাম ছিল অবধারিত। একজন নাজমুল হোসেন শান্ত, অপরজন্য মাত্রই টেস্ট অধিনায়কত্ব ছেড়ে দেওয়া মুমিনুল হক।
তাদের ব্যর্থতা রীতিমতো চোখ কপালে উঠার মতো। এই ৪ টেস্টের ৮ ইনিংসের মাঝে সর্বশেষ ৬ ইনিংসে নাজমুল একবার মাত্র দুই অংকের ঘরে রান করতে পেরেছেন। তাও অ্যান্টিগা টেস্টে ১৭ রান। মুমিনুলের ক্ষেত্রে ৪ টেস্টের আরেকটু পেছনে চলে গেলে দেখা যায় সর্বশেষ ৯ ইনিংসে একবারও দুই অংকের ঘরে যেতে পারেননি টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের সবচেয়ে সফল এই ব্যাটসম্যান। যার থলিতে আছে ১১টি সেঞ্চুরি। যা বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানদের মাঝে সর্বোচ্চ। নিজেকে ফিরে পেতে নেতৃত্ব বিসর্জন দিয়েও মুমিনুল রান করতে পারছেন না। নেতৃত্ব ছাড়ার পর অ্যান্টিগা টেস্ট খেলতে নেমে তিনি উভয় ইনিংসে করেন ০ ও ৪।
এর আগে উইন্ডিজ প্রেসিডেন্ট একাদশের বিপক্ষে তিন দিনের প্রস্তুতি ম্যাচেও রান করতে পারেননি। মাত্র ৪ রান করে আউট হয়েছিলেন। তাই রব উঠেছে টপ অর্ডারের পরিবর্তন এবং এই দুই জায়গাতেই। নাজমুল তিনে, মুমিনুল চারে। দুইজনের যে অবস্থা তাতে করে দুইজনকেই বাদ দেওয়ার কথা। কিন্তু তা আর সম্ভব হচ্ছে না। কারণ দুইজনের বিকল্প নেই! আছেন শুধু এনামুল হক বিজয়। কিন্তু তিনি মূলত ওপেনার। কিন্তু তাকে খেলতে হবে টপ অর্ডারে এই দুইজনের যেকোনো একজনের পরিবর্তে। কিন্তু বাদ যাবেন কে?
মুমিনুল বাদ গেলে সেটা হবে বিশ্রাম। কারণ তার মতো টেস্ট স্পেশিয়ালিস্টকে বাদ দেওয়া যায় না। এ রকম ব্যাটসম্যানের বাজে সময় সবারই যায়। সেই সময় দূর করতে তাদের বিশ্রাম দেওয়া হয়। চারিদিক থেকে মুমিনুলকে না খেলানোর যে কথা বলা হচ্ছে তা ‘বিশ্রাম’ হিসেবে ভাবা হচ্ছে। কিন্তু নাজমুল না খেললে সেটা সরাসরি বাদ হিসেবেই গণ্য হবে।
রানে ফিরতে টেস্ট নেতৃত্ব ছেড়ে দেওয়ার এক টেস্টের দুই ইনিংসে রান না পাওয়াতেই মুমিনুলকে সরানোর পক্ষে নন অনেকেই। তাদের কথা অন্তত তাকে আরেকটি সুযোগ দেওয়া উচিত। সে ক্ষেত্রে নাজমুল বাদ পড়বেন। আর যদি সেন্ট লুসিয়া টেস্টেই মুমিনুলকে বিশ্রাম দেওয়া হয় তাহলে নাজমুল পেয়ে যাবেন ‘লাইফ লাইন।’
টেস্ট ক্রিকেটের প্রতি মোস্তাফিজের অরুচি সবার জানা। তিনি এ সফরে খেলছেন নিজের ইচ্ছের বিরুদ্ধে। কিন্তু নতুন নেতা সাকিব কাউকে জোর করে খেলানোর পক্ষে নন। এ ছাড়া অ্যান্টিগা টেস্টে এবাদত-খালেদ একাধিক উইকেট পেলেও মোস্তাফিজ মাত্র একটি উইকেট পেয়েছিলেন প্রথম ইনিংসে। যদিও তার বলে রান নিতে ভুগতে হয়েছিল স্বাগতিক দলের ব্যাটসম্যানদের। তাই শরিফুলকে জরুরি ভিত্তিতে উড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে উইন্ডিজে। মঙ্গলবারই দলের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন তিনি। তিনি খেললে সরে দাঁড়াবেন মোস্তাফিজ। শরিফুলের এটি প্রথম উইন্ডিজ সফর। টেস্ট খেলা হয় ডিউক বলে। নেই তার আগে খেলার অভ্যাস। দুই দিন সুযোগ পাবেন ডিউক বলের সঙ্গে পরিচিত হতে। এই দুই দিনের প্রস্তুতি নিয়ে তাকে খেলতে হতে পারে সেন্ট লুসিয়া টেস্ট।
এমপি/এসএন