ধৈর্য্যের পরীক্ষায় বাংলাদেশকে পেছনে ফেলল উইন্ডিজ
চোখের সামনে ওয়েস্ট ইন্ডিয়ানরা দেখেছেন বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের করুণ হাল। তাদের পেসাররা অতিথিদের পিচে দাঁড়াতেই দেননি। ড্রেসিং রুমে আসা-যাওয়ার শব যাত্রায় পরিণত করেন। মাত্র তিনজন ব্যাটসম্যানকে দুই অংকের রান করতে দিয়েছেন। ছয়জনকে কোনো রানই করতে দেননি। ১০৩ রানে গুটিয়ে যাওয়া বাংলাদেশকে দেখে স্বাগতিক দলের ব্যাটসম্যানরা সতর্কতা অবলম্বন করে এগুতে থাকেন। কোনো রকমের ঝুঁকি নিতে তারা রাজি হননি। প্রথম দিন শেষে স্বাগতিকদের সংগ্রহ দুই উইকেটে ৯৫। ওভার খেলেছে ৪৮টি। আট উইকেট নিয়ে বাংলাদেশের চেয়ে উইন্ডিজ পিছিয়ে মাত্র আট রানে। অধিনায়ক ব্রেথওয়েট দুইবার জীবন পেয়ে দিনশেষে ৪২ রানে অপরাজিত। সঙ্গে বোনার আছেন ১২ রানে।
উইন্ডিজের ব্যাটসম্যানরা এমনই সতর্ক ছিলেন যে প্রথম পাঁচ ওভারে কোনো রানই সংগ্রহ করতে পারেননি। তাদের এই সাবধানতার অন্যতম কারণ ছিল কাটার মাস্টার মোস্তাফিজের ফেরা। যে কারণে মোস্তাফিজের পাঁচ ওভারের প্রথম স্পেলে চারটিই ছিল মেডেন। রান দেন মাত্র একটি। মোস্তাফিজের সঙ্গে বোলিং সূচনা করতে আসা আরেক পেসার খালেদও কম যাননি। তার পাঁচ ওভারের প্রথম স্পেলে তিনটি ছিল মেডেন। রান দেন তিনটি। এবাদত-সাকিব এসেও ব্যাটসম্যানদের স্বাচ্ছন্দ্য হতে দেননি। প্রথম রান তাদের আসে ষষ্ট ওভারে। এক পর্যায়ে স্বাগতিকদের রান ছিল ১৩ ওভারে বিনা উইকেটে ১০। চা বিরতির সময় ছিল ১৫ ওভারে ১৫। এভাবেই সতর্কতার সঙ্গে তারা এগুতে থাকে। দিন শেষে তাদের সংগ্রহ ওভার প্রতি মাত্র ১.৯৭ করে, যেখানে বাংলাদেশ অলআউট হওয়ার পরও ওভার প্রতি রান ছিল ৩.১৩ করে।
প্রশ্ন আসতেই পারে যে পিচে স্বাগতিক দলের পেসাররা বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের দাঁড়াতেই দেননি, সেই পিচে বাংলাদেশের পেসার কিংবা স্পিনাররা উইন্ডিজের ব্যাটসম্যানদের কিছুই করতে পারেননি। এমন নয় যে উইন্ডিজের পেসাররা খুবই ভালো এবং চমৎকার বোলিং করেছেন। আসলে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা দায়িত্ব নিয়ে ব্যাটিং করতে পারেননি। যেটা করে দেখিয়েছেন উইন্ডিজের ব্যাটসম্যানরা। আর এতেই দুই দলের প্রথম দিনের পাথর্ক্য গড়ে দিয়েছে। যেখানে প্রথম দিনই সুস্পষ্ট ব্যবধানে এগিয়ে স্বাগতিকরা। এমনিতেই ব্যাটিং বিপর্যয়ে কোনঠাসা বাংলাদেশ দুইটি রিভিউ নিয়ে সফল হতে না পেরে আরো কোনঠাসা অবস্থায় আছে।
স্বাগতিকদের এমন সাবধানতার মাঝেও বাংলাদেশকে প্রথম সাফল্য এনে দেন ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের পর প্রথম টেস্ট খেলতে নামা কাটার মাস্টার মোস্তাফিজ। ওপেনার জন ক্যাম্পবেলকে তিনি বোল্ড করেন দলীয় ৪৪ রানে। ক্যাম্পবল ৭২ বল খেলে করেন ২৪ রান। বাংলাদেশকে দ্বিতীয় সাফল্য এনে দেন এবাদত। তিনি রেইফারকে উইকেটের পেছনে নুরুল হাসান সোহানের হাতে ক্যাচে পরিণত করেন ব্যক্তিগত ১১ রানে। এর আগে তিনি চার রানে জীবন পেয়েছিলেন মোস্তাফিজের বলে লিটনের হাতে প্রথম স্লিপে। মোস্তাফিজের এই ওভারেরই পরে বলে গালিতে সেই লিটনের হাতেই জীবন পান অধিনায়ক ব্রেথওয়েট। তখন তার রান ছিল ১৫। এর আগে তিনি এক রানে গালিতে মুমিনুলের হাতে জীবন পেয়েছিলেন। বোলার ছিলেন মোস্তাফিজ। আবার ব্যক্তিগত ২৫ রানের সময় তার বিপক্ষে সাকিব নিজের বলে রিভিউ নিয়েছিলেন। নুরুল হাসান সোহান ক্যাচ ধরে জোড়ালো আবেদন করেছিলেন। কিন্তু আম্পায়ার সাড়া না দিলে সাকিব সোহানের ইংগিতে রিভিউ নেন। কিন্তু সফল হতে পারেননি। বাংলাদেশ পরে আরেকটি রিভিউ হারায় ৪৩.১ ওভারের সময়। মোস্তাফিজের বলে বোনারের বিপক্ষে জোড়ালো এলবিডব্লিউর আবেদনে সাড়া না দিলে উইকেটকিপার নুরুল হাসান সোহান সে সময় অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করা লিটনকে রিভিউ নিতে উৎসাহিত করেন। লিটন প্রথমে একটু দ্বিধায় থাকলেও পরে রিভিউ নেন। কিন্তু হকআইয়ে দেখা যায় বল স্ট্যাম্প মিস করতে! স্বাগতিকদের আট উইকটে বাকি থাকতেই বাংলাদেশ দুইটি রিভিউ হারিয়ে ফেলেছে। বাকি আছে মাত্র একটি রিভিউ।
এদিন ৪৮ ওভারে মাঝে বাংলাদেশের তিন পেসার মিলে করেছেন ৩৪ ওভার। মোস্তাফিজ ও এবাদত সবচেয়ে বেশি ১২ ওভার করে বোলিং করে ১০ ও ১৮ রানে একটি করে উইকেট নিয়েছেন।
বোলার ছিলেন খালেদ। চা বিরতি পর্যন্ত তাদের সংগ্রহ বিনা উইকেটে ১৫ ওভারে ১৫। মিরাজ বল হাতে তুলে নেয়ার পর এক ওভারে রান আসে পাঁচ। অধিনায়ক ক্রেইগ বার্থওয়াইট ৯ ও জসন ক্যাম্পবেল ১ রানে অপরাজিত।
এর আগে বাংলাদেশ স্বাগতিক দলের পেসারদের তোপে পড়ে মাত্র ৩২.৫ ওভারে ১০৩ রানে অলআউট হয়। সাকিব করেন্ কোই ৫১। এ ছাড়া তামিম ইকবাল ২৯ ও লিটন দাস ১২ রান করেন। আর কোনো ব্যাটসম্যানর দুই অংকের রান করতে পারেননি। সিলস ও জোসেফ দুই জনেই ৩৩ রান করে দিয়ে তিনটি করে এবং মায়ার্স ১০ ও কেমার রোচ ২১ রানে নেন দুইটি করে উইকেট।
এমপি/এএস