মধ্যাহ্নভোজে বাংলাদেশের মেন্যু ৬ উইকেট!
কেমার রোচের খেলারই কথা ছিল না। ম্যাচের আগের দিন ফিটনেস পরীক্ষায় উতরে গিয়ে সেরা একাদশে ঢুকে পড়েন। এই তিনিই ২০১৮ সালে অ্যান্টিগার এই স্যার ভিভিয়ান রিচার্ডস স্টেডিয়াম বাংলাদেশ যে নিজেদের ইতিহাসে সর্বনিম্ন ৪৩ রানে অলআউট হওয়ার লজ্জায় ডুবেছিল, সেই রোচ আজ একই ভেন্যুতে সেই একই দৃশ্যের মঞ্চায়নের রাস্তা তৈরি করে দিয়েছিলেন। প্রথম দুই ওভারেই তুলে নেন দুই উইকেট। যদিও ২০১৮ সালের মতো লজ্জায় পড়তে হয়নি। তবে বিপদ কাটেনি। রোচের এ ধাক্কা বাংলাদেশ কাটিয়ে উঠতে পারেনি। লাঞ্চ বিরতিতে গিয়েছে ছয় উইকেটে ৭৬ রান সংগ্রহ করে। সাকিব ২৭, মিরাজ ২ রান নিয়ে লাঞ্চের পর আবার ব্যাট করতে নামবেন। এ দুই ব্যাটসম্যান জুটি বাঁধার আগে দলের রান ছিল ৬ উইকেটে ৪৫। রোচ ও মায়ার্স নিয়েছেন দুইটি করে উইকেট।
মাহমুদুল হাসান জয় (০):
মাত্র সাত টেস্টের ক্যারিয়ারে ১১ ইনিংসে পঞ্চমবারের মতো শূন্য রানে আউট হলেন ওপেনার মাহমুদুল হাসান জয়। কেমার রোচের করা ইনিংসের দ্বিতীয় ও মাহমুদুলের প্রথম বলেই স্লিপে বোনারের হাতে ক্যাচ। অফ স্ট্যাম্পের বাইরের বলটি অনায়েসে ছেড়ে দিতে পারতেন। কিন্তু খোঁচা দিয়ে নিজের বিপদ ডেকে আনেন। ক্যারিয়ারের পঞ্চমবার শূন্য রানে আউট হওয়ার পাশাপাশি দ্বিতীয়বার প্রথম বলেই আউট হলেন অমিত সম্ভাবনাময়ী এই ওপেনার।
নাজমুল হোসেন শান্ত (০):
রোচের করা পরের ওভারের প্রথম বলেই মাহমুদুল হাসান জয়কে অনুসরণ করেন নাজমুল হোসেন শান্ত কোনো রান না করেই। রাউন্ড দ্যা উইকেটে করা বলটি নাজমুলের স্ট্যাম্পে গিয়ে আঘাত হানে।
মুমিনুল হক (০):
রানে ফেরার জন্য নেতৃত্ব ছেড়ে দিয়েছিলেন মুমিনুল হক। কিন্তু তাতেও শেষ রক্ষা হয়নি। তিন দিনের প্রস্তুতি ম্যাচে মাত্র চার রানে আউট হয়েছিলেন। আজ আউট হলেন রানের খাতা খোলার আগেই। এবার কেমার রোচ ছিলেন না। মুমিনুলকে শিকার করেন সিলস। স্লিপে ক্যাচ ধরেন ব্ল্যাকউড। এই নিয়ে টানা আট ইনিংসে মুমিনুল আউট হলেন দুই অংকের আগেই। বাংলাদেশের প্রথম তিন ব্যাটসম্যানই আউট হলেন কোনো রান না করেই। মুমিনুল আউট হওয়ার সময় অপরপ্রান্তে তামিম ইকবাল তিন বাউন্ডারিতে ১৫ রানে অপরাজিত। দলের রানও ছিল ১৫।
তামিম ইকবাল (২৯):
যেভাবে উইকেটের মড়ক লেগেছিল, তাতে করে ২০১৮ সালে ৪৩ রানে অলআউট হওয়া ম্যাচটি ঝাপসা হয়ে ভাসতে শুরু করে। কিন্তু লিটন দাস এসে তামিম ইকবালের সঙ্গে জুটি বেঁধে প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা করেন। ব্যাটসম্যানদের আসা-যাওয়ার মিছিলে স্বপ্রতিভ ছিলেন তিন দিনের ম্যাচে ১৬২ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলা তামিম ইকবাল। কিন্তু ব্যক্তিগত ২৯ রানে তিনিও ফিরে গিয়ে দলের বিপর্যয় আরও ঘনিভূত করে তুলেন। ৪৩ বরে চার বাউন্ডারিতে ২৯ রান করে আলজারি জোসেফের বলে উইকেটের পেছনে জসুয়া ডি লিভার হাতে ধরা পড়েন। তবে আউট হওয়ার আগে ব্যক্তিগত ১৯ রানের সময় তামিম ইকবাল দ্বিতীয় বাংলাদেশি ব্যাটসম্যান হিসেবে টেস্ট ক্রিকেটে পাঁচ হাজার রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে এই কীর্তি গড়েছিলেন মুশফিকুর রহিম।
লিটন দাস (১২)
সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের সেরা ব্যাটসম্যান লিটন খুব বেশি সফল হতে পারেননি। তামিম আউট হওয়ার চার বল পরই তিনি মায়ার্সের বলে উইকেটর পেছনে ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেন ১২ রানে।
নুরুল হাসান সোহান (০)
লিটনকে আউট করার পর একই ওভারে জোড়া আঘাত হানে মায়ার্স। এক বল পরই তিনি নুরুল হাসান সোহানকে এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলেন কোনো রান না করতে দিয়েই। ইনিংসে চতুর্থ ব্যাটসম্যান হিসেবে নুরুল হাসান শূন্য রানে আউট হলেন। মাত্র সাত বলের ব্যবধানে বাংলাদেশ হারায় তামিম-লিটন-নুরুল হাসানকে। দলের রান তিন উইকেটে ৪১ থেকে পরিণত হয় ছয় উইকেটে ৪৫। ভাগ্য ভালো ৪৩ রানের ফাঁড়া কেটে যায়।
সাকিব-মিরাজে প্রতিরোধ
তৃতীয়বারের মতো নেতৃত্ব ফিরে পেয়ে দলের ব্যর্থতার ঝাল ছিন্ন করার ঘোষণা দিয়েছিলেন সাকিব। চেয়েছিলেন সবার সহযোগিতা। কিন্তু তার ডাকে সাড়া দিতে পারেননি কেউ। শেষ পর্যন্ত তাকেই প্রতিরোধের ডাক দিতে হয়। সঙ্গী হিসেবে পেয়ে যান মেহেদি হাসান মিরাজকে। দুইজনে মিলে লাঞ্চ পর্যন্ত আর কোনো উইকেটর পতন হতে দেননি। জুটিতে যোগ করেন ৩১ রান। সাকিব ২৭ ও মিরাজ ২ রানে অপরাজিত। সাকিব খেলছেন কিছুটা আক্রমণাত্মক মেজাজে। ২৭ রান করতে একটি করে চার ও ছয় মেরেছেন। বল খেলেছেন ৩৯টি। সে তুলনায় মিরাজ ধৈর্য্য ধরে খেলছেন। তার ২ রান এসেছে ২১ বলে।
এমপি/এসএন