বাংলাদেশ-উইন্ডিজের খেলা আইসিসি টিভিই ভরসা
সাম্প্রতিক সময়ে দেশের বাইরে বাংলাদেশের খেলাগুলো টোটাল স্পোর্টস মার্কেটিং (টিএসএম) স্বত্ব কিনে থাকে। পরে তারা সেই স্বত্ব বাংলাদেশের টিভি চ্যানেলগুলোতে বিক্রি করে। আর এভাবেই বাংলাদেশের কোটি কোটি ক্রিকেটপ্রেমী তামিম-সাকিবদের খেলা দেখে থাকেন।
অতীতের অভিজ্ঞতা থেকেই এবারও টিএসএম বাংলাদেশ-উইন্ডিজ সিরিজের স্বত্ব কিনেছিল। কিন্তু সম্প্রচার নিয়ে যে এমন জটিলতা সৃষ্টি হবে তা তারা ঘুনাক্ষরেও ভাবেননি। কারণ কয়েকদিন আগেও আফগানিস্তান-জিম্বাবুয়ে সিরিজের স্বত্বও তারা কিনে টি-স্পোর্টসের কাছে বিক্রি করেছিল। অথচ বাংলাদেশ-উইন্ডিজ সিরিজে টিভিগুলো ইউটার্ন দিয়েছে? উপায়ন্তর না পেয়ে টিএসএম বিসিবিকে স্বত্ব দিয়ে প্রচারের ব্যবস্থা করতে বলেছে। আর নিজেদের পক্ষ থেকে আইসিসি টিভিতে সম্প্রচারের ব্যবস্থা করেছে। বিসিবি অবশ্য নিজস্ব ইউটিউব চ্যানেল বা নিজেদের ফেসবুক পেজে দেখানোর কোনো ব্যবস্থা করতে পারেনি। তাই এখন বাংলাদেশের দর্শকদের একমাত্র ভরসা আইসিসি টিভি। যদিও বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশে এই সিরিজের খেলাগুলো সম্প্রচারিত হবে। কিন্তু সেই সব চ্যানেল বাংলাদেশে দেখা যায় না।
টিএসএমের স্বত্বাধিকারী মইনুল হক চৌধুরী আমেরিকা আছেন। সৃষ্টি জটিলতা নিয়ে তার হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে যোগাযোগ করা হলে ঢাকাপ্রকাশ-কে তিনি বলেন, ‘আমরা স্বত্ব কিনেছিলামই দেশি টিভি চ্যানেলগুলোর কাছে বিক্রি করার জন্য। কিন্তু এ রকম পরিস্থিতি হবে তা আমরা ভুলেও ভাবিনি। আমরা সম্প্রচারের জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি। কিন্তু পারিনি। পরে বিসিবির সঙ্গে যোগাযোগ করি। আইসিসির সঙ্গে যোগাযোগ করি। আমাদের যৌথ প্রচেষ্টায় এখন আইসিসি টিভিতে খেলা দেখা যাবে। এজন্য দর্শকদের টেস্ট প্রতি এক ডলার থেকে দুই ডলার মূল্য পরিশোধ করতে হবে ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে।’
টোটাল স্পোর্টসের পক্ষ থেকে আইসিসি টিভিতে খেলা সম্প্রচারের ব্যবস্থা করা হলেও তা বাংলাদেশের সব শ্রেণির দর্শকের জন্য সহজলভ্য হবে না। কারণ এই টিভিতে দেখতে হলে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। পাশাপাশি ক্রিকেট কার্ডের মাধ্যমে ডলারে মূল্য পরিশোধ করতে হবে। দুই টেস্টের জন্য মূল্য ধার্য করা হয়েছে দুই ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় ১৯০ টাকার কম। কিন্তু ডলারে মূল্য পরিশোধ করা সবার পক্ষে সম্ভব হবে না। কারণ আর্ন্তজাতিক ক্রেডিট কার্ড সবার নেই। তাই এখানে ইচ্ছে থাকলেও অনেকের সেই ইচ্ছের অপমৃত্যু ঘটবে। তারপরও মন্দের ভালো আইসিসি টিভি। এই সমস্যার কথা চিন্তা করে টিএসএম বিনামূল্যে দেখানোর জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছে। বিসিবিও চেষ্টা করছে। কিন্তু তা চূড়ান্ত হয়নি।
এদিকে টিএসএম এই সিরিজের নাম দিয়েছে পদ্মা সেতুর নামে। তারা নিজেরা সিরিজের টাইটেল স্পন্সর কিনে নিয়ে এই রকম নামকরণ করে। এজন্য তাদের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অনুমতিও নিতে হয়েছে। মইনুল হক চৌধুরী জানান, সিরিজের এই নামকরণ তাদের পক্ষ থেকে দেশবাসীকে উপহার। ঢাকাপ্রকাশ-কে তিনি বলেন, ‘পদ্মা সেতু আমাদের অহংকার। সেই অহংকারের সঙ্গী হতেই আমাদের এই সামান্য চেষ্টা। আমরা এটা দেশবাসী ও প্রধানমন্ত্রীকে আমাদের পক্ষ থেকে উপহার হিসেবে দিয়েছি। টাকা-পয়সা জীবনে কম-বেশি আয় করেছি। আগামীতেও হয়তো করব। এবার না হয় আয় করলাম না।’
টাইটেল স্পন্সর কেনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘উইন্ডিজ ক্রিকেট বোর্ড থেকে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করে জানায়, তাদের যে টাইটেল স্পন্সর ছিল তা হচ্ছে না। এরপর আমি কিনে নেই। এরপর এই নাম দেই।’
আগামী ২৫ জুন পদ্মা সেতুর উদ্বোধন হবে। এই আয়োজন নিয়ে দেশে সাজ সাজ রব। উৎসবের আমেজ। সেখানে নতুন করে যোগ হবে এই সিরিজের নামকরণ। টিভি পর্দায় ভেসে উঠবে ‘বাংলাদেশ-উইন্ডিজ ফ্রেন্ডশিপ টেস্ট সিরিজ।’ কিন্তু টিভিতে সম্প্রচার না কারণে তা উপভোগ করা থেকে বঞ্চিত হবেন দেশের ক্রীড়ামোদীরা। পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের দিন সেন্ট লুসিয়াতে দ্বিতীয় টেস্টের দ্বিতীয় দিনের খেলা থাকবে। টিভিতে সম্প্রচারিত হলে তখন বাড়তি মাত্রা যোগ হতো। কারণ এটি বহিঃবিশ্বেও প্রচার হবে।
এমপি/এসজি/