বাংলাদেশের আফসোসের হার
আগের দিন বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়া বলেছিলেন তুর্কমেনিস্তানের বিপক্ষে গোল চান তিনি। কারণ জাতীয় দল আর্ন্তজাতিক ম্যাচ গোলই পায় না। সেই গোল খরা কাটাতে চান তিনি। একই সঙ্গে তিনি ও কোচ হ্যাভিয়ার ক্যাবরেরা জয়ের আশাও ব্যক্ত করেছিলেন। আর্ন্তজাতিক ফুটবলে কোনো ম্যাচ খেলতে নামার আগে কোচ ও অধিনায়কের কণ্ঠ দিয়ে এ ধরনের কথা সচরাচর বের হয় না। প্রতিপক্ষ শক্তিশালী হলেতো এ ধরনের কথা ভুলেও মুখ দিয়ে বের হয় না। কিন্তু এবার তুর্কমেনিস্তানের মতো শক্তিশালী প্রতিপক্ষ, যারা আবার র্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশের চেয়ে ৫৪ ধাপ এগিয়ে থাকার পরও দুজনেই একই মঞ্চে বসে জয়ের কথা বলতে দ্বিধা করেননি। জামাল ভূঁইয়ারা শেষ পর্যন্ত জিততে পারেননি। তবে খেলায় মন ভরেছে। আর কাঙ্খিত গোলের দেখাও পেয়েছে। বাংলাদেশ হেরেছে ২-১ গোলে। এশিয়ান কাপ ফুটবলের বাছাইপর্বের ‘ই’ গ্রুপে বাংলাদেশের এটি ছিল দুই ম্যাচে দ্বিতীয় হার। প্রথম ম্যাচে তারা হেরেছিল ২-০ গোলে। তুর্কমেনিস্তান পেয়েছে প্রথম জয়। প্রথম ম্যাচে তারা হেরেছিল স্বাগতিক মালয়েশিয়ার বিপক্ষে ৩-১ গোলে।
মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরের বুকেট জলিল স্টেডিয়ামে প্রথমার্ধে খেলার ফলাফল ছিল ১-১। আর দ্বিতীয় গোল হজম করে ম্যাচের ৭৬ মিনিটে। বাংলাদেশের মোহাম্মদ ইব্রাহিম এবং তুর্কমেনিস্তানের আন্নাদুয়েভ ও আরসলান গোল করেন। আগামী মঙ্গলবার স্বাগতিক মালয়েশিয়ার বিপক্ষে বাংলাদেশ তাদের গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচ খেলবে।
আর্ন্তজাতিক ফুটবলে বাংলাদেশ এখন খেলতেই নামে হারকে মেনে নিয়ে। আজ আরেকটি হার জুটেছে ললাটে। কিন্তু এই হারের মাহাত্ব্য অনেক বেশি। প্রতিপক্ষ অনেক শক্তিশালী হওয়ার পরও বাংলাদেশ সমান তালে লড়েছে। প্রথম গোল হজম করে পিছিয়ে পড়ার পরও খুব বেশি সময় নেয়নি পরিশোধ করতে। তারপর সমান তালে লড়েছে। গোল করার মতো অনেক সুযোগও সৃষ্টি করে প্রতিপক্ষের রক্ষণে ভীতি সঞ্চারও করে। কিন্তু গোলের মুখ আর দেখা হয়নি। উল্টো আচমকা গোল হজম করে হার মেনে নিতে হয়।
খেলায় যে বাংলাদেশ এমন লড়াই করে নজর কাড়বে তা কিন্তু শুরুতে বুঝা যায়নি। কারণ বাঁশি বাজার সঙ্গে সঙ্গেই তুর্কমেনিস্তানের খেলোয়াড়রা বাংলাদেশের রক্ষণে হামলে পড়ে। একের পর এক আক্রমণ করে দিশেহারা করে লাল-সবুজের রক্ষণভাগকে। প্রথম সাত মিনিটেই তারা চার চারটি কর্ণার আদায় করে একটি গোল পেয়ে যায়। একে একে প্রথম তিনটি ব্যর্থতায় পর্যবেশিত হওয়ার পর চতুর্থ কর্নার থেকে আন্নাদুয়েভের কোনাকুনি শট আনিসুর রহমান জিকোর পক্ষে আটকানো সম্ভব হয়নি। খেলার ধারা অনুযায়ী এভাবে গোল পেয়ে যাওয়ার পর সামনে বাংলাদেশের সামনে বিরাট কালবৈশাখী ঝড়ই অপেক্ষা করছিল। কিন্তু আকাশ কালো হয়ে আসলেও তা কেটে যেতে সময় লাগেনি। বাংলাদেশের খেলোয়াড়রা দারুণভাবে খেলায় ফিরে আসেন। গোলও আদায় করে নিয়ে খেলায় সমতা নিয়ে আসেন ৫ মিনিট পরই। ১২ মিনিটে বিশ্বনাথ ঘোষের লম্বা থ্রো থেকে রাকিবের হেড তুর্কমেনিস্তানের গোলরক্ষক হাত দিয়ে ঠেকানোর ব্যর্থ চেষ্টা করেন। সামনে থাকা ইব্রাহিম হেড করে তিন ম্যাচ পর বাংলাদেশ দলকে গোল উপহার দেন। যে গোল ছিল আবার নতুন কোচ হ্যাবিয়ার ক্যাবরেরারও প্রথম গোল। তার কোচিংয়ে বাংলাদেশ দল আগের তিন ম্যাচে কোনো গোল পায়নি।
গোল পরিশোধের পর বাংলাদেশের খেলোয়াড়রা উজ্জীবিত হয়ে উঠেন। ২০ মিনিটে সাজ্জাদ ও ২৩ মিনিটে রকিবের চেষ্টা বিফলে যায়। দুই মিনিট পর ইব্রাহিমের শট সরাসরি গোলরক্ষকের হাতে চলে যায়। আক্রমণের ধারা অব্যাহত রেখে ৩৬ মিনিটে বাংলাদেশ দল এগিয়ে যাওয়ার সহজ সুযোগ নষ্ট করে। আবারও বিশ্বনাথের লম্বা থ্রো থেকে সাজ্জাদের ব্যাক হেড থেকে ইয়াসিন আরাফাত গোলমুখে দাঁড়িয়েও মাথা ছুঁয়াতে পারেননি। পরে তুর্কমেনিস্তানের রক্ষণভাগের একজন খেলোয়াড় গোললাইনে থেকে বিপদমুক্ত করেন। প্রথমার্ধের শেষের দিকে দুই দলেরই দুইটি চেষ্টা দুই দলেরই গোলরক্ষক বাঁচিয়ে দেন।
দ্বিতীয়ার্ধে বাংলাদেশ তিনজন খেলোয়াড় পরিবর্তন করে। কিন্তু তাতে গোলের মুখ আর দেখা হয়নি। এই অর্ধে বাংলাদেশ চাপিয়ে খেললেও প্রথমার্ধেরে মতো পারেনি। তবে সুযোগ তৈরি করেছিল প্রথমার্ধের তুলনায় অনেক সহজ। যা থেকে গোল না হওয়া ছিল দুভার্গ্য ছাড়া আর কিছু না। ৪৭ মিনিটে রাকিবের ক্রস থেকে সাজ্জাদ তুর্কমেনিস্তানের গোলরক্ষককে একা পেয়েও গোল করতে পারেননি। ৫৪ মিনিটে ইব্রাহিমের ক্রস থেকে সাজ্জাদ সঠিকভাবে মাথা লাগাতে ব্যর্থ হন। ৭১ মিনিটে বিপলুর পাস থেকে ইব্রাহিমের বদলি হিসেবে মাঠে নামা ফাহিমের শট সরাসরি গোলরক্ষকের হাতে তুলে দেন। এসময় তুর্কমেনিস্তানও কয়েকটি সুযোগ পেয়েছিল। তবে তা গোল হওয়ার মতো ছিল না। ৭৭ মিনিটে বাংলাদেশ অপ্রত্যাশিতভাবে গোল হজম করে বসে। বাম দিক দিয়ে গড়ে উঠা আক্রমণ থেকে আগুয়ান আন্নাদুয়েভকে আটকাতে ব্যর্থ হন ইয়াসিন। তার আড়াআড়ি ক্রস থেকে টোকা দিয়ে বলকে তার আপন ঠিকানায় পাঠিয়ে দেন আরসলান। খেলার ধারার বিরুদ্ধে গোল হজম করলেও দমে না গিয়ে বাংলাদেশের ফুটবলাররা পাল্টা আঘাত হেনে গোল পরিশোধের চেষ্টা করেন। সুযোগও পেয়ে যায়। ৮৮ মিনিটে জামাল ভূঁইয়ার ফ্রি কিক থেকে ফাঁকায় দাঁড়ানো টুটুল হোসেন বাদশার শট বাইরে চলে গেলে মাথায় হাত দিয়ে বসেন তিনি। অন্যদেরও হতাশ হতে দেখা যায়। এ রকম আফসোস ও হতাশার মধ্য দিয়েই রেফারি খেলার শেষ বাঁশি বাজান।
এমপি/এসজি/