মুমিনুল প্রথমে পারফর্মার: সুজন
মুমিনুলের নেতৃত্ব ছেড়ে দেয়াটাকে খালেদ মাহমুদ স্বাগত জানিয়েছেন। তিনি মুমিনুলকে একজন পারফর্মার হিসেবে দেখছেন জানিয়ে বুধবার (১ জুন) মিরপুরে সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি মনে করি যে মুমিনুল প্রথমে পারফর্মার। অধিনায়কত্বে ও চেষ্টা করেছে ওর সেরাটা দিতে। আমি তো খুব কাছে থেকে দেখেছি, খুবই সিনসিয়ার ছেলে। ক্যাপ্টেন্সিটাও ও সিনসিয়ারলি করার চেষ্টা করে। যতটুক পারে পুরো দলকে মনুপুলেট করা, একসঙ্গে রাখা সব ও করেছে।
দুর্ভাগ্যবশত এই কাজগুলো করতে করতে ওর খেলার ওপর একটা প্রভাব পড়ে গেছে। আমার ক্যারিয়ারেও এমন একটা সময় এসেছিল যে অধিনায়কত্ব করতে করতে পারফরম্যান্সে প্রভাব পড়েছিল। একদিক থেকে আমি বলব যে মুমিনুলের এটা খুবই ভালো সিদ্ধান্ত। তার ক্যারিয়ারটা এখনো অনেক দূর নিয়ে যেতে হবে তাকে। তরুণ বয়সেই ও ওর পারফরম্যান্স দিয়ে নিজেকে প্রমাণ করেছিল, এখন তো অনেক পরিণত হয়েছে। আশা করছি আগামী সিরিজ থেকে আমরা অন্য মুমিনুলকে পাব। ও রানের ধারায় ফিরবে। ওর রানে ফেরাটা আমাদের দলের জন্য খুবই জরুরি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের সবারই বিষয়টা ইতিবাচক হিসেবে দেখা উচিত। কারণ ওর একটা ব্যক্তি স্বাধীনতা রয়েছে। সিদ্ধান্ত নেওয়ার স্বাধীনতা ওর অবশ্যই আছে। ওতো বলেছেই যে ও রানে ফিরতে চায়। প্রেসার থেকে রিলিজ পেতে চায়। আমার মনে হয় আমাদের সবারই বিষয়টিতে সম্মান জানানো উচিত। ওকে আমাদের সাপোর্ট করা উচিত যে কীভাবে সে রানে ফিরতে পারে। যেটা সে নিয়মিতই করতো। যেই ছেলেটার অল্প বয়সেই অল্প টেস্টেই এভারেজ ছিল ৫০+। তো বলতেই হবে সে দুর্দান্ত টেস্ট খেলোয়াড়।’
বিসিবিতে খালেদ মাহমুদ অনেকভাবে জড়িত। অনেক কিছুর মাঝে তিনি জাতীয় দলের টিম ডিরেক্টরও। মুমিনুলের সিন্ধান্তকে টিম ডিরেক্টর হিসেবে কীভাবে দেখছেন জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ‘এটা তো কাল বোর্ড মিটিং সেখানে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তবে আমি মনে করি ওর সিদ্ধান্তকে রিস্পেক্ট করা উচিত। আমাদের সূচিতে আমি জানি না, হয়তো দুটো টেস্ট ম্যাচ আছে। ভারতের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজের ও বিশ্বকাপের আগে আমরা হয়তো দুটো টেস্ট সিরিজ পাব। এই শর্ট টাইমের ভেতর কাউকে দেওয়া যায় কি না, বা যাকে নিবে তাকে লম্বা সময়ের জন্য নিবে কি না। আমার মনে হয় না মুমিনুলকে অধিনায়ক হিসেবে রাখাটা ঠিক হবে। ওর তো মাইন্ড সেটআপ নেই। মাইন্ডটাকে সেভাবেই ঠিক করে নিয়েছে ও যে অধিনায়কত্ব করবে না। এখন যদি ওকে অধিনায়কত্ব দেওয়া হয় তাহলে সেটি চাপিয়ে দেওয়ার মতো বিষয় হবে বলে আমি মনে করি। ওকে নিজের মতো খেলতে দেওয়া উচিত। টেস্ট ফরম্যাটে ও একটা বড় নাম। অনেকেই আছে যে কি না এই দায়িত্বটা নিতে পারবে। এখন দেখা যাক কে নেয়।’
মুমিনুলের পরিবর্তে বেশ জোরেসোরেই উচ্চারিত হচ্ছে সাকিবের নাম। বলা যায় তার অধিনায়ক হওয়ার বিষয়টা শুধুই আনুষ্ঠানিকতা মাত্র। আগামীকাল বিসিবির পরিচালনা পর্ষদের সভাতেই আসবে সেই ঘোষণা। পাশাপাশি অল্প-বিস্তর করেও উচ্চারিত হচ্ছে দুর্দান্ত ফর্মে থাকা লিটন দাস আর মেহেদি হাসান মিরাজের নামও। লিটনের সম্ভাবনা সর্ম্পকে খালেদ মাহমুদ বলেন, ‘এখনই বলাটা তাড়াতাড়ি হয়ে যায়। লিটন খুবই অন্তর্মুখী একজন ক্রিকেটার সত্যি কথা বলতে গেলে। আমি বলব, লিটন বেশ পরিষ্কার মাথার একজন ক্রিকেটার। ওর ক্রিকেট জ্ঞান খুবই ভালো। যেটা বললাম যে, এটাতো আসলে এমন কাউকে দিতে হবে যে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিবে। ব্যাট হাতে রান করাতো অবশ্যই (দরকার), মাঠের পারফরম্যান্স তো অবশ্যই লাগবে। সঙ্গে ড্রেসিং রুমের পরিবেশটা সামলানোও গুরুত্বপূর্ণ। দলের সংস্কৃতি উন্নতি করাটাও জরুরি। এ ক্ষেত্রে অধিনায়কের ভূমিকাটা অনেক বেশি থাকে।’
এ প্রসঙ্গে খালেদ মাহমুদ আরো কয়েকজন প্রস্তুতি আছে জানিয়ে বলেন, ‘আসলে অনেকেই রেডি আছে। মেহেদী মিরাজ আছে, লিটন আছে, শান্তর কথাও অনেকে বলছিল। কিন্তু আমি মনে করি কিছু ক্ষেত্রে এটা বলাটা টু আর্লি। আমার কথা মতো তো আর বাংলাদেশ দলের ক্যাপ্টেন নির্ধারিত হবে না। আমাদের আলোচনার অনেকগুলো পয়েন্ট থাকবে। সেখান থেকে বেটার হবে যেটা সেটাই আমরা সিদ্ধান্ত নেব। বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক যে হবেন দলকে ভালো ফলাফল এনে দেবেন এটা আমাদের সকলেরই কাম্য।’
মুমিনুল নেতৃত্ব দেওয়াকালীন তার ডেপুটি কেউ ছিলেন না। এবার নতুন অধিনায়কের নাম ঘোষণার পাশাপাশি ডেপুটি হিসেবে কাউকে দায়িত্ব দেওয়া হবে কি না জানতে চাওয়া হলে খালেদ মাহমুদ বলেন, ‘এটা নিয়ে অনেক ভাবি আমরা। এখন থেকে একটু একটু করে আমরা সেই পথেই হাঁটব। ভাইস ক্যাপ্টেনের কথা চিন্তা করছি আমরা যে ছেলেগুলাকে বিল্ড আপ করতে হবে। এই ফিলটা তাদের ভেতর আনতে হবে যে তারা সিদ্ধান্ত নেওয়ার একটা অংশ, টিম সিলেকশনসহ দলের অন্যান্য বিষয়ে তার মতামত থাকবে। দিন শেষে ক্যাপ্টেন কোচই সব। কিন্তু আমি মনে করি সিদ্ধান্ত প্রণয়নে তারও ভূমিকা থাকবে।
এমপি/এমএমএ/