টেস্ট অধিনায়কত্ব ছাড়ার ঘোষণা মুমিনুলের
সব ঝল্পনা-কল্পনার অবসনা ঘটিয়ে শেষ পর্যন্ত টেস্ট অধিনায়কত্ব থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন মুমিনুল হক।
মঙ্গলবার (৩১ মে) বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনের গুলশান বাসভবনে বৈঠক শেষে মুমিনুল সাংবাদিকদের নিজে তার এ সিদ্ধান্তের কথা জানান। তার এ রকম সিদ্ধান্ত কোনো রকম অভিমান থেকে নয়, দলীয় ও ব্যক্তিগত নৈপুণ্য ভালো না হওয়া থেকেই তার এ রকম সিদ্ধান্ত।
বিসিবির সভাপতির সঙ্গে বৈঠক প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘ওরকম কিছু না, আমি শুধু বলেছি যে অধিনায়ক হিসেবে দলে অবদান রাখতে পারছি না। আমার কাছে মনে হয় এই মুহুর্তে কাউকে দায়িত্ব দেওয়া উচিত। আমিতো বলে আসছি, এখন উনারা কী সিদ্ধান্ত নেয় উনাদের ব্যাপার।’
অভিমানে নেতৃত্ব ছাড়ছেন না জানিয়ে মুমিনুল বলেন, ‘উনি বলেছে (অধিনায়কত্ব চালিয়ে যেতে)। কিন্তু আমি জিনিসটা চাচ্ছি না। আমি আসলেই চাচ্ছি না। অভিমান কিছু না ভাই।’
মুমিনুলের সাম্প্রতিক সময় মোটেই ভালো যাচ্ছিল না। এমন কি দলেরও। যদিও চলতি বছর নিউ জিল্যান্ডের মাটিতে মাউন্ট মঙ্গানু্ টেস্ট জিতে অসাধ্য সাধন করেছিলেন। সেই টেস্টে তিনি নিজেও ৮৮ রানের ইনিংস খেলেছিলেন। কিন্তু এরপর তিনি এবং দল সমান্তরালভাবে ব্যর্থ হচ্ছিল। মুমিনুলের ব্যর্থতার পাল্লা এতটাই ভারী হয়ে উঠেছিল যে, দলের ব্যর্থতাও আড়ালে পড়ে গিয়েছিল। সর্বশেষ ঢাকা টেস্টে শ্রীলঙ্কার কাছে ১০ উইকেট হারের পর তা আরও বেশি করে সামনে চলে আসে। এর আগে দল ও মুমিনুলের ব্যর্থতা নিয়ে কম বেশি আলোচনা হলেও উইন্ডিজ সফরে মুমিনুল নেতৃত্ব দেবেন, কি না তা জোড়ালোভাবে আলোচিত হতে থাকে। যদিও বিসিবির সভাপতি নাজমুন হাসান পাপন অধিনায়কত্ব ছাড়ার বিষয়টি মুমিনুলের উপর ছেড়ে দিয়ে জানিয়েছিলেন মুমিনুল চাইলে উইন্ডিজ সফরেও তাকে আরেকটি সুযোগ দেওয়া হবে। এ নিয়ে দুই জনের বৈঠকও হয়েছিল। কিন্তু মুমিনুলের কাছ থেকে এ বিষয়ে কখনো কোনো কিছু জানা যায়নি।
এই যখন এ রকম চিত্র, তখন আজ দ্রুতই দৃশ্য পটে পরিবর্তন আসে। হঠাৎ করেই সাকিবকে সিঙ্গাপুর থেকে দেশে ডেকে আনা হয়। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজ শেষে সে দিন রাতেই সাকিব চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুর চলে গিয়েছিলেন। সেখান থেকে তার যুক্তরাষ্ট্র যাওয়ার কথা। যুক্তরাষ্ট্র থেকে তিনি পরে উইন্ডিজ গিয়ে দলের সঙ্গে যোগ দেবেন। কিন্তু সাকিব দেশে ফিরে আসাতেই চাওর হয়ে যায় মুমিনুলের নেতৃত্ব আর দীর্ঘায়িত হতে যাচ্ছে না। যবনিকা ঘটতে যাচ্ছে। তার পরিবর্তে দায়িত্ব নিতে যাচ্ছেন সাকিব। বিকেল কয়েকজন পরিচালককে নিয়ে সাকিবের সঙ্গে বিসিবির সভাপতির বৈঠকে বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে যায়। এই বৈঠকে আবার মুমিনুলকে রাখা হয়নি। তখন আরও বিষয় করে দৃশ্যমান হয়ে উঠে মুমিনুলের বিদায়। নিজেদের মাঝে বৈঠক শেষে সন্ধ্যার পরপরই মুমিনুলকে আবার বিসিবি সভাপতি তার বাসায় ডেকে আনেন। সেখানে দুই পক্ষের খুবই সংক্ষিপ্ত বৈঠক হয়। বৈঠক শেষে বের হয়ে এস মুমিনুল নিজেই জানান তার এই সিদ্ধান্তের কথা।
মুমিনুলের পরিবর্তে কে অধিনায়ক হচ্ছেন তা বিসিবির পক্ষ থেকে ঘোষণা করা না হলেও সাকিব যে দায়িত্ব পেতে যাচ্ছেন তা এখন শুধু সময়ের ব্যাপার মাত্র।
নিজের অধিনায়কত্ব ছাড়া প্রসঙ্গে মুমিনুল বলেন, ‘যখন আপনি ভাল খেলবেন, দলের জন্য ফল নাও হয় তবু দলকে মোটিভেট করতে পারবেন। আমার কাছে মনে হয়, আমিও ভাল খেলতে পারছি না, দলও ফলাফল করতে পারছে না। এই অবস্থায় অধিনায়কত্ব করা খুব কঠিন। আমার কাছে মনে হয় এই সময় না করাই ভাল (অধিনায়কত্ব)।’
অধিনায়কত্ব ছেড়ে তিনি একন ব্যাটিংয়ে মনযোগ দিতে চান জানিয়ে বলেন, ‘আমি অনুভব করি আমার ব্যাটিংয়ে যদি মনোযোগ দিতে পারি তাহলে ভাল। উনারা এখন সিদ্ধান্ত নেবেন।’ অধিনায়কত্ব ছাড়ার সিদ্ধান্তটা কঠিন ছিল না জানিয়ে মুমিনুল বলেন, ‘আসলে কঠিনের কিছু না। পৃথিবীতে সবই এমন হবে। শুধু আমি না, অনেক অধিনায়কের ক্ষেত্রে হবে। অবদান রাখতে হবে।’
মুমিনুল ২০১৯ সালে দায়িত্ব পেয়েছিলেন এই সাকিবের কাছ থেকেই। সাকিব তখন ম্যাচ ফিক্সিংয়ের প্রস্তাব গোপন রাখার দায়ে আইসিসি থেকে এক বছরের জন্য নিষিদ্ধ হয়েছিলেন। দায়িত্ব পাওয়ার পর মুমিনুল ১৭ টেস্টে দলকে নেতৃত্ব দিয়ে তিনটি টেস্টে জিতেছিলেন। দুইটি জিম্বাবুয়ে এবং অপরটি নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ২০২০ সালে মিরপুরে ইনিংস ও ১০৬ রানে এবং হারারেতে ২০২১ সালে ২২০ রানে। চলতি বছর নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে আট উইকেটে জয় ছিল তার তথা বাংলাদেশের ক্রিকেটে অন্যতম সেরা অর্জন।
দেশকে নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষেত্রে মুমিনুলের উপর আছেন মুশফিকুর রহিম ৩৪টি ও হাবিবুল বাশার ১৮টি।
এমপি/এএজেড/এমএমএ/