বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা দ্বিতীয় টেস্টের টুকিটাকি চতুর্থ দিন
চান্দিমালের সেঞ্চুরি পদ্মার ইলিশ
পদ্মার ইলিশ যেমন অনেকের কাছে প্রিয়, মোখরচক খাবার, তেমনি ২২ গজে লঙ্কান ব্যাটসম্যান দিনেশ চান্দিমালের কাছে প্রিয় প্রতিপক্ষ বাংলাদেশ। তার ১২ সেঞ্চুরির পাঁচটিই বাংলাদেশের বিপক্ষে। খেলেছেন ১০ টেস্ট। আজকের সেঞ্চুরি ছাড়া তার আগের চারটি সেঞ্চুরি ছিল যথাক্রমে অপরাজিত ১১৬, ১০২, অপরাজিত ১০০, ১৩৮। চান্দিমাল আজ সেঞ্চুরি করেন ১৮১ বলে নয় চার ও এক ছয়ে। আউট হন ১২৪ রানে এবাদতের বলে তামিমের হাতে মিডঅফে ক্যাচ দিয়ে।
চান্দিমালের প্রথম সেঞ্চুরিই ছিল বাংলাদেশের বিপক্ষে। ২০১৩ সালে গল টেস্টে তিনি ১১৬ রান করেছিলেন। কলম্বোর প্রেমাদাস স্টেডিয়ামে পরের টেস্টে করেছিলেন আবার ১০২ রান। বাংলাদেশের বিপক্ষে ... ইনিংসগুলো হলো ১১৬, ১০২, ৪০, ২৭ ও ১০০*, ৫ ও ৫০*, ১৩৮ ও ৫, ৮৭, ০ ও ৩০, ৬৬ ও ৩৯*। বাংলাদেশের বিপক্ষে ১০ টেস্টের ১৫ ইনিংসে পাঁচ সেঞ্চুরি ও তিন হাফ সেঞ্চুরিতে তিনি রান করেছেন ৯২৯। তার গড় ঈষর্নীয় ৮৪.৪৫।
শ্রীলঙ্কার রিভিউ সাফল্য
রিভিউ নেয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ যখন একের পর ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে, সেই ব্যর্থতার দায় থেকে বাঁচতে কখনো কখনো রিভিউ নিতে দিধার মধ্যে পড়ে যায়। আবার রিভিউ না নেয়ার কারণে নিশ্চিত উইকেট পাওয়া থেকেও বঞ্চিত হয়েছে, সেখানে শ্রীলঙ্কা একের পর এক রিভিউ নিয়ে সফল হয়ে উইকেট বাঁচিয়েছে। ম্যাথিউস দুইবার ও চান্দিমাল একবার আম্পায়ারের সিদ্ধান্তে আউট হওয়ার পরও বেঁচে গেছেন। বেঁচে গিয়ে দুই জনেই সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছেন। ম্যাথিউস প্রথমে ৯৪ রানে আউট হয়েছিলেন খালেদের বলে উইকেটের পেছনে লিটনের হাতে ক্যাচ দিয়ে। কিন্তু রিভিউ নিয়ে দেখা যায় বল তার ব্যাটই স্পর্শ করেনি। পরেরবার ১০৪ রানে মোসাদ্দেকের বলে এলবিডব্লিউর শিকার হয়েছিলেন। রিভিউ নিয়ে আম্পায়ার উইলসনকে তার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করতে বাধ্য করান। চান্দিমাল ৪৩ রানে মুমিনুলের বলে উইকেটের পেছনে লিটনের ক্যাচের শিকার হয়ে রিভিউ নিয়ে নিজেকে বাঁচান।
ম্যাথিউসের নর্ভাস নাইনটি
সেঞ্চুরিটি প্রথমটি হোক, আর পরেরগুলো হোক প্রতিটি ব্যাটসম্যানেরই চির আরাধ্য। যে কারণে নব্বই রানের ঘরে গিয়ে সেঞ্চুরির আশায় অনেকেই সাবধানী হয়ে উঠেন। তারপরও কখনো কখনো কেউ কেউ কেউ হতাশয় ডুবেন আউট হয়ে। সেই আউট আরো বেশি করে পুড়ায় ৯৯ রানে আউট হলে এই পুড়া ম্যাথিউসের চেয়ে বেশি আর কে জানেন? তার যেমন ৯৯ রানে আউট হওয়ার দু:খ আছে, তেমনি ১৯৯ রানেও। এখানে তিনিই যে প্রথম ব্যাটসম্যান। চট্টগ্রাম টেস্টে তিনি ১৯৯ রানে আউট হয়েছিলেন। এবার ঢাকা টেস্টে তিনি নব্বইর ঘরে গিয়ে অতিমাত্রায় সাবধানী হয়ে উঠেন। নব্বইর ঘরে গিয়ে তিনি সেঞ্চুরি করতে বল খেলেন ৩৮টি। তার সেঞ্চুরি এসেছে ২৭৪ বলে সাত চার ও এক ছক্কায়। এটি ছিল তার ১৩তম সেঞ্চুরি। আর বাংলাদেশের বিপক্ষে দ্বিতীয়।
স্ট্যাম্পিংয়ের আবেদনে কট বিহাইন্ড আউট
ইনিংসের তখন ১৫৯.৫ ওভার। বোলার সাকিব। অফ স্ট্যাম্পের বাইরে করা বল নিরোশান ডিকভেলা ক্রিজ ছেড়ে বের হয়ে এসে খেলতে গিয়ে ব্যর্থ হন। উইকেটের পেছনে দাঁড়ানো লিটন দাস তড়িৎ বল ধরে স্ট্যাম্প ভেঙ্গে দেন। সঙ্গে সঙ্গে আউটের জোড়ালো আবেদন। লেগ আম্পায়ার থার্ড আম্পায়ারের দৃষ্টি আকষর্ণ করেন। এতে দেখা যায় লিটন বেল ফেলার আগেই ডিকভেলার ব্যাটে ক্রিজে চলে এসেছে। তাই আউট আর হননি। কিন্তু আল্ট্রা এজ চেক চেক করে দেখা যায় বল ব্যাটের কানায় লেগেছে। যেহেতু বলটি লিটনের গ্লাভসে জমা পড়েছিল তাই কট বিহাইন্ড আউট দেন থার্ড আম্পায়ার। আর এভাবেই স্ট্যাম্পিংয়ের জন্য আউটের আবেদন করে কট বিহাইন্ড উইকেট পান সাকিব। এটি ছিল তার ইনিংসে চতুর্থ উইকেট।
রিভিউ না নেয়াতে মাহমুদুলের রক্ষা
ঢাকা টেস্টে রিভিউ নেয়ার ক্ষেত্রে শ্রীলঙ্কানরা অসম্ভব বিচক্ষনতার পরিচয় দিয়েছেন। তাদের ইনিংসে ম্যাথিউস দুইবার ও চান্দিমাল একবার আউট হওয়ার পরও রক্ষা পেয়েছেন রিভিউ নিয়ে। সেখানে বাংলাদেশ ছিল চুড়ান্তভাবে ব্যর্থ। ৫০৬ রানে শ্রীলঙ্কার ইনিংস শেষ হওয়ার পর ১৪১ রানে পিছিয়ে থেকে বাংলাদেশ দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নামার পর কাসুন রাজিথার করা ইনিংসের প্রথম ওভারের শেষ বল মাহমুদুল হাসান জয়ের ব্যাটে লেগে উইকেটের পেছনে নিরোশান ডিকাভেলার হাতে জমা পড়ে। কিন্তু বল যে মাহমুদুল হাসান জয়ের ব্যাটে লেগেছে তা লঙ্কান কেউই বুঝতে পারেননি। যে কারণে তারা আউটের জন্য আবেদনও করেননি। কিন্তু রিপ্লেতে আল্ট্রা এজে দেখা যায় ঘটনাটি। ফলে শূন্য রানে বেঁচে যান তিনি। কিন্তু এই রিভিউ না নেওয়া তারা পুষিয়ে নেয় মুমিনুলের বিপক্ষে রিভিউ নিয়ে। কাসুন রাজিথার বল মুমিনুলের ব্যাট ছুঁয়ে উইকেটের পেছনে জমা হয়েছিল। লঙ্কান ফিল্ডারদের জোড়ালো আবেদনে আম্পায়ার সাড়া না দিলে তারা রিভিউ নিয়ে সফল হয়।
কাকতলীয়
ঢাকা টেস্টে টস জিতে ব্যাট করতে নেমে বাংলাদেশ দল লঙ্কান দুই পেসার কাসুন রাজিথা ও আশিথা ফার্নান্ডোর তোপে পড়ে মাত্র ২৪ রানে পাঁচ উইকেট হারিয়েছিল। এবার একই অবস্থা হয়েছে দ্বিতীয় ইনিংসেও। ১৪১ রানে পিছিয়ে পড়ে তৃতীয় সেশনের ৭৬ মিনিট পর ব্যাট করতে নেমে একইভাবে ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়েছে। ২৩ রানে হারিয়েছে চার উইকেট। শূন্য রানে আউট হয়েছেন দুইজন। প্রথম ইনিংসে পাঁচ উইকেটের তিনজন আউট হয়েছিলেন শূন্য রানে। প্রথম ইনিংসের মতোই রাজিথা ও আশিথা মিলেই এই ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছেন। প্রথম ইনিংসে হাল ধরেছিলেন মুশফিকুর রহিমও লিটন দাস। দুই জনেই করেছিলেন সেঞ্চুরি। এবারো এই দুই জনে আছেন ক্রিজে।
তামিমের প্রথম পেয়ার
৬৬ টেস্টের ১২৬ ইনিংসের ক্যারিয়ারে বাংলাদেশের ড্যাশিং ওপেনার তামিম ইকবালের অনেক রেকর্ড আছে। এবার তিনি অন্য রকম এক রেকর্ডের ভাগীদার হয়েছেন। যে রেকর্ডে নেই মিষ্টি, আছে নোান স্বাদ। ক্যারিয়ারে তিনি প্রথমবার উভয় ইনিংসে কোনো রান করতে পারেননি। ক্রিকেটের ভাষায় যাকে বলে ‘পেয়ার’। প্রথম ইনিংসে তিনি চার বলে খেলে আশিথা ফার্নান্ডোর বলে জয়াবিক্রমার হাতে ধরা পড়েছিলেন। এবার ১১ বলে খেলে সেই আশিথা ফার্নান্ডোর বলেই দ্বিতীয় স্লিপে কুশাল মেন্ডিসের হাতে ধরা পড়েন। কুশাল তৃতীয়বারের চেষ্টায় তালুবন্দি করেন।
এমপি/এএজেড