কলকাতায় বসুন্ধরার মোহনবাগান লজ্জা
এএফসি কাপে বসুন্ধরা কিংস ও মোহনবাগানের খেলা শুরু হতে, না হতেই তুমুল ঝড়। স্টেডিয়ামের চালের একটি অংশ বসুন্ধরা কিংসের রিজার্ভ বেঞ্চের সামনে এসে পড়ে। ঝড়ের তীব্রতা এতোই বেশি ছিল যে বিলবোর্ড পর্যন্ত মাঠে এসে পড়ে। খেলার তখন মাত্র চার মিনিট। রেফারি কয়েক মিনিটের জন্য খেলা বন্ধ করে দেন। পরে আবার খেলা শুরু করেন। কিন্তু তাতে অবস্থার কোনো উন্নতি হয়নি। এবার মিনিট সাতেকের পর রেফারি চেন সিন চুয়ান খেলা বন্ধ করে দিতে বাধ্য হন। নিভিয়ে দেয়া হয় স্টেডিয়ামে আলো। খেলোয়াড় চলে যনি নিজ নিজ ড্রেসিং রুমে। প্রায় ৫০ মিনিটের মতো খেলা বন্ধ থাকার এরপর ঝড় থেমে গেলে আবার খেলা শুরু হয়। কিন্তু তখন সল্ট লেক স্টেডিয়ামে শুরু হয় অন্যরকম ঝড়। এই ঝড় শুরু করে মোহনবাগান। তাদের এই ঝড়ে লন্ডভন্ডে হয়ে যায় বসুন্ধরা কিংস। হার মানে ৪-০ গোলের শোচণীয় ব্যবধানে। সঙ্গে লিস্টন কোলাসোর হ্যাটট্রিক। অপর গোল ডেভিড উইলিয়ামসের। এমন লজ্জ্বার হারে বসুন্ধরা কিংসের এএফসি কাপের পরের রাউন্ডে যাওয়ার স্বপ্ন সাঙ্গ না হলেও কঠিন হয়ে গেছে।
শুধুমাত্র গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন দলই পরের রাউন্ড যেতে হবে। দুই ম্যাচে মোহনবাগানের পয়েন্ট তিন। বসুন্ধরারও তাই। গোকুলাম কেরালার এক ম্যাচ খেলে পয়েন্ট তিন। তারা প্রথম ম্যাচে ৪-২ গোলে হারিয়েছিল মোহনবাগানকে। অপরদিকে বসুন্ধরা কিংস তাদের প্রথম ম্যাচে ১-০ গোলে হারিয়েছিল মালদ্বীপের মার্জিয়া স্পোর্টস ক্লাবকে।
মোহনবাগান উভয়ার্ধে দুইটি করে গোল করে। তবে যে ব্যবধানে তারা হেরেছে, এতো বড় ব্যবধানে হারার মতো দল তারা ছিল না। কিন্তু প্রকৃতির বিরূপ আচরন যেন তাদের জন্য অশনি সংকেত ডেকে আনে। সেই সঙ্গে ছিল ভগ্যেরও বিড়ম্বনা। বৃষ্টির আগ পর্যন্ত খেলায় ছিল তাদেন দাপট। এমনকি প্রথম গোল হজম করার আগ পর্যন্ত। এসময় তাদের দুই দুইটি প্রচেষ্টা পোস্টে লেগে ফেরত আসে। এর যে কোন একটি যদি আলোর মুখ দেখত, তা’হলে ম্যাচের চিত্রনাট্য অন্যরকমও হতে পারতো। ১৮ মিনিটে রবসনের ফ্রি কিক থেকে রিমনের হেড পোষ্টে লেগে ফিরে আসে। তিন মিনিট পর বিশ্বনাথের লম্বা থ্রো মোহনবাগানের রক্ষণের খেলোয়াড়রা হেড করে ক্লিয়ার করলেও বাতাসে ভেসে থাকা অবস্থায়ই রিমনের বাঁ বায়ের দুরন্ত শট সেই ক্রস বারে রেগে হতাশ করে বসুন্ধরা কিংসকে।
ভাগ্য যেন এদিন বসুন্ধরার দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল। নতুবা প্রথম যে গোল তারা হজম করে, তা কোনো অবস্থাতেই হওয়ার কথা নয়। তেমন কোনো বিপজ্জনক আক্রমণ ছিল না। বিশ্বনাথের পেছনে ছিলেন ম্যাচের প্রথম দুই গোল করা লিস্টন কোলাসো। বিশ্বনাথ বলটি ক্লিয়ার করতে গিয়েছিলেন। কিন্তু পিচ্ছিল মাঠে তিনি বল ক্লিয়ার করতে ব্যর্থ হন। এর এতে একেবারে ফাঁকায় বল পেয়ে যান কোলাসো। বাম দিকে ঝোকে পড়া গোলরক্ষক আনিসুর রহমান জিকোকে ডানদিক দিয়ে পরাস্ত করেন। খেলার তখন ২৪ মিনিট। ধারার বিপরীতে এমন গোল পেয়ে মোহনবাগান নিজেদের ফিরে পেতে শুরু করে। এরই ধারাবাহিকতায় তারা দ্বিতীয় গোল করে নয় মিনিট পর পরিকল্পিত আক্রমণ থেকে। মাঝমাঠ থেকে কাউকোর বাড়ানোর বল পান কোলাসো, তা বসুন্ধরার রক্ষণভবাগকে ফাঁকি দিয়ে শুধুই গোলরক্ষক জিকোকে পেয়ে যান। পরে জিকোকেও ডজ দিয়ে ফাঁকা পোষ্টে বল জালে ঠেলে দেন।
প্রথমার্ধে দুই গোল হজম করলেও খেলার ধারার বিরুদ্ধে তা হয়েছিল। তাই দ্বিতীয়ার্ধে বসুন্ধরার খেলায় ফিরে আসা নিয়ে আশবাদী ছিলেন সমর্থকরা। ৫০ মিনিটে ইয়াসিন আরাফাতের শট গোলরক্ষক আনোয়ার দক্ষতার সঙ্গে বাঁচিয়ে দেন। কিন্তু এর দুই মিনিট পরই বসুন্ধরা তৃতীয় গোল হজম করে। সঙ্গে কোলাসোর হ্যাটট্রিক। মনবীরক আটকাতে ব্যর্থ হন খালেদ শফি। পরে মনবীর বক্সে ফাঁকায় থাকা কোলাসোকে বল বাড়িয়ে দিলে তিনি হ্যাটট্রিক করতে ভুল করেননি। এরপর বসুন্ধরার ম্যাচে ফেরার সব সম্ভাবনা শেষ হয়ে যায়। কিন্তু বসুন্ধরার শেষ রক্ষা হয়নি গোল হজম করা থেকে। ৭২ মনিটে হ্যাটট্রিক ম্যান কোলাসোকে উঠিয়ে নিয়ে ডেবিড উইলিয়ামসকে মাঠে নামান। এই উইলিয়ামসই শুভাশিষ বসুর কাছে থেকে বল পেয়ে বসুন্ধরাার জালে গোলের হালি পূর্ন করেন।
এমপি/এএজেড